‘পোষণ ট্র্যাকার’ নামে এক পোর্টাল চালু হয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য। এই পোর্টালে প্রতিটি কেন্দ্রের শূন্য থেকে ছ’বছর পর্যন্ত সব শিশু, অনাথ শিশু, গর্ভবতী মা, প্রসূতি মা, বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোরীদের তথ্য ও প্রতি দিনের কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ থাকছে। এই সমস্ত তথ্য লিপিবদ্ধ করতে চাই একটি স্মার্টফোন। সঙ্গে উপযুক্ত প্রশিক্ষণও। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অনেকেরই স্মার্টফোন নেই, প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি এ ব্যাপারে। এ দিকে অফিস থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের যাবতীয় তথ্য দফতরের পোর্টালে আপলোড করতে হবে। এমনিতেই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের উপর নানা ধরনের তথ্য লেখার চাপ আছে। তার উপর রয়েছে নানা অতিরিক্ত দায়িত্ব। সে সব সত্ত্বেও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা নতুন দায়িত্ব নিতে আগ্ৰহী।
কিন্তু প্রশ্ন অন্যখানে। এই কর্মীদের সাম্মানিক খুবই কম— কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে ৮৩০০ টাকা। একটি স্মার্টফোনের দাম অন্তত সাত থেকে আট হাজার টাকা। তার উপর প্রতি মাসে কমপক্ষে ১৫০-২৫০ টাকার রিচার্জ করতে হবে। নিজেদের সংসার চালিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা এত টাকা পাবেন কোথা থেকে?
যদিও চাকরি বজায় রাখতে অফিসের কথায় অনেক কর্মী ধারদেনা করে হলেও কিনে ফেলেছেন স্মার্টফোন। অনেকে শুরুও করেছেন ‘পোষণ ট্র্যাকার’-এ তথ্য লিপিবদ্ধ করার কাজ। তাঁদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রতিটি কর্মীকে দেওয়া হোক একটি করে স্মার্টফোন, সঙ্গে প্রতি মাসের ফোন রিচার্জ ভাতা। কেন্দ্র ও রাজ্য— উভয় সরকারকেই বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ জানাই।
দীপংকর মান্না
চাকপোতা, হাওড়া
সঙ্কীর্ণতা কেন
পুনর্জিৎ রায়চৌধুরীর ‘বিনা পয়সার বিনোদন’ (১৫-১) প্রবন্ধটির প্রতিক্রিয়ায় একটি চিঠি ‘ভাল বনাম খারাপ’ (সম্পাদক সমীপেষু, ২৬-১) প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে পত্রপ্রেরক প্রশ্ন তুলেছেন, “বাণিজ্যিক পত্রিকাগুলি যোগ্যতার মাপকাঠি মেনে একেবারে সেরা লেখাগুলি প্রকাশ করে কি সব সময়? যোগ্য ব্যক্তি কি সেখানে লেখা প্রকাশ করার সুযোগ পান?” বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কী করে, সে কথায় যাওয়ার আগে মনে রাখতে হবে, ‘সেরা’ বা ‘যোগ্য’ অভিধাগুলি কিন্তু সব সময়ই আপেক্ষিক, কারণ ‘ভিন্নরুচির্হি লোকা’। প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকা তার উৎকর্ষ এবং পাঠকের কাছে দায়বদ্ধ। সেই কারণেই তার নিজস্ব মনোনয়ন পদ্ধতি থাকে। সেই ছাঁকনিতে তার পছন্দের লেখাগুলি সে বেছে নেয়। কোনও পত্রিকার বিচারে যা মুদ্রণযোগ্য, তা আর কারও কাছে পাঠযোগ্য মনে না-ই হতে পারে। আবার, কোনও পত্রিকার কাছে যা মুদ্রণযোগ্য নয়, তা হয়তো কোনও পাঠকের কাছে সাহিত্যের পরাকাষ্ঠা। কিন্তু তাতে মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা অসঙ্গত।
সমস্ত বিখ্যাত বা নামীদামি লেখকেরই একটা অপরিচিত শুরু থাকে। সে শুরু ছোটখাটো পত্রিকাতেও হতে পারে, বড় কাগজেও হতে পারে। কে কোথা থেকে উঠে আসছেন সেটা বড় কথা নয়। উঠে কোথায় আসছেন এবং কত দিন থাকছেন, সেটাই বিচার্য। সেই কারণেই লেখা ভাল না মন্দ, তার বিচার শুধু পাঠকের হাতে নেই, এর অনেকটাই নির্ধারণ করে সময়। অনেক কালজয়ী লেখাই তার প্রকাশকালে সমাদৃত হয় না, তার মর্ম বুঝতে সমকালকে আরও কয়েক দশক পরিণত হতে হয়। সেই সময়টা দেওয়ার আগেই কোনও লেখা সম্বন্ধে রায় ঘোষণা করলে ভুল হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
বড় পত্রিকার দিকে আঙুল তোলার আগে মনে রাখা দরকার, অনেক দিন ধরে ভাল লেখা এবং ভাল লেখক তুলে আনার দায়িত্ব সফল ভাবে পালন করে আসতে পারলেই কোনও পত্রিকা বড় হয়। রোম নগরীর মতোই বড় পত্রিকাও এক দিনে গড়ে ওঠে না। আর ভাল লেখা পাওয়ার জন্য নতুনদেরও সুযোগ দিতে হয়, যা বড় পত্রিকারা অবশ্যই করে। নতুনদের মধ্য থেকেই ভাল লেখা বেছে নিতে হয়, পুরোটাই পরীক্ষামূলক অভিযাত্রা, যাতে প্রচেষ্টা এবং প্রমাদ, অর্থাৎ ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ থাকেই। কিন্তু কেবল মাত্র নামীদামি লেখকদের জন্যই তার পরিসর আটকে একটি বড় পত্রিকা তার সাহিত্য-পরিসরকে বদ্ধ জলাশয় করে ফেলবে, তা ভাবা সঙ্গত নয়। এমন হয়ও না। অতি সাম্প্রতিক সময়ে চোখ রাখলেও, তা পুজোসংখ্যাই হোক বা নিয়মিত সংখ্যা, আমরা কিন্তু বড় পত্রিকাতেও নতুন নাম এবং বিষয়ের বৈচিত্র দেখতে পাই।
সব শেষে বলি, সমাজমাধ্যমের কথা। এতে তো সত্যিই অনেক সুবিধে আছে। এতে নিজের লেখা তুলে ধরলে মুহূর্তে অজস্র পাঠকের কাছে পৌঁছনো যায়। বড় কাগজের মতো সময় লাগে না, অমনোনয়নের ভয়ও থাকে না। কোনও সৃষ্টিকর্ম যেমন অবিমিশ্র খারাপ হয় না, এখানেও ভাল লেখা নিশ্চয়ই থাকে। কিন্তু যা-ইচ্ছে-তাই লেখালিখির মধ্যে যে যাচ্ছেতাইও মিশে থাকে, তা অস্বীকার করা একদেশদর্শিতারই নামান্তর। পাঠক তাঁর রুচি অনুযায়ী ভাল খুঁজে নেবেন, খারাপ এড়িয়ে যাবেন। কিন্তু সার্বিক ভাবে বাণিজ্যিক পত্রিকা মানেই খারাপ, সাহিত্যের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুনিশ্চিত ঠিকাদারি ছোট এবং বাণিজ্যে অসফল পত্রিকাগুলিরই হাতে— পাঠকের এই সঙ্কীর্ণতা কাম্য নয়।
বর্ণময় সুর
কলকাতা-১৫১
অমানবিক
গ্রীষ্ম ও শীতে শীর্ণ নদীখাত থেকে কিছুটা বৈধ, বেশির ভাগই অবৈধ ভাবে বালি তোলা হয়— এ কথা নদী তীরবর্তী এলাকার সব মানুষই জানেন। প্রশাসনও জানে। হুগলি জেলার দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বরে মূলত দু’ধরনের বালি পাওয়া যায়। একটি নদীখাতের জল ছেঁকে পাওয়া উৎকৃষ্ট বালি, অন্যটি জল থেকে বেশ দূরে থাকা নিকৃষ্ট বালি। জলের বালিকে বালতি করে তুলে মোষের গাড়ির উপরে থাকা খালি সিমেন্টের বস্তায় রাখা হয়। ওই বস্তাগুলিই ছাকনির কাজও করে। অর্থাৎ, জল ঝরে গিয়ে বালিতে ভরে ওঠে বস্তা। এই ভাবে প্রায় চল্লিশটি বস্তা ভরা হলে সেই ভয়ঙ্কর ভারকে নদীখাত থেকে তুলতে ব্যবহার করা হয় মোষ।
দু’টি মোষ খুব কষ্ট করে গাড়িটিকে টানতে থাকে। পায়ের নীচের বালিমাটি, জলধারার প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তারা পাড়মুখী হয়। এই সময় অবলা পশু দু’টির পিঠে পড়তে থাকে মোটা লাঠির আঘাত। অতিরিক্ত পরিশ্রমে অনেক সময় তারা হাঁপাতে থাকে। আধুনিক সভ্যতায় এমন চরম অমানবিক দৃশ্য পশুপ্রেমী মনকে ভারাক্রান্ত করে। এর সুরাহার পথ কি নেই?
পার্থ পাল
মৌবেশিয়া, হুগলি
শব্দদূষণ
“রাজ্যকে ‘তিরস্কার’ পরিবেশ কোর্টের” (২১-১) শীর্ষক সংবাদটি পড়লাম। শহর কলকাতার অন্যতম সঙ্কট তীব্র যানজট। যেখানে-সেখানে হকারের রমরমা, ফুটপাত নেই, লক্ষ লক্ষ মানুষের নিত্য আনাগোনা ব্যস্ত সড়কেই। যার জেরে যানবাহনের চলার গতি রুদ্ধ হয়ে পড়ে। আগে এগিয়ে যাওয়ার তাড়নায় শুরু হয় মোটরবাইক আরোহীদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত প্রতিযোগিতা। তীব্র হর্নের আওয়াজের দোসর হয় বেপরোয়া বাসের রেষারেষি। সেই সঙ্গে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ একযোগে বেড়ে চলে। বিস্ময়কর ভাবে মানুষ শব্দদূষণের বিরূপ প্রভাবের বিষয়ে মোটেই সচেতন নন। লাগাতার শব্দদূষণের ফলে বিবিধ স্বাস্থ্য বিষয়ক কু-প্রভাব দেখা যায়। এমনকি শিশুদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। মানুষের শ্রবণশক্তিজনিত সমস্যা জটিল আকার ধারণ করছে। কিন্তু হুঁশ নেই সরকারের। মাঝেমধ্যে আদালত হস্তক্ষেপ করে বিভিন্ন রায় দেয় বটে, কিন্তু তার ক’টা কার্যকর হয়?
ইন্দ্রনীল বড়ুয়া
কলকাতা-১৫