Society

সম্পাদক সমীপেষু: ‘পবিত্র’ যৌনতা

দাম্পত্যে শারীরিক সুখবঞ্চিত বহু মানুষ লোকলজ্জার ভয়ে বিবাহবিচ্ছেদ করেননি। বিবাহবদ্ধ জীবনের বাইরে উভয়েই হয়তো বহু বার যৌনতার আনন্দ নিয়েছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৪৯
যৌনপেশাকে আর পাঁচটা অনন্যোপায় পেশা থেকে গড়পড়তা মানুষ চিরকালই ভিন্ন চোখে দেখে।

যৌনপেশাকে আর পাঁচটা অনন্যোপায় পেশা থেকে গড়পড়তা মানুষ চিরকালই ভিন্ন চোখে দেখে। নিজস্ব চিত্র।

যৌনকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইস্তাহার তৈরি করে আন্দোলন করার আগে দু’টি আপাত-নিরীহ, অথচ মস্তিষ্ক কাঁপানো প্রশ্ন সুনন্দন চক্রবর্তী উপস্থাপন করেছেন (‘কতটা স্বাধীন তাঁদের শরীর, মন’, ৭-১১)। প্রথমত, দাম্পত্য জীবনের সীমান্ত পেরিয়ে অর্থের বিনিময়ে যৌন আনন্দে যদি হাজার আইনি রক্ষাকবচও থাকে, তবুও সামাজিক পরিমণ্ডলে আজকের দিনে তা কতটা গ্ৰহণযোগ্য? দ্বিতীয়ত, স্বেচ্ছায় বেছে না-নেওয়া পেশায় যুক্ত বিড়ি শ্রমিক, খনি শ্রমিক, জরি শ্রমিক বা গৃহকর্মীদের দাবিদাওয়ার প্রতি সামাজিক সমর্থন মিললেও, একই ভাবে বাধ্য হয়ে গ্ৰহণ করা যৌনপেশার প্রতি সাধারণের মনোভাব কবে বদলাবে?

Advertisement

বর্তমান সমাজে অসংখ্য মানুষের বিশ্বাস, দাম্পত্যের হাজার তিক্ততা সত্ত্বেও দাম্পত্য জীবনের বাইরের যৌনতা অপবিত্র। এই বিশ্বাসের বাইরে গুপ্ত যৌনতার ইচ্ছা ও লোকলজ্জার ভয়, এই দুইয়ের নিয়ত দ্বন্দ্বে বহু ক্ষেত্রেই লোকলজ্জা জয়লাভ করে। এর ফলে যৌনপেশাকে আর পাঁচটা অনন্যোপায় পেশা থেকে গড়পড়তা মানুষ চিরকালই ভিন্ন চোখে দেখে। কাজেই ‘গতর খাটিয়ে খাই, শ্রমিকের অধিকার চাই’ স্লোগানটি বৃহত্তর সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। যৌনকর্মীদের আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি, বা সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির কিছু সুবিধা মিললেও, যৌনপেশার স্বীকৃতি এই দেশে এখনও সুদূরপরাহত।

দাম্পত্যে শারীরিক সুখবঞ্চিত বহু মানুষ লোকলজ্জার ভয়ে বিবাহবিচ্ছেদ করেননি। বিবাহবদ্ধ জীবনের বাইরে উভয়েই হয়তো বহু বার যৌনতার আনন্দ নিয়েছেন। অথচ, যৌনপেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোর বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সমর্থনে তাঁদের কখনও এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। তাই আইনি রক্ষাকবচ যতই তৈরি হোক না কেন, যৌনপেশা বা এলজিবিটিকিউ সম্পর্কে সামাজিক শুচিবাই যত ক্ষণ না পুরোপুরি দূর হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত শরীর ও মনের মধ্যের এই দ্বন্দ্ব চলতেই থাকবে। আসলে আমরা সবাই যৌনপেশাকে এড়িয়ে বিবাহবদ্ধ জীবনের যৌনতার ‘পবিত্রতা’ রক্ষা করে চলেছি।

তন্ময় মণ্ডল, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা

আদানি বাম

শাসকের রং আলাদা হলেও চরিত্র যে এক, তা আরও এক বার প্রমাণ হল কেরলে। বিজেপি-সিপিএম-কে গরিব মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে হাতে হাত ধরে মিছিল করতে দেখা গেল কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে। জমি-জীবন-জীবিকা হারানোর আতঙ্কে স্থানীয় মানুষ এবং মৎস্যজীবীরা টানা গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্দর-নির্মাণে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরাও আন্দোলনের সমর্থনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় মানুষের সমস্ত বিরোধিতাকে অগ্রাহ্য করে, তাঁদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন করে তৈরি হচ্ছে মালবাহী জাহাজের পণ্য ওঠানো-নামানোর বৃহৎ হাব-সহ বিশ্বমানের ভিরিঞ্জাম সমুদ্র-বন্দর নির্মাণ। এর জন্য বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। পুনর্বাসন পান অল্প কিছু মানুষ। হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবী, এবং বন্দর নির্মাণের জন্য সমুদ্র-তীরবর্তী এলাকায় ধসে ঘর হারানো কয়েকশো মানুষের পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা সরকার করেনি, আদানি গোষ্ঠীও করেনি।

ভিরিঞ্জাম সমুদ্র-বন্দর আদানিদের কব্জায় আসায় ৬০ হাজার মৎস্যজীবী ও তাঁদের পরিবারের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হয়েছে। প্রকল্পের নিরাপত্তার স্বার্থে সমুদ্র-প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। এতে গরিব মৎস্যজীবীদের স্বাধীন ভাবে মাছ ধরার অধিকার খর্ব হয়, মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী বেড়ে ওঠার জায়গা বিপন্ন হয়। রুটি-রুজি বিপন্ন হয় এলাকাবাসীর, ধ্বংস হয় এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশও। এ ছাড়াও সমুদ্র-উপকূলবর্তী এলাকায় ভূমিক্ষয়ের আশঙ্কা বাড়তে থাকে এবং সমুদ্র-স্রোতে স্থায়ী নির্মাণ (সমুদ্র-প্রাচীর) করার ফলে বড়সড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ে। নষ্ট হতে থাকে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য।

বন্দর নির্মাণ বন্ধ করা, উচ্ছেদ হওয়া সমস্ত নাগরিকের ন্যায্য পুনর্বাসন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি নিয়ে ভিরিঞ্জামের স্থানীয় নাগরিক ও মৎস্যজীবীরা সিপিএম সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেন, কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁরা তিরুঅনন্তপুরমের সঙ্গে ভিরিঞ্জামের সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, ও বিমানবন্দরে যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করেন, নৌকা দিয়ে নদীপথ অবরুদ্ধ করেন, ও সচিবালয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। আন্দোলনের ১০০তম দিনে সমুদ্রের বুকে মাছ ধরার নৌকায় আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানান তাঁরা।

মৎস্যজীবীদের এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে সিপিএম-বিজেপি। কয়েকটি হিন্দু সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত মিছিলে মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে গলা মেলাতে দেখা গিয়েছে সিপিএমের তিরুঅনন্তপুরম জেলা সম্পাদক ও বিজেপির জেলা সভাপতিকে। রাজ্য সরকার এই আন্দোলনকে ‘ধ্বংসাত্মক’, ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়েই থামেনি, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ৭৫০০ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প কোনও ভাবেই বন্ধ করা হবে না। মনে পড়ে, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী, সিপিএম-এর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, টাটার কেশাগ্র স্পর্শ করতে দেব না। একই সুর প্রতিধ্বনিত হল কেরলে।

বিজেপি পুঁজিপতিদের বিশ্বস্ত বন্ধু, স্বভাবতই তারা আদানির় সমর্থক। কিন্তু মানুষ আশা করেছিলেন, সিপিএম দরিদ্র মৎস্যজীবী ও নাগরিকদের পাশে দাঁড়াবে। তার পরিবর্তে আদানিদের স্বার্থরক্ষা করতেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিজেপি-আরএসএস-এর সঙ্গে সত্যিই কি সিপিএম-এর নীতিগত কোনও ফারাক আছে?

সোমা নন্দী, কলকাতা-

টাটার বিদায়

মিহির কানুনগোর ‘সত্যের অপলাপ’ (৮-১১) চিঠিটি পড়ে প্রশ্ন করতে চাই, টাটাকে সিঙ্গুর থেকে তাড়িয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ভাবে রাজ্যের জনগণের বিপুল সমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় এলেন, সেটির কী ব্যাখ্যা তিনি দেবেন? আসলে তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকারের বোকামির জন্যই রতন টাটার মুখ পুড়েছে। টাটা ভাল করেই জানতেন, আইন তাঁর পাশে দাড়াবে না। গা জোয়ারি করে অনিচ্ছুক কৃষকদের তিন ফসলি চাষের জমি কেড়ে নিতে পারেন না। প্রস্তাবিত কারখানায় চাকরির সম্ভাবনা দেখিয়েও না। মমতা এক বারের জন্য বলেননি তিনি শিল্প চান না। বরাবর বলে এসেছেন, চাষের জমি বাদ দিয়ে বাদবাকি জমিতে শিল্প গড়ে উঠুক। দেশের সর্বোচ্চ আদালত পরবর্তী কালে তাতেই সিলমোহর দিয়েছিল। মমতার একটাই ঘাটতি, তিনি রতন টাটাকে বোঝাতে পারেননি যে, তিনি শিল্প-বিরোধী নন। সেটি তাঁর দুর্ভাগ্য।

অরুণ গুপ্ত, কলকাতা-৮৪

বরিষ্ঠের আসন

শিয়ালদহ থেকে ছাড়া লোকাল ট্রেনগুলিতে বরিষ্ঠ নাগরিকের জন্য আসন খুঁজে হতাশ হয়েছি। অথচ, মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে অসুবিধে হয়নি। ওখানে হাই কোর্টের রায়ের ফলে বহু দিন থেকে প্রত্যেক লোকাল ট্রেনের কামরায় সিনিয়র সিটিজ়েনদের জন্যে ১৪টা করে সিট আছে। শিয়ালদহের ৮৫০ ট্রেনে প্রতি দিন প্রায় ৭০ হাজার বয়স্ক মানুষ যাতায়াত করেন। তাঁদের কোনও আলাদা সিট চোখে পড়েনি। অথচ, ২০১৫ সালে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, শিয়ালদহ ডিভিশনের প্রতিটি ট্রেনে কামরার দুই প্রান্তে বয়স্কদের জন্যে ৭টা করে আলাদা সিট থাকবে। কামরার বাইরে এবং ভিতরে তার লোগো থাকবে। সেটা বোধ হয় বাস্তবায়িত হয়নি।

রণজিৎ মুখোপাধ্যায়, মুড়াগাছা, নদিয়া

আরও পড়ুন
Advertisement