Online Shopping

পিছন দিকে যাত্রা?

এই দেড় দশকে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে একাধিক অনলাইন খুচরো পণ্য সংস্থা ভারতের বাজারে জাঁকিয়ে বসেছে। আজ ইন্টারনেট ব্যবহার, স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল লেনদেনের হাত ধরে জোয়ার এসেছে অনলাইন ব্যবসায়, বিশেষত অতিমারিকালে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৪৯

—প্রতীকী চিত্র।

দেশে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে তবে কি হাওয়া উল্টো দিকে বইছে? ভারতের নেট বাজারে এক নামী বহুজাতিক সংস্থার একশো কোটি ডলার লগ্নির পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সুরে যেন তেমনই ইঙ্গিত মিলল। দেশে কর্মসংস্থান এবং ক্রেতা কল্যাণের উপরে ই-কমার্সের প্রভাব নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশের সূত্রে বাণিজ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, সংস্থাগুলির বিপুল ছাড় দিয়ে কম দামে ক্রেতা টানার নীতির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কয়েক কোটি খুচরো বিক্রেতা। তা ছাড়া, এই ক্ষেত্রের দ্রুত সম্প্রসারণ দেশে সামাজিক সমস্যাও তৈরি করছে। তাই সামগ্রিক ভাবে দেশে ই-কমার্সের ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবি তোলেন তিনি। যদিও পরে নিজের বক্তব্য শুধরে বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি, সরকার ই-কমার্সের বিরুদ্ধে নয়, শুধু বাজারের প্রতিযোগিতায় ভারতীয় বাণিজ্য সংস্থা তথা গ্রাহকদের সুযোগসুবিধার বিষয়ে চিন্তিত। তবে, মন্ত্রীর এ-হেন বক্তব্য উস্কে দিয়েছে ভারতের বাজারে ই-কমার্সের প্রভাব কী হতে পারে, সেই সংক্রান্ত দেড় দশকেরও পুরনো বিতর্ককে।

Advertisement

এই দেড় দশকে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে একাধিক অনলাইন খুচরো পণ্য সংস্থা ভারতের বাজারে জাঁকিয়ে বসেছে। আজ ইন্টারনেট ব্যবহার, স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল লেনদেনের হাত ধরে জোয়ার এসেছে অনলাইন ব্যবসায়, বিশেষত অতিমারিকালে। গ্রাহকের বিবিধ পছন্দ আজ পূরণ করছে ই-কমার্স। ই-কমার্সের এত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার কারণ মূলত ক্রেতার সুবিধা, পণ্য একত্রীকরণের দক্ষতা এবং বিস্তর ছাড়ের মতো বৈশিষ্ট্য। বিস্তৃত সংযোগব্যবস্থা এবং পণ্য বণ্টনের সামর্থ্যের কারণে মফস্‌সল এবং গ্রামের ক্রেতারাও এখন বড় শহরের গ্রাহকদের মতো একই পণ্যের নাগাল পাচ্ছেন। অন্য দিকে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বহু ক্ষুদ্র এবং মাঝারি সংস্থাও আজ তাদের পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছে। লক্ষণীয়, এক সমীক্ষা অনুসারে, ২০২২ সালে দেশের মোট খুচরো ব্যবসার আনুমানিক আট শতাংশ হল ই-কমার্সের অংশ, যা চিন (৪৪ শতাংশ) এবং আমেরিকা (১৮ শতাংশ)-র তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। এবং এই ক্ষেত্রের দ্রুত উন্নতি হলেও ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৩০ শতাংশ বা মোট খুচরো ব্যবসার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না। ফলে চিরাচরিত মুদির দোকানের ব্যবসা অপূরণীয় ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার যে আশঙ্কা বাণিজ্যমন্ত্রী করেছেন, তা অনেকাংশেই অমূলক। তা ছাড়া, সমীক্ষার সূত্রে জানা গিয়েছে অনলাইন ব্যবসার ফলে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশে রয়েছেন মেয়েরা। ফলে দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে ই-কমার্স ক্ষতিকারক, এ কথা বলা অর্থহীন। বিপজ্জনকও বটে। আন্তর্জাতিক পুঁজি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়ার বিপদ ভারত জানে।

ইঙ্গিত স্পষ্ট— আগামী দিনে দেশের বাজারে বাড়তে চলেছে ই-কমার্সের প্রভাব। আরও গ্রাহক এবং বাণিজ্য সংস্থা এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দেবে। ফলে সরকারের উচিত এই ক্ষেত্রের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি না করে বরং নজর রাখা যাতে কোনও সংস্থাই এখানে অনৈতিক কাজকর্মে লিপ্ত হতে না পারে। অতি ক্ষুদ্র এবং ক্ষুদ্র সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে যা খুবই জরুরি। বাজারে যাতে সুস্থ প্রতিযোগিতার আবহ বজায় থাকে, প্রয়োজনে নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে সেটাই নিশ্চিত করুক তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement