China

আগ্রাসনের অঙ্ক

চিনের অনুপ্রবেশ রোধে সাম্প্রতিক কালে বেজিং-এর সঙ্গে বারংবার উদ্যোগী হয়েছে ভুটান। শক্তিশালী পড়শির সঙ্গে সুসম্পর্ক গঠনের একাধিক পদক্ষেপও করা হয়েছে তাদের তরফে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৫
Xi Jinping

চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। —ফাইল চিত্র।

কথা ছিল, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে যথাসম্ভব শীঘ্র সীমান্ত বিবাদ মিটিয়ে ফেলা হবে ভুটানের সঙ্গে। তৎসত্ত্বেও চিন যে তাদের বলপূর্বক পড়শি রাষ্ট্রের অঞ্চল অধিগ্রহণ নীতিটি অব্যাহত রেখেছে, সম্প্রতি মিলল তেমনই ইঙ্গিত। উপগ্রহ চিত্র সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ভুটানের জাকারলুং উপত্যকার বেশ কিছু অংশে গ্রাম-সহ সেনাছাউনি তৈরি করে ফেলেছে শক্তিশালী রাষ্ট্রটি। অথচ ২০২১ সালের মাঝামাঝিও অঞ্চলগুলি ছিল ফাঁকা। শুধু তা-ই নয়, জাকারলুং-সহ একাধিক বিতর্কিত এলাকার মর্যাদা প্রসঙ্গে ১৯৯৮ সালে চিন ও ভুটানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে ভুটানের জমিতে হস্তক্ষেপ না করতে রাজি হয় বেজিং। কিন্তু সম্প্রতি সেই চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে বলেই অভিযোগ। তা ছাড়া, জাকারলুং বেয়ুল খেনপাজং-এর সন্নিকটে অবস্থিত, যার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সূত্রে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ভুটানের মানুষদের কাছে। আশঙ্কা, চিনা আগ্রাসনের জেরে সেই গুরুত্ব ক্রমশ হারাতে পারে অঞ্চলটি। অন্য দিকে, ভারতের পক্ষেও বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের বটে। ভুটানের উপত্যকা থেকে অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তের দূরত্ব বেশি নয়।

Advertisement

চিনের অনুপ্রবেশ রোধে সাম্প্রতিক কালে বেজিং-এর সঙ্গে বারংবার উদ্যোগী হয়েছে ভুটান। শক্তিশালী পড়শির সঙ্গে সুসম্পর্ক গঠনের একাধিক পদক্ষেপও করা হয়েছে তাদের তরফে। গত বছর অক্টোবরেই সীমান্ত বিবাদের দ্রুত সমাধান খুঁজতে বিদেশমন্ত্রী তান্ডি দোরজি প্রথম বেজিং সফরে গিয়েছিলেন। চিন ডোকলাম মালভূমের উপরে দাবি ছেড়ে দিলে, জাকারলুং-এর অধিকৃত অঞ্চল চিনের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে— ওই সময়েই এক সাক্ষাৎকারে জমি বদলের এমন জল্পনা উস্কে দিয়েছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। শেরিং-এর এ-হেন বিবৃতি অস্বস্তি বাড়িয়েছিল দিল্লির। ২০১৭ সালে ডোকলামের সন্নিকটে অবস্থিত ত্রিদেশীয় সীমান্ত অঞ্চলে ভারতীয় সেনা চিনের তরফে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তার নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার জেরে ওই অঞ্চলে দুই মাসাধিক কাল ধরে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী। তবে, ডোকলাম সংঘর্ষের পরেও ভুটানের আমু চু নদী উপত্যকায় অন্তত তিনটি গ্রাম নির্মাণ করে ফেলেছে চিন। ওই অঞ্চলের দক্ষিণে চিনের বাড়তি কোনও আগ্রাসন উদ্বেগ বাড়াতে পারে দিল্লির, কেননা শিলিগুড়ি করিডর-এর উপরে নজরদারি চালানো সহজতর হবে চিনের পক্ষে। এই করিডরের মাধ্যমেই উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের যোগাযোগ রক্ষিত হয়। ডোকলামে চিনের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেলে উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারতের ভূনিরাপত্তার উপরে নিঃশ্বাস ফেলবে বেজিং।

চিন যে ভাবে এ-যাবৎ উত্তর-পূর্বের রাষ্ট্রটির উপরে চাপ সৃষ্টি করছে, তাতে ওই অঞ্চলে ভূকৌশলগত পুনর্বিন্যাসের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই ভারতের উত্তর-পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলি চিনের আয়ত্তে। দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা ও মলদ্বীপেও বেজিং-এর প্রভাব ক্রমবর্ধমান। এমতাবস্থায় উত্তর-পূর্বের রাষ্ট্রটিকেও চিন করায়ত্ত করলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়বে ভারত। ভুটানের সঙ্গে দিল্লি এ-যাবৎ সুসম্পর্ক বজায় রেখে এলেও চিনা আগ্রাসনের জেরে আঞ্চলিক রাজনীতির অঙ্কটিকে নতুন করে ভাবার সময়ে এসেছে দিল্লির।

আরও পড়ুন
Advertisement