Science and Technology

বিজ্ঞানে অনীহা

প্রযুক্তির কথা বাদ দিয়ে কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমরা কী করছি? বিজ্ঞানে চিরকালই আমাদের অনীহা, কারণ বিশেষ টাকা পাওয়া যায় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৩ ০৫:৩৪
An image of Science

—প্রতীকী চিত্র।

পথিক গুহ-র ‘জ্যান্ত বেড়াল, না মরা?’ (৪-৬) শীর্ষক প্রবন্ধটির পরিপ্রেক্ষিতে জানাই, ভারত সরকার ২০২০ সালে ৮০০০ কোটি টাকা কোয়ান্টাম তথ্যপ্রযুক্তি ও তার ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ করেছিল, কোয়ান্টাম বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য করেনি। বিজ্ঞান আমাদের ব্রাত্য। বর্তমানে গোপনীয় আদানপ্রদান ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’-এর (ওটিপি) সাহায্যে করা হয়। ফোনের মাধ্যমে পাঠানো ওটিপি মাঝপথে এমন ভাবে জেনে নেওয়া সম্ভব যে, প্রেরক বা গ্রাহক কিছুই টের পাবে না। এখানেই কোয়ান্টাম তথ্যপ্রযুক্তি আসছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে যে, একটা কণার অবস্থান জানতে গেলে পরিমাপের অভিঘাতে তার ভর-বেগ বদলে যাবে, বা কণাতে একটা চাঞ্চল্য (ডিস্টার্বেন্স) আসবে। কাজেই যদি এই ‘ওটিপি’ ইলেকট্রন বা ফোটনের কৌণিক ভরবেগের অভিমুখ বা পোলারাইজ়েশন-এর মাধ্যমে কোয়ান্টাম তথ্য হিসাবে পাঠানো হয়, তা হলে কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার নীতি অনুযায়ী কেউ এই কোয়ান্টাম তথ্য মাঝপথে পরিমাপ করে জানলে হয় তথ্যের বিকৃতি ঘটবে, অথবা উপযুক্ত কোয়ান্টাম চ্যানেলে আওয়াজ (ডিস্টার্বেন্স) উঠবে, বা দুটোই হবে। তার ফলে প্রেরক ও গ্রাহক তা জানতে পারবে। কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট ব্যবহার করে শূন্য মাধ্যমে আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে সংবাদ পাঠানো যায় না। তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে এর ব্যবহার করা হয়। কোয়ান্টাম গুপ্তলিপি, কোয়ান্টাম কম্পিউটার, এই সব নিয়ে গত ২০-৩০ বছর ধরে কাজ চলছে। আমরা অনেক দেরিতে শুরু করছি, যখন বোঝা গিয়েছে যে এইগুলি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি হতে চলেছে।

প্রযুক্তির কথা বাদ দিয়ে কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমরা কী করছি? বিজ্ঞানে চিরকালই আমাদের অনীহা, কারণ বিশেষ টাকা পাওয়া যায় না। এখন বলা হচ্ছে, কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার কথাই নাকি ঋষিরা অদ্বৈত বেদান্ত শাস্ত্রে বলে গিয়েছেন (এই দৃশ্যমান জগৎ মায়া বা মিথ্যা, কেবল ব্রহ্ম সত্য)। কারও বিশ্বাসে আঘাত না দিয়ে বলছি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এই ধরনের কিছু বলে না। কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার সঙ্গে পরিমাপের মৌলিক সীমাবদ্ধতার সম্পর্ক আছে, এবং তার অন্তরালে কোনও ঈশ্বরের খোঁজ পাওয়া যায়নি। দৃশ্যমান বড় বস্তুর ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম গণনা ও সনাতন পদার্থবিদ্যার গণনা প্রায় একই ফল দেয়। কাজেই আমি না দেখলেও এই চেয়ারটার, বা চাঁদের, একটা নির্দিষ্ট অবস্থান আছে— এ কথা বললে কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী প্রায় ঠিকই বলা হয়। এই জগৎ মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য ২০২২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি, বা সে রকম কিছু পদার্থবিজ্ঞানীরা বলেননি। অনেকের বেদান্তে বিশ্বাস থাকতেই পারে, কিন্তু তার সঙ্গে কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের কোনও সম্পর্ক নেই।

Advertisement

অম্লান রায়, কলকাতা-৬৪

জলাভূমির মূল্য

‘মেয়াদ কত দিন’ (১০-৬) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে বলতে চাই, পরিবেশ সঙ্কট সম্পর্কে মানুষ আগের থেকে বেশি ওয়াকিবহাল হলেও, প্রকৃতি-পরিবেশের প্রতি উদাসীনতার কোনও পরিবর্তন হয়নি। আমরা এখনও যত্রতত্র আবর্জনা, নদী ও জলাশয়ে প্লাস্টিক ফেলছি, জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করছি।

পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে জলাভূমি ঢাল হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। কারণ, জলাভূমি একই সঙ্গে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং মিথেনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্ষম। তাই জলাভূমিকে প্রকৃতির কিডনি বলে। তা ছাড়া, একটি জলাভূমিতে যে পরিমাণ অক্সিজেন তৈরি হয়, তা ওই জলাভূমির পাঁচ গুণ আয়তনের অরণ্য থেকে প্রাপ্ত অক্সিজেনের সমান। যে-হেতু জলাভূমিগুলি জল ধরে রাখে, তাই সেই জল চুইয়ে চুইয়ে ভূগর্ভস্থ জলের স্তরকে ঠিক রাখে। জলাভূমিকে বুজিয়ে যে ভাবে অপরিকল্পিত ভাবে নগরায়ণ হচ্ছে, তাতে গ্রিনহাউস গ্যাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জলসঙ্কটের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অথচ, সরকারি উদাসীনতায় একের পর এক জলাভূমি বুজিয়ে অট্টালিকা তৈরি হচ্ছে।

রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

নিঃসঙ্গ

সোনালী দত্তের ‘ঘরে ফেরার গল্প’ (১-৬) এই সময়ের জীবন্ত দলিল। সভ্যতার অগ্ৰগতিতে সমাজ, সংসার, পরিবার, সম্পর্ক যত টুকরো-টুকরো হয়েছে, প্রবীণদের জীবনে ততই ট্র্যাজেডি ঘনিয়ে এসেছে। আমাদের দেশে প্রায় দু’কোটি মানুষ আজ শুধু গৃহহীন নয়, সম্পর্কহীন হয়েও কোনও রকমে বেঁচে আছেন। সব কিছু থেকেও আজ যেন তাঁরা ‘সর্বহারা’। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। এক সময় ছেলেমেয়েদের নিয়ে একান্নবর্তী পরিবারে সবাইকে একটু ‘দুধে-ভাতে’ রাখার জন্য বাবা-মায়েরা কতই না উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছিলেন। অথচ, বিবাহ কিংবা কর্মসূত্রে আজ সেই ছেলেমেয়েদের কেউই বাবা-মায়ের কাছে থাকে না। দেশের বাড়িটি এখন ফাঁকা, ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে আছে শুধু নিঃসঙ্গ দু’টি প্রাণ। মাঝেমধ্যে ছেলেমেয়েরা তাঁদের দেখতে আসেন। কিন্তু, বাবা-মায়ের নিঃসঙ্গতা, যন্ত্রণা দূর হয় কি? হঠাৎ অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে তাঁদের নিয়ে যাওয়া, কিংবা মন ভাল রাখতে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার মানুষ কোথায়? মৃণাল সেনের আকালের সন্ধানে ছবিতে এক বৃদ্ধার ভূমিকায় গীতা সেন তরুণী নায়িকাকে (স্মিতা পাটিল) উৎকণ্ঠিত গলায় বলেন, “একা একা থাকি... জানো মা, মাঝে মাঝে কেমন ভয় ভয় করে। এত বড় বাড়ি, রুগ্ণ মানুষ (স্বামী) নিয়ে একা একা থাকি। বিপদে-আপদে কাউকে যে ডাকব...!” বুঝতে অসুবিধা হয় না, এ-ও এক ধরনের আকাল, যা তখন ছিল, এখনও আছে।

অরুণ মালাকার, কলকাতা-১০৩

গাছের মৃত্যু

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ‘এক দিনের সচেতনতা’ (৭-৬) প্রবন্ধে পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে প্রহসনের যে কথা তুলে ধরেছেন, তা অস্বীকার করার জো নেই। দু’চারটে গাছ লাগিয়ে যে ভাবে প্রচার অভিযান চলে, সেই ভাবে বৃক্ষ-নিধনের বিরুদ্ধে যদি রুখে দাঁড়ানো যেত, তা হলে পরিবেশের আজ এমন বেহাল দশা হত না। লেখক সোদপুরের পুরনো একটি জলাশয় বাঁচানোর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। প্রশাসন সেই কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সেটি রক্ষণাবেক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছে। তবে সর্বত্র এমনটি ঘটে না। যেমন, উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের একটি কারখানা। অভিযোগ, এই কারখানা কর্তৃপক্ষ কয়েক হাজার মূল্যবান গাছ নির্দয় ভাবে কেটে ফেলেছেন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে। সংবাদপত্রে, সমাজমাধ্যমে লেখালিখি হয়েছে বিস্তর। তবুও নির্বিচারে পরিবেশ ধ্বংস হয়েছে। আজকাল সরকারি ও বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান পরিবেশ বাঁচাতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করছেন, এবং তার পরিকাঠামো গড়ে তুলছেন ছাদে কিংবা পরিত্যক্ত জায়গায় প্রয়োজনীয় শেড বানিয়ে তার উপর। ইছাপুরের এই কারখানাটির ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম ঘটিয়ে এলাকার ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হল?

বাবুলাল দাস, ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

ফিরুক ট্রাম

কলকাতার বুকে এখন হাতেগোনা রুটে ট্রাম চলছে। অধিকাংশ রাস্তায় ট্রামলাইন পিচ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী যে কথা বলেছেন, তা যুক্তিনির্ভর নয়। কী করে তিনি বলেন, সঙ্কীর্ণ রাস্তায় যানজটের কারণে সব রুটে ট্রাম না চালিয়ে অল্প কিছু রুটে ট্রাম চালাতে (ট্রাম ফেরাতে, ২-৬)? প্রশ্ন হল, কেন কলকাতার স্নায়ুকেন্দ্র থেকে ট্রাম এ ভাবে আস্তে আস্তে তুলে দেওয়া হচ্ছে? স্বমহিমায় ট্রাম চলুক উত্তর থেকে দক্ষিণ, অনুরোধ জানাই।

গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০১

আরও পড়ুন
Advertisement