school

সম্পাদক সমীপেষু: স্কুল খোলা দরকার?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৪:২৩

‘স্কুল খুলুক, কিন্তু এখনই কি’ (১০-১১) শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে লেখক ঈশা দাশগুপ্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করি। দীর্ঘ কুড়ি মাসেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরোয়নি, এ কথা সত্য। তার ফলে তাদের প্রথাগত শিক্ষায় যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ১৬ নভেম্বর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে যাচ্ছে শুনে অভিভাবকরা আহ্লাদিত। কিন্তু নিজেদের সন্তানের সুরক্ষা কি প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে না? কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা আঠারো বছর উত্তীর্ণ। সুতরাং, তাদের অধিকাংশই কোভিড ভ্যাকসিনের একটি বা দু’টি ডোজ় পেয়েছে এবং তারা নিজেদের সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন, এটা আশা করা যায়। কিন্তু বিদ্যালয়ের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত পড়ুয়ারা এখনও ভ্যাকসিনের একটি ডোজ়ও পায়নি। উপরন্তু এত দিন বন্ধ থাকার পর বিদ্যালয় খুললে তাদের বাঁধভাঙা উদ্দামতায় সুরক্ষাবিধি ঠিকমতো পালিত হবে তো? শিক্ষক-শিক্ষিকারা হয়তো তাদের সাবধানটুকু করতে পারেন, সচেতন করতে পারেন, কিন্তু এর বেশি শাসন করতে পারবেন কি? নিয়মবিধি পালিত হচ্ছে কি না, পর্যবেক্ষণ করবে কে? ছাত্রছাত্রীরাও কি মেনে চলবে সব রকম সুরক্ষাবিধি? কোনও পড়ুয়া কোভিড-আক্রান্ত হলে কিন্তু প্রথমেই প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখি হবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সর্বোপরি সরকার। যেখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৮০০ থেকে ১০০০-এর ঘরে ঘোরাঘুরি করছে, সেখানে লেখকের কথার সুরে সুর মিলিয়ে বলতেই পারি, ঘুরে দাঁড়ানোর কি এটাই ঠিক সময়?

সায়ন তালুকদার

Advertisement

কলকাতা-৯০

ক্ষতি হবেই

‘স্কুল খুলুক, কিন্তু এখনই কি’ শীর্ষক প্রবন্ধটির প্রেক্ষিতে এই চিঠি। লেখাটি পড়ে মনে হচ্ছে, প্রায় ২০ মাস বন্ধের পর যে স্কুল-কলেজ খুলতে যাচ্ছে, তা এখনও না খোলাই উচিত। বিভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন, বিভিন্ন দেশে এবং আমাদের দেশেও স্কুল খোলার পর কী ভাবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু এ দেশে শিক্ষাব্যবস্থা এত দিন প্রায় বন্ধ থাকার দরুন কোন অবস্থায় পৌঁছেছে, সে কথাও নিশ্চয়ই উনি জানেন। তা ছাড়া যে কোনও অতিমারির মতো করোনা ঠিক কবে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে, তার কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। তা হলে তত দিন পর্যন্ত কি আমরা সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখব? লোকজন জীবিকার জন্য কাজে বেরোচ্ছেন, বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন, রেস্তরাঁয় খেতে যাচ্ছেন, পুজোয় আনন্দ করছেন, আর স্কুল খুলতে গেলেই ভয় চেপে ধরছে? স্কুল বন্ধ থাকায় শহুরে উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েদের খুব যে ক্ষতি হচ্ছে, তা নয়। বরং তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সময়মতো পড়াশোনা করতে পারছে। বিজ্ঞাপনেও দেখছি বিভিন্ন অনলাইন কোচিং সেন্টারগুলি পরোক্ষ ভাবে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থাকে উৎসাহিত করছে। কিন্তু ছোট শহর বা গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের কথা কি এক বারও ভেবেছেন কেউ? এদের কাছে ন্যূনতম প্রাথমিক শিক্ষাটুকু পৌঁছনো কত কঠিন! স্কুলে এদের যে ফোন নম্বর দেওয়া থাকে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা পরিবারের কারও এক জনের। ফোনটি স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের কাছে থাকে। অভিজ্ঞতায় জানি, প্রান্তিক পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা অনেক সময় স্কুলেরই কোনও শিক্ষক (যিনি হয়তো ওদের বাড়ির কাছেই থাকেন) বা গৃহশিক্ষকের ফোন নম্বর দিয়ে রাখে, নিজেদের ফোন না থাকার জন্য। তা ছাড়াও যে সব শিক্ষার্থী ফোন পাচ্ছে, পরিবারে শিক্ষার বিষয়ে অসচেতনতার জন্য ফোনটার অপব্যবহার করছে।

নিঃসন্দেহে স্কুল খোলার ঝুঁকি অনেক। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে তো এগোতে হবে। সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে টিকাকরণ যত দ্রুত চালু করা যায়, তা দেখতে হবে। সচেতন ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কিন্তু স্কুল যদি করোনার ভয়ে এখনও অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হয়, তা হলে শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়, দেশ ও দশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

কাজরী মুখোপাধ্যায়

শান্তিনিকেতন, বীরভূম

সচেতন হন

করোনার জেরে দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ। ছাত্রছাত্রীদের কাছেও এই অনলাইন ক্লাস হয়ে উঠেছিল বিরক্তিকর। বর্তমানে একাদশের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হয়ে স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারছি যে, প্র্যাকটিক্যাল ছাড়া পদার্থবিদ্যা, রসায়ন কিংবা জীববিদ্যার মতো বিষয়গুলিকে ভাল ভাবে বুঝতে ঠিক কতটা সমস্যা হতে পারে। তাই, স্কুল খোলাটা এই মুহূর্তে অত্যন্ত প্রয়োজন।

স্কুল খোলার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অন্য স্কুলকর্মীদের যেমন করোনা সচেতনতা মেনে চলতে হবে, তেমনই সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। টিভির পর্দায় পুজোর দিনগুলোতে মণ্ডপে মণ্ডপে জনস্রোত আমরা অনেকেই দেখেছি। অনেকের মুখে তখন মাস্ক দেখা যায়নি। মাস্ক না পরার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে অনেকে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন, অনেকে বলেছেন, “করোনা আর নেই! ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছি।” এর ফলও আমরা পেয়েছি। পুজোর পরে করোনা সংক্রমণ যথেষ্ট বেড়েছে। এ রকম চলতে থাকলে করোনা কোনও দিনই যাবে না।

এমনও অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, কিছু সমাজকর্মী মুখে মাস্ক পরার কথা বলছেন, অথচ তাঁদের নিজেদের মুখেই মাস্ক নেই আর থাকলেও তা নাকের নীচে নামানো। এটাই কি সচেতনতা? একটা কথাই বলতে চাই, ভ্যাকসিন নিয়েছেন খুব ভাল কথা, কিন্তু দয়া করে সমস্ত কোভিডবিধি মেনে চলুন। আপনাদের অসচেতনতার জেরে শুধু বর্তমান সমাজ নয়, আগামী প্রজন্মেরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। পারবেন তো সেই ক্ষতি পূরণ করতে? আমরা ২০২১ সালের মাধ্যমিক দিতে পারিনি। এর পরের রাস্তাটা যাতে সুগম হয়, তার ব্যবস্থা করুন। এটা ছাত্রসমাজের হয়ে একান্ত অনুরোধ।

স্বর্ণাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শিক্ষার্থী

বোধহীন

বিষাণ বসুর ‘ভেসে যাবে কিছু মুখ, তাতে কী?’ (৯-১১) এবং ‘স্কুল খুলুক, কিন্তু এখনই কি’ মূলত একই সূত্রে গাঁথা। সাধারণ মানুষের জীবন আসলে কয়েকটি সংখ্যামাত্র। মূল্যহীন। বিশেষত স্কুলের শিশুরা আমাদের দেশে বিভিন্ন বিষয়ে গিনিপিগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে বাধ্য হয়। কাল থেকে আবার হবে। যেমন হয়েছিল গত মার্চ-এপ্রিল মাসে। দীর্ঘ, অবাস্তব নিয়মকানুনের তালিকা খাতায়-কলমে বন্দি হয়েই ছিল। স্কুল চলছিল সাবেক উদাসীন ছন্দে। আবার, স্কুলে উপস্থিতির হার সন্তোষজনক, এমন দাবিও ওঠেনি।

শিক্ষাবিদদের অনেকেই স্কুল খোলার পক্ষে সওয়াল করেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যের বিষয়টি? একটি শিশুর মৃত্যুও যে আসলে অপূরণীয় ক্ষতি, এই বোধটুকু সে ভাবে জাগ্রত হতে দেখি না। অতএব, স্কুল খুলছে। প্রথম থেকেই অস্বাভাবিক দীর্ঘ সময়ের জন্য। নিয়মকানুন কয়েক দিন পর থেকেই ফাইলবন্দি হবে। আমাদের ক্রিকেটাররা ডবল ডোজ় ভ্যাকসিন এবং নিখুঁত বায়ো-বাব্‌লের ভিতর নিরাপদে থাকুন। অন্য দিকে, ভেসে যাক, অন্তত ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হোক ভ্যাকসিনহীন কিছু শিশুর। এটাই বোধ হয় ভবিতব্য।

সুরঞ্জন মাহাতো

কালনা, পূর্ব বর্ধমান

আরও পড়ুন
Advertisement