Irael Palestine Conflict

সম্পাদক সমীপেষু: যুদ্ধ নয় গণহত্যা

রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষের ফলে মৃতের সংখ্যা ইজ়রায়েলের তুলনায় প্যালেস্টাইনে অনেক বেশি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৪:২২

‘ইজ়রায়েলে সুনকও, তেল নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে পশ্চিমে’ (২০-১০) শীর্ষক খবরের সঙ্গে ছবিটি দেখে দগ্ধ, ব্যথিত হৃদয়ে এই চিঠি লিখছি। আমি এক সন্তানের পিতা। সংবাদ পড়ে জানলাম, অবরুদ্ধ প্যালেস্টাইনের গাজ়া ভূখণ্ডে ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া লাগাতার ইজ়রায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণে ইতিমধ্যেই যে কয়েক হাজার প্যালেস্টাইনবাসীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে এক বড় সংখ্যকই শিশু। হামাস জঙ্গিদের খতমের নামে ইজ়রায়েল রাষ্ট্র প্রতি ১৫ মিনিটে এক জন শিশুকে হত্যা করছে, অর্থাৎ প্রতি দিন মরছে শতাধিক নিরপরাধ প্যালেস্টাইনি শিশু। ইজ়রায়েলের এই হানাদারি হামাসের আক্রমণের বিরুদ্ধে ‘আত্মরক্ষা’ নয়, এটি একটি গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধ। বিশ্বের অন্যতম উচ্চ সামরিক শক্তিসম্পন্ন ও পারমাণবিক শক্তিধর ইজ়রায়েলের দ্বারা নিরপরাধ প্যালেস্টাইনবাসীর উপর নৃশংস সামরিক আক্রমণের সামনে হামাসের মতো সামান্য গোষ্ঠীর রকেট হামলা কোনও তুলনাতেই আসে না। মৃতের সংখ্যার তুলনামূলক পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলেই এই বক্তব্য পরিষ্কার হয়ে যায়।

Advertisement

রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষের ফলে মৃতের সংখ্যা ইজ়রায়েলের তুলনায় প্যালেস্টাইনে অনেক বেশি। যেমন, ২০০৮ সালে ইজ়রায়েলে মৃত ৮৫৩, প্যালেস্টাইনে মৃত ৩২০২; ২০০৯ সালে ইজ়রায়েলে ১২৩, প্যালেস্টাইনে ৭৪৬০। আবার সাম্প্রতিক সময়ে যদি দেখি, তা হলে ২০১৯ সালে ইজ়রায়েলে মৃতের সংখ্যা ১৩৩, প্যালেস্টাইনে ১৫৬২৮; ২০২০ সালে ইজ়রায়েলে ৬১, প্যালেস্টাইনে ২৭৮১ (সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ, ১৬-১০)।

২০২১ সালেও ইজ়রায়েল ১১ দিন ধরে গাজ়া ভূখণ্ডের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, স্কুলে, হাসপাতাল-সহ সমস্ত অসামরিক স্থানে বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র আর বিমানহামলা চালিয়ে ২৪৮ জনকে হত্যা করেছিল; সেই বারেও হাজার হাজার মানুষ আহত আর গৃহহীন হন, ধ্বংস হয়ে যায় গাজ়ার পানীয় জল, বিদ্যুৎ, চিকিৎসাব্যবস্থা। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, বর্তমান যুদ্ধ-সহ যতগুলি যুদ্ধ প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে করেছে ইজ়রায়েল, তার কোনওটি আসলে যুদ্ধ নয়, বরং পরিকল্পিত গণহত্যা। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে গাজ়াকে অবরুদ্ধ করে সেখানে শিশুখাদ্য ও অন্যান্য অত্যাবশ্যক সামগ্রীর জোগান বন্ধ করে প্রচুর শিশুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে ইজ়রায়েল রাষ্ট্র। এবং, আত্মরক্ষার নামে অগণিত শিশুহত্যা ও গণহত্যাকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছেন আমেরিকা ও তার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

গত ১৭ অক্টোবর মধ্য গাজ়ার একটি হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইজ়রায়েল ৫০০ জনকে হত্যা করার দিনই বাইডেন ইজ়রায়েলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে তাঁর ‘আত্মরক্ষার অধিকার’-কে সমর্থন জানিয়েছেন। অবিলম্বে এই শিশুহত্যা তথা গণহত্যা বন্ধ করার উদ্যোগ করতে হবে আন্তর্জাতিক মহলকে। নইলে পৃথিবীতে মানবতা বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।

রুদ্র সেন, কলকাতা-২৮

জয়ের পরে

বিগত দু’সপ্তাহ ধরে হামাসের বিরুদ্ধে চলা অভিযানে হাজার হাজার বোমা গাজ়া ভূখণ্ডে পড়েছে। হামাস যোদ্ধাদের পাশাপাশি নিরপরাধ শিশু-নারী সমেত অসংখ্য সাধারণ গাজ়ানিবাসীর মৃত্যু ঘটে চলেছে প্রতি দিন। গোড়ায় ভয়াবহ আক্রমণ চালিয়ে ইজ়রায়েলি প্রশাসনকে হতবাক করে দিলেও, পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে এখনও অবধি হামাস বাহিনী উল্লেখযোগ্য আক্রমণ শাণাতে পারেনি। ইজ়রায়েল আক্রান্ত দেশ হিসাবে আত্মরক্ষার অধিকারের যুক্তি দেখিয়ে হামাসকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে শক্তি নিয়োগ করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হল, যুদ্ধ জয়ের পরে গাজ়ার কী হবে? হাজার হাজার মানুষের অকালমৃত্যুর স্মৃতি বুকে আঁকড়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আবার দুঃসহ জীবনযাপন হয়তো শুরুও হয়ে যাবে! এবং ইজ়রায়েলের আক্রমণই একমাত্র আশঙ্কার বিষয় নয়। অপরিকল্পিত স্বাস্থ্য পরিষেবা, দারিদ্র এবং বেকারত্বের জ্বালা নিয়ে গাজ়ার দৈনন্দিন জীবন। সামরিক ভাবে হামাসকে দমিয়ে দেওয়া গেলেও রাজনৈতিক ভাবে হামাস এবং হামাস-সদৃশ সংগঠনের পুনরুত্থান আটকানো যাবে কি?

সাম্প্রতিক ইজ়রায়েল সফরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ৯/১১-র ঘটনার প্রত্যাঘাতে প্রাথমিক ভাবে আমেরিকার সেনাবাহিনীর সাফল্য এসেছিল, কিন্তু অচিরেই আফগানিস্তানে প্রতিনিয়ত আমেরিকার বাহিনী চোরাগোপ্তা আক্রমণের শিকার হতে থাকে। আফগানিস্তানে মানবাধিকার সুরক্ষিত না করে, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষাব্যবস্থার প্রগতিশীল সংস্কার না করে, কেবলমাত্র সামরিক শক্তি এবং অঢেল অর্থের জোরে অর্জিত সামরিক জয় আমেরিকাকে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য দিতে পারেনি। দু’দশক ধরে তালিবানের সঙ্গে লড়াই করেও শেষ অবধি আমেরিকাকে আফগানিস্তান থেকে সরে আসতে হয়েছিল, গণতন্ত্র স্থাপনের লক্ষ্যের সমাধি রচনা হতে দেখে।

ইজ়রায়েলের বর্তমান গতিবিধি এখনও অবধি অনেকটা ৯/১১ পরবর্তী আমেরিকার প্রশাসনের কার্যকলাপের প্রতিলিপি বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ইজ়রায়েল জয়ী হতে পারে, কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী গাজ়ার প্রশাসন সম্পর্কে ইজ়রায়েলের পরিকল্পনা এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে। দীর্ঘ দিনের পর্যবেক্ষণ থেকে এ কথা বলাই যায় যে, গাজ়াকে সরাসরি নিজেদের অধিকারে এনে শাসন করার পক্ষপাতী ইজ়রায়েল নয়। পাশাপাশি ইজ়রায়েলের অন্যতম ভূরাজনৈতিক লক্ষ্য হল গাজ়া ভূখণ্ড এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের যৌথ রাজনৈতিক আন্দোলনকে পুঞ্জীভূত হতে না দেওয়া।

বিকল্প হতে পারে প্যালেস্টাইন মুক্তি পরিষদের অন্যতম বৃহৎ দল, এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ গোষ্ঠী। যুদ্ধোত্তর গাজ়া ভূখণ্ডের প্রশাসনিক রূপরেখা কী হবে, সেই বিষয়ে আলোচনায় বসা জরুরি। তবে এই বিকল্পটি সমস্যামুক্ত নয়, ফাতাহ-র অভ্যন্তরীণ মতাদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে উপদলের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও দীর্ঘ। ফলে গাজ়া ভূখণ্ডে সংগঠন তৈরি করে, ভোটে জিতে হামাসের বিকল্প হয়ে ওঠা ফাতাহ-র পক্ষে যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। এই বিষয়ে যদি ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনীর প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকে, তা হলেও এই প্রশাসনে বৈধতা নিয়ে গাজ়ার জনগণের মধ্যে সন্দেহ থেকেই যাবে। এ রকম পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য বিকল্প হল গাজ়া ভূখণ্ডে আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রশাসন চালানো।

হামাস-বিরোধী এই যুদ্ধে ইজ়রায়েলের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত প্যালেস্টাইনের আগামী প্রজন্মকে চরমপন্থা থেকে দূরে রাখা। হামাস-মুক্ত গাজ়ায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের সুযোগ এবং সম্মানজনক জীবনযাপনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে বর্তমানের ধ্বংসস্তূপ থেকে ভবিষ্যতের উগ্রপন্থা বিষবৃক্ষে পরিণত হবে।

অর্ক গোস্বামী আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান

দূষণের ঝুঁকি

‘নির্মাণের দূষণ’ (৭-১০) খবরে প্রকাশ, বিশ্বে দূষণের ২৬% হয় নির্মাণক্ষেত্র থেকে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম ২.৫) মাত্রা বৃদ্ধির পিছনে নির্মাণ বর্জ্যের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। বায়ু দূষণে প্রতি বছর দুনিয়ায় ৪ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। কলকাতায় দৈনিক নির্মাণ বর্জ্য প্রায় ৮০০ টন, বার্ষিক পরিমাণ ৩ লক্ষ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার রিপোর্টে বলা হয়েছে, দূষণের জেরে ছ’বছর গড় আয়ু কমেছে কলকাতাবাসীর। বায়ু দূষণজনিত নানা অসুখ বাড়ছে গ্রামেও। মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডই এর জন্য দায়ী।

সুব্রত পাল শালবনি, বাঁকুড়া

আরও পড়ুন
Advertisement