Republic day

সম্পাদক সমীপেষু: সংখ্যা ও সাম্য

প্রজাতন্ত্র চায় প্রজার ক্ষমতায়ন, যেখানে সংখ্যার চাইতে সাম্য, বিভেদের চাইতে বহুস্বর, শোষণের চাইতে স্বনির্ভরতাই হবে চালিকাশক্তি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:০৩

সার্বভৌমত্বের উদ্‌যাপনে এত রণসজ্জার প্রয়োজন কেন, প্রশ্ন তুলেছেন অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়, (‘প্রজাতন্ত্র থেকে প্রজার তন্ত্র’, ২৬-১)। কিন্তু কার কী-ই বা আসে যায়? সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে গেলে প্রতিরক্ষা তো লাগবেই। দেশ মানে তো একটা ‘ভূখণ্ড’। মানুষের থেকেও বড় মাটি। এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া যাবে না। তাতে সেনা প্রাণে বাঁচুক বা মরুক, দু’দিকেই শাসক দলের সুবিধে— কারণ দেশপ্রেমের আগুন জ্বলবেই! তাই সুকৌশলে ক্ষমতার অলিন্দ থেকেই দেশভক্তির মোড়কে ছড়ানো হয় বিদ্বেষের বীজ। তাই হয়তো এত ঢাকঢোল পিটিয়ে সামরিক রণসজ্জার মহড়া।

গণতন্ত্রে কিছু মরীচিকাও আছে। মুদ্রার উল্টো পিঠ নয়, এক পিঠে তাকালেও, একই প্রতিরূপ কখনও দু’দিক থেকে দু’রকম লাগে। অনেকটা ইংরেজি হরফে ৬ আর ৯-এর মতো। গণতন্ত্র সংখ্যা বোঝে, সাম্য নয়। তাই তার সাফল্য নির্ভর করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সার্বিক শিক্ষা ও সচেতনতার উপর। আমাদের মতো দেশ জনশিক্ষা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে। আবার এটাও ঠিক, সংবিধানকে সযত্নে ঢাকা দিয়ে, ফুল চড়িয়ে, ধূপধুনো দিয়ে, আবার তারই চোখে ধুলো ছড়িয়ে, সংখ্যাগুরুর বিধান বা নিদান, সেটাও গণতন্ত্র নয়।

Advertisement

গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রের মৌলিক তফাত, গণতন্ত্রের পাল্লা ভারী সে দিকেই, যাতে সংখ্যার ভার বেশি। অন্য দিকে প্রজাতন্ত্র চায় প্রজার ক্ষমতায়ন, যেখানে সংখ্যার চাইতে সাম্য, বিভেদের চাইতে বহুস্বর, শোষণের চাইতে স্বনির্ভরতাই হবে চালিকাশক্তি। যে তন্ত্রে সমাজে পশ্চাৎপদ, প্রান্তিক মানুষজনও বৃত্তের মাঝে স্থান পাবে। এ ভাবেই ক্ষমতা ও সম্পদের অধিকারের বৈষম্য ও মেরুকরণের লেখচিত্র বদলাতে পারে। তবে লেখকের রয়েছে সাংবাদিকতার বর্ম। তাই উনি খোলাখুলি লিখতে পারেন। ভারতে খুব কম মানুষেরই এই সৎ সাহস বা দুঃসাহস আছে! এটাই গণতন্ত্র এ দেশে, অন্তত ইদানীং।

সুপ্রতিম দত্ত

কলকাতা-৮৪

অশনিসঙ্কেত

‘আজ়াদি কি অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষে যে যে ঘটনা দেশবাসী দেখলেন, তাতে কয়েকটা ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট। এক, ইতিহাস সাক্ষী যে আরএসএস-বিজেপির দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনও ভূমিকা ছিল না, কাজেই স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুছে দিতে চায় কেন্দ্রের শাসক দল। দুই, ঘৃণার রাজনীতিকে আরও গভীর ভাবে সমাজজীবনে রোপণ করতে চায়। প্রজাতন্ত্র দিবসে বিটিং রিট্রিট থেকে গান্ধীজির পছন্দের প্রার্থনা বন্ধ করে দেওয়া হল, কারণ সেটি একটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা। অমর জওয়ান জ্যোতি নিবিয়ে দেওয়া হল, কারণ সেটি ইন্দিরা গান্ধী পরিচালিত সরকারের বিজয় চিহ্ন। আর বোধ হয় বেশি দিন নেই যে দিন আমরা দেখতে পাব, জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ‘জনগণমন অধিনায়ক’ এবং ‘বন্দে মাতরম্’ বন্ধ করে দেওয়া হবে। হয়তো বন্ধ করে দেওয়া হবে ইকবালের ‘সারে জাঁহাসে আচ্ছা’। ভারতবাসী হিসাবে খুব আশঙ্কায় থাকলাম, দেশের জাতীয় পতাকাও বদলে যাবে কি না।

দুর্গাশ্রী বসু রায়

হাওড়া

দেশভক্তির পাঠ

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। আমাদের সংবিধানের পাঁচটি মূল স্তম্ভের (সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র বা সাধারণতন্ত্র) বাস্তব অবস্থা তুলে ধরেছেন। আসলে শব্দগুলোর অর্থ সঠিক ভাবে শিক্ষার্থীদের বোঝানো হয়নি। সময় লেগে গিয়েছে বুঝে উঠতে। অবশ্য আজও বহু বয়স্ক ও শিক্ষিত ব্যক্তি এ সবের অর্থ আত্মস্থ করতে পারেননি। আশার কথা, এই অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়ে গিয়েছে। দিল্লির আপ সরকার দেশপ্রেম (দেশভক্তি) পাঠ্যক্রম চালু করেছেন এই লক্ষ্যে। প্রবন্ধকার দু’বছর আগের শাহিন বাগ আন্দোলনের কথা উল্লেখ করলেও, ১০-১১ বছর আগের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভারত’ আন্দোলন, এবং তা থেকে উদ্ভূত আম আদমি পার্টির কথা তোলেননি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “এই প্রজাতন্ত্রকেই নতমস্তকে মেনে নিতে হবে? না। অন্য রকমও সম্ভব। সে জন্য প্রজাদের এক জোট হয়ে উঠে দাঁড়াতে হবে, দাবি জানাতে হবে: আমাদের তন্ত্র আমরাই তৈরি করব।” প্রজাদের তন্ত্র প্রজার দ্বারা তৈরির চেষ্টা, ‘প্রজাতন্ত্রের রাজনীতি’ বর্তমান ভারতে সবচেয়ে জোরের সঙ্গে করে চলেছে ‘আপ’।

মৃত্যুঞ্জয় বসাক

বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর

স্বাধীনতার সুখ

স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এক নতুন ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁদের শপথ ছিল সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে আমরা স্বাধীনতার সেই সুখ ভোগ করতে পারিনি। এখনও ফুটপাতে অনাহারে দিন কাটান অনেক গৃহহীন মানুষ। ধর্মের নামে ভেদাভেদ আগের থেকে বেড়েছে। হিংসা, মারামারি ও রাজনৈতিক সন্ত্রাস মানুষের বাক্‌স্বাধীনতাকে হরণ করে নিয়েছে। ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ইংরেজরা যত না ধ্বংস করেছে, তার চেয়ে বেশি করেছে নোংরা রাজনীতি। স্বাধীনতার সুখ যেন কেবল দেশের নেতা-মন্ত্রীদের জন্য। তাঁরা ইচ্ছেমতো ভোগ করবেন, আর সাধারণ মানুষ তাঁদের দয়া পাওয়ার আশায় বসে থাকবেন। এ কেমন স্বাধীনতা? এখনও আমরা স্বাধীন ভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারি না, বাহুবল ও বন্দুকের দাপটে অসহায় থাকি। এখনও দু’টাকা কেজি চাল-গমের বিনিময়ে ভোটের ময়দানে সাধারণ মানুষের কেনাবেচা হয়। তবে দেশের মানুষ আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন, তাঁরা ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। আশা করি, তাঁরা এ বার প্রকৃত স্বাধীনতার সুখ ভোগ করতে পারবেন।

চিত্তরঞ্জন মান্না

চন্দ্রকোনা রোড, পশ্চিম মেদিনীপুর

ক্ষতি তাঁদেরও

কোনও এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলে তাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ভাবে রোজগারের সুযোগ তৈরি হয়। ওই এলাকার স্থানীয় মানুষজনের কর্মসংস্থান জড়িয়ে থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকায় বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই ব্যবসায়ীরা। স্কুল-কলেজের পাশেই থাকে বই, খাতা, কলম বিক্রির দোকান। মূলত ওই সব স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই এই সব দোকানের ক্রেতা। তা ছাড়া পার্শ্ববর্তী জ়েরক্সের দোকানও চলে ওই শিক্ষার্থীদের ভরসায়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রিন্ট-আউট বার করা, অনলাইনে ফর্ম ফিল-আপ ইত্যাদি চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন সাইবার কাফেগুলিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই গড়ে ওঠে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী অনেক দূর থেকে এসে মেসে, হস্টেলে বা বাড়িভাড়া করে থাকেন। স্থানীয় হোটেলগুলিতে খাওয়াদাওয়া করেন। সে সব ব্যবসাও প্রায় উঠে যাওয়ার জোগাড়। অনেক ফেরিওয়ালা ঠেলাগাড়িতে খাবারদাবার বিক্রি করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার পথে শিক্ষার্থীরা এঁদের কাছ থেকে খাবার কিনে খেত। সে সব এখন বন্ধ। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের পক্ষ থেকে রিকশা, পুলকার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। সেই চালকরাও ক্ষতির মুখে। স্থানীয় রিকশা, টোটো চালকদের রোজগারেও যে টান পড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অর্থাৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর অনেক মানুষের রুজি-রোজগার নির্ভর করে। একটা বড় অর্থনৈতিক যোগ রয়েছে এর সঙ্গে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এঁদেরও যে একটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, সেই বিষয়টিও ভেবে দেখার
প্রয়োজন আছে।

ভাস্কর পাল

কলকাতা-১১৩

আরও পড়ুন
Advertisement