pollution

দূষণে ফেল

ভলান্টারি ভেহিকল-ফ্লিট মডার্নাইজ়েশন প্রোগ্রাম অনুযায়ী, যে কোনও ব্যক্তিগত গাড়ি, পেট্রলেই চলুক অথবা ডিজ়েলে, কেনার ১৫ বছর পরে তার ফের রেজিস্ট্রেশন করানো বাধ্যতামূলক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:১৯

আপাতভাবে সহজ, কিন্তু আদতে একটি জটিল প্রশ্ন তৈরি হয়েছে পুরনো গাড়ি ব্যবহার ও পরিবেশ সংক্রান্ত প্রশ্নে। পুরনো গাড়ির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের নিয়মটি স্পষ্ট। বাণিজ্যিক এবং ব্যক্তিগত— দু’ধরনের গাড়ির ক্ষেত্রে দু’রকমের বয়সসীমা ধার্য করা হয়েছে। ভলান্টারি ভেহিকল-ফ্লিট মডার্নাইজ়েশন প্রোগ্রাম অনুযায়ী, যে কোনও ব্যক্তিগত গাড়ি, পেট্রলেই চলুক অথবা ডিজ়েলে, কেনার ১৫ বছর পরে তার ফের রেজিস্ট্রেশন করানো বাধ্যতামূলক। এর পরবর্তী অনুমতির মেয়াদ হবে মাত্র পাঁচ বছরের। ২০ বছরের পরেও সেই গাড়ি চালাতে চাইলে সেই গাড়িকে অবশ্যই প্রতি পাঁচ বছর অন্তর স্বাস্থ্য-পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছু অন্য রকম দেখা যাচ্ছে। যে গাড়ি পুরনো, কিন্তু রাস্তায় চলার যোগ্য এবং স্বাস্থ্য ভাল বলে সরকারি শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছে, সেই গাড়িই দেখা যাচ্ছে দূষণের পরীক্ষায় পাশ করতে পারছে না। ফলত, মোটা অঙ্কের জরিমানা চাপছে গাড়ির মালিকের উপর, তাঁর নামে রুজু হচ্ছে এফআইআর-ও। সাধারণ নিয়মে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ পেতে গেলে দূষণ সংক্রান্ত পরীক্ষায় পাশ করতেই হয়। সুতরাং, শংসাপত্র প্রাপ্ত গাড়ি কেন পরবর্তী কালে দূষণ-পরীক্ষায় ফেল করছে, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

এই অ-নিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য পরিবহণ দফতরের ব্যাখ্যাটি লক্ষণীয়। তারা এ ক্ষেত্রে পুরনো গাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আবেগের প্রসঙ্গটি টেনেছে। যে আবেগের কারণে বিষয়টিকে ‘মানবিক’ ভাবে দেখা হয় বলেই তাদের অভিমত। এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, পুরনো গাড়ির দূষণ ঘটানোর ক্ষমতা আধুনিক বিএস-৬ গাড়ির তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। পুরনো গাড়ির বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ার মূল কারণটি হল ভারতের বৃহৎ শহরগুলির বায়ুদূষণের মাত্রায় উদ্বেগজনক বৃদ্ধি। কেন্দ্র-প্রদত্ত পরিসংখ্যানই জানাচ্ছে, দেশের মোট যানবাহনের মধ্যে পুরনো গাড়ি মাত্র পাঁচ শতাংশ। অথচ, মোট দূষণের ৬৫-৭০ শতাংশ ঘটছে তাদেরই কারণে। সুতরাং, এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র তো বটেই, রাজ্য সরকারগুলিরও অবশ্যকর্তব্য। পুরনো গাড়ি যদি সেই দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাপকাঠিগুলিতে উত্তীর্ণ না হতে পারে, তবে প্রথমেই তার শংসাপত্র বাতিল করার কথা ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনমনোরঞ্জনের রাজনীতি শেষ কথা হতে পারে না। অবশ্য সরকারের কিছু বাড়তি লক্ষ্মীলাভের আশাটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এক বার শংসাপত্র দিয়ে ফের জরিমানা চাপানোর অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড দেখে যে সম্ভাবনাটিকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া চলে না।

পুরনো গাড়ির আবেগকে যদি গুরুত্বই দিতে হয়, তবে এ সংক্রান্ত নিয়মগুলিকে কঠোর ভাবে পালন করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে গ্রিন ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়ানো যায় কি না, অথবা স্বাস্থ্য-পরীক্ষার সময়সীমাটিকে আরও সংক্ষিপ্ত করা যায় কি না, সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অভিশাপস্বরূপ। তাকে সর্বতোভাবে রোধ করাই দূষণক্লান্ত পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের প্রশাসকের মূল লক্ষ্য হওয়া আবশ্যক। পশ্চিমবঙ্গ তার ব্যতিক্রম হতে পারে না। তদুপরি ধারাবাহিক ভাবে দেশের সর্বাধিক দূষিত শহর তালিকার মধ্যে এ রাজ্যের কলকাতা এবং হাওড়া অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, এই ক্ষেত্রে নমনীয় মনোভাব বর্জন করাই অবশ্যকর্তব্য।

Advertisement
আরও পড়ুন