Poush Parbon

সম্পাদক সমীপেষু: উৎসবের দিন

পিঠে খাওয়ার জন্য মানুষজনদের নিমন্ত্রণ রক্ষার মধ্য দিয়ে মকরস্নানের সকালবেলা পার হয়ে যায়। সন্ধেবেলায় ঘরে ঘরে পৌষলক্ষ্মীর পুজো করে সে দিনের সমাপ্তি সূচিত করেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:১৯
Poush Parbon

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নগরায়ণ কি আমাদের সব কিছুই ভুলিয়ে দিতে পারে? আজও আমরা দেখতে পাই লোকসংস্কৃতির নানা পার্বণ। যেগুলির অন্যতম পৌষপার্বণ, যার আকর্ষণ পিঠেপুলি। এই পিঠেপুলি উৎসব বাঙালির কাছে শুধুই পিঠে খাওয়ার নয়, তার সব রসটুকুও উপভোগ করার। রাঢ় বাংলার প্রতি গ্রামে পৌষ উৎসবে যে বিশেষ সমারোহ দেখতে পাই, ততটা অন্যান্য স্থানে হয়তো দেখা যায় না।

Advertisement

‘চাউড়ি’ অর্থাৎ মকর সংক্রান্তির দু’দিন আগে থেকেই উৎসবের আমেজ শুরু হয়ে যায়। গৃহস্থের ঘরদোর পরিষ্কার, পোশাক পরিচ্ছন্ন করা ইত্যাদি নানা কাজে মেয়েদের দিনগুলো পার হয়ে যেতে থাকে। ‘বাউড়ি’-র দিন সকাল থেকে বিকেল পিঠের সরঞ্জাম গুছিয়ে রাখার নানা ব্যস্ততায় কেটে যায়। বিকেলে বাড়ির মা-মেয়েরা মিলে পিঠে তৈরির সঙ্গে সঙ্গে টুসু গানে মেতে থাকেন। পিঠে বানানো শেষ হলে বাড়ির সামগ্ৰী, চাষের সামগ্ৰীতে সেই খড়ের তৈরি ‘বাউড়ি’ বন্ধন করা হয়। পৌষ-উৎসব শেষে তাকে জলে ভাসানো হয়। এই ভাবে বাউড়ির দিন পার হলে আসে মকরস্নান পর্ব। ভোরবেলা থেকে নদীতে পুকুরে স্নানার্থীদের ভিড় দেখা যায়। গ্রামবাংলার প্রত্যেক মানুষ বিশ্বাস করেন, এই মকর সংক্রান্তির দিন জলে গঙ্গা বিরাজ করেন। তাই তাঁরা ফুল দিয়ে পুজো করে স্নান করে নতুন বস্ত্র, শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে মকর জল দিয়ে বাড়ির মানুষ, বাড়ির সমস্ত সামগ্ৰী, প্রাণীদের গঙ্গাস্নান করান। ঘরের মেয়ে টুসুকে সারা মাস ধরে আদর যত্নে রেখে এই সংক্রান্তির দিন তাকে বিদায় জানাতে হয়, তাই বাতাসে কিছুটা বিষণ্ণতার সুর মনকে ভারাক্রান্ত করে। খোল করতাল মৃদঙ্গের সহযোগে কীর্তনের সুর বাতাসে ভেসে আসে। মনকে দুঃখ থেকে মুক্তি দিয়ে ভগবানের নামগানে মানুষ নিজেদের ভরিয়ে নেন।

পিঠে খাওয়ার জন্য মানুষজনদের নিমন্ত্রণ রক্ষার মধ্য দিয়ে মকরস্নানের সকালবেলা পার হয়ে যায়। সন্ধেবেলায় ঘরে ঘরে পৌষলক্ষ্মীর পুজো করে সে দিনের সমাপ্তি সূচিত করেন। অনেকে আবার মাঘ মাসের পয়লা তারিখে লক্ষ্মীপুজো করে পৌষ-উৎসব সমাপ্ত করেন।

রাঢ় বাংলার মানুষ লোকজ উৎসবকে সাদরে গ্রহণ করে আজও সযত্নে আগলে রেখেছেন।

পাপিয়া নন্দী, ওন্দা, বাঁকুড়া

খেলার গুরুত্ব

কিছু দিন পূর্বে রাজ্য জুড়ে প্রতিটা জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রসমূহের ছাত্রছাত্রীদের যে শীতকালীন বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার নির্দেশিকা বেরিয়েছে, তাতে খেলাধুলার গুরুত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। প্রথমত, বিজ্ঞপ্তি বার করে তার দু’দিন পর থেকেই সাত দিনের মধ্যে অঞ্চল ও চক্রের খেলা সম্পন্ন করার নিদান খুবই হাস্যকর। কারণ, মকর সংক্রান্তির সময়ে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন উৎসব মেলা সংগঠিত হয় বলে বিদ্যালয়গুলিতে এক দিকে যেমন উপস্থিতির হার কম থাকে, তেমনই ওই কম সময়ের মধ্যে নানা ছুটিছাটা থাকায় ছাত্রছাত্রীদের পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ থাকে না। এই সময়ে মেলা-খেলার কারণে খেলার মাঠ পাওয়া ও তা খেলার উপযুক্ত করে তোলার প্রস্তুতিতেও সমস্যা হয়। তা ছাড়া এত কম সময়ে এতগুলো স্তরের খেলার কারণে মহকুমা বা জেলা স্তরের প্রস্তুতির জন্য শিবির করে অনুশীলন করারও পর্যাপ্ত অবকাশ থাকে না।

দ্বিতীয়ত, স্পোর্টস-এর জন্য প্রতিটা স্তরের বরাদ্দ টাকা (চক্র, সাবডিভিশন, জেলা ও রাজ্য) যেমন মূল বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে একত্রে দেওয়ার অগ্রিম ব্যবস্থা থাকে না, তেমনই অঞ্চল বা জ়োন বা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের খেলার জন্য কোনও বরাদ্দও রাখা হয় না। অর্থাৎ, খেলার একেবারে প্রথম স্তরটা নিয়ে সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন। এর ফলে বিভিন্ন স্তরের খেলার পরিচালনার প্রাথমিক ব্যয়ের জন্য চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে, যা সরকারি ভাবে কখনও অনুমোদিত নয়।

খেলাধুলাকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা হলে, এর প্রতিটি স্তরের পরিচালনা সংক্রান্ত খরচের অগ্রিম ব্যবস্থা হলে, এবং বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে বিভিন্ন স্তরের খেলার দিন নির্ধারণে যথেষ্ট ব্যবধান রাখা হলে খেলার সামগ্রিক মান যেমন তাতে উন্নত হতে পারে, তেমনই তার পরিচালনাও সুন্দর ও সুসংহত হতে পারে।

পিন্টু চট্টোপাধ্যায়, নসরৎপুর, পূর্ব বর্ধমান

হাতের ছোঁয়া

একটা সময় ছিল, যখন গ্রামবাংলায় শীতের দুপুরের চেনা ছবি ছিল পাড়ার কাকিমা জেঠিমা বৌদিদের এক সঙ্গে দলবেঁধে সোয়েটার বোনার দৃশ্য। দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর পাড়ারই কোনও মন্দির, ক্লাব চত্বর বা এজমালি ফাঁকা জায়গায় এক জোড়া ধাতব কাঁটা, উলের গুটি ও বসার আসন হাতে জড়ো হতেন পাড়ার মহিলারা। শীতের দুপুরের আদুরে রোদ পিঠে নিয়ে ভেজা চুল শুকোতে শুকোতে শুরু হত সোয়েটার বোনা। মজার ব্যাপার হল, যার উদ্দেশে সোয়েটারটি বোনা হচ্ছে তাকে হাতের কাছে না পাওয়া গেলে প্রায় কাছাকাছি আকৃতির কোনও ছেলেছোকরার বুকে-পিঠে সেই অসমাপ্ত সোয়েটারের মাপ নিয়ে বোনার কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হত। অপূর্ব শৈল্পিক দক্ষতায় সেই সব সোয়েটারের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হত চৌকো গোল ষড়ভুজাকৃতি বিভিন্ন ডিজ়াইন, এমনকি মাছ, লতাপাতা প্রভৃতির নকশাও। তবে শুধু সোয়েটার নয়, সোয়েটারের সঙ্গে সমান তালে বোনা চলত টুপি, মাফলার, হাতমোজা, বাচ্চাদের পা-মোজাও। আর ছিল পরনিন্দা-পরচর্চা। সোয়েটার বোনার জায়গাটি তখন অবলীলায় হয়ে উঠত সংবাদমাধ্যমের নিউজ় রুম। হাসি ঠাট্টা ও সমান তালে হাতের কাজে ওটাই ছিল তখনকার মা-কাকিমাদের একমাত্র দ্বিপ্রাহরিক বিনোদন।

আজকের মেশিনে বোনা সোয়েটার, মাফলার, জ্যাকেটের কাছে কবেই দশ গোল খেয়ে বসে আছে হাতেবোনা সেই শিল্প। অবশ্য মোবাইল ও টেলিভিশনের রকমারি অনুষ্ঠানের দৌলতে এখনকার নারীদের হাতে সোয়েটার বোনার মতো এতটা সময় এবং ধৈর্য আছে কি না, সে বিষয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এই ভাবেই আমাদের চোখের সামনে হারিয়ে যেতে বসেছে সমগ্র বাঙালি নারীর শীতকালীন বিনোদন।

প্রণব কুমার সরকার, বোলপুর, বীরভূম

গঙ্গাদূষণ

কলুষবাহিনী (২৪-১) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের প্রেক্ষাপটে কিছু কথা। গঙ্গাকে কলুষবাহিনী আখ্যায়িত করা, সত্য হলেও মর্মবিদারক! সেই গোমুখ থেকে ভাগীরথী নামে যে গঙ্গার উৎপত্তি, বহুজনপদ অতিক্রম করে যার পরিণতি বঙ্গোপসাগরে মিলিত হওয়া, সেই গঙ্গার দূষণ দূরীকরণে প্রশাসনিক প্রয়াসের ঘাটতি সর্বজনবিদিত। একটু গঙ্গার উৎপত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। বহু পৌরাণিক তথ্যের মধ্যে একটি হল— ভগবান বিষ্ণুদেবের পদতলে গঙ্গার জন্ম। সেই কারণে গঙ্গার ধর্মীয় পবিত্রতা জনমানসে অটুট। সেই রুদ্রপ্রয়াগ থেকে দেবপ্রয়াগ— অলকানন্দা, মন্দাকিনীর ভাগীরথীর সঙ্গে মিলন, এই পুণ্যতোয়া ছুঁয়ে গেছে হরিদ্বার, কাশী, বারাণসী, বহরমপুর, কলকাতার বিভিন্ন ঘাট। ভারতবাসীর কাছে গঙ্গা মাতৃরূপে পূজিতা হন, গঙ্গার বারিধারার বিশুদ্ধতা পুজোআচ্চা, বিভিন্ন মাঙ্গলিক কর্মে স্বীকৃত! হর কী পৌড়ী-সহ গঙ্গার ঘাটগুলি প্রতি দিন সন্ধ্যারতিতে মুখর থাকে। এই বিষয়ে আমাদের রাজ্যেও নব উদ্যোগ করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পতিতপাবনী সেই গঙ্গা নদীর দূষণ বন্ধ করতে আমরা অপারগ! এখনও গঙ্গা দিয়ে মৃতদেহ ভাসমান। কিছু কিছু শ্মশান সংলগ্ন গঙ্গার ঘাটের অবস্থা এমনই ভয়াবহ যে, দাহকার্যের পর অস্থি বিসর্জন দেওয়া দুষ্কর। গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান, নমামি গঙ্গে, এই প্রকল্পগুলির হাল হকিকত নতুন করে পর্যালোচনার সময় এসেছে।

সুবীর ভদ্র, নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

আরও পড়ুন
Advertisement