Politics

সম্পাদক সমীপেষু: অকারণ অমর্যাদা

প্রবন্ধকার লন্ডনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্যকে উদ্ধৃত করেছেন, যদিও তিনি সরাসরি রাহুলের নাম করেননি। তবে আমরা জানি যে, রাহুল তাঁর বক্তব্যে দেশের মানমর্যাদা ম্লান করেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৪৪
Indian Flag.

ফাইল চিত্র।

স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, ব্রিটিশ শাসকেরা এ দেশকে লুটেছে (ভারতের সম্মানহানি, ৩-৪)। দেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের শ্লাঘার বিষয় যে, ওই লুটেরা ব্রিটিশদের পরাস্ত করে আমরা বিশ্ব অর্থনীতিতে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছি। আমাদের লক্ষ্য, ২০৩০-এর মধ্যে পাঁচ ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে পৌঁছে যাওয়া। কিন্তু রাজনৈতিক ঘোলাজলের কারবারিরা ভারতের এই সাফল্যকে খাটো করে দেখাচ্ছেন। আজ ভারতের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য বেসরকারি পুঁজি নিয়োগ সরকারি বিনিয়োগের চাইতে আরও বেশি দরকার। বিদেশি এক মূল্যায়ন সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে আদানির সংস্থাগুলোর শেয়ারে যে ধস নেমেছে, তা নিয়ে সরকার-বিরোধীরা কোমর বেঁধে নেমেছেন কেন্দ্রের সরকারকে হেনস্থা করতে। অথচ, বাংলা, রাজস্থান-সহ বিরোধী রাজ্যগুলির পরিকাঠামোয় লগ্নি করতে ভরসা সেই আদানিরা।

প্রবন্ধকার লন্ডনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্যকে উদ্ধৃত করেছেন, যদিও তিনি সরাসরি রাহুলের নাম করেননি। তবে আমরা জানি যে, রাহুল তাঁর বক্তব্যে দেশের মানমর্যাদা ম্লান করেছেন। বিদেশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ভারতে গণতন্ত্র নেই। এর আগে রাহুল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলেছিলেন, সনিয়া গান্ধীও তাঁকে ‘ম‌ৃত্যুর স‌ওদাগর’ বলতে কুণ্ঠিত হননি। অথচ, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ইন্দিরা গান্ধীকে ‘মা দুর্গা’ বলে অভিহিত করেন তৎকালীন জনসঙ্ঘ নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী। ১৯৯৬ সালে বাজপেয়ীকে রাষ্ট্রপুঞ্জে পাঠান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও। এগুলি রাজনৈতিক শিষ্টাচার। বিরোধী রাজনীতি হ‌ওয়া উচিত সরকারি নীতির সমালোচনা। প্রবন্ধকার যথার্থ‌ই বলেছেন, “দেশের সমস্যার কথা দেশের মানুষের কাছে বলুন, তাঁদের নিজের মতের দিকে টেনে আনার চেষ্টা করুন, নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ান, জনগণ ঠিক ভোট দেবে।” এই পরামর্শ কেবল রাহুল গান্ধীর জন্য নয়, সব রাজনৈতিক নেতার জন্য।

Advertisement

তারক সাহাহিন্দমোটর, হুগলি

প্রতিভা ও বিত্ত

স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে কিছু কথা। ভারতে ‘দেশপ্রেম’ কথাটার মানে হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান শাসক দলের অনুগত থাকা, এবং নীতি-নির্ধারণ সম্পর্কিত তথ্যগুলিকে নতমস্তকে গ্রহণ করা। এই বিষয়ে কোনও প্রশ্ন তুললেই ‘দেশদ্রোহী’-র খাতায় নাম উঠে যায়, সে প্রশ্ন যতই যুক্তিগ্রাহ্য হোক। শাসকের জয়গানই আজ দেশপ্রেমের জয়গাথা। প্রবন্ধকার এমনই একটি জয়ধ্বজা ওড়ানোর চেষ্টা করেছেন। জাতীয় গড় আয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তির মেধা, সব কিছু দিয়েই বিদেশের মাটিতে দেশের জয়ধ্বজা ওড়ার কথা বলেছেন। স্বাধীনতার পর ৭৫ বছর অতিক্রান্ত। ভারত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে যে অনেক এগিয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তার সবটুকুই বর্তমান শাসকের কৃতিত্ব কি না, সে প্রশ্নে বিতর্ক থাকতে পারে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বিত্তের বণ্টনের কিছুটা দায়িত্ব সরকারের, এবং সে বণ্টন সর্বদা সাম্যের অবস্থা নাও আনতে পারে। কারণ, সবার ক্ষমতা আর প্রতিভা এক স্তরের নয়। এর প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান ভারতে প্রতিভাধর এবং শিক্ষিতেরাই যে বিত্তশালী হবেন, তার কি কোনও গ্রহণযোগ্য নীতি বা পথ রয়েছে? প্রতিভার উৎকর্ষের বাইরেও যে বর্তমান ভারতে বিত্তশালী হওয়ার নানাবিধ পন্থা রয়েছে, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

পূর্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ভারতে সামাজিক কল্যাণের নিরিখে সরকারি এবং বেসরকারি পুঁজির সহাবস্থানই ছিল লক্ষ্য। এখন খোলা বাজারের মুক্ত প্রতিযোগিতায় বেসরকারি পুঁজিই প্রাধান্য পাচ্ছে। দেশের এবং বিদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ করে, দেশের ছেলেমেয়েদের যাতে চাকরির বন্দোবস্ত হয়, এবং চাহিদা জোগানে একটা সাম্য অবস্থা আসে, সেই উদ্দেশ্যেই সরকার উদার হস্তে জমি, ঋণ প্রভৃতি দান করে শিল্পপতিদের। সকল উদ্যোগপতিই যে সততার সঙ্গে সরকারের উদ্দেশ্যের প্রতি সুবিচার করেন, তা নয়। এর ফলে দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে অনুৎপাদক ঋণের পরিমা‌ণ কী হারে বেড়েছে, তা সকলেই দেখছেন। ভারতের ধনীতম ১ শতাংশের হাতে দেশের ৪০ শতাংশ সম্পত্তি, এবং শেষ ৫০ শতাংশের হাতে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ রয়েছে। সম্পদ বণ্টনের এই বৈষম্যের ফলে অর্থনীতির অগ্রগতিতে যে খামতি রয়ে যাচ্ছে, তা অস্বীকার করা যায় না। এক সময়ে বিশ্বজোড়া ব্যাঙ্কিংব্যবস্থার বিপর্যয় দেখা গিয়েছিল। তখন ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কই কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতিকে সামলেছে, ভরসা জুগিয়েছে।

প্রবন্ধকার তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন যে, কিছু ভারতীয় বিদেশে গিয়ে ভারতের গণতন্ত্র সম্বন্ধে কুকথা বলে আসছেন। এর প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অযোধ্যা কাণ্ড কিংবা গুজরাত দাঙ্গা বিশ্ববাসীর কাছে ভারত সম্পর্কে খুব একটা ভাল বার্তা বয়ে নিয়ে যায়নি। ভারতে সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা সম্পর্কিত বার্তাগুলি বিদেশিদের কাছে ছিল যথেষ্টই উদ্বেগের। বিবিসি-র গুজরাত দাঙ্গা সম্পর্কিত তথ্যচিত্রকে শাসক যতই ধামাচাপা দিক, এবং বিদেশে রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা যতই প্রচার করুক, শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না।

সঞ্জয় রায়দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

প্রকট অসাম্য

‘ভারতের সম্মানহানি’ প্রবন্ধে স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সরকার আর দেশের সম্মান একাকার হয়ে গিয়েছে। একনায়কতন্ত্রের সমর্থন ঘোষণা করেছেন তিনি। প্রবল অসাম্যময় এক দেশে এক ব্যবসায়ী বিশ্বে ৬০৯তম ধনী থেকে আট বছরে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী হয়ে গিয়েছেন, এটা লেখকের কাছে গর্বের বিষয়। তার কারণ, তিনি দেশ পরিচালনায় অসাম্য আর সাঙাততন্ত্রের বেহায়া চেহারাটা দেখতে পান না। ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠেছে, কিন্তু তার পিছনে রয়েছে মাথাপিছু আয়ের হিসাব। ভারতের বিপুল জনসংখ্যার জন্য মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ভারতের স্থান বিশ্বে ১৩৯তম। সে হিসাবও লেখকের চোখ এড়িয়ে যায়। এক জন ব্যক্তি তাঁর সম্পদের পরিমাণের জন্য বিশ্বে দুই বা তিন নম্বর স্থানে থাকলেও, তাঁর দেশের স্থান যে বিশ্বে ৪৬তম, তা-ও লেখকের কাছে উপেক্ষার বিষয়। দু’চার জনের হাতে দেশের সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিলে কর্মসংস্থান বাড়ার পরিবর্তে কর্মসঙ্কোচনই হয়ে থাকে। দেশকে এগিয়ে যেতে হলে অনেক কিছু বদলাতে হবে। লেখক যে সব পরিসংখ্যান দিয়েছেন, সেগুলি উন্নয়নের সহায়ক হিসাবে না এসে নেতাদের প্রচারের হাতিয়ার হয়েছে।

প্রেমাংশু দাশগুপ্ত, কলকাতা-৩৪

বাংলার সাইকেল

সাইকেল শিল্পের পথপ্রদর্শক সুধীরকুমার সেনকে নিয়ে প্রবন্ধটি (ভারতে সাইকেল শিল্পের পথপ্রদর্শক, রবিবাসরীয়, ১২-৩) পড়ে ঋদ্ধ হলাম। ভারতে আধুনিক উন্নত মানের সাইকেল শিল্পের ভিত্তি রচিত হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। শিল্পে বাঙালির অধিকার থাকা কত প্রয়োজন, তা তিনি উপলব্ধি করেন স্যর রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে দেখে। যৌবনেই তিনি স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করা মনস্থির করেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও রামচন্দ্র পণ্ডিতের সহায়তায় ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন সেন অ্যান্ড পণ্ডিত কোম্পানি। ১৯৫২ সালে আসানসোল সংলগ্ন কন্যাপুরে ‘সেন র‌্যালে’ কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এ জন্য আন্তর্জাতিক মহলেও যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেন। দুঃখের বিষয়, সংস্থাটির অবলুপ্তি ঘটেছে বহু যুগ আগে। এখন শিক্ষার্থীদের সাইকেল বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। অথচ, এই রাজ্যে নেই কোনও সাইকেল তৈরির কারখানা।

উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি

আরও পড়ুন
Advertisement