Gender Inequality

সম্পাদক সমীপেষু: আব্রুহীন, দুর্গন্ধময়

আবার যে মহিলারা রোদে-জলে ধান রুইছেন, নোনাজলে দাঁড়িয়ে ‘মীন’ ধরছেন বা মাথায় ইটের বোঝা নিয়ে জোগাড়ের কাজ করছেন, ওই একই কাজ করা পুরুষকর্মীর থেকে তাঁদের কম মজুরি দেওয়া হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ ০৫:২২

আবির্ভাব ভট্টাচার্যের ‘স্বচ্ছতার গোপন পরিসর’ (১০-৫) প্রবন্ধ নিয়ে কিছু কথা। আজকাল ‘নারীবাদ’ কথাটি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়, সঙ্গে চলে আসে পোশাক বিতর্ক। কারণ এ বিষয়টা মুখরোচক, সহজে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু ভদ্রলোকেরাও অনেক সময় আপত্তিকর পোশাক পরে দৃষ্টিকটু ভাবে ঘোরাফেরা করেন, সে কথা কে বলে! আমরা বরং কথাটা ‘মানবীবাদ’ বলি। নারীকে মানুষ হিসেবে কতটা স্বীকৃতি বা অধিকার দেওয়া হয়েছে? দেশের ক্ষমতাসীন দল যতই ‘সবার বিকাশ’ ইত্যাদি বলুন, কোটিপতি নেতাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অসাম্য বেড়েই চলেছে। বিত্তহীন শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি।

Advertisement

আবার যে মহিলারা রোদে-জলে ধান রুইছেন, নোনাজলে দাঁড়িয়ে ‘মীন’ ধরছেন বা মাথায় ইটের বোঝা নিয়ে জোগাড়ের কাজ করছেন, ওই একই কাজ করা পুরুষকর্মীর থেকে তাঁদের কম মজুরি দেওয়া হয়। সংসারের প্রয়োজনে বাইরে কাজ করা মহিলাদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। একটু খেয়াল করলেই ট্রেনে হকার-মহিলা, বাজারে দূর থেকে আসা ফুলওয়ালি, আনাজ বিক্রেতা মাসি বা টোটো চালানো মেয়ে চোখে পড়বে। শ্রমের সম্মান, নিরাপত্তার সঙ্গে তাঁদের জন্য ব্যক্তিগত গোপন পরিসরে স্বচ্ছ শৌচাগার অত্যন্ত জরুরি। অথচ, রেলের প্ল্যাটফর্ম, বাজার বা রাস্তা, কোথাও মহিলাদের জন্য যথে‌ষ্ট সংখ্যায় এবং ব্যবহারযোগ্য শৌচালয় নেই। বড় শহরে হয়তো রাস্তার দিকে মুখ করা খোলা শৌচাগার আছে, প্রবন্ধকার সঠিক ভাবেই বলেছেন যে, সেখানে যেতে মহিলারা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। জল কম খেয়ে বহু ক্ষণ শৌচাগার না গিয়ে এঁরা নানা রোগে ভোগেন।

আমাদের এলাকার বাজারে পাশাপাশি দুটো দরজাহীন শৌচাগার আছে। বলা বাহুল্য, সেখানে শুধু পুরুষরাই যান। অপরিচ্ছন্ন, দুর্গন্ধময় সে শৌচাগারের পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটাই দুষ্কর। আমার চেনা ঠাকুরনগর থেকে আসা ফুল বিক্রেতা দিদি আর বনগাঁ থেকে আসা আনাজ বিক্রেতা মাসি বাধ্য হয়ে কাছাকাছি বাড়ির যে নিত্য ক্রেতা মহিলারা আসেন, তাঁদের বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার করেন। আমার প্রতিবেশী মেয়েটি উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। তাদের স্কুলে শৌচাগার বলে কিছু নেই। সে এবং অন্য শিক্ষিকারা স্কুলের কাছের একটি বাড়িতে যায়। এমনতর বহু সরকার-পোষিত স্কুল আছে, যেখানে শৌচাগার নেই। বা থাকলেও ভাঙা, অপরিচ্ছন্ন। তা হলে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর এত ঢক্কানিনাদ কেন? রাজ্য সরকারও যেমন প্রচার ও বিজ্ঞাপনে যে ছবি তুলে ধরে, বাস্তবের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া ভার।

শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

অকারণ সুবিধে

‘স্বচ্ছতার গোপন পরিসর’ প্রবন্ধে লেখা হয়েছে, “প্রযুক্তি নারীকে বহু ধরনের বন্ধন ও অধীনতা থেকে মুক্ত ও স্বাবলম্বী করেছে।” এই প্রসঙ্গে ঔপন্যাসিক রুথ হ্যারিসের একটা উক্তি মনে পড়ছে— নারী-মুক্তি আন্দোলনের একটি ফল হল, নারীরা এখন আরও মুক্ত হয়েছেন। এবং এর ফলেই সৃষ্টি হয়েছে কিছু নৈতিক ও সামাজিক সমস্যার। যেন রুথ হ্যারিসের কথার সমর্থনেই প্রবন্ধে উল্লিখিত নোরা ফতেহিও বলেছেন, নারীবাদ জিনিসটা প্রাথমিক ভাবে ভাল, কিন্তু তার একটা সীমা থাকা দরকার। র‌্যাডিক্যাল নারীবাদ সমাজের সর্বনাশ করেছে। বলা বাহুল্য, রুথ হ্যারিস কিংবা নোরা ফতেহি— দু’জনের দু’টি মন্তব্যই যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দেবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বলি, আজকের বিশ্বায়নের যুগে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে নারীদের এই অবমূল্যায়নের পিছনে যত না পুরুষরা দায়ী, তার চেয়ে বহুলাংশে দায়ী নারী নিজেই। ‘র‌্যাডিক্যাল নারীবাদ’ শুনতে মন্দ নয়! কিন্তু সেটা যদি মেকি হয়, তা হলে তো তার দাম এক কানাকড়িও নয়!

প্রবন্ধের বিষয় যেটা, সেই মহিলাদের জন্য শৌচালয় নির্মাণ তো নারীর অধিকারের সহস্র তালিকার মাত্র একটা দিক। বাকি আরও যে সহস্রতর অধিকার পুরুষের সঙ্গে সমান ভাবে চাই বলে নারীরা দাবি করে থাকেন, তা না পাওয়ার পিছনে কি তাঁরাই দায়ী নন? সাধারণ রুটের বাসগুলোতে কেন আলাদা করে লেডিজ় সিট থাকবে? কেন লোকাল ট্রেনে মহিলাদের আলাদা কামরা কিংবা মেট্রোতে আলাদা সিট থাকবে? ভোটের সময় কেন মহিলাদের আলাদা লাইন হবে? পুরুষদের অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপনে এক জন মহিলা প্রধান মুখ হবেন কেন? কেন আজও পণপ্রথার মতো ঘৃণ্য একটা সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে বাড়ির মহিলারা সরব হবেন না? এমন হাজারও প্রশ্ন রয়েছে। সেগুলির উত্তর না দিয়ে অনেক আধুনিক মেয়েও এর সুযোগ নিয়েছেন।

প্রতিটা রাজনৈতিক দলেই মহিলাদের আলাদা সংগঠন আছে। জানি না, কিসের প্রয়োজনে আলাদা সংগঠন? কারণ, সেই সব দলের মহিলা সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ করে নারীদের দাবি, নারীদের নানা সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে কোনও আন্দোলন বা আলোচনা হয়েছে বলে শুনিনি। তাঁরা তো বলেন না যে, রাস্তার ধারে মহিলাদের শৌচাগারের ব্যবস্থা করে দিতে হবে?

তাই যখন দেখি, মহিলাদের ব্যবহারোপযোগী শৌচালয়ের সমস্যার কথা এক জন পুরুষের কলমে লেখা হচ্ছে, তখন সত্যিই অবাক লাগে এই ভেবে যে, প্রয়োজনটা কাদের? যাঁদের প্রয়োজন, যাঁদের সমস্যা, তাঁরা এ ব্যাপারে নীরব কেন?

রমেন্দ্রনাথ নস্কর, জগদীশপুরহাট, হাওড়া

মোদীর নজির

‘এই গণতন্ত্রের নিয়তি’ (৪-৫) শীর্ষক প্রবন্ধে কৌশিক সেন বিজেপি শাসনের স্বৈরাচারী প্রবণতা ও তার সম্ভাব্য বিপদের কথা বলেছেন। নেতি-শাসনের কিছু শৃঙ্গ অনুল্লিখিত থেকেছে। যেমন, দেশের সম্পদের প্রায় অর্ধেক সম্পদ কুক্ষিগত রয়েছে এক শতাংশ ধনী পরিবারের হাতে। আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের দাম কমলেও মোদী সরকার পেট্রোপণ্যের দাম কমিয়ে আমজনতাকে স্বস্তি দেয়নি।

২০১৪ সালে ক্ষুধা সূচকে ৫৫তম স্থানে ছিল ভারত। মোদীর শাসনে ২০২৩ সালে নেপাল (৬৯), বাংলাদেশ (৮১) ও পাকিস্তানের (১০২) পিছনে সরে ভারত ১২৫টি দেশের মধ্যে ১১১তম স্থান অধিকার করেছে। বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ভারত ১৩১ (১৮৯টি দেশের মধ্যে) এবং সংবাদের স্বাধীনতা সূচকে ১৫০ (১৮০টি দেশের মধ্যে)।

বিদায়ী সংসদ গত পাঁচ বছরে বসেছিল মাত্র ২৭৪ দিন। এখনও পর্যন্ত যা সর্বনিম্ন। সংবিধান সংশোধনী বিলকে ‘অর্থ বিল’ হিসাবে পাশ করানোর নজির দেখিয়েছে এই সরকার। ২০২০ সালে বিরোধীশূন্য সংসদে দু’দিনে ১৫টি বিল পাশ করিয়েছে। গত ১০ বছর সংসদে সবচেয়ে কম সময় উপস্থিত থেকে পূর্ববর্তী সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০২৩ সালে এক লপ্তে ১৪৬ জন বিরোধী দলের সাংসদকে বরখাস্ত করার নজির রয়েছে এই সরকারের ঝুলিতে। গত দশ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটিও সাংবাদিক সম্মেলন করতে দেখা যায়নি।

নির্বাচনী বন্ড কেলেঙ্কারি উন্মোচিত হয়েছে মহামান্য আদালতের রায়ে। রাষ্ট্রীয় তোলাবাজির এই কুৎসিত নজির ‘বফর্স কেলেঙ্কারি’-র মতো নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম বিষয় হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে ভাবে দানা বাঁধতে পারেনি। সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের মৌলিক চরিত্র লঙ্ঘিত হতে দেখা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে। স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগকে (ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া) নির্বাচন কমিশন আমল দেয়নি। তাতে সন্দেহ দৃঢ় হয়েছে।

রাজশেখর দাশ, কলকাতা-১২২

অপেক্ষা

এত দিন ধরে চলতে থাকা আইপিএল শেষ। বাঙালি আবার বেকার! ভিড় বাস, অফিস ক্যান্টিন, গ্রামের মুদিখানা, ব্যাঙ্কের ক্যাশ কাউন্টারের সামনের জটলা আবার নিস্তব্ধ হবে। হারিয়ে যাবে টিভির রিমোট নিয়ে হাতাহাতির চিত্র। এ ছিল মাসাধিক কাল ধরে চলতে থাকা মহাযজ্ঞ। আমাদের জীবনের সঙ্গেও তা জড়িয়ে গিয়েছিল। ভবিষ্যতের চিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে, ক্লাবে ক্লাবে বিরাট পর্দা টাঙিয়ে দেশভক্তির প্লাবন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল! আবার পরের বছরের অপেক্ষা।

শঙ্খ অধিকারী,সাবড়াকোন, বাঁকুড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement