Childhood

সম্পাদক সমীপেষু: হারিয়েছে শৈশব

মনোবিজ্ঞানের মতে, শৈশবে যে শিশুরা শারীরিক বা অন্য কোনও ভাবে অত্যাচারিত হয়, তারা পরবর্তী কালে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ ০৪:৪৪
internet

—প্রতীকী ছবি।

‘বিচ্ছিন্নতার শিকার’ (৪-২) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি বিষয়ে যথোপযুক্ত আলোকপাত করা হয়েছে। সমীক্ষায় প্রকাশ, নিপীড়িত শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তির সম্ভাবনা পরবর্তী কালে বৃদ্ধি পায়। মনোবিজ্ঞানের মতে, শৈশবে যে শিশুরা শারীরিক বা অন্য কোনও ভাবে অত্যাচারিত হয়, তারা পরবর্তী কালে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। শিশুদের নিপীড়ন থেকে রক্ষা করার দায় ও দায়িত্ব যেমন পরিবারের, তেমন বৃহত্তর সমাজেরও। অন্য দিকে, মোবাইল ও ইন্টারনেট আসক্ত শিশু-কিশোরদের এখন দেখা মেলে প্রায় প্রতিটি পরিবারে। যার ফলে কমবয়সিদের ভিড় চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও মনোবিদের চেম্বারে ক্রমবর্ধমান। এক জন স্কুল শিক্ষিকা হিসাবে বুঝতে পারি আজকের অধিকাংশ শিশু নিঃসঙ্গতার শিকার। এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারই ছোট। বাবা, মা এবং সন্তান। অনেক শিশু আবার ভাই-বোনহীন একক সন্তান। ছোট ফ্ল্যাটে দাদু-ঠাকুমারও স্থান হয়নি। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে বাবা-মাও সারা দিন ব্যস্ত। তাই অসীম নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণা উপশমের জন্য এই শিশুরা সঙ্গী হিসাবে বেছে নেয় মোবাইলকে। এক সময়ে শিশু-কিশোররা স্কুল থেকে ফিরে ছুটত খেলার মাঠে। বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠত ফুটবল-ক্রিকেট খেলতে। এই শিশুরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন বা নিঃসঙ্গ বোধ করারই সময় বা সুযোগ পেত না। এখন সিলেবাসের বোঝা বেড়েছে। সেই সঙ্গে আছে প্রতিটি বিষয়ের শিক্ষকের কাছে আলাদা ভাবে পড়তে যাওয়া। অভিভাবকেরা আর কেবলমাত্র স্কুলে শিক্ষকের পড়ানোর উপরে নির্ভরশীল নন। ফলে স্কুলের ও কোচিং ক্লাসের পড়ার চাপে শিশুদের নাভিশ্বাস উঠছে। আর সিলেবাসের বোঝা কমানোর কথা শিক্ষা নিয়ামকদের বক্তৃতায় বা লেখাপত্রে থাকলেও, কার্যক্ষেত্রে তা বেড়েই চলেছে।

Advertisement

এখন অভিভাবকদেরও দেখি না শিশুদের হাতে গল্পের বই তুলে দিতে। অথচ, বাংলা শিশুসাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার রায়, শিবরাম চক্রবর্তী বা লীলা মজুমদারের জগতের সঙ্গে আজকের শিশুর কোনও পরিচয় ঘটছে না। পরিচারক-পরিচারিকা বা সিসিটিভি-র নজরবন্দি শিশুর নেই অপু-দুর্গার মতো খোলা মাঠে প্রকৃতি সংসর্গে ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতাটুকুও। ‘ডাকঘরে’-এর অসুস্থ অমলের তবু জানলা দিয়ে দইওয়ালা বা সুধার সঙ্গে দুটো কথা বলার সুযোগ ছিল। আজকের হতভাগ্য শিশুদের ছোট থেকেই এতটা কেরিয়ার সচেতন করে দেওয়া হচ্ছে যে, তাদের দু’দণ্ড অকারণ কথা বলে স্বাভাবিক সামাজিক সংযোগ তৈরিও হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্বের উপশমে মোবাইল ফোনই হয়ে উঠেছে তার একমাত্র আশ্রয়। যার অবশ্যম্ভাবী ফল মনোবিকার। কিংবা ভবিষ্যতের অসামাজিক নাগরিক। সমস্যার সমাধানের জন্য কেবল শিশুর হাত থেকে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিলেই হবে না, তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে বিকালের খেলার মাঠ, সন্ধ্যায় ঠাকুমা-দাদুর কাছে গল্প শোনার অবসরও। তবেই শিশুরা মোবাইল-বিচ্ছিন্ন হয়ে সহজ-স্বাভাবিকতায় বেড়ে উঠবে।

অনামিকা পাল, আমতা, হাওড়া

আশার খোঁজ

ব্রেকিং দ্য মোল্ড: রিইম্যাজিনিং ইন্ডিয়া’জ় ইকনমিক ফিউচার বইটির লেখক ভারতের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন-এর ‘গণতন্ত্রের সুদিন ফিরবে, সে আশা ছাড়ার কারণ নেই’ (১০-২) শীর্ষক সাক্ষাৎকারটি নিয়ে দু’-একটি কথা না বলে পারছি না। আব্রাহাম লিঙ্কনের সেই বিখ্যাত ‘গণতন্ত্রের সংজ্ঞা’ দিয়ে শুরু করা যাক। গণতন্ত্র হল— জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা যায়, গণতন্ত্র রক্ষায় আমাদের দেশের সাধারণ নাগরিকেরই অগ্রাধিকার। আলোচ্য বইটিতে এবং সাক্ষাৎকারে এক জন নিরপেক্ষ জনপ্রতিনিধির কথা বলা নেই। বর্তমান ভারতের জনপ্রতিনিধিদের প্রায়শই দলবদলের প্রবণতা এবং তা থেকে জনগণের চিন্তাভাবনার প্রতিফলনের কথা বলা নেই।

ইদানীং যা কিছু চর্চিত তার মধ্যে নোটবন্দি, জিএসটি, করোনাকাল, পরিযায়ী শ্রমিক অধিক গুরুত্ব পায়। তা বইটিতে বোধ করি আছে। জিডিপি বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হিসাব কী ভাবে নির্ধারিত হয়, অনেক মানুষই তা পরিষ্কার করে বোঝেন না। কালো টাকা উদ্ধার বা ক্যাশলেস ভারত গঠন কতটা সাফল্য এনেছে? আমাদের অজানা। গ্যাস, পেট্রল ইত্যাদি পণ্যে যেখানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার উভয়েই কর আদায় করে, সেখানে মাঝেমধ্যেই এ নিয়ে মারমুখী আন্দোলন ও কাদা ছোড়াছুড়ি হয়। তা কি বইটিতে আছে? রঘুরাম রাজন যথার্থই বলেছেন, চড়া হারে এখন যে আর্থিক বৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে তার নাম দেওয়া যেতে পারে ‘কর্মসংস্থানহীন আর্থিক বৃদ্ধি’। এমন কিছু আর্থিক বৃদ্ধি আছে, যা খরচ করা সম্ভব নয়। যেমন কেলেঙ্কারি ঘটিত অর্থ।

দিন বদলায়, যুগ বদলায় এবং সেই সঙ্গে আইনকানুনও। তাই কখনও মনে হয় ব্রিটিশদের মেনে নিয়ে যে সংবিধান, যে আইনকানুন রচিত হয়েছিল, তা বোধ হয় সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এক সময় মহাজনি ব্যবসা, গ্রামের মানুষের সুদখোরের পাল্লায় পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়া ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কের জন্ম হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী যে ১৪টি (পরবর্তী কালে আরও ছ’টি) ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ করেছিলেন, এখন তা কমে ১২-তে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের নীতি, বিশ্বায়নের ধারা সারা পৃথিবীতে চালু হলে, ভারতও তা থেকে পিছিয়ে থাকতে পারেনি। রঘুরাম রাজন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় যা বর্ণনা করেছেন তাঁর মূল্যবান বইটিতে, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে উপরোক্ত কথাগুলো উল্লেখ করলাম, যা আমার মতো বহু সাধারণ মানুষকে নিয়তই চিন্তিত করে তোলে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের পরিকাঠামো দেখে বাকি দেশগুলিও উদ্বুদ্ধ হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই তাকিয়ে থাকব।

বাসুদেব সেন, বাণীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

অনুদানমুক্ত

‘ভোটলক্ষ্মী’ (৯-২) প্রতিবেদন নিয়ে কিছু কথা। রাজ্য বাজেটে লক্ষ্মীর ভান্ডারে ৫০০ টাকা অনুদান বৃদ্ধি করা হল। ভোটের আগে ভোট কিনতে যে কোনও সরকার যে অনুদানের বৃদ্ধি ঘটায়, তা বলা বাহুল্য। প্রশ্ন হচ্ছে, অনুদানের এই বাজেট রাজ্যের অর্থব্যবস্থাকে কোন পথে ঠেলে দিচ্ছে? যাঁরা মুফতে অনুদান পাচ্ছেন, তাঁরা যে খুশি হন তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই খুশি হওয়ার পিছনে তাঁদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কি নিশ্চিত হচ্ছে, না কি তাঁরা অনুদান-নির্ভর হতে হতে স্বনির্ভর হওয়ার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে শাসক দলের অনুগত থাকাকেই ভবিতব্য বলে মেনে নিচ্ছেন? তা ছাড়া জনজাতি আর সাধারণ মানুষের খিদে যন্ত্রণা যখন এক, তখন অনুদানের অঙ্ক দু’রকম কেন? অনুদান দিয়ে ভোট কেনা গেলেও মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেওয়া যায় না। যত ক্ষণ না মানুষ আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারছেন, তত ক্ষণ মানুষের, রাজ্যের উন্নয়ন হয়েছে বলা ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নয়।

মানুষকে আর্থিক স্বনির্ভরতা দিতে গেলে প্রয়োজন কোষাগারকে সুস্থ রাখা। অনুদানের নামে কোষাগারের অনুৎপাদক ব্যয় রাজনীতির মেদ বৃদ্ধি করতে পারলেও কোষাগারের রক্তাল্পতা আটকাতে পারে না। ভোটের বাজেটে অনুদান-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের দরাজ অর্থ বৃদ্ধি ভাল। কিন্তু কোথা থেকে সেই টাকা আসবে তার দিশা এই রাজ্য-বাজেটে নেই। বছরের পর বছর ঋণের বোঝা রাজ্যের অর্থনীতিকে যদি পঙ্গুই করতে থাকে, তা হলে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন হবে কী করে? ‘বেঙ্গল গ্লোবাল সামিট’ করেও যে রাজ্যে বড় শিল্পের বিনিয়োগ হয় না, তার প্রমাণ তো হাতেনাতে রয়েছে। আর শিল্প না এলে রাজ্যে কর্মের খরা যে কাটবে না, তা অনুদান প্রাপকরাও বোঝেন। তাই রাজ্যের অর্থনীতিকে সবল রাখার স্বার্থে বাজেট হোক লাগামহীন অনুদান-মুক্ত।

মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১

আরও পড়ুন
Advertisement