National Institute for Locomotor Disabilities

সম্পাদক সমীপেষু: প্রতিবাদ প্রয়োজন

জাতীয় মর্যাদাটুকুও কেড়ে নিলে প্রতিষ্ঠানটি হয়তো এ বার অচলই হয়ে পড়বে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৩৫

উত্তর কলকাতার বনহুগলিতে অবস্থিত ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর দ্য অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড’ উত্তর-পূর্ব ভারতের অগণিত অস্থি-প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সংস্থাটির নাম পরিবর্তন করে বর্তমানে রাখা হয়েছে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর লোকমোটর ডিসেবিলিটিজ়’। কেবল এ রাজ্য তথা দেশই নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ স্বাস্থ্য-পরিষেবার জন্য এখানে আসেন। এই হাসপাতালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অর্থোটিক, প্রস্থেটিক, ফিজ়িয়োথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি-সহ বিবিধ চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি রয়েছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের নানাবিধ প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন চলন সহায়ক সরঞ্জাম দানের সুব্যবস্থাও।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিকে ওড়িশার রাজধানী শহর কটকে স্থানান্তরিত করা হবে। বনহুগলির কেন্দ্রটি ব্যবহৃত হবে কেবল একটি আঞ্চলিক শাখা হাসপাতাল হিসাবে। প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তায় স্বাস্থ্য-পরিষেবার মান এমনিতেই এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। তার উপরে, জাতীয় মর্যাদাটুকুও কেড়ে নিলে প্রতিষ্ঠানটি হয়তো এ বার অচলই হয়ে পড়বে। আর, সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এ রাজ্যের বহু শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষের চরম ক্ষতি অনিবার্য। তাই, কেন্দ্রের এই অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হওয়া উচিত।

Advertisement

দীনদয়াল বসু

নারিকেলবাড়, হাওড়া

হঠকারিতা নয়

উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিংয়ে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েক জন বাঙালি। দীর্ঘ দিনের ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কোথাও একটা বিরাট ভুল হচ্ছে, যার ফলে আমাদের এই মাসুল গুনতে হচ্ছে। ট্রেকিং কিন্তু কোনও বেড়ানো নয়, যেটা শুধু আবেগ দিয়ে জেতা যাবে। এই যুদ্ধ জেতার জন্যে চাই শারীরিক ক্ষমতা, মানসিক শক্তি, প্রযুক্তিগত দক্ষতা আর অবশ্যই আর্থিক ক্ষমতা। চাই অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ দল ও ঠিকঠাক পরিকল্পনা। সমুদ্রে যাঁরা মাছ ধরতে যান, তাঁরা যেমন আবহাওয়ার খবর নিয়ে যান, সে রকম হাজার খবর নিয়ে গেলেও পাহাড়ে প্রতি মুহূর্তে আবহাওয়া বদলাতে পারে। অনিশ্চয়তা এখানে পথের সঙ্গী। তুষার ঝড়, পাহাড়ের ধস আর হাড়হিম ঠান্ডার মধ্যে মাথা ঠিক রেখে এগোতে হবে, তবেই আসবে সাফল্য।

জর্জ ম্যালরির মতো ‘বিকজ় ইট ইজ় দেয়ার’ বলে পাহাড়ের নেশায় মত্ত হয়ে বাড়ি থেকে ঢাল-তরোয়াল না নিয়ে বেরিয়ে পড়া মানে বিপদকে আহ্বান জানানো। এখন ঠান্ডার সঙ্গে, বরফের সঙ্গে লড়ার জন্য অনেক আধুনিক দামি পোশাক ও জিনিসপত্র বেরিয়েছে। সেগুলো লাগবে। সাধারণ মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে না। স্যাটেলাইট ফোন হলে ভাল হয়। এই তালিকাটা বিরাট লম্বা আর একটাও বাদ দেওয়া যাবে না।

আমাদের রাজ্যে ট্রেকারস ক্লাবের অভাব নেই। কলকাতাতে প্রায় দশটা ট্রেকারস ক্লাব আছে। প্রতি জেলাতে দুটো থেকে তিনটে ট্রেকারস ক্লাব আছে। যে কোনও অভিযানের আগে আমাদের রাজ্য সরকার ও যেখানে যাচ্ছেন, সেই রাজ্যের সরকারকে অভিযানের দিনলিপি-সহ সব রকম তথ্য জানানো অবশ্যই দরকার। পাহাড়ের নেশা মাদকের নেশার থেকেও বেশি, কিন্তু তা যেন আপনাকে গ্রাস না করে।

রূপম মুখোপাধ্যায়

গড়িয়া, কলকাতা

দাদাগিরি

লোকাল ট্রেনে নিত্যযাত্রীদের অভব্য আচরণে অতিষ্ঠ সাধারণ যাত্রীরা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে নানা পত্র-পত্রিকায় বা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে আলোকপাত হলেও রেল কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এর ফলে সাধারণ যাত্রীরা কার্যত অসহনীয় নির্যাতনের শিকার। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যাঁরা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেন, তাঁদের আচরণে নির্মমতার ছাপ স্পষ্ট। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লক্ষ্মীকান্তপুর, হালে নামখানা লোকালের আমি এক জন সাধারণ যাত্রী। পেশার তাগিদে কলকাতার কাজে সপ্তাহে এক বা দু’দিন মথুরাপুর রোড স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠি। কিন্তু কখনও কখনও নিত্যযাত্রীদের প্রচণ্ড তাণ্ডবে মাঝপথে নেমে যেতে বাধ্য হয়েছি। এবং চোখের সামনে অন্য অনেক সাধারণ যাত্রীকেও নিরুপায় হয়ে নেমে যেতে দেখেছি। একেবারে নতুন যাত্রীদের অবস্থা আরও করুণ।

এমনকি অমানবিক তাণ্ডব চালাতে কুণ্ঠাবোধ করেন না সরকারি চাকরিজীবী শিক্ষিতরাও। এঁদের দাদাগিরির হাত থেকে রেহাই নেই কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা করতে যাওয়া অসুস্থ রোগীদেরও। এঁদের তাণ্ডব মূলত শুরু হয় সকালের আপ গোচরণ-ধপধপি স্টেশন থেকে। উঠেই ট্রেনটা কার্যত তাঁদের দখলদারিতে চলে যায়। হয়তো কোনও সাধারণ যাত্রী সিটে বসে আছেন কিংবা একটা পজ়িশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এই সব অসভ্য নিত্যযাত্রীর দল ইচ্ছাকৃত ভাবে ঠেলাঠেলি করে আগে থেকে সিটে বসে-থাকা সাধারণ যাত্রীদের উঠে যেতে বাধ্য করেন। বা লাইন থেকে সরিয়ে দিয়ে ভিড় কামরার মধ্যে তাসের আসর বসিয়ে দেন। কেউ কেউ আবার অশালীন ভাষায় গালাগালিতে মেতে থাকেন। যার ফলে অনেক সময় ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বা মা-বোন সঙ্গে থাকলে চরম লজ্জাকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। নিত্যযাত্রীদের এই রকম তাণ্ডবের কবল থেকে সাধারণ যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে সংশ্লিষ্ট
রেল কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি অত্যন্ত প্রয়োজন।

মঙ্গল কুমার দাস

রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

বেপরোয়া

উৎসবের মরসুমে নিয়মিত ভাবে লোকাল ট্রেন চললে ভিড় উপচে পড়বে, কেউ বিধিনিষেধ মানবেন না, কোভিড সংক্রমণ আবার বেড়ে যাবে— বিষয়গুলি এখন আর উদ্বেগ বা আশঙ্কার নয়। বরং নিশ্চিত, বাস্তব, অনিবার্য, যা এড়ানো যাবে না। কারণ, বর্তমানে জীবিকা বাঁচানোর বিষয়টি এতটাই অগ্রাধিকার পেয়েছে যে, বিধিনিষেধ পালনের ইচ্ছা, আগ্রহ, দায়িত্ব-কর্তব্য তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে। তাই নিয়মিত ট্রেন চললে মাস্কহীন যাত্রীরা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসবেন, দাঁড়াবেন, ট্রেনের দরজায় ঝুলবেন। রেল রক্ষী-বাহিনীর সাধ্য নেই তা আটকায়।

প্রসঙ্গত, এ বারের দুর্গাপুজোর আগে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে, এমনকি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বার বার জনগণকে কোভিড বিধিনিষেধ মানতে অনুরোধ করেছিলেন। বেপরোয়া মানুষ সেই আবেদনে কতটা সাড়া দিয়েছে, তা সবারই জানা। পুজোর পর রাজ্যে কোভিড সংক্রমণের সঙ্গে মৃত্যুও হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। অধিকাংশ মানুষের হেলদোল নেই। তাঁরা নিজেদের খুশিমতো আছেন। মাস্ক পরছেন না, দূরত্ববিধি মানছেন না। তাঁদের মনোভাব— জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। তাঁদের কোনও দায় নেই। এতে কোভিড সংক্রমণ নিশ্চিত ভাবে বাড়বে, এমনকি লাগামছাড়াও হতে পারে। এই সত্যকে মেনে নিয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় রাজ্য সরকারকে কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প পথ নেই।

কুমার শেখর সেনগুপ্ত

কোন্নগর, হুগলি

আরও পড়ুন
Advertisement