Board Examination

সম্পাদক সমীপেষু: ফাঁসের গেরো

কয়েক বছর ধরে সিসি ক্যামেরাও থাকছে। তবুও তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আর তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগের দিন বা পরীক্ষা শুরুতেই; বিগত বছরগুলি সে কথাই বলে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:১৬
পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে হল থেকে বার হওয়া নিষেধ।

পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে হল থেকে বার হওয়া নিষেধ। ফাইল ছবি।

‘মাধ্যমিকে পরীক্ষার মধ্যে প্রশ্ন নিয়ে বেরোনো বারণ’ (৫-১) শীর্ষক প্রতিবেদনে জানতে পারলাম, প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়ার সমস্যার মোকাবিলার জন্য নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। ব্যবস্থাদির মধ্যে প্রথম হল— পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে কেউ আর প্রশ্নপত্র নিয়ে হলের বাইরে যেতে পারবে না। বেরোতে চাইলে উত্তরপত্র ও প্রশ্নপত্র নজরদারের হাতে জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে পরীক্ষার শেষে রেখে আসা সেই প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়া যাবে। উপরন্তু থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি, পর্ষদ প্রেরিত পর্যবেক্ষক দল, থাকবেন ভেনু সুপারভাইজ়ার যিনি সব তথ্য পর্ষদকে জানাবেন। পরীক্ষা কক্ষে মোবাইল-সহ বৈদ্যুতিন সামগ্রী নিয়ে প্রবেশও নিষিদ্ধ হল।

স্মরণীয়, এ সব বিধিনিষেধ চিরকালই ছিল। এমনকি কয়েক বছর ধরে সিসি ক্যামেরাও থাকছে। তবুও তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আর তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগের দিন বা পরীক্ষা শুরুতেই; বিগত বছরগুলি সে কথাই বলে। অর্থাৎ, সর্ষের মধ্যে ভূত রয়ে গিয়েছে। আজও পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে হল থেকে বার হওয়া নিষেধ। নিয়ম বলে, তিন ঘণ্টা পরীক্ষার হলে থাকলেই যথেষ্ট। অর্থাৎ, পনেরো মিনিট আগে ছেলেমেয়েদের ছাড়া যেতে পারে। এ সময় প্রশ্ন হাতে পেলেও অপকর্মকারীদের কোনও লাভ হয় না। আজও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে কতিপয় দুর্বৃত্ত, দায়িত্বজ্ঞানহীন, অদূরদর্শী (শিক্ষিত হলেও) মানুষ জড়িত। এঁদেরকে অবিলম্বে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। নয়তো বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো হয়েই রয়ে যাবে। বরং, বেশি প্রয়োজন মাননীয় শিক্ষক-শিক্ষিকা, দায়িত্ববান পর্ষদ এবং প্রশাসনের দক্ষ ব্যক্তিবর্গের, যাঁরা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এঁদের উপর ভর করেই এই মহাযজ্ঞের বৈতরণি পার হওয়া সম্ভব। ভাবতে হবে, শিক্ষাপর্ষদ এবং সরকারকে কলুষিত করা যায় না। কলুষিত হলে তার দায়ভার আমাদের উপরও বর্তায়।

Advertisement

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

ব্যাগটা বড্ড ভারী

সমস্ত বেসরকারি স্কুল পড়ুয়াদের স্কুলব্যাগের ওজন বাড়িয়েই চলেছে দিন দিন। বার বার অনুরোধ করেও কোনও সুরাহা হয় না। স্কুল কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই। সরকারের কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কাই করা হয় না। সরকারি বিজ্ঞপ্তি, এনসিইআরটি-র নির্দেশনামা— সব কিছুকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে এই অত্যাচার। স্কুলব্যাগের ভারে পিঠে ব্যথা, শিরদাঁড়া বেঁকে যাওয়া, স্পন্ডিলাইটিস শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ, এনসিইআরটি-র নির্দেশিকা আছে ছাত্রদের ওজনের দশ শতাংশের বেশি হবে না ব্যাগের ওজন।

সে দিন সরসুনাতে, বাগপোতা রোডে একটা বড় বেসরকারি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের স্কুলব্যাগের ওজন পরীক্ষা করলাম। দেখি, ব্যাগের ওজন সাড়ে পাঁচ কেজিরও বেশি। শিশুটির ওজন বড়জোর ২৫ কেজি। এক জন অভিভাবক হিসাবে অনেক স্কুলের ছাত্রকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাতে দেখি যে, শিশুরা ব্যাগের ভারে নুয়ে পড়ে। ব্যাগে থাকে রুটিনের সমস্ত বই, প্রতি বিষয়ের খাতা, প্র্যাকটিস ম্যানুয়াল, নোট কপি, এ ছাড়া টিফিন বক্স, জলের বোতল তো বাদই দিলাম। এক দিন পরীক্ষা করে দেখলাম, দশটা খাতা ব্যাগে ভরে নিয়ে গিয়েছিল ছাত্রটি। মাত্র দুটো খাতায় কাজ হয়েছে। অন্য সময়েও একই ব্যাপার। জিজ্ঞেস করাতে ছাত্রটি বলল, সব খাতা নিয়ে যেতে হয়, কারণ যদি স্যর খাতায় লেখান আর খাতা যদি না নিয়ে যাই, তা হলে শাস্তি দেবেন। সেই ভয়ে সব খাতা নিয়ে যাই। প্রশ্ন হল, শিক্ষকরা এমন কেন করবেন! রুটিন অনুযায়ী পড়া বা লেখা কেন হবে না? যদি খাতার দরকার না পড়ে কোনও দিন, তা হলে রুটিন সেই ভাবে তৈরি করা হয় না কেন? শিক্ষকরা মর্জিমাফিক পড়াবেন, লেখাবেন আর ছাত্ররা ব্যাগ ভর্তি করে খাতা বই নিয়ে স্কুলে যাবে?

এনসিইআরটি-র ২০২০ সালের নির্দেশনামা অনুযায়ী, বিভিন্ন শ্রেণির ব্যাগের ওজন হবে এই রকম— পূর্ব প্রাথমিকে কোনও ব্যাগ থাকবে না। প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ১.৬-২.২ কেজি। তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণির ১.৭-২.৫ কেজি। ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ২-৩ কেজি। অষ্টম শ্রেণির ২.৫-৪ কেজি। নবম-দশম শ্রেণির ২.৫-৪.৫ কেজি। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ৩.৫-৫ কেজি। এই নির্দেশনামা বেশির ভাগ স্কুলই মানে না। স্কুল কর্তৃপক্ষ ভাল করেই জানে যে, এই মাপকাঠি তৈরি হয়েছে চিকিৎসক এবং বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থ সবার উপরে বিরাজ করে!

সরকারও বিজ্ঞপ্তি দিয়েই দায় সারে। সেই নিয়মকে বলবৎ করার কোনও তাগিদ থাকে না। এর খেসারত দিতে হয় সুকুমার শিশুদের। আমার মত হল, প্রয়োজন অনুযায়ী ক্লাসের রুটিন তৈরি হোক, আর সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় খাতাই একমাত্র রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। সমস্ত বিষয়ের আলাদা খাতা তৈরির প্রয়োজন আছে কি না, খতিয়ে দেখা হোক। একটা বা দুটো খাতাতেই যাতে ক্লাসের পড়াশোনা লিপিবদ্ধ করা যায়, সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হোক। শেষ হয়ে গেলে আবার নতুন খাতা খোলা হোক। এতে ব্যাগের ভার কমবে। খাতায় তারিখ আর বিষয়ের উল্লেখ থাকলে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। দ্বিতীয়ত, এত বিরাট সংখ্যক খাতার আর একটা রহস্য হচ্ছে স্কুলের খাতা, বই বিক্রির তাগিদ। সব বই (সরকারি বই বাদে) এবং খাতা স্কুল থেকেই কিনতে বাধ্য করা বেসরকারি স্কুলগুলির এক রকম ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই খাতা, বই স্কুলের বাইরে থেকে কিনলে দাম কম পড়ে। তাই অনুরোধ, সরকার এ দিকে একটু নজর দিক, যাতে অন্তত ব্যাগের ওজন সংক্রান্ত নির্দেশিকাগুলো স্কুল কর্তৃপক্ষ মেনে চলতে পারে।

অরবিন্দ শীল, কলকাতা-৬১

শেষ দায় কার

সম্পাদকীয় ‘বিপত্তারিণী’ (৬-১) প্রসঙ্গে এই পত্রটির অবতারণা। শিক্ষায় লাগামহীন দুর্নীতির পর প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনায় পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতি বাস্তবিক পক্ষেই শাসক দলের জন সমর্থনের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে উঁচু তলার প্রতিনিধিরা গ্রামাঞ্চল গেলেই তীব্র জনরোষের সম্মুখীন হচ্ছেন, মানুষ সরাসরি তাঁদের প্রশ্ন করছেন, যার উত্তর হয় তাঁদের কাছে নেই, অথবা তাঁরা এড়িয়ে যাচ্ছেন। সামনেই আবার পঞ্চায়েত নির্বাচন, তার আগে যদি গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষ এ ভাবে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন, তবে তো সমূহ বিপদ। তাই ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিকে অবলম্বন করে শাসক দলের সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়ক, পঞ্চায়েত সদস্য ও শাসক দলের নেতা-কর্মীরা কম করে দু’কোটি পরিবারের কাছে যাবেন তাঁদের অভাব অভিযোগ শুনতে এবং তার প্রতিকারে সচেষ্ট হবেন। বিচক্ষণ শিক্ষিত নাগরিক স্বভাবতই প্রশ্ন করতে পারেন সরকার কি এই বহমান দুর্নীতির কোনও খোঁজ রাখত না, না কি জেনেও চুপ ছিল?

সুস্থ স্বাভাবিক গণতন্ত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সারা বছর ধরে মানুষের পাশে থাকবেন, মানুষের হয়ে কাজ করবেন, এটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, রাজনীতির অঙ্গনই আজ এ রাজ্যে বৃহত্তম কর্মসংস্থানের জায়গা। পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান তাঁদের প্রাসাদোপম বাড়ি থাকতেও কেড়ে নিচ্ছেন আবাস যোজনায় দেওয়া গরিব প্রান্তিক মানুষগুলোর মাথার উপরের ছাদ। দু’-এক জন পঞ্চায়েত সদস্যকে সরিয়ে জনগণের চোখে ধোঁকা দেওয়া যায়, কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান সম্ভব কি?

এর আগে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির কথা সকলের জানা। মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তিনিই সরকারের প্রধান। কিন্তু তাঁকে ঘিরে যে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার বাতাবরণ দীর্ঘ দিন যাবৎ তৈরি করা হয়েছে, সেটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আদৌ কি মানানসই? এই রাজ্যের প্রতিটি ব্যাপারে ‘আমিই সব, আমাকে দেখেই ভোট দিন’ প্রকারান্তরে প্রশাসনের সামগ্রিক ব্যর্থতাকেই সম্মুখে আনে, যার দায় দলনেত্রী অস্বীকার করতে পারেন না।

দিলীপকুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

আরও পড়ুন
Advertisement