Aliah University

সম্পাদক সমীপেষু: রাজনীতির প্রশ্রয়

গালিগালাজের সংস্কৃতি খানিকটা পরিবেশগত প্রভাবেও প্রভাবান্বিত। এদের স্থান কাল ভেদে কোনও হুঁশ থাকে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২২ ০৭:২৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সম্প্রতি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহম্মদ আলির হেনস্থা ও নিগ্ৰহের সংবাদ প্রকাশ্যে এসেছে। অকথ্য ভাষায় তাঁকে যে ভাবে গালিগালাজ করা হয়েছে, তা অতীব নিন্দনীয়। এই ঘটনা রুচিশীল মানুষকে স্তম্ভিত করে দেয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নানা দাবিতে, নানা বাহানায় রাজ্যের বিভিন্ন নামীদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অসহনীয় দৃশ্য মানুষ অতীতেও প্রত্যক্ষ করেছেন। শাসক রাজনীতির ছত্রছায়ায় আশ্রিত ছাত্রছাত্রীদের ঘেরাও আন্দোলনের ফলে উপাচার্য, অধ্যক্ষরা বারে বারে বিব্রত হয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির করাল থাবায় ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে পঠনপাঠনও। তাতেও এমন সহিংস আন্দোলনে বিরতি হয়নি।

গালিগালাজের সংস্কৃতি খানিকটা পরিবেশগত প্রভাবেও প্রভাবান্বিত। এদের স্থান কাল ভেদে কোনও হুঁশ থাকে না। এক বার ৩৯ নং বাসে করে আমার গন্তব্যে যাচ্ছি। মৌলালির কাছে বাস, বাসস্টপ তখনও বহু
দূরে। কনডাক্টরের নিষেধ সত্ত্বেও বাসের গতি শ্লথ হতেই তিন জন ছেলে বাসে উঠতে চাইলে তিনি বাধা দেন। তবু তারা এক প্রকার জোর করেই চলন্ত বাসে ওঠে। তার পর শুরু হয় অকথ্য গালিগালাজ। এর পর কনডাক্টর ভাড়া চাইতেই বিপত্তি বাধে। অভিধান-বহির্ভূত শব্দ ব্যবহার দেদার চলতে থাকে। এ ধার-ও ধার হতে মৃদুমন্দ প্রতিবাদও হয়। আমার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বয়স্ক এক যাত্রী। তিনি কার্যত কোনও কথাই বলেননি। হঠাৎ এক জন মস্তান গোছের ছেলে বলে ওঠে “কৌন বোলা, কৌন বোলা।” তার পরই সেই বয়স্ক যাত্রীকে সপাটে চড়, সঙ্গে অকথ্য গালিগালাজ। তাদের দাপটে বাসের কোনও যাত্রী কথা বলার সাহস দেখাতে পারেননি।

Advertisement

একই স্টপে নেমে সেই যাত্রী আক্ষেপ করে শুধু বলেছিলেন, “দাদা দেখলেন তো, কেমন সুন্দর স্বর্গরাজ্যে আমরা বাস করছি।” শাসকের প্রশ্রয়ে এদের বাড়বাড়ন্ত কোথায় এসে পৌঁছেছে, তার প্রমাণ এই বার পেলাম। আমরা প্রতিনিয়ত অসৎ তথা মূর্খ ব্যক্তির সান্নিধ্যে দিনযাপন করছি, তাদের মুখনিঃসৃত অ-কথ্য ভাষাকে ‘কটুকথা’ বলে দায় সারছি বটে, তবে আখেরে তা সমাজের অবক্ষয়ের দিকই নির্দেশ করছে।

ইন্দ্রনীল বড়ুয়া, কলকাতা-১৫

অপব্যবহার

‘বহিষ্কারের পরেও গিয়াসউদ্দিনের এত দাপট কেন’ (৪-৪) শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে গালাগালি-সহ হুমকি দেওয়ার সপক্ষে গিয়াসউদ্দিন বলেছেন যে, তিনি নবারুণ ভট্টাচার্যকে অনুসরণ করেন, এবং গালাগালি একটা আবেগের বহিঃপ্রকাশ, ক্রোধের প্রকাশ।

নবারুণ বেঁচে থাকলে এই প্রসঙ্গে কী ভাবতেন, বলতেন ভেবে শিহরিত হচ্ছি। কিন্তু, এ যে তাঁর সাহিত্যের অবমাননা ও ভুল প্রয়োগ, সেটা বেশ বুঝলাম। বাংলা সাহিত্যে প্রাকৃতজনের এক ভিন্ন ভাষা অসাধারণ গদ্যে অমর করে গিয়েছেন নবারুণ। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গিয়াসউদ্দিন আর যা-ই হন, প্রাকৃতজন নন। তিনিও এই রাজ্যের হাজার হাজার ‘তাজা ছেলে’দের এক জন। সেখানে এই রকম এক গুন্ডাগিরির সপক্ষে নবারুণের উল্লেখ কোনও নির্বোধের হাতে বন্দুক তুলে দেওয়ার শামিল। এমন একটি অপকর্মের জন্য নবারুণ ও তাঁর সাহিত্য ভাষাকে টেনে এনে ‘পোয়েটিক জাস্টিস’ দেওয়ার চেষ্টায় আমি একই সঙ্গে বিস্মিত ও ব্যথিত। নবারুণের অমর গদ্যের এই অপব্যবহার বন্ধ হোক।

বিপ্লব ঘোষ, কলকাতা-৮

অ-সভ্যতা

‘পাপ’ (৫-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের প্রেক্ষিতে কিছু কথা। সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন বলেছিলেন, প্রকৃত শিক্ষক তাঁরাই যাঁরা আমাদের নিজেদের জন্য চিন্তা করতে সাহায্য করেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেকে ‘ব্যর্থ শিক্ষক’ বলে মনে করেছেন। ছাত্রদের নিকট লাঞ্ছনার অশ্রাব্য বাণী শুনে এক জন শিক্ষকের এমন মনে হতেই পারে। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে তাঁর আত্মজিজ্ঞাসায় এমন কথা উঠে আসতেই পারে। কিন্তু রাজনীতিসর্বস্ব এ বঙ্গে ছাত্রদের কাছে এ-হেন মন্তব্য ‘একটু কটু, খারাপ কথা’ হয়েই রয়ে যায়।

রাজনীতির অঙ্গীভূত শিক্ষার যে সূচনা হয়েছিল বাম জমানার চৌত্রিশ বছর জুড়ে, সেই চারাগাছে প্রতিনিয়ত জলসিঞ্চনের মাধ্যমে বর্তমান শাসকের শাসনে তা মহীরুহে পরিণত। পূজনীয় মাস্টারমশাইদের সামনে ‘একটু কটু কথা’ বলতে এই সময়ের ছাত্রছাত্রীরা আর আত্মগ্লানিতে ভোগে না। সম্পাদকীয় নিবন্ধ অনুসারে, রাজ্যটি এক সর্বগ্রাসী ‘রাজনৈতিক সমাজ’-এ পরিণত হয়েছে। এ রাজ্যে শিক্ষা আজ রাজনীতির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। বিদগ্ধ সমাজ থেকে প্রশাসক হয়ে উচ্চপদস্থ আইনরক্ষক সকলের মাথাতেই রাজনীতির আশীর্বাদি ফুল বর্ষিত হলে সর্বত্র পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই অকুতোভয়ে যথেচ্ছাচারে মাতে তাজা ছেলের দল। ভাবলে বিস্ময় বোধ হয়, বিশ্বকবি এই সব সবুজের উদ্দেশেই বলেছিলেন, “...সংঘাতে তোর উঠবে ওরা রেগে,/ শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে,/ সেই সুযোগে ঘুমের থেকে জেগে/ লাগবে লড়াই মিথ্যা এবং সাঁচায়।/ আয় প্রচণ্ড, আয় রে আমার কাঁচা।”

শিক্ষা এখন ডিগ্রি-ডিপ্লোমার কাগজসর্বস্ব আর শতাংশের বিচারে আবদ্ধ। প্রকৃত শিক্ষার মান যে নিম্নগামী এবং ছাত্রনেতারা বাচিক হিংস্রতার বাইরে কোনও ভাষা রপ্ত করতে পারেনি, তা বলা বাহুল্য। বিগত বাম শাসনের শিক্ষাব্যবস্থার দোহাই দিয়েও বর্তমান শাসক অব্যাহতি পেতে পারেন না। তবুও রাজনৈতিক পদতলে নিজেকে সঁপে দেওয়া সমাজের আত্মবিশ্লেষণও আজ জরুরি হয়ে পড়েছে।

আসলে পশ্চিমবঙ্গের সমাজ এক অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কিংবা হয়তো তলিয়েই গিয়েছে— নিবন্ধের এই হতাশবাণীর পরেও সামগ্রিক রাজনৈতিক আগ্রাসনের মুখে দাঁড়িয়ে সমাজের ব্যক্তিমানসের চেতনাবোধকে কষ্টিপাথরে যাচাই করতে হবে। গুরুজনদের প্রতি সম্মান এবং সম্ভ্রম প্রদর্শনের মাধ্যমেই যে সভ্যতার বহিঃপ্রকাশ, তা ভুললে চলবে না।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

অরণ্যমানব

‘স্কুলেই বৃক্ষরোপণের পাঠ চান অরণ্যমানব’ (২-৪) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এক ব্যতিক্রমী ‘অরণ্যমানব’-এর কথা। বৃক্ষরোপণ আন্দোলনের এই মানুষটির আসল নাম যাদব পায়েং। যাদব মোলাই নামেও পরিচিত। এই মানুষটি সকলের কাছে পরিচিত ‘দ্য ফরেস্টম্যান অব ইন্ডিয়া’ নামে, ভারতের অরণ্যমানব।

শৈশব থেকে তিনি ৪২ বছর ধরে দিয়ে চলেছেন পরিবেশ সচেতনতার পাঠ। অসমে ব্রহ্মপুত্র নদের বালুচরে তৈরি করেছেন এক আস্ত বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চল ‘মোলাই কাঠনিবাড়ি’ নামে বিখ্যাত। বনসৃজনের এই ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ড তাঁকে এনে দিয়েছেন, ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান। তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন তথ্যচিত্র।

তিনি এখন মেক্সিকো, দুবাইয়ে বনাঞ্চল গড়ার কাজে ব্যস্ত। যাদব মনে করিয়ে দিয়েছেন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা— পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উষ্ণায়ন রুখতে বৃক্ষরোপণের বিষয়ে সচেতনতা এখন অত্যন্ত জরুরি। তাঁর মতে, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন আটকাতে না পারলে পরিবেশের ভারসাম্য বিপন্ন হবে। বিপদে পড়বে মানবসভ্যতা। তাই তিনি স্কুল স্তর থেকেই ছাত্রদের বনসৃজনের সচেতনতার পাঠ দেওয়া দরকার বলে মনে করেন। কারণ, বনভূমি বাঁচলে তবেই বাঁচবে বনের গাছ, পাখি ও জীবজন্তু।

৬৩ বছরের অরণ্যমানব গাছ বাঁচাতে, বনভূমি তৈরির কাজে ছুটে চলেছেন দেশ থেকে বিদেশ। আসুন! এ বার আমরাও একটু সচেতন হই। গাছ বসাই, গাছ বাঁচাই। গাছ ছাড়া যে পরিবেশ অচল।

বেঁচে থাকুন অরণ্যমানব। আপনাকে প্রণাম!

দীপংকর মান্না, চাকপোতা, হাওড়া

আরও পড়ুন
Advertisement