Festivals

সম্পাদক সমীপেষু: উৎসবের যন্ত্রণা

এক দিকে দৈনন্দিন জীবনে রাস্তা-ঘাটে সমস্ত ধরনের বর্জ্য ফেলা, পান-গুটখা খেয়ে যত্রতত্র থুতু ফেলা যেমন আছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে আছে ফসলের নাড়াপোড়া।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ০৬:২২
Picture of people.

উৎসবের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। ফাইল চিত্র।

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমরা কি পিছন দিকে হাঁটছি’ (২৩-২) শীর্ষক প্রবন্ধে সঠিক কথাই বলা হয়েছে, উৎসব এখন এক শ্রেণির হুজুগ এবং অন্যদের যন্ত্রণার কারণ। সন্দেহ নেই, উৎসবের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে এবং এই উপলক্ষকে কেন্দ্র করেই বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগের পরিমাণও। শীতের কয়েক দিন প্রত্যেক জেলায় বললেও কম বলা হবে, প্রায় প্রতিটি পঞ্চায়েত ও পুরসভায় এক বা একাধিক উৎসবের প্রাবল্যে, পরবর্তী সময়ে অবহেলায় পড়ে থাকা নোংরা ও আবর্জনা দূষিত করছে পরিবেশকে। এক দিকে দৈনন্দিন জীবনে রাস্তা-ঘাটে সমস্ত ধরনের বর্জ্য ফেলা, পান-গুটখা খেয়ে যত্রতত্র থুতু ফেলা যেমন আছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে আছে ফসলের নাড়াপোড়া। বিয়েবাড়ি বা যে কোনও অনুষ্ঠানে রাত-বিরেতে শব্দবাজির ঝঙ্কার, ডিজের তালে বিভিন্ন ধরনের শোভাযাত্রা থেকেও মুক্তি নেই।

গঙ্গাসাগর, রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবরকে দূষণমুক্ত করার জন্যে সরকারের প্রশংসা অবশ্যই প্রাপ্য। কিন্তু ভুললে চলবে না, ছটপুজো কিংবা প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে সর্বত্রই গঙ্গাকে যে পরিমাণ দূষিত করা হয়, তা অতি অবশ্যই বন্ধ করার জন্যে সরকারের কড়া পদক্ষেপ করা উচিত। অন্য দিকে, গাছপালা কেটে, পুকুর বুজিয়ে দিনের পর দিন পরিবেশের ক্ষতি বেড়েই চলেছে। সর্বোপরি চলছে অপরিকল্পিত ভাবে আবাসন নির্মাণ। ফলে বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে রাস্তায়। কম খরচের মাল পরিবহণে চলছে মোটরচালিত ভ্যান, যার ধোঁয়া পরিবেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। এমন অজস্র উদাহরণ ছড়িয়ে আছে আশেপাশে। তাই অতি অবশ্যই প্রাথমিক স্তর থেকে পরিবেশকে ছোটদের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। প্রশাসনও রাজনৈতিক কারণে অনেক কিছুই না দেখার ভান করে থাকে, এটা আজ সকলেরই জানা। সেই জন্য পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংগঠন ও সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের এই ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত, যাতে সরকার বাধ্য হয় পরিবেশ নিয়ে ভাবনায় বদল এনে সঠিক পদক্ষেপ করতে, যা বর্তমান যন্ত্রণা থেকে রেহাই দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে বর্তমান প্রজন্মকে।

Advertisement

অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি

গাছই ভিলেন?

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো ২০২১-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃত্যু হয় পথ-দুর্ঘটনায়। ২০২১ সালে মোট দুর্ঘটনা হয়েছে চার লক্ষেরও বেশি। আর তাতে মৃত্যু হয়েছে দেড় লক্ষের অধিক মানুষের। আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। রাজ্য হিসাবে দুর্ঘটনায় প্রথম উত্তরপ্রদেশ, দ্বিতীয় তামিলনাড়ু, তৃতীয় মহারাষ্ট্র। এই দুর্ঘটনার প্রায় ৪৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৫ শতাংশ গাড়ি, আর ৯.৪ শতাংশ লরি বা ট্রাক-দুর্ঘটনা। বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়, ভারতে সমগ্র রাস্তার দৈর্ঘ্যের অনুপাতে জাতীয় সড়ক মাত্র ২.১ শতাংশ আর রাজ্য সড়ক ২.৯ শতাংশ! কিন্তু দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান জাতীয় সড়কে ৩১.২ শতাংশ আর রাজ্য সড়কে ২৩.৪ শতাংশ। আর মোট মৃত্যুর ক্ষেত্রে জাতীয় সড়কে তা সংঘটিত হয়েছে ৩৫.৮ শতাংশ ক্ষেত্রে। আর রাজ্য সড়কে তা ২৪.৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে আর একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য, পথ-দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত গতি দায়ী ৫৯.৭ শতাংশ ক্ষেত্রে আর বেপরোয়া গতি বা ওভারটেক করার প্রবণতা দায়ী ২৫.৭ শতাংশ ক্ষেত্রে। এবং এই সমস্ত পথ-দুর্ঘটনার ৫৯.৭ শতাংশ ঘটেছে গ্রাম্য ঘন বসতিপূর্ণ অঞ্চলে, বাকি ৪০.৩ শতাংশ শহরাঞ্চলে ঘটেছে। সালভিত্তিক পথ-দুর্ঘটনার আরও বিস্তারিত সরকারি পরিসংখ্যান রয়েছে, যা বিশ্লেষণ করলে যে কোনও কাণ্ডজ্ঞানযুক্ত মানুষ বুঝবেন, যত বেশি চওড়া রাস্তা, তত বেশি যানবাহনের গতি, এবং তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পায় পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল!

পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সরকারি পরিসংখ্যানের এমন বিশ্লেষণের কারণ— যশোর রোডকে (বর্তমানে ১১২ নম্বর জাতীয় সড়ক) চওড়া করার প্রস্তাব। সীমান্ত শহর বনগাঁ থেকে বারাসত পর্যন্ত এই সড়কের দু’-ধারে শতাব্দীপ্রাচীন প্রায় সাড়ে চার হাজার গাছ রয়েছে। কালের নিয়মে এই অঞ্চলের জনপদগুলোতে জনসংখ্যা বেড়েছে, যানবাহন বেড়েছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সড়ক-দুর্ঘটনাও বেড়েছে। কিন্তু এই জনপদের বহু মানুষ মনে করেন, যশোর রোডের দুর্ঘটনার জন্য আসলে দায়ী ওই শতাব্দীপ্রাচীন কয়েক হাজার বৃক্ষ! তাঁদের এমন যুক্তির মূল সুর এটাই— যেন আপদ ওই গাছগুলো না থাকলে এই রাস্তা এতটা সঙ্কীর্ণ থাকত না। আর দুর্ঘটনাও হত না! কিন্তু গোটা দেশের সড়ক-দুর্ঘটনার তথ্য তার উল্টো মতটাই প্রতিষ্ঠা করছে। অর্থাৎ, ঘন জনপদের বুক চিরে চলে যাওয়া চওড়া হাই রোডগুলোই তুলনামূলক ভাবে মারাত্মক দুর্ঘটনাপ্রবণ। আক্ষরিক অর্থেই মৃত্যুফাঁদ!

অতি সম্প্রতি যশোর রোড সম্প্রসারণ এবং এর উপর পাঁচটি রেল ক্রসিং-এ ওভারব্রিজ তৈরির জন্য ৩৫৬টি গাছ কাটার উপর যে স্থগিতাদেশ ছিল, তা তুলে নিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। খবরটি যথেষ্ট ফলাও করে প্রচার করা হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। অবিমৃশ্যকারী বৃক্ষনিধনবাদীরা যারপরনাই উল্লসিত আদালতের এই রায় ঘোষণায়। যশোর রোডের দুর্ঘটনায় তাঁরা মায়াকান্না কাঁদেন বটে, কিন্তু কখনওই বুঝতে চান না যে, বেশি চওড়া রাস্তায় বেশি দুর্ঘটনা হয়! যশোর রোড আগামী দিনে গাছ কেটে আরও প্রশস্ত হবে কি না, তা আদালত নির্ধারণ করবে। কিন্তু যশোর রোডের যানবাহন-দুর্ঘটনার জন্য একমাত্র গাছকেই দায়ী করা এখনই বন্ধ হোক!

এও ঠিক, সাম্প্রতিক কালে যশোর রোডে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে অনেক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। যে কোনও মৃত্যুই বেদনাদায়ক। বিশেষ করে পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো নেমে আসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে। সদিচ্ছা থাকলে, গাছের রুগ্‌ণ ডাল ভেঙে পড়ে মৃত্যু আটকানো সম্ভব। কিন্তু যশোর রোডে এ রকম মৃত্যু এড়ানো যাচ্ছে না। কারণ, আমরা আত্মকেন্দ্রিক, ভোগবাদী হয়ে পড়েছি। জীবনচর্যায় গাছেদের অবদান, গুরুত্ব বুঝতে আমরা নিতান্তই অনাগ্রহী। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ তার সমগ্ৰ জীবনকালে আমাদের কী দেয়? বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে কী ভূমিকা রাখে? অর্থমূল্যের বিচারে সেটা কত? সে হিসাব আমাদের ক্ষমতালোভী প্রশাসকগণ জানেন না, করেন না। আর তার জন্যই সেই অনুপাতে গাছের পরিচর্যায় পরিশ্রম, মস্তিষ্ক আর অর্থ বরাদ্দ হয় না। ফলত শতাব্দীপ্রাচীন গাছের রুগ্‌ণ, মৃতপ্রায় শাখাপ্রশাখা ভেঙে পড়ে প্রায়শই পথচারীদের আহত বা নিহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। শেষপর্যন্ত, বৃহদাকার যে গাছেদের জন্য এই গোটা জনপদের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে, তার জন্য নতজানু থাকার বদলে তাদেরকেই ভিলেন বানিয়ে তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত নিধনের পক্ষে দাবি ক্রমশ তীব্রতর হয়ে ওঠে!

দেবাশিস বসু, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা

গত বছর নয়

‘খদ্দরের শাড়ি পরে লাঠি খেলতেন বলে নজরে পড়লেন সিআইডি-র’ (রবিবাসরীয়, ২৬-২) শীর্ষক প্রবন্ধে শুভাশিস চক্রবর্তী লিখেছেন, “বছর পনেরোর সেই কিশোরীর একটা গল্প তিনি ছাপিয়ে দিলেন ‘সন্দেশ’-এর পাতায়।... লীলা রায়ের নামে প্রকাশিত সেই গল্পের শিরোনাম ‘লক্ষ্মী ছেলে’। ১৯২২-এ। লীলা-সাহিত্যের প্রথম প্রকাশের শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে গত বছর।”

কিন্তু লীলা মজুমদারের লেখা প্রথম গল্প ‘লক্ষ্মী ছেলে’ সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৩৩০ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসের সংখ্যায়, অর্থাৎ ১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। প্রসঙ্গত, সন্দেশ পত্রিকার এই সংখ্যাটিই ছিল সুকুমার রায় সম্পাদিত শেষ সংখ্যা, তাঁর মৃত্যু হয় ১০ সেপ্টেম্বর ১৯২৩। তাই লীলা মজুমদারের সাহিত্যের প্রথম প্রকাশের শতবর্ষ গত বছর পূর্ণ হয়নি, তা হবে এই বছর।

সৌরিত দে, চুঁচুড়া, হুগলি

আরও পড়ুন
Advertisement