Reels vs Life

অপরিণামদর্শী

সুরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা কী করছিলেন? বস্তুত নিয়ম না-মানায় এই অবাধ প্রশ্রয় এবং উদাসীনতাই অঘটনগুলির জন্য দায়ী। দায়িত্বপ্রাপ্তদের এ-হেন অদ্ভুত আচরণের উদাহরণ সর্বত্র।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৩০
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

বিপদে পড়া এবং বিপদ ডেকে আনার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বর্তমান। প্রথমটি অনিচ্ছাকৃত, ফলত তাকে এড়ানো অনেক ক্ষেত্রেই অ-সম্ভব। কিন্তু বিপদ ডেকে আনার সঙ্গে অ-সুস্থ চিন্তাধারার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্তমান। নাগরিকদের একাংশের কাণ্ডজ্ঞানের অভাব এবং অপরিণামদর্শিতার কারণে সেই বিপদ শুধুমাত্র নিজেকেই বিপন্ন করে না, আরও অনেকের ক্ষতিসাধন করতে পারে। সম্প্রতি বারুইপুরের উত্তর ভাগে পাম্পিং স্টেশনের সংরক্ষিত এলাকায় জলের স্রোতের সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে বছর পনেরোর কিশোরের মৃত্যুর ঘটনাটি নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক। কিন্তু তা একটি প্রশ্ন তুলে দেয়— এই পরিণতি কি এড়ানো যেত না? শুধু এই একটি ঘটনা নয়, রিল বানাতে গিয়ে, ভিডিয়ো তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো-সহ হরেক ঘটনা প্রতিনিয়ত সংবাদে উঠে আসছে। সামান্য অসতর্কতা যেখানে প্রাণহানি ঘটাতে পারে, সেখানে দুর্জয় সাহস প্রদর্শনের মধ্যে কোনও বাহাদুরি নেই। অবিলম্বে এই প্রবণতা বন্ধের উদ্যোগ না করলে নেট দুনিয়ার কল্যাণে এই অসুখ অতিমারি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।

Advertisement

এ প্রসঙ্গে অবশ্য অন্য একটি প্রশ্নও ওঠে। সংরক্ষিত অঞ্চলে প্রবল স্রোত অবধি এক জন কিশোর পৌঁছতে পারে কী করে? সুরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা কী করছিলেন? বস্তুত নিয়ম না-মানায় এই অবাধ প্রশ্রয় এবং উদাসীনতাই অঘটনগুলির জন্য দায়ী। দায়িত্বপ্রাপ্তদের এ-হেন অদ্ভুত আচরণের উদাহরণ সর্বত্র। গত বছর ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল— ২০২১ সালে সারা দেশে যত লোক খুন হয়েছেন, তার চেয়ে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছে প্রায় দেড়গুণ বেশি মানুষের। পরিসংখ্যানটি তিন বছর আগের হলেও বর্তমান পরিস্থিতির কিছুমাত্র উন্নতি হয়নি। ট্র্যাফিক আইন না-মানা, রাতে মদ্যপান করে তীব্র গতিতে গাড়ি চালানো এ রাজ্যেও নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলে কিছু আলোড়ন ওঠে, অতঃপর জল পুরনো খাতেই বয়। অথচ, এ রাজ্যে সুনির্দিষ্ট ট্র্যাফিক আইন আছে, পুলিশ-প্রশাসনের আলাদা বিভাগও আছে। তা সত্ত্বেও দুর্ঘটনা আটকানো যায়নি। কত জনের যথাযোগ্য শাস্তি হয়েছে? রাজনৈতিক চাপ এবং কাঞ্চনমূল্যের বিনিময়ে যে অনেক শাস্তিই লঘু হয়ে যায়— মানুষ তা জানে বলেই বার বার অনিয়মে উৎসাহ পায়। অঘটনের তালিকা দীর্ঘতর হয়।

সমস্যা হল, নিয়ম ভাঙার উল্লাস এমনই যে, তাকে অবিলম্বে না-আটকানো গেলে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে তেমন প্রবণতাই দেখা যাচ্ছে। আইনরক্ষকদের নিস্পৃহতা এবং সামাজিক আত্মসর্বস্বতা তাতে সমানে উৎসাহ দিয়ে চলেছে। এই মানসিকতা থেকেই দুর্বলতরদের কথা না ভেবে উৎসবের রাতে নিষিদ্ধ বাজির আনন্দে মাতে এক শ্রেণি, বিপজ্জনক ভাবে বাইক চালিয়ে অন্যের ক্ষতিসাধন করে। এমতাবস্থায় শুধুমাত্র খাতায়-কলমে কঠোর আইনের উপস্থিতিই যথেষ্ট নয়, তার প্রয়োগেও কঠোর হতে হবে। এবং সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে উচ্ছৃঙ্খলতাকে প্রশ্রয় না-দেওয়ার, নবীন প্রজন্মকে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার। সে কাজ কঠিন। তার চেয়ে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে অন্যের বিপন্নতা প্রত্যক্ষ করা সহজ। আগামী দিনে এই দ্বিতীয় পথটিই কি তবে গন্তব্য হতে চলেছে প্রশাসন থেকে সমাজের?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement