Arvind Kejriwal

অসম্মান

বিজেপির এই রাজনীতিতে ভারতীয় গণতন্ত্র কতখানি বিপন্ন, তার বড় প্রমাণ মিলেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। জার্মানি এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পরে এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জও ভারতের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২২

— ফাইল চিত্র।

আপাতত হাজতবাস শেষ হল না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের। দিল্লি হাই কোর্ট জানিয়েছে, কেজরীওয়াল যে আবেদন দাখিল করেছিলেন, সেটি জামিনের আবেদন ছিল না; তাঁর বক্তব্য ছিল যে, তাঁকে যে ভাবে গ্রেফতার করেছে ইডি, তা অবৈধ। আদালত জানিয়েছে যে, এই গ্রেফতারিকে অবৈধ বলা চলে না। বিচারপতি আরও বলেছেন যে, গ্রেফতারিটি নির্বাচনের সময়ে হওয়ায় তার কোনও বিশেষ তাৎপর্য আছে কি না, সে বিবেচনা আদালতের নয়। আদালতের এই অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত হওয়ার অবকাশ নেই। কারণ, কেজরীওয়ালের গ্রেফতারি অসাংবিধানিক বা বেআইনি কি না, তার চেয়ে অনেক বড় প্রশ্ন হল, এই গ্রেফতারি রাজনৈতিক কি না। এই গ্রেফতারি যে একশো ভাগ রাজনৈতিক, তা নিয়ে তিলমাত্র সংশয় নেই। কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কাজে ব্যবহার করে, এই অভিযোগ গত দশ বছর ধরেই উঠছে। কাউকে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে কারাবন্দি করে রেখে, কাউকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আদালতে মামলায় জড়িয়ে নাজেহাল করে, আবার তদন্তকারী সংস্থার তল্লাশির অজুহাতে কাউকে ব্যতিব্যস্ত করে যে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি হয়েছে, তা এখন খালি চোখেই স্পষ্ট দেখা যায়। বিজেপির রাজনীতির পথে কোনও ভাবে বাধা হলেই তাকে সরিয়ে দেওয়ার এ এক অব্যর্থ পদ্ধতি। ভোটের ঠিক আগে আম আদমি পার্টির শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্তটিও যে সেই রাজনীতিরই অঙ্গ, তা নিয়ে সংশয় থাকার কারণ নেই। শাসকরাও সম্ভবত চান যে, এই বিষয়ে মানুষের যেন সংশয় না থাকে।

Advertisement

বিজেপির এই রাজনীতিতে ভারতীয় গণতন্ত্র কতখানি বিপন্ন, তার বড় প্রমাণ মিলেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। জার্মানি এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পরে এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জও ভারতের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করল। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের মুখপাত্র বলেছেন, তাঁরা আশা করেন যে, ভারতের আসন্ন নির্বাচনে নাগরিকের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার-সহ সব গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা হবে; অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রত্যেকে বিনা সংশয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। জার্মানি ও আমেরিকার উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বৈদেশিক মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে বটে, কিন্তু এ কথা কোনও মতেই লুকোনো যাবে না যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের এ-হেন উদ্বেগ সচরাচর ইরান বা রাশিয়ার মতো দেশের জন্য তোলা থাকে। এমন দেশ, যেখানে গণতন্ত্রের আব্রুরক্ষা হয় না দীর্ঘ দিন ধরেই। ভারত আজ সেই লজ্জার আসনে বসল। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারির ঘটনাটি একটি শীর্ষবিন্দু, কিন্তু গত দশ বছর ধরে ভারতে যে কাণ্ড ঘটছে, এই আন্তর্জাতিক উদ্বেগ প্রকৃত প্রস্তাবে সে দিকেই নির্দেশ করে। স্বৈরাচারের পদধ্বনিটি স্পষ্টতই আর দেশের চৌহদ্দিতে সীমাবদ্ধ নেই।

এই ঘটনা কতখানি লজ্জার, দেশের শাসকদের সম্ভবত সে বোধ নেই। স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাক। উত্তর-ঔপনিবেশিক আমলে ভারত গোটা দুনিয়ায় এক বিরল ব্যতিক্রম হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিল— কার্যত অক্ষরজ্ঞানহীন নাগরিকের এই বিপুল দেশ গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে আরম্ভ করেছিল, এবং দু’বছরের ব্যতিক্রম বাদ দিলে কখনও সেই গণতান্ত্রিকতা থেকে বিচ্যুত হয়নি। অন্য কোনও সাবেক উপনিবেশের এই কৃতিত্ব নেই। শুধু ইতিহাসের পাতায় নয়, ভারতের এই সম্মান বজায় ছিল মাত্র ক’দিন আগেও। আন্তর্জাতিক বিশ্বাস ছিল, আর যা-ই হোক, ভারতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটানো সহজ কাজ নয়। নিম্ন অথবা নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হয়েও ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে যে সম্মানের অধিকারী হয়েছে, তার পিছনে এই গণতন্ত্রের পথে অবিচলিত থাকতে পারার একটা বড় ভূমিকা ছিল। ‘বিশ্বগুরু’-র কৃতিত্ব, তিনি সেই সম্মানটিও হারাতে সক্ষম হয়েছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement