প্রতীকী ছবি।
‘বৌ পেটানো? মন্দ কী!’ (২৮-১১) শীর্ষক সংবাদটি ভয়ঙ্কর। অনেক পরিবারেই স্ত্রীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক অন্যায় আচরণ করা হয়। যে সব পরিবারে স্বামী, স্ত্রী উভয়েই কাজ করতে যান, তাঁরা যখন কর্মস্থল থেকে ফিরে আসেন, তখন বাড়ির পুরুষ সদস্যটির সঙ্গে যেরূপ আচরণ করা হয়, অনুরূপ আচরণ মেয়েটির সঙ্গে করা হয় না। বাড়ি ফেরার পর রান্নাঘরে মেয়েটি স্বেচ্ছায় গেলেও তাঁর কাজের কোনও স্বীকৃতি তো দেওয়া হয়ই না, সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি হলেই মানসিক ভাবে নিগৃহীতও করা হয়। অনেক জায়গাতেই কন্যাসন্তানের সঙ্গে পুত্রসন্তানের খাওয়াদাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ সব কিছুতেই বিভাজন করা হয়। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। দু’টি দক্ষিণের রাজ্যের সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, মহিলারাই বাড়ির বৌদের উপর অত্যাচার করার ব্যাপারে ব্যাপক সমর্থন জানিয়েছেন। এই সমর্থন সেই সব মহিলা করে থাকতে পারেন, যাঁরা শাশুড়িদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছেন। এ ছাড়া দক্ষিণের একটি অঙ্গরাজ্যে পুরুষরা বৌ পেটানোকে সমর্থন করেছেন। মদ খেয়ে বা নেশা করে বৌ পেটানো তো একটি সামাজিক ব্যাধি। শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে আকছার শোনা যায়। অনেক পুরুষ আছেন, যাঁরা বৌয়ের রোজগারের পয়সা থেকে মদের বোতল বা পাউচ কিনে আনেন। মহিলাদের নিগৃহীত করার সপক্ষে যে সব যুক্তি খাড়া করা হয়েছে, সেগুলিও সমর্থনযোগ্য নয়। এই সামান্য কারণে যদি বৌয়ের গায়ে হাত তোলার মতো ঘৃণ্য অপরাধ করা যায়, তবে তা সমাজের সর্বনাশ ডেকে আনবে।
স্মৃতি শেখর মিত্র
আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান
অশ্রদ্ধাই কারণ?
‘বৌ পেটানো? মন্দ কী!’ শীর্ষক খবরটি উদ্বেগজনক। যখন সারা দেশে গার্হস্থ হিংসার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহিলা সংগঠন সরব হয়েছে, লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে নারীমুক্তির জন্য, তখন তেলঙ্গানাতে ৮৩.৮ শতাংশ মহিলা বলছেন, ‘বৌ পেটানো’ ঠিক! শুধু তেলঙ্গানাই নয়, পশ্চিমবঙ্গ-সহ মোট ১৩টি রাজ্যে এই সমীক্ষার আওতায় আসা মহিলারাও মনে করেন শ্বশুরবাড়ির প্রতি অশ্রদ্ধাই গার্হস্থ হিংসার কারণ। আসলে দীর্ঘ দিন পুরুষশাসিত সংসারে বাস করে নিজেদের অধিকার বোধ সম্বন্ধে এঁরা যথেষ্ট সচেতন হয়ে উঠতে পারেননি। যুগ যুগ ধরে জেনে এসেছেন, স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির প্রতি আনুগত্যই এক জন মেয়ের জীবনের শেষ কথা। এই কূপমণ্ডূকতার বাইরে তাঁরা আর বেরিয়ে আসতে পারছেন না। সংসারে তাঁদেরও যে মতপ্রকাশের এবং নিজেদের মতো করে বাঁচার অধিকার আছে, এই বোধ হয়তো তাঁদের নেই। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন এই নারীদের নিজের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন করা, যাতে তাঁরা পুরুষতান্ত্রিকতার কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
ডলি আচার্য
শান্তিপুর, নদিয়া
লজ্জাজনক
বৌ পেটানোর সংবাদটি পড়ে ভারতের নারী সম্পর্কে হতাশাই প্রকট হল। তাঁরা এখনও পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকেই মনেপ্রাণে লালন করছেন, যার পরিণতিতে নারীর প্রতি অবিচার, অত্যাচারকে বিনা বাক্যে সমর্থন করেছেন। বধূকে মারা বা নির্যাতন করা পুরুষদের অধিকার বলেই তাঁরা বিশ্বাস করেন। বৌ পেটানোকে যদি তেলঙ্গানা রাজ্যের ৮৩.৮ শতাংশ মহিলা সমর্থন করেন, তা হলে তো বলতে হয়, ভারতীয় নারীরা তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সেই অর্থে সচেতন হননি, বা এই দেশের সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা নারীর অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আসলে জন্ম থেকেই এঁদের মধ্যে সমাজ বদ্ধমূল ধারণা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে যে— তুমি নারী। তুমি অপূর্ণ। পুরুষই তোমাকে পূর্ণত্ব প্রদান করতে পারে। সেই হিসাবে স্ত্রীকে পেটানোও পুরুষের অধিকার বলেই তাঁরা বিশ্বাস করে আসছেন। একুশ শতকে এ যেমন লজ্জাজনক, তেমনই চরম হতাশাজনকও বটে।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল
কোন্নগর, হুগলি
মাদকের প্রভাব
কিছু অস্বস্তিকর তথ্য উঠে এল ‘বৌ পেটানো? মন্দ কী!’ শীর্ষক খবরে। বৌ পেটানোর সমর্থনকারীদের নিয়ে এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এক বড় সংখ্যক পুরুষ এবং মহিলা মনে করেন, স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে ‘শাসন’ করার অধিকার আছে স্বামীর। এটি যুগসঞ্চিত পুরুষতান্ত্রিকতার ফল। বলা হয়েছে, সমীক্ষাটি চালানো হয়েছে সরকারি স্তরে। সেখানে তথ্যগুলি কী ভাবে সংগৃহীত হয়েছে, ঠিক কী প্রশ্ন কোন শব্দবন্ধ কোন শ্রেণির মানুষের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে, সেগুলি জানতে ইচ্ছে করছে। অভিজ্ঞতা বলে, অনেক সময় উদ্দিষ্ট ফলের কথা মাথায় রেখেই সমীক্ষার প্রশ্ন এবং টার্গেট-গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়। সে ক্ষেত্রে যে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে, তা কখনও বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন নয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আলোচ্য সমীক্ষায় যে সাতটি কারণ উল্লিখিত হয়েছে, সেখানে মাদক দ্রব্যের প্রভাবের কথা বলাই হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে বেকারত্ব, হতাশা, পেশি অথবা অর্থশক্তিতে বলবান কারও কাছে অবমাননা মুখ বুজে সহ্য করে ঘরে ফিরে পুরুষ তার পৌরুষ ফলায় ঘরের নারীর উপর, যেখান থেকে প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনা নেই বললেই হয়। নীতিবিবর্জিত কাজে রসদ জোগায় সস্তার মাদক। আবার, শহরের নাগরিকদের এক বড় অংশ কাজটি সারেন চার দেওয়ালের মধ্যে ঠুসঠাস চড়চাপড়ে। তাঁদের এই অপকর্মের প্রেরণা দেয় দামি মাদক। অথচ, খবরে উল্লিখিত সমীক্ষকরা এই কারণটাই জানতে পারলেন না?
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি
চাই স্বচ্ছতা
সরকার তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেও কৃষক সংগঠনগুলো বলছে, সংসদে আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন শেষ হবে না (‘জয় কিসান’, ১৯-১১)। কিন্তু তার চেয়েও বড় দাবি এখন ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি-কে বৈধ করা। এমএসপি কার্যকর করার জন্য সরকার একটি বড় কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যেখানে থাকবেন কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রতিনিধি, কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং কৃষি-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এমএসপি নিয়ে এত দিন যে যুক্তিগুলো দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি হল, আজ দেশে খাদ্য সঙ্কট নেই, এবং যদি এমএসপি নিয়ে আইন করা হয়, তা হলে উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা সরকারের জন্য সঙ্কটে পরিণত হবে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রচুর শস্য পচে যেতে পারে। এটাও বলা হয়েছে যে, যদি এমএসপি আইন হয়ে যায়, তবে কেবল বড় কৃষকরা ছোট কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে সরকারের কাছে বিক্রি করবে এবং এটি ছোট কৃষকদের আরও সমস্যায় ফেলবে। প্রশ্ন হল, কৃষকদের যখন সরকারের প্রতি আস্থা নেই, এবং সরকার এমএসপি নিয়ে আইন প্রণয়ন করা কঠিন মনে করছে, তখন সমাধান কী? ভারতে অধিকাংশ চাষি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক, বড় কৃষকরা ৬-৭ শতাংশ, মধ্য কৃষক বড়জোর ১০-১৫ শতাংশ। ধনী কৃষকরা যদি আইনের সুফল পেতেই থাকেন, তা হলে ক্ষুদ্র কৃষকরা কী করবেন? সরকার দাবি করছে যে, নতুন আইনগুলি ছোট কৃষকদের মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবস্থা থেকে মুক্ত করবে। কিন্তু কৃষকদের আশঙ্কা, তাতে বৃহৎ শিল্পপতিদের ফাঁদে পা দেওয়া হবে। সরকারের উচিত কৃষি বিষয়ক সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা আনা।
অভিজিৎ রায়
জামশেদপুর