Wastage

সম্পাদক সমীপেষু: পাতার অপচয়

অন্যান্য বছরের মতো এ বারও খাতা দেখতে গিয়ে দেখলাম পরীক্ষার খাতায় কত পাতা সাদা পড়ে আছে এবং সেগুলো অপচয় হচ্ছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ০৪:২৬

২২ বছরের শিক্ষকতায় ১৮ বছর ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখছি। অন্যান্য বছরের মতো এ বারও খাতা দেখতে গিয়ে দেখলাম পরীক্ষার খাতায় কত পাতা সাদা পড়ে আছে এবং সেগুলো অপচয় হচ্ছে। অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষকরাও এই বিষয়ে একমত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব বিষয়েরই সিলেবাস এবং তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রের ধরন বদলেছে। এখন মাল্টিপল চয়েস, অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, দু’-এক কথায় উত্তর মিলিয়ে মাধ্যমিকে থাকে ৫৮ নম্বর। উচ্চ মাধ্যমিকে মাল্টিপল চয়েস ও অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন মিলিয়ে থাকে ৪০ নম্বর আর বাকি ৪০ নম্বর থাকে বড় প্রশ্নের জন্য। আমরা, পরীক্ষকরাও খাতা দেখার ধরন বদলেছি। আগে যে ভাবে বিশদ ব্যাখ্যা-সহ উত্তর লেখার ধরন ছিল, বিশেষ করে কলাবিভাগের বিষয়গুলিতে, এখন আর তা নেই। মূল পয়েন্ট ধরে সংক্ষিপ্ত ঠিক উত্তর লিখলে ইতিহাসের মতো বিষয়েও ৯৮ বা ৯৯ নম্বর উঠছে।

এই দুই বড় পরীক্ষার জন্য যে খাতা দেওয়া হয়, তাতে মোট ১৬টি পাতা থাকে। এতগুলি পাতা বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীই ব্যবহার করছে না। ফলে প্রচুর পাতা প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই সংবাদপত্রে দেখলাম আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায় খাতার অভাবে সমস্ত পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল। এত পরীক্ষার খাতা তৈরির জন্য যে প্রচুর কাগজ লাগে, তার জন্য কত গাছ কাটা হচ্ছে, তার হিসাব হয়তো কোনও খাতায় লেখা থাকে না। কিন্তু নিঃসন্দেহে তা পরিবেশের উপর চরম প্রভাব ফেলছে। পড়াশোনা, পরীক্ষার জন্য খাতা-বই লাগবেই। কিন্তু সেগুলি একটু সচেতন হয়ে ব্যবহার করলে অপচয় রোধ করা সম্ভব। ইংরেজিতে যেমন প্রশ্নপত্রের মধ্যেই উত্তর দিতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। এখানে কিন্তু অযথা পাতা নষ্ট অনেক কম হয়। পরীক্ষার্থী নির্দিষ্ট জায়গায় উত্তরগুলি লেখে বলে উত্তরগুলিও সিরিয়াল মেনে লেখা হয়। ফলে পরীক্ষকদেরও খাতা দেখতে অসুবিধে হয় না। এই পদ্ধতি অন্য বিষয়েও চালু হলে ভাল হয়। এই ব্যবস্থা হলে হয়তো ছাত্রছাত্রীরাও প্রশ্নগুলি ঠিকমতো বুঝে লিখতে পারবে। কোনও পরীক্ষার্থীর যদি বেশি লেখার দরকার পড়ে বা প্রথমে ভুল লিখে পরে ঠিক লিখতে চায়, তার জন্য অবশ্যই বাড়তি খাতা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।

Advertisement

তাই মাধ্যমিক পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিলের কাছে আবেদন, সব বিষয়েই প্রশ্নপত্রের মধ্যে উত্তর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। তাতে পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষক— দু’জনেই যেমন উপকৃত হবেন, তেমনই প্রচুর পাতা বেঁচে যাওয়ায় বহু গাছের জীবনও রক্ষা পাবে।

কাজরী মুখোপাধ্যায়
শান্তিনিকেতন, বীরভূম

সাদা পাতা নষ্ট
‘মাধ্যমিক: কেউ টুকে দিয়েছে প্রশ্ন, শূন্য খাতা দিয়েছে কেউ’ (২৬-৩) শীর্ষক খবর থেকে জানতে পারি, মাধ্যমিক পরীক্ষার পরীক্ষকরা খাতা দেখে খুবই হতাশ হয়েছেন। আমিও খাতা দেখার দায়িত্ব পেয়েছি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিজেদের লোগো-সহ কাগজ সরবরাহ করে থাকে পরীক্ষার্থীদের। সেই কাগজের গুণগত মান যথেষ্ট ভাল। কিন্তু এ বছর পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে খুব বেশি পরিমাণে সাদা পাতা দেখতে পাচ্ছি। নির্দেশমতো সেগুলোতে লাল কালির দাগ টানতে হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে এত সুন্দর কাগজগুলোকে নষ্ট করার জন্য। বলা বাহুল্য, কাগজ আমাদের সবার জীবনে মহামূল্যবান একটি জিনিস।

প্রায় ১২টি গাছ লাগে এক টন ১০০ শতাংশ পুনরায় ব্যবহার না হওয়া খবরের কাগজের জন্য। একটি গাছ লাগে ১৬.৬৭ রিম খাতার জন্য। তথ্য বলছে, এক মিনিটে প্রায় ১০০টি গাছ কাটা হয়। তা ছাড়া, গাছ কেটে কাগজ তৈরি করার পদ্ধতিটিও বেশ সময়সাপেক্ষ। এ ছাড়াও জীববৈচিত্রের ভারসাম্য, দূষণের মাত্রাও প্রভাবিত হয় নির্বিচারে গাছ কাটার জন্য। পরীক্ষার খাতার ওই কাগজগুলো কাজে পরে লাগানো যাবে কি না, জানি না। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে অনুরোধ, এই সাদা কাগজ নষ্টের বিষয়টি তারা যেন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে।

আগমনী রাজ রায়
পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর

আদর্শ শিক্ষক
মফিদুল ইসলামের ‘শিক্ষারত্নের টাকায় পড়ুয়াদের পাশে শিক্ষক’ (৩-৪) শীর্ষক প্রতিবেদন সম্পর্কে কিছু বলার জন্য এই চিঠি। কিছু কিছু প্রতিবেদন আমাদের মনকে উজ্জীবিত করে ও ভাবতে শেখায়। শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অসীম অধিকারীর মহানুভবতা, সৃষ্টিশীলতা এবং সর্বোপরি শিক্ষাকেন্দ্রিক মানসিকতাকে শিক্ষক সমাজের মধ্যে চারিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে আগামী দিনে আরও এমন প্রকৃত শিক্ষক গড়ে ওঠেন। অতিমারি কালে স্কুলের পঠনপাঠন খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেক পড়ুয়া পিছিয়ে গিয়েছে পড়াশোনার জগৎ থেকে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার শুরু হয় স্কুলের অফলাইন পড়াশোনা। ছাত্রজীবনে বিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র জ্ঞানার্জনের জায়গা নয়, আগামী দিনে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠারও এক অনন্য মঞ্চ। আর এই মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে দক্ষ কারিগরের ভূমিকাটি পালন করেন অসীম অধিকারীর মতো শিক্ষকরা।

করোনার সময়ে যখন স্কুলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন অনলাইন পঠনপাঠন শুরু করা হয়েছিল ছাত্রছাত্রীদের জন্য। সেই প্রচেষ্টায় ঘাটতি না থাকলেও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে বহু শিক্ষার্থী অনলাইন পঠনপাঠনের সুবিধা নিতে পারেনি। আর এটাও সত্যি যে, অনলাইন পঠনপাঠন কখনও স্কুলের পড়াশোনার বিকল্প হতে পারে না। কারণ, স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনা, মত-বিনিময়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানার্জনের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

ট্যাংরামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম অধিকারী তাঁর দক্ষতা, নিষ্ঠা ও সৃষ্টিশীলতার মধ্য দিয়ে যে ভাবে স্কুলটাকে ছাত্রছাত্রীদের সম্মুখে তুলে ধরেছেন, তা প্রশংসাতীত। লেখাপড়ার পাশাপাশি পড়ুয়াদের মানসিক একঘেয়েমি কাটাতে যে ভাবে তিনি খেলনা ও ছোটদের বইপত্রের ব্যবস্থা করেছেন, তাতে সত্যিই ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করতে আগ্রহী হবে। এক জন শিক্ষকই শিক্ষণ প্রণালীর ঠিকঠাক ব্যবহার ও প্রয়োগের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলতে পারেন। এই জন্যই বিদ্যালয়ের পাশাপাশি শিক্ষকদের ভূমিকা এত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই অসীম অধিকারীর মতো প্রধান শিক্ষককে সমগ্র শিক্ষক সমাজের এক জন রোল মডেল হিসেবে গণ্য করা উচিত।

পাভেল আমান
হরিহর পাড়া, মুর্শিদাবাদ

ভুল প্রশ্ন
এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বাংলা প্রশ্নপত্রে অসঙ্গতি রয়েছে। প্রশ্নপত্রের এমসিকিউতে প্রশ্ন ছিল ‘ডাওর’ কথাটির অর্থ— (ক) ভদ্রলোক (খ) ছোটলোক (গ) শহরের লোক (ঘ) গ্রামের লোক। এখানে উত্তর হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের কাছে অবান্তর বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ রচিত ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে রাঢ় বাংলার প্রচণ্ড শীতের অবস্থাকে বোঝানোর জন্য স্বয়ং লেখক বলেছেন— “রাঢ় বাংলার শীত এমনিতেই খুব জাঁকালো। বৃষ্টিতে তা হলো ধারালো। ভদ্রলোকে বলে ‘পউষে বাদলা’। ছোটলোকে বলে ‘ডাওর’। আর বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস জোরালো হলে তারা বলে ‘ফাঁপি’।” সুতরাং, প্রশ্নপত্রে এত বড় ভুল কাঙ্ক্ষিত নয়।

আবার আর একটি প্রশ্ন ছিল “বর্ধমানে কোন্ গান বেআইনি?” যেখানে ‘বাংলা গানের ধারা’ এ বছর সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেখানে এই প্রশ্ন করা অবান্তর। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এ ধরনের প্রশ্নের ঠিক মূল্যায়নের ব্যাপারে ঠিকঠাক নির্দেশিকা জারি করুক। না হলে উত্তরপত্র মূল্যায়নেও ভুল হবে।

শিবশঙ্কর দত্ত
রতনপুর, বাঁকুড়া

আরও পড়ুন
Advertisement