সোনালী দত্তের ‘বিয়ের পর কেরিয়ারে দাঁড়ি’ (৯-১১) শীর্ষক প্রবন্ধটি সময়োপযোগী এবং যুক্তিসঙ্গত। এক দিকে সংসারে পুরুষদের ইচ্ছা, ইগো, সন্দেহ, এবং অপর দিকে সাংসারিক কর্মকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে মেয়েদের নানা রকম চাপের মুখে বিবাহোত্তর জীবনে চাকরি থেকে সরতে বাধ্য হতে হয়। আবার এখনও বিয়ের পূর্বে দেখা যায়, চাকরিরত মেয়ে দেখতে এসে ছেলে বা ছেলের বাড়ির অভিভাবকরা মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে— “বিয়ে হলে চাকরি ছাড়বে তো?” কারণ, ছেলে যদি চাকরিরত মেয়েকে বিয়ে করে, তা হলে সংসারের কাজ করবে কে? এ কথা শুনে বাধ্য হয়ে নিজের সংসারের পরিস্থিতি বুঝে বিয়ের পর অনেক মেয়েকেই চাকরি ছাড়তে হয়। আবার অনেকে নিজের শক্ত জমি গড়তে চেয়ে মুখের উপর জবাব দিয়ে চাকরি না ছেড়ে বিয়েই প্রত্যাখ্যান করে। যদিও এর সংখ্যা নগণ্য। যার ফলে এ দেশে বিবাহিত নারীর কর্মনিযুক্তি সংখ্যা বিবাহিত পুরুষের চেয়ে অনেক কম।
স্বাধীনতার পর দেশে দারিদ্র, শিক্ষার হার, বিভিন্ন দিক দিয়ে উন্নতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পেশাগত জীবনে বিবাহিত নারীদের সঙ্কট এখনও রয়েই গিয়েছে। তার একমাত্র কারণ, পুরুষরা মনে করে তারাই ‘শ্রেষ্ঠ’ এবং নারী বা অপর লিঙ্গ মানেই ‘ইনফিরিয়র’ বা ‘নিকৃষ্ট’, ‘পিছিয়ে থাকা’, বা ‘পিছিয়ে পড়া’। আর তাই বাড়ির মেয়েটি যদি কোনও ভাবে শিক্ষা-দীক্ষা, কাজে-কর্মে পুরুষদের সমকক্ষ, অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে, অনেক পুরুষই তা কোনও ক্রমে মেনে নিলেও তাদের স্বাগত বা অভিনন্দন জানায় না। উল্টে তার মনে সেই মেয়েটির প্রতি ‘প্রতিহিংসা’, ‘আক্রোশ’, ‘ঈর্ষা’র কারণে এক ধরনের বিরূপ মানসিকতা তৈরি হয়, যা সংসারে অশান্তি ডেকে আনে। পরিশেষে সংসারে শান্তি ফেরাতে, মেয়েটি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়।
অসংগঠিত ক্ষেত্রে চাকরিরত মেয়েদের অবস্থা আরও করুণ। এ ক্ষেত্রে নারী-শ্রমিকরা সংসারের হাড়ভাঙা খাটুনি সেরে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর সন্ধ্যায় বা রাতে বাড়ি ফেরে। অথচ, স্বামীর কোনও কারণে সন্দেহ হলেই তার সংসারে নেমে আসে অশান্তির ঝড় এবং সংসারে শান্তি ফেরাতে গিয়ে নারী শ্রমিকটিকে ছাড়তে হয় চাকরি। ফিরে আসতে হয় ‘প্রজনন শ্রমিক’ হিসাবে। সন্তান পালনের মাধ্যমে সংসারের কাজকর্মের দায়িত্বে মনপ্রাণ সঁপে দিতে হয়।
শুধুমাত্র এ দেশেই নয়, পুরুষতন্ত্রের আগ্রাসী মনোভাব সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে আছে, যা নারীর কর্মজীবনকে ক্রমশ কোণঠাসা করার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছে।
তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
স্বীকৃতি চাই
সোনালী দত্তের প্রবন্ধ বিষয়ে কিছু কথা। প্রবন্ধকার সবই পরিসংখ্যান দিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেন এই সামাজিক ব্যাধি বা কোথায় লুকিয়ে আছে এর সমাধান— সেই তথ্য বিস্তারিত ভাবে জানতে পারলাম না। উনি যথার্থ ভাবেই বলেছেন, লিঙ্গবৈষম্য আমাদের দেশে প্রকট। নারীদের ঘরে-বাইরে সমান ভাবে কাজ করতে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে চাকরিরত মেয়ের সঙ্গে চাকরিরত পুরুষ মেলামেশার পর যখন ঘর বাঁধার জন্য প্রস্তাব দিল, তখন মেয়েটি জানাল তার নারীসত্তার বিসর্জন সে দিতে পারবে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কথাটির যথাযথ মর্যাদা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিবাহের পর পুরুষ তার পৌরুষত্ব ফলানোর চেষ্টা করে যায়। ফলে উভয়ের মধ্যে বাড়তে থাকে দূরত্ব। নারী যদি তার আত্মসম্মান ভুলে সব কিছু আত্মসমর্পণ করে সংসার করে, তবেই সব ঠিকঠাক চলতে থাকে। কিন্তু মেয়েটি হারিয়ে ফেলতে পারে তার শিক্ষা, মর্যাদাবোধ। অন্যথায় বাড়তে থাকে দূরত্ব, শেষে ছাড়াছাড়ি ভিন্ন গত্যন্তর থাকে না।
কয়েক হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অবসানের চেষ্টা রাষ্ট্র করছে না। বরং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলের চেষ্টা করার পরিবর্তে আরও বেশি করে নারীকে গৃহবন্দি করার কৌশলগত অবস্থান নিচ্ছে। আমরা পুরুষরাও নারীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাদের বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা পাওয়া নিয়ে ক্রমাগত ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করছি আড়ালে-আবডালে। মুখে নারী-স্বাধীনতার কথা বললেও মানছি না নিজের সংসারে।
প্রবন্ধকার যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ সত্য। নারীদের পেশাগত জীবন শুধুমাত্র বিলাসিতা বা অতিরিক্ত আয়ের সামান্য প্রচেষ্টা নয়। সংসার, সমাজ, রাষ্ট্র, সর্বোপরি নারীর স্বাধিকারের জন্য তার পেশাগত জীবনের স্বীকৃতি চাই। এর জন্য গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। তার জন্য রাষ্ট্র ও সমাজকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তবে সর্বাগ্রে এই বিষয়ে পুরুষদের উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।
বীরেন্দ্র নাথ মাইতি, বুলবুলচটি, পশ্চিম মেদিনীপুর
ভাবনায় বদল
সোনালী দত্তের ‘বিয়ের পর কেরিয়ারে দাঁড়ি’ প্রবন্ধটি বাস্তবের যথার্থ প্রতিফলন ও তথ্যসমৃদ্ধ রচনা। প্রবন্ধকার যে শুরুতেই বলেছেন, “সমাজ ভাবতে পারে না, স্বামী বেঙ্গালুরুর চাকরি ছেড়ে উত্তরপাড়ায় আসবেন, চাকরিতে সমঝোতা করে…”— সেই উদাহরণ কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে স্থান সহযোগে আমার জীবনের সঙ্গে। আমি দেশের প্রথম সারির এক ইনফর্মেশন টেকনোলজি এবং সফটওয়্যার কোম্পানির একটিতে কর্মরত ছিলাম বেঙ্গালুরুতে। প্রায় দীর্ঘ ২৫ বছর চাকরি করার পর সময়ের আগেই অবসর নিয়ে আমাদের উত্তরপাড়ার বাড়িতে চলে আসি নিজের সংসারের দেখভাল করার জন্য। আমার অবসরের তখনও বছর পাঁচ বাকি ছিল। কারণ, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এখানে কর্মরত, দ্বিতীয় সন্তান তখন স্কুলের উঁচু ক্লাসে পাঠরত। টিভিতে এক সময় মিস্টার ইয়া মিসেস নামে একটি হিন্দি জনপ্রিয় সিরিয়াল হত। তাতে স্বামীকে দেখা গিয়েছিল হাউস হাজ়ব্যান্ড হিসাবে কাজ করতে, আমিও সংসারে সেই ভূমিকাটাই পালন করছি।
এ ভাবে কেরিয়ারে সমঝোতা করে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতা বা কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এখন অনেকে চলে আসে, যদিও সংখ্যায় তারা নগণ্য। ছেলেদের ক্ষেত্রে সেটা সমাজের মেনে নেওয়া বা না নেওয়া, এ ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। হয়তো আড়ালে বোকা বলে তাদের কটূক্তিও করা হয়। কিন্তু চিন্তাভাবনা যে ক্রমশ বদলাচ্ছে, সেটা এই সব উদাহরণে স্পষ্ট বোঝা যায়।
ধ্রুবজ্যোতি রায়, উত্তরপাড়া, হুগলি
অপরিচ্ছন্ন
পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্যতম ব্যস্ত রেলস্টেশন বর্ধমান জংশন, আটটি প্ল্যাটফর্ম বিশিষ্ট শতাব্দীপ্রাচীন এই স্টেশনে দৈনিক লক্ষাধিক যাত্রীর যাতায়াত। প্ল্যাটফর্মগুলি মোটামুটি পরিষ্কার থাকে নিত্যদিন সাফ করার জন্য। কিন্তু প্ল্যাটফর্মের বাইরের দিকগুলি, অর্থাৎ স্টেশন সংলগ্ন বাকি বেশির ভাগ অংশ অত্যন্ত নোংরা। স্টেশন থেকে বার হওয়ার দুই দিকের প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরোনোর রাস্তার একই হাল। যে ভাবে উচ্চ আধিকারিকদের পরিদর্শনের সময় স্টেশন সংলগ্ন স্থান পরিষ্কার করা হয়, ঠিক একই ভাবে নিত্যদিন এই জায়গা কেন পরিষ্কার থাকে না, সেটাই ভাবার! এর দায় কার, আর পরিষ্কারের দায়িত্বই বা কার— আমরা সাধারণ রেলযাত্রীরা জানি না। শুধু বর্জ্যের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ পেরিয়ে প্রয়োজনের তাগিদে ট্রেন ধরতে যাই।
রেলযাত্রীদের কারণে এ-হেন অপরিচ্ছন্নতা দেখা দিলে তাঁদের জরিমানার বিধান তো আছেই আইনে। কিন্তু কোনও কর্মীর গাফিলতিতে নিয়মিত স্টেশন চত্বর অপরিষ্কার থাকছে কি না— তাও খতিয়ে দেখা হোক। এর সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত টোটোর ভিড়, প্ল্যাটফর্মে নোংরা বেসিন, প্রতি প্ল্যাটফর্মে পরিচ্ছন্ন মহিলা ও পুরুষ শৌচালয় না থাকা— এ সব সমস্যা তো আছেই। সংশ্লিষ্ট দফতরকে আবেদন করছি এর যথাযথ সমাধানের।
সন্দীপন সরকার,পাল্লা রোড, পূর্ব বর্ধমান