Education Centers

সম্পাদক সমীপেষু: গোড়ার গলদ

সম্প্রতি রাজ্য সরকার সিভিক ভলান্টিয়ারদের জঙ্গলমহলের স্কুলগুলিতে নিযুক্ত করার কথা বলেও শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:১৮
school.

শিক্ষার অবনমন রুখতে কোনও রকম সরকারি উদ্যোগ নেই। ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় বহু শিশুশিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেগুলি চলছে, সেগুলিতেও বর্তমানে শিক্ষক, সহায়ক, সহায়িকাদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। শিশুশিক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত অঙ্গনওয়াড়িগুলির এই হাল নিয়ে কোনও মহলেই তেমন উচ্চবাচ্য নেই। অবশ্য না থাকারই কথা। কারণ, এই মুহূর্তে আমাদের রাজ্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড়। টিভি চ্যানেল, বিভিন্ন সমাজমাধ্যম তাই নিয়ে সরগরম। এ দিকে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা যে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সে দিকে খেয়াল নেই। শিশুশিক্ষার শুরুই যদি অভাব, অবহেলা দিয়ে হয়, তা হলে তার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। অথচ, বনিয়াদি শিক্ষার প্রথম পাঠ গ্ৰহণে এই স্কুলগুলির ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের বহু প্রাক্-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক এবং পরিকাঠামোর অভাবে অনেক বছর ভুগছে। সাধারণ মানুষের কাছে গ্ৰামের দিকে আইসিডিএস স্কুলগুলি ‘খিচুড়ি’ স্কুল হিসাবে পরিচিত। এখানে ছাত্রছাত্রীরা বই, খাতা, স্লেট, খড়ি নিয়ে হাজির হয়, কিন্তু বাংলা, ইংরেজির বর্ণমালা, গণিতের সংখ্যার সঙ্গে তাদের ন্যূনতম পরিচয় গড়ে ওঠে না। এরাই ৬ বছরের পর প্রাইমারি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলে সামনে আসে একটি সুনির্দিষ্ট পাঠ্যসূচি, যা তাদের কাছে সমুদ্রের মতো লাগে। অক্ষরজ্ঞানহীন ছাত্রছাত্রীদের তখন দিশেহারা অবস্থা।

শিক্ষার এই অবনমন রুখতে কোনও রকম সরকারি উদ্যোগ নেই। সম্প্রতি রাজ্য সরকার সিভিক ভলান্টিয়ারদের জঙ্গলমহলের স্কুলগুলিতে নিযুক্ত করার কথা বলেও শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। মাঝেমধ্যে খবরের কাগজে বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল অবস্থা দেখে আমরা শিউরে উঠি। কিন্তু সরকারের এ নিয়ে মাথাব্যথা দেখি কি? শৈশবে এই শিক্ষাহীনতাই ‘শিক্ষা দারিদ্র’ সৃষ্টি করছে। পেটের খিদে মেটানোর পাশাপাশি, জ্ঞানের পিপাসা যদি না মেটে, মানবসম্পদ তৈরি হবে কী ভাবে? দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে লেখা আছে— একটি দেশকে ধ্বংস করার সহজ উপায় হল— তার শিক্ষার মানকে নামিয়ে দেওয়া। আমরা কি তা হলে সেই পথে হাঁটছি?

Advertisement

অরুণ মালাকার, কলকাতা-১০৩

ব্যাঙ্কের বিপদ

পরন্তপ বসুর ‘ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে নতুন বিপদ?’ (২৯-৩) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। কেবল সত্যজিৎ রায়ের মহানগর নয়, ব্যাঙ্ক ফেল নিয়ে বহু গল্প-উপন্যাস-সিনেমা হয়েছে এ দেশে। ১৯১৩ থেকে ১৯৬৮ সালের মধ্যে দেশে মোট ২১৩২টি ব্যাঙ্ক ফেল করেছিল। গ্রাহক এবং কর্মচারীরা পড়েছিলেন অথৈ জলে। ইদানীং ব্যাঙ্ক ফেল করার ঘটনা খুব একটা শোনা যায় না ঠিকই, তবে দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা যে সঙ্কটে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই সত্যকে সাময়িক আড়াল করতেই কি সংযুক্তিকরণ?

সম্প্রতি আমেরিকার দু’টি ব্যাঙ্ক, সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক ও সিগনেচার ব্যাঙ্ক, বন্ধ হয়েছে। আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাঙ্ক। সুইৎজ়ারল্যান্ডের ব্যাঙ্ক ক্রেডিট সুইস-এর আর্থিক হালও খারাপ। এই ব্যাঙ্কগুলির ব্যাপ্তি বিশ্ব জুড়ে। সে কারণে এই ব্যাঙ্কগুলির হাল সমগ্র বিশ্বকে আর্থিক অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় আলোড়িত করেছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০০৮ সালের সেই ভয়ঙ্কর মন্দাকে। দু’দেশের সরকার এবং শীর্ষ ব্যাঙ্ক টাকা ঢেলে, গ্রাহকদের আমানত তোলার সুযোগ সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে যে পদক্ষেপই করুক না কেন, সাধারণ মানুষ এতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। সুদ বৃদ্ধি ব্যাঙ্কগুলিকে বিপাকে ফেলেছে। সুদ বৃদ্ধি ব্যাঙ্কের দায় তথা ‘লায়াবিলিটি’কে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ, মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় সুদ বৃদ্ধি ছাড়া ব্যাঙ্কগুলির কাছে আর কোনও পথ নেই বলে আমেরিকার ফেডারাল রিজ়ার্ভ-এর অর্থনীতিবিদদের অভিমত। অনুমান, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিপুল অনাদায়ি ঋণ। সে কারণেও ব্যাঙ্কের দায় ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাঙ্ককে সঠিক পথে চালাতে গেলে চাই সম্পদ এবং দায়-এর যথাযথ মেলবন্ধন। উপযুক্ত বা কার্যকর সম্পদ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এই দায় সামলানোর পরিবর্তে ব্যাঙ্কগুলি শেয়ার বিক্রি করছে। শেয়ারের মূল্যমান নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও চলছে নানা অনিয়ম। এতে মূলধন বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে দায় থেকে সাময়িক সুরাহা মিললেও দায়ের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। সম্পদ এবং দায়ের মধ্যে সমতা রক্ষা হচ্ছে না। এরই পরিণামে দুর্বল হতে হতে ডুবছে ব্যাঙ্কগুলি।

ব্যাঙ্ক-শিল্পের বর্তমান সঙ্কট বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বর্তমানের দুর্নীতিগ্রস্ত-প্রতিক্রিয়াশীল পুঁজিবাদ ক্ষয়িষ্ণু, মরণোন্মুখ, অর্থনৈতিক সঙ্কটে জেরবার। এর মূল নীতি হল অধিকতর মুনাফার উদ্দেশ্যে উৎপাদন। এর ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং পুঁজিবাদী বাজার ক্রমাগত সঙ্কুচিত হচ্ছে। পরিণামে নতুন নতুন কারখানা গড়ে ওঠা তো দূরের কথা, চালু কারখানাগুলোই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে, কারখানা মালিকরা নতুন করে আগের মতো ব্যাঙ্কঋণ নিচ্ছেন না, তাঁদের বকেয়া ঋণের পরিমাণও ক্রমবর্ধমান। ঋণ হল ব্যাঙ্কের সম্পদ। দায় এবং সম্পদের ভারসাম্য রক্ষা করতে তাই ব্যাঙ্কগুলিকে পুঁজিবাজারে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের নিজস্ব শেয়ারের উপর, যার বাজারমূল্যও স্টক এবং অন্যান্য বিপণনযোগ্য সিকিয়োরিটিতে অর্থের প্রবাহের উপর নির্ভরশীল। এখন যদি শেয়ারের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে কমে যায়, তখন ব্যাঙ্কগুলোর দায় মেটানোর জন্য সম্পদের অভাব সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাই আজ ব্যাঙ্ক-শিল্পের সামনে প্রধান সমস্যা। ২০০৮ সালে ঋণ নিয়ে অতিরিক্ত ফাটকাবাজি ব্যাপক সঙ্কট সৃষ্টি করেছিল। এই সঙ্কট মোচনে আমেরিকাতে আমানতকারীদের টাকা ২৫০০০০ ডলার পর্যন্ত সরকারি বিমাতে সুরক্ষিত রাখার বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। এই ফর্মুলা মেনে এ দেশে এর পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। তবে এটা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। গ্রাহকদের আতঙ্ককে আপাত প্রশমিত করার এক মধ্যবর্তী, অস্থায়ী ব্যবস্থা। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান রয়েছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গভীরে।

সমগ্র পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া আজ গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিমজ্জিত। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এই সমস্যার বেড়াজাল থেকে সহজে বেরোতে পারে না। আমাদের দেশের মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিল-এর পরামর্শ অনুযায়ী নানা পদক্ষেপ, বিশ্ব জুড়ে এ জাতীয় নানা টোটকা-কবিরাজিও আজ এই ভয়ঙ্কর সমস্যা সমাধানের যথার্থ বিজ্ঞানসম্মত কোনও পথ দেখাতে পারছে না। সে কারণে এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আজ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গৌরীশঙ্কর দাস, সাধারণ সম্পাদক, ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় ইউনিটি ফোরাম

বিশ্রী রাস্তা

গ্রামীণ রাস্তা তৈরি ও সংস্কারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পথশ্রী’ ও ‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরকে এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, প্রায় পৌনে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় রাস্তা বেহাল হওয়ার মুখ্য কারণ রাস্তা তৈরির দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারদের অশুভ আঁতাঁত। যার জন্য টেন্ডারে বর্ণিত পদ্ধতি ও সঠিক গুণমানের কাঁচামাল ব্যবহার হয় না। নতুন রাস্তা তৈরি কিংবা সংস্কারের কিছু দিনের মধ্যেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বরাদ্দ অর্থের যথাযথ খরচ করলে ১৫-২০ বছরেও রাস্তা থেকে একটি কুচো পাথরও উঠত না। বছরে দু’বার করে সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দও করতে হত না। এতে আটকানো যেত সরকারি অর্থের অপচয়, সাধারণ মানুষও মুক্তি পেতেন ভোগান্তি থেকে। ঠিকাদারদের কাছ থেকে নেতা-মন্ত্রীরা ‘কাটমানি’ নেন, যা দলের তহবিল গঠনেও সহায়তা করে। এটাই কি উন্নত রাস্তা তৈরি না-করার কারণ?

বিভূতিভূষণ রায়, ডহরথুবা, উত্তর ২৪ পরগনা

আরও পড়ুন
Advertisement