Midday Meal Scheme

শিশুর বঞ্চনা

ভোটের বাজারে এই সহজ সত্যটি রাজনীতির নজর এড়িয়ে যাবে, তাতে অবশ্য অবাক হওয়ার কারণ নেই— ছোটদের ভোট নেই বলেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩ ০৪:৫৩
Midday Meal.

অতিমারিতে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকাকালীন রাজ্যের স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল প্রকল্প চালু রাখা সম্ভব হয়নি। —ফাইল চিত্র।

পুষ্টিবঞ্চিত হয়েছে এ রাজ্যের অসংখ্য পড়ুয়া। অভিযোগ, নির্ধারিত গরমের ছুটির আগে ও পরে ‘প্রবল গরমের কারণে’ যে বাড়তি ছুটি যোগ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার,সেই সময় অনেকেই পায়নি মিড-ডে মিল। প্রশ্ন উঠেছে, পুষ্টির ক্ষেত্রে এই ঘাটতি পূরণ হবে কী ভাবে? প্রশাসনের তরফে এই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেই খবর। গত বছরেও অতিরিক্ত গরমের ছুটিতে বহু জায়গায় পড়ুয়াদের চাল, ডাল, সয়াবিন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বছর সেই ব্যবস্থা করা হয়নি। কেন, সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। প্রশাসন অবশ্য ভাবতে পারে যে, এখন ছাত্রছাত্রীদের বকেয়া চাল-ডাল মিটিয়ে দিলেই চলবে, তা হলেই আর বঞ্চনা থাকবে না। সমস্যা হল, খিদে যেমন কোনও কিছুর অপেক্ষা করে না, সেই খিদে মেটানোর ব্যবস্থারও ছুটি ফুরানোর অপেক্ষায় থাকা চলে না। ভোটের বাজারে এই সহজ সত্যটি রাজনীতির নজর এড়িয়ে যাবে, তাতে অবশ্য অবাক হওয়ার কারণ নেই— ছোটদের ভোট নেই বলেই।

অতিমারিতে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকাকালীন রাজ্যের স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল প্রকল্প চালু রাখা সম্ভব হয়নি। স্কুল খোলার পর বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার পাশাপাশি পুষ্টির ক্ষেত্রেও লক্ষণীয় ঘাটতি দেখা গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, লকডাউন চলাকালীন তাদের হাতে শুকনো খাবার হিসাবে যে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়, তা-ও ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এখন তো অতিমারির অস্বাভাবিকতার অজুহাতটিও নেই, কিন্তু অব্যবস্থা অব্যাহত। মিড-ডে মিল প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পড়ুয়াদের পুষ্টি নিশ্চিত করা। কিন্তু দেখা গিয়েছে, শিশুদের যে পুষ্টির কথা ভেবে এই মিড-ডে মিলের খাদ্য-তালিকা তৈরি হয়েছিল, আর বাস্তবে তারা যা পেয়ে থাকে— উভয়ের হিসাব মেলে না। মূল্যবৃদ্ধির কারণে বহুসময়েই এই শিশুদের পাত থেকে উধাও হয়েছে ডিম বা ডালের মতো প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, আপস করা হয়েছে খাবারের মানের সঙ্গে। অথচ, এই বছরই জানুয়ারি থেকে চার মাসের জন্য প্রতি সপ্তাহে পড়ুয়া-পিছু অতিরিক্ত কুড়ি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ ক্ষেত্রে ভোট রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের কাজ করলেও শিশুরা অন্তত সপ্তাহে দু’দিন ফল ও মুরগির মাংসের দেখা পেয়েছিল। অর্থাৎ, সরকার শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি ও তা পূরণেরপ্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিলক্ষণ জানে। রাজনৈতিক সুবিধা লাভের স্বার্থে সে বিষয়ে তৎপরও হয়। অথচ, অতিরিক্ত গ্রীষ্মের ছুটিতে যে শিশুরা পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে, সে বিষয়ে আগাম কোনও নীতি নির্ধারণ করে না।

Advertisement

এই দ্বিপ্রাহরিক খাবার সরকারের দয়ার দান নয়। এটি শিশুদের অধিকার। কখনও স্কুল বন্ধ, কখনও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে শিশুরা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মিড-ডে মিল নিয়ে সরকারের স্পষ্ট নীতির অভাব এবং অসাধুতা এ রাজ্যের বহু শিশুর স্বাস্থ্যকেই এক অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। শিশুদের দৈহিক এবং মানসিক বাড়বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পুষ্টির চাহিদাটা এমনই যে, সঠিক সময়ে তা না পূরণ হলে পরে হাজার প্রচেষ্টাতেও সেই ঘাটতি পূরণ করা যায় না। সর্বোপরি, শিশুর পুষ্টি বাদ দিয়ে কোনও জনকল্যাণমূলক প্রকল্প সফল হতে পারে না। তাই পুষ্টির সঙ্গে কোনও মূল্যেই আপস চলবে না— সর্বাগ্রে এই কথাটি সরকারকে মানতে হবে।

আরও পড়ুন
Advertisement