India

আয়ুহ্রাস

আয়ু কমতে পারে ভারতীয়দের। এর কারণ বায়ুদূষণ। দাবি করেছে, এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২২ ০৫:৩৪

আয়ু কমতে পারে ভারতীয়দের। গড়ে পাঁচ বছর। অতিমারির আক্রমণ নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এমনকি চরম দারিদ্রও নয়। আয়ুহ্রাসের কারণ বায়ুদূষণ। দাবি করেছে, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো-র এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট। রিপোর্টটি উদ্বেগের। কিন্তু তথ্যটি অপ্রত্যাশিত নয়। বায়ুদূষণজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা যে ভারতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার ইঙ্গিত ইতিপূর্বে ল্যানসেট-এর একটি সমীক্ষাতেও পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সালে শুধুমাত্র দূষণের জেরে মৃত্যু হয়েছিল ২৩ লক্ষ ভারতীয়ের। এর মধ্যে ১৬ লক্ষ জনই মারা গিয়েছেন বায়ুদূষণের কারণে। প্রত্যাশিত ভাবেই, দিল্লি এই ক্ষেত্রেও সর্বাধিক দূষিত নগরীর স্থানটি দখল করেছে। জানা গিয়েছে, দূষণের জেরে সেখানকার অধিবাসীদের আয়ু কমতে পারে দশ বছর করে।

দূষণ মানচিত্রে ভারতের অবস্থান বিশ্বে সর্বোচ্চ। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাটি কী? ২০১৯ সালের পরিবেশ, অরণ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’-এর সূচনা করে। উদ্দেশ্য ছিল, ২০২৪ সাল নাগাদ বায়ুর সর্বাপেক্ষা দূষিত কণা পিএম ২.৫ পরিমাণ হ্রাসের মাধ্যমে দেশের শতাধিক শহরে বায়ুদূষণের পরিমাণ অন্তত ২০-৩০ শতাংশ হ্রাস করা। বলা হয়েছিল, যদি এই প্রকল্পে বায়ুদূষণের পরিমাণ ২৫ শতাংশও হ্রাস করা সম্ভব হয়, তা হলে ভারতীয়দের জাতীয় আয়ু ১.৬ বছর বৃদ্ধি পাবে। অথচ বাস্তবে দেখা গেল, অনেক রাজ্যই এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থের যথাযথ সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। ভারতে দূষণের একটা বড় কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির উপর অত্যধিক নির্ভরতা, ক্রমবর্ধমান যানবাহন এবং জনসংখ্যাবৃদ্ধি। ঠিক এই কারণেই গত দুই দশকে গাঙ্গেয় সমভূমিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রা অপেক্ষা দূষণ বেড়েছে বহু গুণ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে রূপান্তরের পথটি এখনও স্পষ্ট নয় এবং ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’-এর ক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় সার্বিক ভাবে দেশে বায়ুদূষণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রাটি কবে পূরণ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

Advertisement

এবং লক্ষ্যমাত্রাটি যে পূরণ হয়নি, তা বোঝা যায়— ভারতীয়দের ৬৩ শতাংশই এমন অঞ্চলে বাস করেন, যেখানে বায়ুদূষণ জাতীয় মানের উপরে— এই পরিসংখ্যানের নিরিখে। কিছু দিন পূর্বে ইটালির ভেরোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছিল, বায়ুদূষণের কারণে মানুষের শরীরে নানা ধরনের অটোইমিউন রোগ বাসা বাঁধে। দূষণের সঙ্গে কোন কোন রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত, তা নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন ঠিকই, কিন্তু দূষণ বাড়লে তার নেতিবাচক প্রভাব যে জনস্বাস্থ্যের উপর পড়ে, সে নিয়ে কোনও সংশয় নেই। সুতরাং, অবিলম্বে বায়ুদূষণ কমাতে হবে, যে কোনও মূল্যে। এযাবৎ কাল দূষণ হ্রাসে যে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান দূষণের নিরিখে সেগুলিও অতি সামান্য এবং বিলম্বিত বোধ হয়। জনস্বাস্থ্য রক্ষা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ইপিআই-তে সর্বনিম্নে স্থান পাওয়া নিয়ে যে তৎপরতায় বিবৃতি প্রকাশ করে কেন্দ্র, সেই তৎপরতা ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’টিকে সফল করার ক্ষেত্রে দেখালে হয়তো কয়েক লক্ষ মানুষ দীর্ঘায়ু হতেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আরও পড়ুন
Advertisement