West Bengal

সম্পাদক সমীপেষু: লুণ্ঠিত ঐতিহ্য

রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির দ্বারা রাজ্যের শাসনকর্তা হিসাবে নিযুক্ত হয়ে থাকেন। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি তাঁকে পদচ্যুতও করতে পারেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৫৪

ফাইল চিত্র।

‘কুনাট্য চলিতেছে’ (সম্পাদকীয়, ১১-৩) নিবন্ধে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার বর্তমান ছবিটি তুলে ধরা হয়েছে। বিধানসভার যে একটা আলাদা মর্যাদা ও ঐতিহ্য আছে, সে বিষয়টি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেন ভুলে বসে আছেন। তাঁরা কি জানেন না যে, তাঁদের এই আচরণ জনমানসে কী বার্তা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে? রাজ্যের মানুষের কথা চিন্তা না করে বিধানসভাকে ক্ষমতা প্রদর্শনের জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, যা অন্যায় ও লজ্জাজনক। সম্পাদক উল্লেখ করেছেন, “এই অসহনীয় কুনাট্যের শরিক হইতেছেন শাসক ও বিরোধী দুই পক্ষ।” তিনি রাজ্যপালকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন।

রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির দ্বারা রাজ্যের শাসনকর্তা হিসাবে নিযুক্ত হয়ে থাকেন। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি তাঁকে পদচ্যুতও করতে পারেন। রাজ্যপালের চারটি ক্ষমতার কথা উল্লেখ আছে সংবিধানে। এক, শাসনবিভাগীয় ক্ষমতা— রাজ্যপালের নামে রাজ্যের শাসনক্ষমতা পরিচালিত হয়। দুই, আইন বিষয়ক ক্ষমতা— আইনসভার অধিবেশন আহ্বান, স্থগিত রাখা এবং ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা। তাঁর সম্মতি ভিন্ন বিল আইনে পরিণত হয় না। তিন, বিচার বিষয়ক ক্ষমতা, যার বলে তিনি আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পারেন। চার, অর্থ বিষয়ক ক্ষমতা— অর্থ সম্বন্ধীয় কোনও বিষয় তাঁর সম্মতি ভিন্ন আইনসভায় উপস্থিত করা যায় না।

Advertisement

কিন্তু সংবিধানে যে ক্ষমতার কথাই বলা থাক না কেন, নির্বাচিত বিধায়ক, সরকার আর রাজ্যপালের পারস্পরিক সমন্বয়, এবং সম্ভ্রমপূর্ণ সম্পর্কের দ্বারাই রাজ্যের প্রশাসন চালিত হওয়ার কথা। রাজ্যপাল আর বিধানসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্যে ইগোর লড়াইয়ে ব্যস্ত। রাজ্যের কী হল, জনগণের কী হল, সে সব ভাবার সময় কোথায়। কিন্তু ওই বিধায়কদের জন্য আজ বিধানসভার ঐতিহ্য, মর্যাদা ধুলায় লুণ্ঠিত। সম্পাদকীয় নিবন্ধের শেষ অংশে যথার্থই বলা হয়েছে, একের পর এক দল আসে, শাসক আসেন, আর রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির নতুন নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হয়। যা দেখে নাগরিকের লজ্জা আরও বাড়ে। শাসক বা বিরোধী, কারও এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের ইচ্ছে আছে বলে মনে হয় না।

মিহির কুমার ঘোষাল

দালালপুকুর, হাওড়া

ঘুষি না, ভাষণ

বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভা বিলুপ্ত করে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার জন্ম হয় ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট। সেই বছর ২১ নভেম্বর প্রথম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশন বসে, স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নে স্নাতক, প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন ও কলকাতার টাঁকশালে ডেপুটি অ্যাসেস মাস্টার ছিলেন। এই পদে তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয়। বিধানচন্দ্র রায়, জ্যোতি বসু প্রমুখ নেতা ছিলেন এই কক্ষের সদস্য। বিরোধী নেতা হিসেবে বিধানসভায় জ্যোতি বসু, কিংবা সংসদে অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন কোনও ভাষণ দিতে দাঁড়াতেন তখন শাসক দল চিন্তায় পড়ে যেত। এই হল রাজনীতি। আজ বিরোধীরা বাক্য ছেড়ে দৈহিক শক্তি প্রয়োগ করছেন! শঙ্কর দাস বন্দ্যোপাধ্যায়, অপূর্বলাল মজুমদার, বিজয় কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কেশবচন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিত্বের দ্বারা এই বিধানসভা পরিচালিত হত।

আজ সেই বিধানসভার অবস্থা পাড়ার ক্লাব বা শিশুদের স্কুলের মতো। মানুষের যখন শিক্ষা, বিবেক, চেতনা হারিয়ে যায়, তখনই মানুষ যুক্তি ছেড়ে শক্তি প্রয়োগ করে। বক্তার নিজেরই ওজন যদি না থাকে, তবে বক্তব্যের ধার ভোঁতা হয়ে যায়। ইন্দিরা গান্ধী, প্রণব মুখোপাধ্যায়, কপিল সিব্বল, আনন্দ শর্মা, এঁদের বক্তব্যের ওজন ও ধার দুটোই ছিল। সৌগত রায়, মহুয়া মৈত্ররা হাউসে চিৎকার করে গলা ফাটান না, এঁদের বক্তব্যের ওজন ও ধার দেখে হাউস চুপ থাকে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় তেমন বিরোধী নেতা কোথায়!

পার্থময় চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা-৮৪

এই আচরণ?

‘অসভ্যতার প্রদর্শনী’ (৩১-৩) সম্পাদকীয়ের সঙ্গে সহমত। সমাজের জনপ্রতিনিধিদের শিষ্টাচারের লাগামটি যে ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তা সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ঘটনায় প্রমাণিত। জনপ্রতিনিধিদের আচরণে অগণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। লোকসভা এবং বিধানসভা, উভয় ক্ষেত্রেই শাসক-বিরোধীদের এমন অসৌজন্য শেষ পর্যন্ত হাতাহাতি-রক্তারক্তিতে পরিণত হচ্ছে। ফলে গণতন্ত্রের পীঠস্থান কলুষিত হয়েই চলেছে, যা নাগরিকদের জন্য নেতিবাচক এক বার্তা বহন করে। তবু এ কথাও সত্যি যে, সমগ্র সমাজ জুড়েই ন্যায়-নীতি সমন্বিত আচরণের ভাটা চলছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ব্যতিক্রম হতে পারে না।

শাসক-বিরোধীদের যুক্তিনিষ্ঠ তর্ক-বিতর্কের গর্ভগৃহ হল বিধানসভা। সেখানে অসভ্যতার চূড়ান্ত প্রদর্শন চলছে। প্রাপ্তবয়স্ক কিছু জনপ্রতিনিধিকে নীতিবাক্য শেখানোর দায় সমাজের নেই, তাঁরা দুগ্ধপোষ্য শিশু নন। তবু জনসাধারণের প্রতিনিধিদের এমন আচরণে নাগরিক সমাজে প্রশ্ন উঠবেই। শীর্ষ নেতাদের দৃঢ় পদক্ষেপ করে নিজ নিজ দলের প্রতিনিধিদের সংযত আচরণের পাঠ দেওয়া অবশ্যকর্তব্য।

সঞ্জয় রায়

দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

খেলাই হোক

ঘুষি মারতে কি শুধু মেরি কম পারেন? বঙ্গ রাজনীতির ‘হেভিওয়েট’রা যে কম যান না, তা তাঁরা প্রমাণ করে দিলেন। খারাপ লাগছে যে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের লাইভ টেলিকাস্ট থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম! যে আন্তরিকতায় মারামারি হল, তার ছিটেফোঁটাও বিতর্কে থাকলে বিধানসভা ধন্য হত।

কেমন হয় যদি এই হাতাহাতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায়, ‘খেলা হবে’-র আধুনিকতম পর্যায় হিসাবে? বিধানসভা-সংলগ্ন একটি ছোট্ট স্টেডিয়াম তৈরি হতে পারে। যাঁরা পেশিশক্তিতে বিশ্বাসী, মস্তিষ্ক সঞ্চালনে ততটা দক্ষ নন, এই জায়গাটি থাকবে তাঁদের জন্য। যাঁরা সুন্দর ভাবে বক্তব্য পেশ করতে পারেন; কেবল তাঁদের স্থান হোক বিধানসভার ভিতরে।

এতে লাভ হবে এই যে, হট্টগোলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিলের উপর প্রয়োজনীয় আলোচনা বাধাপ্রাপ্ত হবে না; স্পিকারকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিতে হবে না; অপ্রয়োজনীয় মামলার হাত থেকে বাঁচবে হাই কোর্ট। এই মডেল সফল হলে হয়তো ‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’র ভিতর গড়ে উঠবে অ্যাম্ফিথিয়েটার। আরও উন্নত মানের বাহুবলীদের আমরা দেখতে পাব!

দেবাশিষ মিত্র

কলকাতা-৭০

পণ্ডশ্রম

তৃণমূল ও বিজেপি বিধায়কদের হাতাহাতিতে রণক্ষেত্র বিধানসভা। এঁদেরই হাতে আমরা গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব তুলে দিয়েছি! এঁরাই বিধানসভা থেকে বেরিয়ে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে শান্তিপূর্ণ ভাবে থাকার পরামর্শ দেবেন, গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলবেন। অবাক লাগে, আমরা কত পরিশ্রম করে, অনাহারে মরে ওঁদের আরামে রাখার ব্যবস্থা করি। ওঁদের ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার লিস্টে নাম তুলতে গিয়ে কাজের দিন নষ্ট করি। ফর্ম তোলা, এখানে-ওখানে ছোটা, জ়েরক্স করা, জমা দেওয়া, স্ক্রুটিনি, ফটো তোলা, বিডিও-এসডিও অফিসে ছোটাছুটি। এর পর লাইনে দাঁড়িয়ে, রোদে পুড়ে, জলে ভিজে এঁদের আমরা ভোট দিই। মানুষ আশা করেন, যদি এঁরা বিধানসভায় গিয়ে একটু খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করেন, জিনিসের দাম কমান। কিন্তু যাঁদের আমরা বিধানসভায় পাঠালাম, তাঁদের আচরণ সত্যিই হতাশ করে।

নিখিল কবিরাজ

শ্যামপুর, হাওড়া

আরও পড়ুন
Advertisement