জনজীবনের বিশৃঙ্খলা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আধিক্য যত বাড়ছে, তত কোপ পড়ছে বন্য ও জলজ উভচর প্রাণীদের উপর। কিছু দিন আগেই মালদহের এক গ্রামে শিয়ালের কামড়ে বেশ কয়েক জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। তদন্তে নেমে বনকর্মীরা জানতে পারেন যে, ছটপুজো উপলক্ষে শব্দবাজির তাণ্ডবে শিয়ালরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে তারা বনের বাইরে বেরিয়ে এসে জোটবদ্ধ হয়ে গ্রামবাসীদের কামড় দেয়। শিয়াল এমনিতে শান্ত ও ভিতু প্রাণী। তবে আতঙ্কে, প্রাণরক্ষার তাগিদে এই আক্রমণ চালাতে বাধ্য হয়।
এর কিছু দিন পরে মালদহের রাস্তায় বিদ্যুৎপৃষ্ট অবস্থায় দু’টি সোনালি শিয়ালের মৃতদেহ পাওয়া যায়। বনকর্মীদের ধারণা, গ্রামবাসীরাই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এই কাজ করেছেন। অথচ, এই সোনালি শিয়াল ভীষণ স্বল্প সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে অবশিষ্ট আছে। একই ভাবে হাতির দল গ্রামে এসে হামলা চালাবে এই ভয়ে ফাঁদ পেতে তাদেরও হত্যা করছেন গ্রামবাসীরা। সম্প্রতি খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে মুর্শিদাবাদে ভাগীরথী ও নবদ্বীপে গঙ্গায় কুমিরের দেখা মিলেছে। এ সব অঞ্চলে বহু মৎস্যজীবী যেমন আছেন, সেই রকমই অনেক মানুষ এখানে প্রতি দিন নদীতে আসেন। সারা বছর কুমির জলে ও ডাঙাতে থাকলেও শীতের সময় শীতঘুমের জন্য নিরাপদ ডাঙা খোঁজার জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি আয়লা, ফণী, আমপানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সুন্দরবন ব-দ্বীপ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলের তলায় চলে গিয়েছে। এখন শীতঘুমের সময় ডাঙার অভাবে কুমিরদের জনবসতি অঞ্চলে বিচরণ স্বভাবতই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনে ব-দ্বীপ অঞ্চল-সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কৃত্রিম ভাবে এই কুমিরগুলির শীতঘুমের ব্যবস্থা করা হলে স্বস্তি পাবে তারাও। বন দফতর এই বিষয়গুলি নিয়ে দ্রুত আলোচনা ও মূল্যায়ন করুক। এই সকল অমূল্য প্রাণী সংরক্ষণে যে দিকগুলি অবহেলিত হচ্ছে এবং তার কারণে বন্যপ্রাণ ও জনজীবন— দুই’ই অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ছে, সেই দিকগুলির প্রতি আরও সজাগ হোক এবং সচেতন পদক্ষেপ করুক। পরিবেশে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করতে এই সকল বন্য ও জলজ উভচর প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা ভীষণ প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির এখনই সমাধানে নেমে পড়া উচিত।
শুভজিৎ বসাক
কলকাতা-৫০
অমানবিক
‘ক্ষুদ্রের দাপট’ (১২-১১) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রবন্ধটি অত্যন্ত সময়োচিত। কথায় আছে, ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়’। রাজ্যের গ্রিন পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়ার— এঁরা স্বেচ্ছাসেবকের পদমর্যাদার। পুলিশকে সাহায্য ও সহযোগিতা করাই এঁদের মূল কাজ। সম্প্রতি কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া এক ধরাশায়ী যুবকের (চোর সন্দেহে) বুকে বুট পরা পায়ে লাথি মারার বিষ দৃশ্য আমাদের ভাবাচ্ছে। নিজেদের বিশাল কিছু ভেবে, কিছু উপরওয়ালা পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতার মদতে সমাজের বুকে দাদাগিরি বেড়েই চলেছে। তার উপর আবার ঘুষ ও তোলা আদায়ের মতো রোগের প্রভাবও ক্রমশ বাড়ছে। এঁদের আচরণে সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ। উপযুক্ত ট্রেনিংয়ের অভাবে নিজেদের কাজ সম্পর্কে এঁরা অসচেতন। এঁদের এই সব অমানবিক ঘটনা মানা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীকে এই দিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানাই।
শিবপদ চক্রবর্তী
কাঁচরাপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
দাপিয়ে ফুটবল
১৯৮০ সালে টিম ম্যানেজমেন্ট-এর সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, সদ্যপ্রয়াত চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, সাব্বির আলি ও ডেভিড উইলিয়ামস ইস্টবেঙ্গল থেকে একজোট হয়ে বেরিয়ে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবে যোগ দেন। ১৬ বছর পরে আবার তাঁদের লিগ জয়ের সম্ভাবনা উঁকি মারতে থাকে। কিন্তু ১৬ অগস্টের সেই কলঙ্কিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে কলকাতা লিগ সে বারের মতো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মহমেডান স্পোর্টিংয়ের স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৮১ সালে মোহনবাগান থেকে গোসা করে বেরিয়ে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু কালো সাদা জার্সি পরেন। কলকাতা মাঠের সেরা ফুটবল দল নিয়ে মহমেডান সে বার অনেকগুলো ট্রফির সঙ্গে কলকাতা লিগও জয় করে। সেই শেষ।
তার পরে, ধীরে ধীরে মহমেডানের পিছিয়ে পড়ার কাহিনি। লালবাজারের অরফান চা কোম্পানির মালিক এরফান তাহেরের হাত থেকে ক্লাবের দায়িত্ব চলে যায় সোমেন মিত্রের অনুগামী মীর মহম্মদ ওমরের হাতে। দলের পিছিয়ে যাওয়া শুরু হয়। ওমরের জেলযাত্রা, অকালমৃত্যুর পরে ক্লাবে শুরু হয় তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক, পরে সাংসদ সুলতান আহমেদ এবং তাঁর কাউন্সিলর ভাই ইকবাল আহমেদের জমানা। ক্লাব আরও ধুঁকতে থাকে।
ক্লাবের পরিচালনা হাতবদল হতে হতে অবশেষে কামারুদ্দিন আহমেদ এবং দানিস ইকবালের জুটি ক্ষমতায় এসে ক্লাবের প্রাক্তন খেলোয়াড় দীপেন্দু বিশ্বাসকে ক্লাবের ফুটবল সচিব করে ফুটবল টিমের দায়িত্ব তুলে দেওয়ায় ক্লাব আবার ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। উপযুক্ত বিনিয়োগকারী, স্বচ্ছ প্রশাসন, ফুটবলানুরাগী কর্মকর্তা, সঠিক খেলোয়াড় এনে দল বানানো— সব কিছুর ফল এ বারের কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। তবে একই সঙ্গে বলতে হবে কোচের কাজে হস্তক্ষেপ এখনও ক্লাবের যায়নি। রাজা বাদশার ঢঙে ফুটবল ক্লাব চালালে যে জেতা যায় না, সেটা বুঝে সব দায়দায়িত্ব কোচের হাতে ছেড়ে দিলে ধুলোয় ঢাকা তৃতীয় প্রধানের তকমা আবার মহমেডানের গায়ে উঠবে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান যদি দাপিয়ে ফুটবল খেলে— এর থেকে সুন্দর দৃশ্য মনে হয় আর কিছু হতে পারে না।
পার্থ নন্দী
শেওড়াফুলি, হুগলি
লাইসেন্স দরকার
‘লাইসেন্সহীন পোষ্যের সংখ্যা বাড়ছে শহরে, বাড়ছে সমস্যাও’ (১৫-১১) শীর্ষক খবরের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। জীবজন্তুদের, বিশেষ করে সারমেয়দের পোষ্য করে বাড়িতে রাখা হয় কখনও একটু সঙ্গ পেতে, কখনও সুরক্ষার জন্য। আর কোথাও বা এই শখ ‘স্টেটাস’-এর মাপকাঠি। পাখিদের দিয়ে কথা বলানো ও পায়রা ওড়ানো এক সময় কলকাতার বাবু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য হয়ে গিয়েছিল। কিছু মানুষ নিজের মঙ্গল কামনাতেও পশুদের সেবা করেন। আবার কোনও সহৃদয় মানুষ শুধুমাত্র মানবিকতার খাতিরে খাদ্য, বাসস্থান, শীতে সোয়েটার ও গরমে কুলারের হাওয়ায় পোষ্যদের রেখে তৃপ্তি পান। বহু পশুপ্রেমী সংগঠন আছে যেগুলি অবলা পশুদের বিশেষ যত্ন করে, চিকিৎসা করে।
কিন্তু পোষ্য রাখতে লাইসেন্স লাগে, এটা বর্তমানের অনেকেরই জানা নেই। এর সপক্ষে যুক্তি হল, এক জনের আদরের পোষ্য অন্য মানুষের অসুবিধে করবে কি না, সেটা প্রভুর নজরে রাখা দরকার। অনেক বাড়ির দরজায় লেখা থাকে, ‘কুকুর হইতে সাবধান’। সুতরাং সাবধানতার একটা প্রশ্ন যে থেকেই যায়, তা অস্বীকার করা যায় না। এমনও হয়েছে যে, মিস্ত্রি বাড়িতে কাজ করতে এসেছেন, পোষা কুকুর তাঁকে তাড়া করেছে। কুকুরের মালিকেরা সাধারণত অতিথিকে অভয় দিয়ে থাকেন যে, তাঁর পোষা কুকুর খুবই সভ্য, সে কিছু করবে না। কিন্তু অতিথির ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা হয়। আরও সমস্যা, ভোরবেলা কুকুর-বেড়ালের গলায় শিকল পরিয়ে পড়শির বাড়ির দোরগোড়ায় প্রাতঃকৃত্য করানোর বদঅভ্যাস। যাঁরা কুকুর-বেড়াল পোষেন, তাঁরা বাড়িতেই একটা পশু শৌচাগার বানিয়ে নিতে পারেন। অথবা রাস্তায় নিয়ে বেরোলে পোষ্য নোংরা করার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কারের উদ্যোগ করলে রাস্তাও পরিচ্ছন্ন থাকবে।
কুশল রায়
কলকাতা-১০৮