সম্পাদক সমীপেষু: বিশ্বাস করা যায় কি

ভারতীয়দের খোলা উনুনে রান্না করার অভ্যাস বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ— তাদের এমন তথ্য পরে বিতর্কিত বলে গণ্য করা হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৪৩

ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর সতর্কবার্তা নিয়ে জয়ন্ত বসুর লেখা ‘যুদ্ধ কলকাতায়, আমরা তৈরি?’ (২৮-৩) প্রবন্ধটির সূত্রে এই পত্র। পরিবেশ সন্ত্রাসবাদ কথাটা আজকাল খুব চালু। জয়ন্তবাবুর হয়তো জানা নেই, আইপিসিসি-র বিশ্বাসযোগ্যতা বা তাদের দেওয়া তথ্যের প্রামাণ্যতা কখনও সংশয়াতীত নয়।

আইপিসিসি নিজেরা কোনও গবেষণা করে না। তাই হাতফেরতা তথ্য নিয়ে কাজ করার চেয়ে প্রাথমিক উৎসের তথ্য নিয়ে কাজ করা অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য। ১৯৯০ এবং ১৯৯৫ সালে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্তকরণের সময় তারা বিজ্ঞান সাংবাদিকতার প্রাথমিক শর্তগুলিই মানেনি। কারণ, বিশ্ব উষ্ণায়নের কাহিনিকে প্রামাণ্যতা দিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলির ষড়যন্ত্রমূলক ভূমিকা উপস্থাপনে ওই প্রবঞ্চনার দরকার ছিল। ১৯৯২ সালে রিয়ো ডি জেনেইরো-তে ‘আর্থ সামিট’-এর আগে সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল পলিসি প্রজেক্ট (এসইপিপি) সংস্থার এস ফ্রেড সিঙ্গার সোজাসুজি জানিয়েছিলেন যে, আইপিসিসি-র প্রতিবেদনের অষ্টম অধ্যায় ‘বিশ্ব জলবায়ুতে মানুষের কাজকর্মের প্রভাব’— প্রতিবেদনকারীদের বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে সম্পর্কবিহীন পূর্বানুমানের বহিঃপ্রকাশ। পরে দেখা যায় আইপিসিসি-র সঙ্গে কাজ করা বিজ্ঞানীদের চল্লিশ শতাংশই মনে করেন, ওই প্রতিবেদন জনগণের কাছে একটি ভুল ঘটনাবিন্যাস উপস্থাপিত করছে। হিমালয়ের হিমবাহের গলন নিয়ে আইপিসিসি-র ২০০৭ সালের রিপোর্টের ভিত্তিহীনতা সর্বজনবিদিত। তা ছাড়া, ভারতীয়দের খোলা উনুনে রান্না করার অভ্যাস বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ— তাদের এমন তথ্য পরে বিতর্কিত বলে গণ্য করা হয়েছে। তাই যে আইপিসিসি নিয়ে প্রবন্ধকার এত কিছু লিখলেন, তাদের সত্যিই বিশ্বাস করা যায় কি?

Advertisement

তপন পাল
কলকাতা-১৪০

উপন্যাস?

বেশ ধন্দে পড়েছি, সদ্য-প্রকাশিত আনন্দবাজার শতবর্ষ সঙ্কলনের প্রচ্ছদে ‘উপন্যাস’ শব্দটিকে নিয়ে। তিরিশটি উপন্যাসের এই সঙ্কলনে প্রথমেই স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘ল্যাবরেটরি’। এটি তো তিনসঙ্গী গ্রন্থের একটি গল্প। অন্য দু’টি গল্প ‘রবিবার’ এবং ‘শেষ কথা’। গল্পটি রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন মৃত্যুর বছর খানেক আগে। উপন্যাসের বিষয়ে যে তথ্য জানা যায় তা হল, ‘মালঞ্চ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল বিচিত্রা পত্রিকায় বঙ্গাব্দ অনুযায়ী ১৩৪০ সালের আশ্বিন-অগ্রহায়ণ সংখ্যায়। ‘চার অধ্যায়’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৪১-এর অঘ্রান মাসে। সেই সূত্রে এটি রবীন্দ্রনাথের শেষ উপন্যাস। তার পর ১৩৪৮-এ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত গল্প লিখলেও কোনও উপন্যাস লেখেননি।

এটা ঠিক যে, প্রতিষ্ঠাকাল (১৩ মার্চ, ১৯২২) থেকেই আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠী, রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের বাণীকে বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছে। তাঁর ‘আগে চল’ বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এই পত্রিকা চতুর্থ বর্ষে পড়লে তিন দিন আগেই রবীন্দ্রনাথ শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে উনিশ বছর পূর্তিতে রবীন্দ্রনাথের বাণী ছিল, “নববর্ষে আনন্দবাজার পত্রিকাকে অভিনন্দন করি।” তাঁর ‘ল্যাবরেটরি’ প্রকাশিত হয়েছিল শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকায় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে। চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘রবীন্দ্র-প্রসঙ্গ আনন্দবাজার পত্রিকা’ গ্রন্থে ‘রবীন্দ্রনাথ ও আনন্দবাজার’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, “দুটি বিশেষরূপে উল্লেখযোগ্য গল্প ‘রবিবার’ (১৯৩৯) ও ‘ল্যাবরেটরি’ (১৯৪০) বেরিয়েছিল শারদীয় আনন্দবাজার পত্রিকায়। অশীতিপর বৃদ্ধের কলম থেকে এরূপ চমকপ্রদ স্টাইলের গল্প পেয়ে নবীন লেখকরাও চমকে গিয়েছিলেন” (পৃ ৬৮৬)। অর্থাৎ, ‘ল্যাবরেটরি’কে গল্প বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রকাশিত উক্ত গ্রন্থে।

রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, “ইতিমধ্যে আনন্দবাজার পত্রিকার পূজাসংখ্যার জন্য নতুন গল্পের তাগিদ আসিয়াছে, টাকাও অগ্রিম আসিয়া গিয়াছে লিখিতেই হইবে।” (চতুর্থ খণ্ড, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, ১৪০১, পৃ ২৪৭)। সেই গল্পই ‘ল্যাবরেটরি’। অর্থাৎ, তিনি এটিকে গল্প বলেই স্বীকৃতি দিচ্ছেন। কিসের ভিত্তিতে এটিকে উপন্যাস বলা হচ্ছে, সেই তথ্যসূত্র জানার জন্য গভীর আগ্রহে তাকিয়ে আছি।

রমজান আলি
রাজবাড়ি, বর্ধমান

প্রতিবাদ করলে

আমি আমতলার নিকটবর্তী চণ্ডী গ্রামের বাসিন্দা। স্কুলে আবশ্যিক ‘পরিবেশ পরিচয়’-এর পাঠ নিয়েছিলাম, কলেজেও ‘পরিবেশ বিদ্যা’ ছিল। পরবর্তী কালে বি এড-এ পরিবেশ ও সুস্থায়ী উন্নয়নের পাঠ নিতে হয়েছে। এ সমস্ত পাঠ নিতে নিতে এক দিন আমারই গ্রামে গাছ কেটে গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিবাদে নামলাম। তার পর? সে প্রতিবাদ স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের কাছে গণ্য হল রাস্তার জমি বেদখল করে রাখার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে। আর গ্রামবাসীরা প্রতিবাদীদের ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে কোলের ছেলেকে কোলে তুলে রওনা দিলেন বাড়ির দিকে। আর যেতে যেতে বলাবলি করলেন “শিক্ষিত ছেলের কথা শোনো! গাছ নাকি আবার কাটা যাবে না!”

জোকা-তারাতলা মেট্রো প্রকল্পে গাছ কাটা নিয়ে নানা আলোচনা বাংলা জুড়ে সম্প্রচারিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তা কী ভাবে সুস্থায়ী উন্নয়নের পথ ধরছে, তাও সকলের জানা। সেই জোকা থেকেই কয়েক কিলোমিটার দূরে চণ্ডী গ্রাম— সেখানে চিত্রটি মধ্যযুগীয়। অবশ্য মধ্যযুগীয় বললেও ভুল হয়। কারণ, বাংলার মধ্যযুগে বা পরবর্তী কালে মঙ্গলকাব্যগুলিতেও পরিবেশ সচেতনতার যথেষ্ট পরিচয় মেলে।

পরিবেশ বাঁচাতে যাঁরা প্রতিবাদ করেন, তাঁরা অনেকেই অন্যদের নেকনজরে থাকেন না। সুতরাং, চিহ্নিত করার পরে তাই তাঁদের নির্বাসনের ছক কষার কাজও শুরু হয় অবিলম্বে। ইতিহাস সাক্ষী, প্রতিবাদীদের একঘরে করার ঐতিহ্য বহু দিন। তা এখনও চলছে।

সেখ আব্দুল গফুর
চণ্ডী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

বাঁচতে চাইলে

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টগুলি আইপিসিসি প্রকাশ করছে বহু দিন ধরেই। আগের রাজ্য সরকার থেকে বর্তমান সরকার— কেউই এই বিপদ-বার্তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। সরকারগুলি ব্যস্ত ভোট, এলাকায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বেআইনি রোজগার ও সরকারের ক্ষেত্রগুলিকে দখল করার নেশায়।

আগের বাম সরকার পূর্ব কলকাতার পার্শ্ববর্তী বিশাল সুজলা সুফলা সবুজ কৃষিখেত, জলাভূমি, পশুপাখি, এবং কলকাতা শহরের নিকাশিব্যবস্থা ধ্বংস করে, হাজার হাজার মানুষকে ভিটেমাটি, পেশা থেকে উৎখাত করে বানাল নতুন উপনগরী। বিশাল এই সম্পূর্ণ নেড়া উপনগরীতে নেই সবুজ উদ্ভিদ বা জলাভূমি। আছে শুধু স্কাইস্ক্র্যাপার আর মানুষের জনবসতি। কেউ বাধা দেয়নি এই উপনগরী বানানোর সময়।

কলকাতার আশপাশের সব কৃষিজমি, জলাভূমি ধ্বংস করে গড়ে উঠছে ফ্ল্যাটবাড়ি। একই সঙ্গে শহরে বাড়ছে ডিজ়েল-পেট্রলচালিত যান। মানুষের কোনও হেলদোল নেই, বরং সরকারি মদতে পুষ্ট এই ধ্বংসযজ্ঞে যোগ দিতে মানুষ ধাবমান।

কোনও রাজ্য সরকার যে আইপিসিসি-র বিপদসঙ্কেত-জ্ঞাপক বার্তাগুলিকে মান্যতা দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা করবে, তেমনটা ভাবাই বোকামি। একমাত্র মানুষের সচেতন প্রতিরোধই পারবে আগামী ধ্বংসের হাত থেকে কলকাতা শহর ও প্রান্তদেশকে বাঁচাতে।

শেখর দত্ত
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

আরও পড়ুন
Advertisement