Jammu and Kashmir

দুষ্টচক্র

ভৌগোলিক ভাবে দূরবর্তী এবং পরিকাঠামোয় অনগ্রসর অন্য রাজ্যেও এই সমস্যাগুলি আছে। কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তার সঙ্গে যুক্ত হয় যা চরিত্রে রাজনৈতিক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:০৩
A Photograph of a person collecting apples from a garden of Kashmir

কাশ্মীরে আপেল যথাযথ ভাবে মজুত রাখার ব্যবস্থা অপ্রতুল ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, প্রতিযোগিতায় মার খান কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা। ফাইল ছবি।

জাতীয় সংহতি মানে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংহতি— পরিচিত এবং বহুশ্রুত কথা। কিন্তু কথাটি একটি রাজ্যের ব্যবসায়ীদের মুখে উচ্চারিত হলে তার তাৎপর্য একটা ভিন্ন মাত্রা অর্জন করে। সম্প্রতি কলকাতায় একটি সভায় এই মন্তব্য শোনা গেল কাশ্মীর থেকে আসা এক ব্যবসায়ী দলের প্রতিনিধির মুখে। তাঁরা প্রধানত কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের ফল উৎপাদন ও ব্যবসায় জড়িত উদ্যোগীদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। দু’ধরনের সমস্যার কথা তাঁরা জানিয়েছেন। প্রথমত, কাশ্মীরে আপেল যথাযথ ভাবে মজুত রাখার ব্যবস্থা অপ্রতুল, সেখান থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এবং বিদেশে পণ্য পরিবহণের পরিকাঠামোও দুর্বল, পার্বত্য দুর্গমতা, আবহাওয়ার প্রতিকূলতা এবং রাস্তাঘাটের অভাব তো আছেই, তদুপরি ‘নিরাপত্তা’র কারণে সেই অ-পর্যাপ্ত রাস্তাতেও মাঝে-মাঝেই পরিবহণ ব্যাহত বা বন্ধ থাকে। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তার গুণমানও যথেষ্ট ভাল রাখা যায় না, প্রতিযোগিতায় মার খান কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু এগুলো এক ধরনের সমস্যা। ভৌগোলিক ভাবে দূরবর্তী এবং পরিকাঠামোয় অনগ্রসর অন্য রাজ্যেও এই সমস্যাগুলি আছে। কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তার সঙ্গে যুক্ত হয় আর এক সঙ্কট, যা চরিত্রে রাজনৈতিক। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, ভারতের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের সম্পর্কে একটি ধারণা অনেক দিন ধরে প্রচারিত। তার প্রভাবে অনেকেই মনে করেন, কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা ভারতের স্বার্থবিরোধী কাজে জড়িত, তাঁদের ব্যবসার প্রসার ঘটলে তাঁরা ভারতের ক্ষতি করবেন। এই ধারণার ফলে তাঁদের এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়, ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়। তাঁদের বক্তব্য, তা কেবল কাশ্মীরের ক্ষতি নয়, গোটা দেশেরই ক্ষতি, কারণ দেশ তো তার বিভিন্ন রাজ্যেরই সমাহার, একটি রাজ্যের স্বাভাবিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে উন্নতি না হলে, ভুল ধারণা এবং মিথ্যা প্রচার সেই উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালে দেশেরই বা যথেষ্ট উন্নতি হবে কী করে?

Advertisement

উন্নয়নের শর্ত হিসাবে পরিকাঠামো বা মানবসম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে সবাই সচেতন। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সুস্থিতির প্রয়োজনও বহুচর্চিত। অন্য একটি বিষয়ের কথা তুলনায় অনেক কম বলা হয়, তার নাম পারস্পরিক আস্থা। অথচ সামাজিক বিশ্বাস ও সহযোগিতা উন্নয়নের এক অপরিহার্য শর্ত। সমাজে বিভিন্ন বর্গের মানুষ একে অন্যের সম্পর্কে আস্থার বদলে সন্দেহ বা বিদ্বেষ পোষণ করলে অর্থনৈতিক আদানপ্রদানের মূলে আঘাত পড়ে। অধ্যাপক কৌশিক বসুর মতো অর্থনীতিবিদরা এই শর্তটির কথা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করেছেন এবং আশঙ্কা জানিয়েছেন যে, সমকালীন ভারতে অসহিষ্ণু বিদ্বেষের রাজনীতির তাড়নায় সামাজিক বিশ্বাস নষ্ট হওয়ার ফলে উন্নয়নেরও সমূহ ক্ষতি হচ্ছে এবং হতে পারে। কাশ্মীরের ক্ষেত্রে এই ক্ষতিকর রাজনীতি দীর্ঘ দিন ধরেই সক্রিয়, কিন্তু বর্তমান জমানায় তা এক চরম আকার ধারণ করেছে। কাশ্মীরি সমাজ সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারের প্রবণতা অতিমাত্রায় বেড়েছে। শেষ বিচারে এই প্রবণতা যে কেবল কাশ্মীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়, গোটা দেশের পক্ষেই বিপজ্জনক, উপত্যকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই সেই সত্য উপলব্ধি করেছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement