UGC-NET

অমৃতকালের পরীক্ষা

এই পরীক্ষায় সাফল্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে উচ্চশিক্ষার পেশাদার জগতে প্রবেশের প্রথম ছাড়পত্র। অতএব, এই পরীক্ষার গুরুত্ব বাড়িয়ে বলা কঠিন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৪ ০৮:২৩
UGC-NET

—প্রতীকী ছবি।

কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করল যে, ১৮ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত নেট পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে, সেই বিজ্ঞপ্তির মাথায় জ্বলজ্বল করছে একটি প্রতীক— ‘আজ়াদি কা অমৃত মহোৎসব’। পরিহাস বটে! এ এমনই অমৃতকাল, যখন পরীক্ষা নেওয়ার পরের দিনই তা বাতিল করে দিতে হয়। এমন পরীক্ষা, দেশ জুড়ে ৩১৭টি শহরে ন’লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী যাতে বসেছিলেন। এই পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর যোগ্যতা অর্জিত হয়, পিএইচ ডি গবেষণার বৃত্তি মেলে। এই পরীক্ষায় সাফল্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে উচ্চশিক্ষার পেশাদার জগতে প্রবেশের প্রথম ছাড়পত্র। অতএব, এই পরীক্ষার গুরুত্ব বাড়িয়ে বলা কঠিন। এই ন’লক্ষ ছাত্রছাত্রীর সিংহভাগই ১৮ জুন তারিখের পরীক্ষাটির জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করেছিলেন। কেন মাত্র এক দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক তাঁদের সেই পরিশ্রমকে সম্পূর্ণ নিরর্থক করে দিল, তার কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন ইন্ডিয়ান সাইবারক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার-এর ন্যাশনাল সাইবারক্রাইম থ্রেট অ্যানালিটিকস ইউনিট জানিয়েছে, সম্ভবত এমন কোনও অনিয়ম ঘটেছে, যার ফলে পরীক্ষাটির নির্ভরযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। নতুন পরীক্ষার দিন শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে, আশ্বাস দিয়েছে মন্ত্রক। কিন্তু, এত বড় একটি ঘটনার কোনও অভিঘাত কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে হয়েছে; ছাত্রছাত্রীদের এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন করার জন্য, লজ্জাবোধ না হোক, সরকারের অন্তত দুঃখবোধ আছে— তার কোনও প্রমাণ অন্তত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে নেই। অমৃতকালে সম্ভবত এমনটাই হয়ে থাকে— এই নির্বিকার যান্ত্রিকতাই নাগরিকের প্রাপ্য।

Advertisement

কেউ বলতেই পারেন, বিজ্ঞপ্তি তো এমনই হওয়ার কথা— যাতে মূল তথ্যগুলি থাকবে। বিলক্ষণ। কিন্তু, জাতীয় স্তরে একটি পরীক্ষা গ্রহণের মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তাকে বাতিল করতে হলে সরকার লজ্জিত হবে, এটাও সেই মূল কথাগুলির একটি। এই লজ্জাই পরবর্তী ভুলের থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পথ। তার বদলে এই বিজ্ঞপ্তিতে রয়েছে একটি অনতিপ্রচ্ছন্ন অহঙ্কারের সুর— পরীক্ষাটি বাতিল করা হচ্ছে, কারণ সরকার ‘পরীক্ষাটির সর্বোচ্চ স্তরের স্বচ্ছতা ও গুরুত্ব বজায় রাখতে’ চায়। নেট বাতিল হওয়ার আগের দু’সপ্তাহ ধরে নিট পরীক্ষা সংক্রান্ত কুনাট্য চলছে। সেখানেও সরকারের ঘোষিত মনোভাবটি এই রকম— যৎসামান্য দুর্নীতি থাকলেও তাকে যাতে ব্যবস্থা থেকে ছেঁটে ফেলা যায়, সরকার তা নিশ্চিত করবে। অর্থাৎ, সরকারই জানাচ্ছে যে, এই সরকারের ‘ডিফল্ট সেটিং’ হল দুর্নীতিহীনতা— তাতে কোনও ব্যত্যয় ঘটলে তা নিছকই দুর্ভাগ্যজনক ব্যতিক্রম, এবং বিনা গাফিলতিতে সরকার তার সমাধান করবে। পর পর বিপুল দুর্নীতির অভিযোগের মুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজেই এমন শংসাপত্র দিতে বেশ চওড়া ছাতির প্রয়োজন হয়। অথবা, নিপাট নির্লজ্জতার।

নেট-এ কী ঘটেছে, আশা করা যায় যে, কাল না হোক পরশুর পরের দিন তা জানা যাবে। অবশ্য, এই জমানায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা শেষ পর্যন্ত না-জানাই থেকে যায়— যেমন, পুলওয়ামায় ঠিক কী ঘটেছিল; অথবা, নোট বাতিল করে শেষ অবধি লাভ কী হল। আপাতত অনুমান করা যায় যে, নেট-এ এমন ভয়ঙ্কর কোনও দুর্নীতি ঘটেছিল, যা কল্পনার অতীত। নিট পরীক্ষার দুর্নীতির প্রকৃত চেহারাটিও যেমন যত সামনে আসছে, তত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। সর্বোচ্চ স্তরে কাঠামোগত এবং ব্যবস্থাগত গোলমাল না-থাকলে এই মাপের দুর্নীতি হতে পারে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। সেই কারণেই কি নিজেদের শংসাপত্র প্রদানের এমন তৎপরতা? পরীক্ষার্থীদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করলে সেই চর্চিত দার্ঢ্যে টোল পড়ে বলেই কি এমন অবিচল যান্ত্রিকতা? প্রশ্নগুলির সদুত্তর মিলবে বলে অবশ্য ভরসা হয় না। অমৃতকালে সম্ভবত রাষ্ট্রীয় উত্তরহীনতাই দস্তুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement