Debts

ঋণ মকুব কেন

একটা সময় ছিল, যখন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে প্রতিটি কাজে সরকারের মতবিরোধ হত। কারণ, রঘুরাম রাজন ও উর্জিত পটেলকে দিয়ে মনের মতো কাজ করানো যাচ্ছিল না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩ ০৪:৩৫
debt.

—প্রতীকী ছবি।

‘যা গেছে তা যাক?’ (২২-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে পন্থা নিয়েছে তার কঠোর সমালোচনা, অত্যন্ত সঙ্গত ভাবেই করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নতির দোহাই দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে ‘টেকনিক্যাল রাইট-অফ’-এর ক্ষমতা ব্যাঙ্কগুলিকে দিয়েছে, তাতে সবচেয়ে লাভবান হবে কর্পোরেটরা। যারা ইচ্ছাকৃত ভাবে দীর্ঘ দিন ব্যাঙ্কের টাকা অনাদায়ি রেখেছে।

নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমানায় ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ অনেকটাই বেড়েছে। গত আট বছর, অর্থাৎ ২০১৪-১৫ সাল থেকে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি, বিদেশি-সহ সব ব্যাঙ্কের বকেয়া ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬.৫ লক্ষ কোটি টাকা। আর এই অনাদায়ি ঋণের থেকে ১৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছেও দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ, এই বিশাল পরিমাণ ঋণ মকুব করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। জানা গেছে, এই বকেয়া ঋণের বড় অংশ হল কর্পোরেট ঋণ। দেখা গেছে, এই মকুব ঋণের মাত্র ২০ শতাংশ পরে আদায় হয়। অর্থাৎ, আইনি ভাবে এই মকুব ঋণের ৮০ শতাংশ ঢুকেছে কর্পোরেটদের কোষাগারে। ফলে গত আট বছরে আইনি ভাবে ব্যাঙ্কের খাতা থেকে উধাও হয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা। কর্পোরেটদের স্বার্থ না দেখলে, সেই টাকায় বহু স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট গড়ে তোলা যেত। তাতে উপকৃত হতেন দেশের সর্বশ্রেণির মানুষ।

Advertisement

একটা সময় ছিল, যখন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে প্রতিটি কাজে সরকারের মতবিরোধ হত। কারণ, রঘুরাম রাজন ও উর্জিত পটেলকে দিয়ে মনের মতো কাজ করানো যাচ্ছিল না। উচ্চশিক্ষিত অর্থনীতিবিদদের মোটেই পছন্দ করেন না আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ ও অসাধু কর্পোরেটরা। কারণ, উচ্চশিক্ষিত অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতির নানা দিক বিশ্লেষণ করে তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কর্পোরেটদের উপকার করার জন্য তাঁরা সর্বসাধারণের ক্ষতি করতে রাজি নন। তাই রঘুরাম রাজন ও উর্জিত পটেল বিদায় নেওয়ার পর মোদী সরকার আর ঝুঁকি নিল না। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদে আর কোনও অর্থনীতিবিদকে বসাল না। সেই পদে বসলেন ইতিহাসবিদ শক্তিকান্ত দাস, যিনি সরকারের অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও অনুগত বলে পরিচিত। যে ভাবে ব্যাঙ্কের খাতা থেকে অনাদায়ি ঋণ মুছে দেওয়া হচ্ছে, তাতে দেশের অর্থনীতির ভিত যে দুর্বল হয়ে যাবে, সে কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদরা। তা সত্ত্বেও সরকার সেই পথেই হাঁটছে, কারণ তাতে এক দিকে কর্পোরেটরা খুশি হবে, অন্য দিকে দেশের মানুষকে ভুল বোঝানো যাবে যে, ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ অনেক কমে গেছে, যা শেষ পর্যন্ত মোদী সরকারের সাফল্য হিসাবে বিবেচিত হবে।

রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

পরিযায়ীর সঙ্কট

‘পরিযায়ীর অধিকার (১-৭) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। অতর্কিত লকডাউনে তাঁরা ছিলেন ব্রাত্য। অথচ, এই খেটে খাওয়া মানুষের দল অর্থনীতির একটা গরিষ্ঠ অংশ জুড়ে আছে। ভারতের মতো বৃহৎ একটি দেশে সর্বত্র কাজের জোগান সমান নয়। সেই কারণে দেশের সব জায়গাতেই শ্রমিক চাহিদার মধ্যেও তারতম্য দেখা দেয়। স্বভাবতই খেটে খাওয়া মানুষের দল দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে চলে যান। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে এমন পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।

প্রত্যেক নাগরিকের ভোটদানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। কিন্তু অতিমারির অন্ধকার থেকে ভোট উৎসব— কোনও সময়ই পৃথক ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাই রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটেও তাঁরা থেকেও নেই। দেশ জুড়ে অর্থনীতিতে ব্রাত্য এই পৃথক গোষ্ঠীটির প্রতি রাষ্ট্রের মনোনিবেশ একান্ত কর্তব্য। ডাকব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিক অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে পরিযায়ীদের পূর্ণ অধিকারের কথাটি রাষ্ট্রের মাথায় রাখা উচিত।

সঞ্জয় রায়, হাওড়া

ন্যূনতম মজুরি

পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত ভেষজ বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঠিক সংখ্যা জানা নেই, তবে নানা সংগঠনের সদস্যদের ধরলে সংখ্যাটা পঞ্চাশ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়াও বহু কর্মী আছেন, যাঁরা কোনও সংগঠনের সদস্য নন। তাঁদের সংখ্যা হয়তো আরও বেশিই হবে। ষাটের দশক থেকে সারা ভারতে এই পেশার শ্রমিকরা বিভিন্ন ন্যায্য অধিকার বিষয়ে আন্দোলন শুরু করেন। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ১৯৭৬ সালে এই পেশার জন্য বিশেষ আইন ‘সেলস প্রোমোশন এমপ্লয়িজ় (কন্ডিশনস অব সার্ভিস) অ্যাক্ট, ১৯৭৬’ প্রণয়ন করা হয়েছিল। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম রাজ্য রুল-এ এই পেশার কর্মীদের শ্রম বিবাদ আইনের সেকশন ২ (এস)-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯৮৪ সালে এবং ভেষজ ও ভোগ্যপণ্যের বিক্রয় প্রতিনিধিরা শ্রমিক (ওয়ার্কম্যান) হিসাবে মান্যতা পান।

শ্রম আইন সমূহের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি আইন, ১৯৪৮ একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আইন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতন ঘোষণা করা আছে। তার সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কি না, দেখভালের জন্য প্রতিটি ব্লকে এক জন করে ন্যূনতম মজুরি পরিদর্শক নিযুক্ত আছেন, যাঁরা বিডিও অফিসের অংশ হিসাবে কাজ করেন। বিগত চার দশকের বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত ভেষজ বিক্রয় প্রতিনিধিদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত এই পেশার কর্মীদের দু’টি সংগঠনের লাগাতার আন্দোলন জারি আছে। ২০০৫-২০০৬ সালে ভেষজ বিক্রয় প্রতিনিধিদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছিল, দু’বছর তা চালুও ছিল। এর পর ভেষজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সমূহের মালিকদের একটা সংগঠনের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট তাতে স্থগিতাদেশ দেয়। পরে ন্যূনতম মজুরির আদেশনামা বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল।

কোভিডপর্বের আগে একটি কমিটি তৈরি হয় রাজ্যের এক জন অতিরিক্ত শ্রম কমিশনারের নেতৃত্বে। ভেষজ শিল্পের সব কর্মচারীর জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ছিল তার বিষয়। সেই কমিটির কী হল, কেউ জানে না। স্নাতক না হলে যে পেশায় সাধারণ ভাবে নিয়োজিত হওয়া যায় না, সেখানে মালিকদের ইচ্ছেমতো দেওয়া বেতনে সন্তুষ্ট থাকতে হবে, এটা মানা যায় না। দিল্লির রাজ্য সরকার ন্যূনতম মজুরি ২১ হাজার করে দিয়েছে, কেরলে এটি রাজ্যের ন্যূনতম মজুরির কাছাকাছি। অথচ, পশ্চিমবঙ্গে বিগত চার দশকে কেবলমাত্র ন্যূনতম মজুরি পাওয়ার শর্ত হিসাবে ‘পঞ্জীকরণ পেশার তালিকা’য় নাম তোলা গিয়েছে ভেষজ বিক্রয় প্রতিনিধিদের। ছ’দশক আন্দোলনের ফলে মেডিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টেটিভদের মজুরির উপর পিএফ, ইএসআই-সহ অন্যান্য বিধিবদ্ধ আইন চালু করা গেলেও, ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করতে পারেনি রাজ্য সরকার।

সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৯

ভিস্টাডোম

সম্প্রতি রায়গঞ্জ থেকে কলকাতা যাতায়াতের জন্য দিনের একমাত্র ট্রেন কুলিক এক্সপ্রেসে একটি অতিরিক্ত ভিস্টাডোম কোচ সংযোজন করা হয়েছে। ভিস্টাডোম কোচ প্রধানত সেই সব জায়গাতেই চলে, যেখানে যাত্রাপথের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাত্রীদের আনন্দ দেয়। রায়গঞ্জ থেকে কলকাতা যাত্রার এই দীর্ঘ প্রায় ন’ঘণ্টার পথে যে উপভোগ্য তেমন প্রাকৃতিক দৃশ্য নেই, তা নিয়মিত যাত্রীরা জানেন। ভিস্টাডোম কোচ নয়, দরকার ছিল আরও একটি বাতানুকূল বগি যোগ করা। সাধারণ বাতানুকূল আসনের তিন গুণ বেশি ভাড়ার এই ভিস্টাডোম কোচ সমস্যার সমাধান করবে না বলেই আমাদের অনুমান।

দেবব্রত রায়, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর

আরও পড়ুন
Advertisement