Transgender Rights

অন্য লড়াই

স্মরণ্যা ঘোষ এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন। তিনি রূপান্তরকামী। আর, ব্যতিক্রম বলেই স্মরণ্যার লড়াইটিও সহজ ছিল না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৩ ০৫:৫৩
An image of Transgender Flag

২০১৮ সালে যখন সুপ্রিম কোর্টে ৩৭৭ ধারাটির অবলুপ্তি ঘটেছিল, তখন রূপান্তরকামী ব্যক্তিরা ‘অপরাধী’ তকমা থেকে মুক্তি পান। ফাইল চিত্র।

সাদা চোখে যা কিছু ‘স্বাভাবিক’ নয়, তাকে দূরে ঠেলা, তার প্রতি হিংস্রতার প্রবণতা এ সমাজের মজ্জাগত। এর মধ্যেই কিছুটা আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখল সাম্প্রতিক কালের স্মরণ্যার ঘটনাটি। স্মরণ্যা ঘোষ এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন। তিনি রূপান্তরকামী। অর্থাৎ, সমাজ এ-যাবৎ কাল ‘স্বাভাবিকত্ব’-এর যে সংজ্ঞা নিরূপণ করে এসেছে, স্মরণ্যা তার ব্যতিক্রম। আর ব্যতিক্রম বলেই স্মরণ্যার লড়াইটিও সহজ ছিল না। সেই লড়াইয়ের প্রথম ধাপটিতে তিনি সসম্মানে উত্তীর্ণ। তাঁকে একাকী লড়তে হয়নি, পরিবার তো বটেই, তাঁর সামাজিক গণ্ডির মধ্যে থাকা মানুষরাও মানসিক ভাবে তাঁর ও তাঁর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁকে ‘নিজের মতো করে’ বড় হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

শুধু স্মরণ্যা নয়, সদ্য-পালিত জামাইষষ্ঠীর দিনটিতে সমকামী যুগলকে সাদরে বরণ করছেন পরিবারের মানুষজন— এমন দৃশ্যও তো ধরা পড়েছে। জানা গিয়েছে, তাঁদের বিবাহে সানন্দে যোগ দিয়েছিলেন পাড়া-প্রতিবেশী। কোনও একটি পরিচয়ে যাঁরা ‘সংখ্যালঘু’, তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠের স্রোত স্বেচ্ছায় আপন করে নেবে, একটি পরিচিতির ব্যবধানকে অন্য পরিচিতির একতার উপরে বিভেদ বা প্রত্যাখ্যানের ছায়া ফেলবে না, যে কোনও প্রগতিশীল সমাজের এই শর্ত অনুসরণ করে চলা বিধেয়। বাস্তব বলে, যাঁরা লিঙ্গ-পরিচয়ে, সম্পর্কের বন্ধনে পৃথক, ‘সংখ্যালঘু’— তাঁদের প্রতি পদে এক অবিশ্বাস্য বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাধার প্রাচীর অতিক্রম করতে হলে শুধুমাত্র পরিবারের পাশে থাকাই যথেষ্ট নয়। সমাজকেও সচেতন সমমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হয়। ২০১৮ সালে যখন সুপ্রিম কোর্টে ৩৭৭ ধারাটির অবলুপ্তি ঘটেছিল, তখন সমকামী, রূপান্তরকামী এবং নানাবিধ ভিন্ন যৌন-চেতনার ব্যক্তিরা (এলজিবিটিকিউএআই) ‘অপরাধী’ তকমা থেকে মুক্তি পান। কিন্তু, আদালতের রায় এক কথা, সমাজের রায় আর এক। পূর্বের তুলনায় সচেতনতা হয়তো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু এখনও অনেক পরিবারই সন্তানের ‘অন্য’ রকম হওয়াকে অসুখ মনে করে। এবং তাঁদের অবসাদ ক্রমশ সন্তানকেও গ্রাস করে। অনেকের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায়। এর পশ্চাতে সামাজিক চাপের ভূমিকাটি অন্যতম। এই কারণেই উপরোক্ত ঘটনা দু’টি এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। শুধু মেনে নেওয়া নয়, এই উদাহরণগুলিতে ভিন্ন যৌনতা, ভিন্ন লিঙ্গচয়নকে ‘স্বাভাবিক’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই মানসিকতাকে কুর্নিশ।

Advertisement

তবে, এখনও বহু পথ চলা বাকি। কিছু দিন পূর্বে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের এক সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছে, রূপান্তরকামী পরিচয়ে স্বচ্ছন্দ ছোটদের ৭৩.৬ শতাংশ বাড়িতে নিরাপদ বোধ করে না। ৬২.৫ শতাংশ স্কুলে অস্বস্তিতে ভোগে। এই পরিসংখ্যান স্বস্তিদায়ক নয়। বছর দুয়েক আগে মাদ্রাজ হাই কোর্ট এক রায়ে জানিয়েছিল, চিকিৎসকের সহায়তায় সমকামী ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলার উদ্যোগ অপরাধ। তাঁরাও আর সকলের মতোই ‘স্বাভাবিক’। সুতরাং, সচেতনতা তৈরি করে, আইন প্রণয়ন করে তাঁদের মূলধারায় নিয়ে আসা জরুরি। ‘অপর’ যৌনতার মানুষকে স্বাভাবিক বলে স্বীকারের প্রক্রিয়াতেই তাঁরা সমাজের মূলস্রোতে প্রবেশ করতে পারবেন। বিচ্ছিন্ন ভাবে সমাজের মধ্যেই সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। অন্যদেরও সেই পথ অনুসরণ করা উচিত।

আরও পড়ুন
Advertisement