Suvendu Adhikari

সম্পাদক সমীপেষু: আপত্তিকর মন্তব্য

কোনও পুরুষ যদি মহিলা পুলিশের স্পর্শে আপত্তি প্রকাশ করেন, এবং সেটা যদি ভানও হয়, তার বিপরীতে কি বলা চলে, পুলিশকর্মীদের পেশাদারি পরিচয়ে লিঙ্গভেদ হয় না?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:১১
কোনও মহিলাকে নিবৃত্ত করতে বা গ্রেফতার করতে হলে মহিলা পুলিশের দরকার হয়।

কোনও মহিলাকে নিবৃত্ত করতে বা গ্রেফতার করতে হলে মহিলা পুলিশের দরকার হয়।

নবান্ন অভিযানে মহিলা পুলিশের স্পর্শে আপত্তি জানিয়ে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, এবং সেই প্রসঙ্গে শাসক দলের মুখপাত্রের মন্তব্য গণমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে প্রচুর আলোচিত হচ্ছে। শুভেন্দুবাবু নিজের শরীরের উপর অধিকার, ও স্পর্শের অনুমোদনের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনীতির স্বার্থে, এটা সম্ভব। কিন্তু উল্টো দিকে, যদি পুরুষ পরিচিতিকে নিয়ে মশকরা করা হয়, সেটা লিঙ্গ ও যৌন পরিচয়ের রাজনীতির জন্য খুব হিতকর না-ও হতে পারে। কোনও পুরুষ যদি মহিলা পুলিশের স্পর্শে আপত্তি প্রকাশ করেন, এবং সেটা যদি ভানও হয়, তার বিপরীতে কি বলা চলে, পুলিশকর্মীদের পেশাদারি পরিচয়ে লিঙ্গভেদ হয় না? কোনও মহিলাকে নিবৃত্ত করতে হলে বা গ্রেফতার করতে হলে মহিলা পুলিশের উপস্থিতি দরকার হয়। অতএব পুলিশকর্মী পুরুষ না মহিলা তাতে কী এসে গেল, এমন অবস্থান নেওয়া চলে না। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা বিরোধী আইন (২০১৩) বলছে, হয়রানি হয়েছে কি না, তা আক্রান্ত ব্যক্তির অনুভব দিয়েই নির্ধারণ করা হবে। এই আইন যদিও মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তবু নৈতিক দৃষ্টিতে এর সুরক্ষা লিঙ্গপরিচয়-নির্বিশেষে যে কেউ দাবি করতে পারেন। পুরুষ বলে তাঁকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার দাবি যৌক্তিক হতে পারে না। অর্জিত অধিকারকে লঘু না করে তাই তাকে সুনিশ্চিত করাই প্রয়োজন।

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্যে কেন উঠে এল সমকামের প্রসঙ্গ? তাঁর ব্যবহৃত নানা উপমায় অক্ষমতা, অসুখ এবং অপরাধের ধারণা তৈরি করা হল। যার কোনওটাই বৈজ্ঞানিক নয়, সামাজিক ন্যায়ের দৃষ্টিতে রীতিমতো আপত্তিকর। যে কোনও দলের নেতাকে কেন ঘোষণা করতে হবে, নারী-পুরুষ দ্বিত্বের মধ্যে তিনি কোন দিকে? কারও ব্যক্তিগত লিঙ্গ পরিচয় ও যৌনতার পছন্দ রাজনৈতিক লড়াইয়ের বিষয় হবে কেন? এ বিষয়ে তৃণমূলের আরও সতর্ক হওয়া দরকার, কারণ লিঙ্গপরিচিতির প্রশ্নে এমন সংরক্ষণশীলতা বিজেপির সংরক্ষণশীল, পুরুষতান্ত্রিক রাজনৈতিক অবস্থানকেই পুষ্ট করে। প্রান্তিকদের পরিচিতিকে যাতে সম্মান করে সকলে, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরির যে চেষ্টা চালাচ্ছে নাগরিক সমাজ, ক্ষমতাসীনদের অসংবেদনশীল রাজনীতির জন্য তা ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে যায় বার বার। অধিকার আন্দোলনের অর্জনকে বাতিল করে দিলে, সেটা ভবিষ্যতে আত্মঘাতী প্রমাণিত হতে পারে।

Advertisement

রত্নাবলী রায়, কলকাতা-২৯

ওষুধের বিপদ

‘ওষুধ-রিপোর্ট’ (৮-৯) শীর্ষক সংবাদ পড়ে জানতে পারলাম, দ্য লান্সেট রিজনাল হেলথ-সাউথইস্ট এশিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারতে কোভিড-পর্বে ভয়াবহ পরিমাণে বিক্রি হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক্স। আমাদের দেশ অ্যান্টিবায়োটিক্স বিক্রির মৃগয়াক্ষেত্র। আর তাই নিত্যনতুন অ্যান্টিবায়োটিক্স নিরন্তর বাজারজাত হচ্ছে।

বহু মানুষ ওষুধের দোকান থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক্স কিনে খাচ্ছেন। এমনকি ওষুধের দোকানদারদের কাছে রোগের উপসর্গ বলে অনেকে ওষুধ কিনে আনেন। প্রত্যেক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক্স খাওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। প্রতি দিন কত বার খেতে হবে, কত দিন খেতে হবে, কেমন ডোজ়ে খেতে হবে, এ সব চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন। কিন্তু প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যাঁরা ওষুধ খান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা রোগের উপসর্গ কমলে মাঝপথে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, এর ফলে রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুরা নানা অ্যান্টিবায়োটিক্সকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হচ্ছে। এই ভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে জীবনদায়ী ওষুধ খেয়েও ফল না পেয়ে দেশবাসী গভীর সঙ্কটে পড়বেন বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ওষুধ কোম্পানিগুলো মুনাফার পাহাড় তৈরির উদ্দেশ্যে চিকিৎসকদের নানা উপঢৌকন দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক্স বিক্রির খেলায় মেতে উঠেছে। এ সব এখন গোপন কিছু নয়! এ দেশে কোনও ড্রাগ মনিটরিং সিস্টেমও নেই। বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক্সের এমন সমস্ত কম্বিনেশন বিক্রি হচ্ছে, যেগুলি উন্নত দেশে বিক্রি হয় না, এবং প্রামাণ্য পুস্তকেও লেখা নেই।

তাই সরকারের উচিত, অ্যান্টিবায়োটিক্স প্রস্তুত ও বিক্রির নীতি তৈরি করা। ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ আইন শিথিল করার ফলে এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, দিন দিন জীবনদায়ী অ্যান্টিবায়োটিক্সের দাম হয়ে উঠছে আকাশছোঁয়া। অন্য দিকে, অপ্রয়োজনে ওষুধ ব্যবহারের ফলে সাধারণ মানুষ যে কী পরিমাণ সঙ্কটের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, তার কোনও সঠিক তথ্য নেই। সরকার ওষুধ ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ না আনলে ভবিষ্যতে সাধারণ অসুখও মহামারির আকার নিতে পারে।

পঙ্কজ পাঠক, শ্রীপল্লি, পূর্ব বর্ধমান

নেতাজির আদর্শ

‘নেতাজি কুনাট্য’ (১২-৯) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের সঙ্গে সহমত পোষণ করে এই চিঠির অবতারণা। রাজধানী দিল্লির কর্তব্যপথে নেতাজির বিশাল মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে মোদী সরকার যতই নিজেদের নেতাজিপ্রেমী হিসাবে প্রচার করার চেষ্টা করুক না কেন, তাদের আসল উদ্দেশ্য বোঝা কঠিন কিছু নয়। বিজেপি সরকারের নেতাজিকে নিয়ে প্রচার করার আসল উদ্দেশ্য, নেহরু পরিবারকে কোণঠাসা করা। নেহরু পরিবারের নেতৃত্বে কংগ্রেস দল নেতাজিকে যথাযথ মর্যাদা কোনও দিনই দেয়নি। এমনকি ‘আজ়াদ হিন্দ ফৌজ’-এর অবদান সম্পর্কে সঠিক তথ্য ভারতবাসীর কাছে তুলে ধরা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই যে, কংগ্রেসি আমলে নেতাজি যোগ্য মর্যাদা পাননি। কিন্তু, বিজেপি কি নেতাজির আদর্শকে মর্যাদা দেয়?

নেতাজি কম বয়সে স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, পেয়েছিলেন সর্বধর্ম সমন্বয়ের শিক্ষা। যখন তিনি জাতীয় কংগ্রেসের নেতা ছিলেন, তখন হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান-সহ নানা ধর্মের মানুষ ছিলেন তাঁর অনুগামী। জার্মানিতে নেতাজির এক বিশ্বস্ত সহকারী ছিলেন আবিদ হাসান। জার্মানি থেকে ডুবোজাহাজে যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাড়ি দেন, তখনও আবিদ হাসান ছিলেন তাঁর সঙ্গী। আজ়াদ হিন্দ ফৌজে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। নেতাজির আদেশ ছিল, আলাদা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর, বাসনপত্র ব্যবহার করা যাবে না।

নেতাজি এমন এক ভারত গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যেখানে সব ধর্মের মানুষ নির্ভয়ে বসবাস করতে পারবেন। কিন্তু এখন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিষবাষ্প যে ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে কি মনে হয় যে, আমরা নেতাজির আদর্শ মেনে চলছি? সুভাষচন্দ্র যখন জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন, তখন হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগের সদস্য হলে কংগ্রেসের সদস্য পদ নেওয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত পাশ করান। তাই তাঁকে প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হলে বিজেপিকে হিন্দুত্বের ধ্বজাকে গুটিয়ে রাখতে হবে। বিজেপি কি তা করতে পারবে?

রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

রেডিয়ো দিবস

বিশ্ব রেডিয়ো দিবস ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাঙালির অলিখিত রেডিয়ো দিবস মহালয়ার দিনটি। যতই টিভি, ইন্টারনেট, ফেসবুক জাঁকিয়ে বসুক, রেডিয়োয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ না শুনলে পুজো মনে হয় না। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। ঘড়িতে চারটে বাজার আগেই পাড়ার অনেকে এসে জুটতেন আমাদের বাড়ি। রেডিয়োতে চণ্ডীপাঠ শুরু হতেই সারা ঘর নিস্তব্ধ। এ স্মৃতি এখনও মনের অ্যালবামে জ্বলজ্বল করে। সারা বছর অনেকেই রেডিয়োর খোঁজ না করলেও, মহালয়ার আগের তার খোঁজ পড়ে। আজকের ডিজিটাল যুগে রেডিয়ো অনেকটাই পিছিয়ে গেলেও ওই দিনে তার জুড়ি নেই।

বিপদতারণ ধীবর, বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া

আরও পড়ুন
Advertisement