IRCTC

নিরাপত্তাহীন

রেলযাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিক্রি করে এক হাজার কোটি টাকা ঘরে তোলার পরিকল্পনা রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ অনলাইন টিকিট বুকিং সংস্থাটির।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ০৫:১১
আইআরসিটিসি।

আইআরসিটিসি।

যাত্রী-তথ্যকে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে আইআরসিটিসি। সম্প্রতি জানা গেল, রেলযাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিক্রি করে এক হাজার কোটি টাকা ঘরে তোলার পরিকল্পনা রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ অনলাইন টিকিট বুকিং সংস্থাটির। দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার এমন মোক্ষম উদাহরণ পাওয়া কঠিন। ভারতে এখনও ব্যক্তিগত তথ্যসুরক্ষা আইন তৈরি হয়নি। সেই ফাঁক ব্যবহার করে রেলের মতো সরকারি সংস্থা যাত্রীদের দেওয়া যাবতীয় তথ্য কী করে বিক্রি করার পদক্ষেপ করতে পারে, তা নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। যদিও সংস্থার তরফে সাফাই দেওয়া হয়েছে যে, যাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিক্রি করার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। তাদের দাবি, উপদেষ্টা সংস্থা যাত্রী ও পরিবহণের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সব ক্ষেত্রে বেশি আয়ের পরামর্শ দেবে রেলকে। ব্যবসায়িক সম্প্রসারণই তাদের এই উদ্যোগের একমাত্র লক্ষ্য।

প্রসঙ্গত, একবিংশ শতকে ‘ডেটা’ বা তথ্যকে ‘তেল’-এর মতোই মূল্যবান বলে মনে করা হয়। এর সাহায্যে কোনও ব্যক্তির আর্থিক সাচ্ছল্য থেকে পছন্দ-অপছন্দ— সব কিছু বিশ্লেষণ করা যায়। ফলে, ক্রেতার মানসিকতা বুঝতে ও বাণিজ্যিক পরিকল্পনার সুবিধার্থে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির কাছে এই ‘তথ্যের খনি’ লোভনীয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আইআরসিটিসি-র প্রায় দশ কোটি ‘ইউজ়ার’ রয়েছে, যার মধ্যে সাড়ে সাত কোটি ‘অ্যাক্টিভ ইউজ়ার’, অর্থাৎ, যাঁরা নিয়মিত সংস্থার পরিষেবা ব্যবহার করেন। এই পরিষেবার সূত্রে সংস্থার কাছে নাম, বয়স, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা, ইমেল, আধার কার্ডের নম্বর, ব্যাঙ্কের তথ্য, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি তথ্য সংগৃহীত থাকে। এই তথ্য বাজারে বিক্রি করলে সংস্থা নিঃসন্দেহে বিপুল অর্থ উপার্জন করবে। কিন্তু একই সঙ্গে এই পদক্ষেপ একটি মৌলিক প্রশ্নেরও জন্ম দেয়। নীতিগত প্রশ্ন। এই তথ্যের ভান্ডারটি রাষ্ট্রের সম্পত্তি নয়। নাগরিক বিশেষ কাজে সরকারি সংস্থাকে সেই তথ্য ব্যবহারের অধিকার দিলেও, ব্যক্তির সুস্পষ্ট অনুমতি ভিন্ন তাকে অন্য কাজে ব্যবহার করার, বা বিক্রি করার অধিকার রাষ্ট্রের, বা কোনও সংস্থার নেই।

Advertisement

২০১৭ সালেও যাত্রী-তথ্য বিক্রির মাধ্যমে অর্থোপার্জনের পরিকল্পনা করেছিল রেল মন্ত্রক। শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু নাগরিকের তথ্যকে পণ্য জ্ঞান করার মানসিকতা যে সরকার ত্যাগ করেনি, সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ তারই ইঙ্গিতবাহী। একই সঙ্গে এটাও প্রমাণ হয় যে, ‘ডেটা’ সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্পষ্ট ধারণা নেই। নাগরিকদের যাবতীয় তথ্য আহরণের উগ্র বাসনা থাকলেও তা যথাযথ ভাবে সুরক্ষিত রাখার পরিকাঠামো গড়ে তোলেনি তারা। ফলে সরকারি ওয়েবসাইটে আধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস বা ডার্ক ওয়েব-এ দুষ্কৃতীদের নাগরিক তথ্য অপব্যবহারের ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটতে দেখা গিয়েছে। অথচ, সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই ব্যক্তি পরিসরের অধিকারকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। তা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদী সরকার তথ্য সুরক্ষা বিল সম্প্রতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় তথ্যের গোপনীয়তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমতাবস্থায় সেই গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্বকে বিসর্জন দিয়ে নিখাদ ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধির প্রচেষ্টা শুধু বিস্ময়করই নয়, কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচায়কও!

আরও পড়ুন
Advertisement