Artificial Intelligence

সম্পাদক সমীপেষু: রোবট দুনিয়া

কম্পিউটার যে আমাদের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, তা প্রমাণিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে অনেকে তাল মেলাতে পারবেন না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ০৬:৩৩

অতনু বিশ্বাসের ‘কৃত্রিম মেধার বন্ধুত্ব চাই’ (১৬-২) প্রবন্ধটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। কৃত্রিম মেধা, যাকে ইংরেজিতে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বলে, তাকে নিয়ে দুনিয়া জুড়ে শোরগোল পড়েছে। একে ব্যবহার করা উচিত, না অনুচিত? কম্পিউটার আবিষ্কারের আগে এমনই ঝড় উঠেছিল কম্পিউটার ব্যবহারের পক্ষে বা বিপক্ষের মতামত নিয়ে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে এই নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছিল, অনেক মানুষের কর্মচ্যুতি হবে, এই আশঙ্কায়। সেই লড়াই যে অর্থহীন, আজ তা পরিষ্কার। বরং কম্পিউটার ব্যবহার করে অনেকেরই রুটি, রুজি হচ্ছে। অনেক চাকরিরও সৃষ্টি হয়েছে। কম্পিউটার যে আমাদের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, তা প্রমাণিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে অনেকে তাল মেলাতে পারবেন না। কেন না, প্রযুক্তির অগ্রগতি হয় গুণোত্তর প্রগতিতে, অতি দ্রুত লয়ে। আর মানুষের প্রগতি নেহাতই সরলরৈখিক ছন্দে। কাজেই মানুষের সঙ্গে দৌড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয় সুনিশ্চিত। যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কর্মপদ্ধতির সঙ্গে মানুষের জটিল চিন্তাশৈলীর বিস্তর তফাত। তবুও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ম্যাজিক দেখাবে তার উৎকর্ষে ও উৎপাদনশীলতায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অনেক। তাকে দিতে হবে না বেতন, বা কোনও ভাতা। নেই ছুটির প্রয়োজন। রক্ষণাবেক্ষণের কৌশল জানলেই যথেষ্ট। তাই নিয়োগকর্তারা রোবট নিয়োগে উৎসাহী হবেন যথেষ্ট। ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়বে কল্পবিজ্ঞানের লেখকদের কাজও।

Advertisement

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ঘটিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক অসাধ্য সাধন করেছেন। নায়ক-নায়িকাদের কণ্ঠস্বর ডাবিং হোক, বা তাদের প্রতিরূপ। মূল ব্যাপার যন্ত্রের চাই ডেটা বা তথ্য। সেই তথ্য ঠিকমতো দিতে পারলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অনেক কিছুই ঘটানো সম্ভব। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি পারবে মানুষের আবেগ ও অনুভূতিকে সব সময়ে সঠিক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে? মানুষের চিন্তাশক্তির জটিলতা, আবেগ, অনুভূতি, এগুলো যন্ত্রের পক্ষে ধরা সম্ভব নয়। তাই যন্ত্রমানব বা রোবট যতই খবর পড়ুক, মানুষের খবর পড়ার সঙ্গে তফাত থাকবে। আর প্রযুক্তি যে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে পিছন দিকে ফেরা কোনও মতেই সম্ভব নয়। তবে যে কাজটা মানুষ করতে পারে, সেটা হল প্রযুক্তির অপব্যবহারকে আটকানো। মানুষ যাতে নিজেই নিজেকে সঙ্কটে না ফেলে, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের সবার।

অভিজিৎ দত্তজিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

শত্রু নয়

‘কৃত্রিম মেধার বন্ধুত্ব চাই’ লেখা পড়ে মনে হল, প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের লড়াই চলবে। মানুষ তার জীবনকে বিলাসবহুল করতে গিয়ে যে প্রযুক্তির সৃষ্টি করেছে, সেই প্রযুক্তিই আজ তার চরম প্রতিযোগী। মানবসম্পদে থাবা বসাচ্ছে, আরও উন্নত প্রযুক্তির কাজকর্ম। এই অসম যুদ্ধে জয়ী হতে হলে স্রষ্টাকে নৈতিক ও মানবিক হতে হবে। রোমান ইয়ামপলস্কি তাঁর আনএক্সপ্লেনেবল, আনপ্রেডিকটেবল, আনকন্ট্রোলেবল বইতে প্রাবন্ধিকের মতোই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, প্রযুক্তির নিরাপত্তা এখনও সে ভাবে তৈরি হয়নি। তাই মানুষকে তার মানসিকতার পরিবর্তন করে প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে অভিযোজিত করে নিতে হবে। কারণ, বিজ্ঞানের দ্রুত সাফল্যে মানুষের অস্তিত্ব কোন খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়াবে, কেউ জানে না। সবে তো শুরু। তাই দানব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নতুন বন্ধু ভেবে মিশে যেতে হবে, বুঝে নিতে হবে তার কার্যপদ্ধতি। তা হলে ঘুড়ির লাটাই আমাদের হাতেই থাকবে। তার জন্য আরও বিজ্ঞান শিক্ষা, বিজ্ঞান চর্চার দরকার। শিক্ষাকে প্রযুক্তিমুখী করতে হবে, তার জন্য বিজ্ঞানের পরিকাঠামোর উন্নয়ন দরকার। অথচ, কেন্দ্র বা রাজ্য কারও বাজেটে সেই বরাদ্দ বা পরিকল্পনা নেই। বিজ্ঞান কংগ্রেসের গতিও থেমে গিয়েছে। এই অদ্ভুত অবস্থার পরিবর্তন না হলে আগামীতে মানুষের জায়গা এআই দখল করে নেবে।

তন্ময় কবিরাজরসুলপুর, পূর্ব বর্ধমান

তালাবন্দি বই

বহু আন্দোলনের ফসল পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তর গ্ৰন্থাগার ব্যবস্থা, গ্ৰামীণ ও শহর গ্ৰন্থাগার, জেলা গ্ৰন্থাগার আজ মৃত্যুপথযাত্রী হয়ে পড়েছে শুধুমাত্র গ্ৰন্থাগারিকের অভাবে। বহু গ্ৰন্থাগার আজ তালাবন্ধ। বই আছে, পত্রপত্রিকা আছে, কিন্তু সেগুলো পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার লোক নেই। নিয়মিত পাঠক-পাঠিকারা তিতিবিরক্ত, নতুন পাঠক তৈরি হচ্ছে না। দীর্ঘ দিন এই পদে কোনও নিয়োগ হয়নি। সদ্য কিছু নিয়োগ হলেও বহু পদ খালি পড়ে আছে। মনে রাখা দরকার, গ্ৰন্থাগার পাঠক তৈরি করে। আমাদের গ্রামে ‘মিলন সংঘ’-এর বেশ বড় গ্ৰন্থাগার আছে। আমার মা ছিলেন সেই গ্ৰন্থাগারের নিয়মিত পাঠক। গ্ৰামে এই রকম একটি গ্ৰন্থাগার না থাকলে আমার চতুর্থ শ্রেণি পাশ মায়ের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠত না। অক্ষর-সমুদ্র সম্বলিত একটি বই বা পত্রিকা নিতান্তই জড় পদার্থ। একে মন্থন করে অমৃত তুলে আনেন পাঠক-পাঠিকা। তাঁরা এর মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। বই পড়া একটা নেশা। কোনও ভাবে নেশাটা পাঠককে ধরিয়ে দিতে পারলে আর দেখতে হবে না। এটি তার অমোঘ আকর্ষণে পাঠককে কাছে টেনে নেবে।

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রবণতার তীব্র প্রতিবাদ পশ্চিমবঙ্গের কোনও রাজনৈতিক দলের তরফে করা হয়নি। এ জন্য কোনও মিটিং, মিছিল নজরে পড়েনি। ভাষা হিসাবে কিংবা অর্থনৈতিক প্রয়োজনে হিন্দি বা ইংরেজি শিখতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু সবার আগে মাতৃভাষাটা ভাল ভাবে শিখতে হবে। সেটা রপ্ত করতে পারলে অন্য ভাষা সহজে শেখা যাবে। বহু ভাষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী প্রথমে মাতৃভাষায় দক্ষ হয়ে পরে অন্য ভাষা শিখেছেন।

বহু ভাষাভাষীর দেশ ভারতে অন্য সব ভাষার সঙ্গে লড়াই করে বাংলা ভাষাকে টিকে থাকতে হবে। এর জন্য বাঙালিদের অগ্ৰণী হতে হবে। বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় এবং গ্ৰন্থাগারগুলির সার্বিক উন্নয়নের জন্য সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। সরকারের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান একে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন জোগাবে।

বাংলা ভাষার হারিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

গৌতম পতিতমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

দায়িত্ব

মাতৃভাষা নিয়ে আমরা যতই অহঙ্কার করি না কেন, বাস্তবে বাংলাকে আমরা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি? বাসে, ট্রেনে, মেট্রোয়, অটোয় যাতায়াতের পথে কানে আসে ইংরেজি-হিন্দি মিশিয়ে বিদঘুটে এক বাক্য। কলকাতা মেট্রোর প্রতি কামরায় দেখতে পাই বিজ্ঞাপন: “এখানে অগ্নিশমন যন্ত্র উপলব্ধ আছে!” সাদা বাংলায় এর অর্থ হল, আপনার আসনের নীচে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা আছে। সরকারি-অসরকারি বিজ্ঞাপনে বাংলা বানান, বাক্যগঠন যে ভাবে অতি দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে, তাতে বাঙালির লজ্জা পাওয়া উচিত। তবে আমরা সে দিকে খেয়াল করছি না। অথচ, এর আগে সুঠাম বাংলায় বিজ্ঞাপন যে হয়নি, এমন তো নয়।

কোনও জীবিত ভাষাই ‘শুদ্ধ’ হতে পারে না। তেমনটা কাম্যও নয়। পুষ্টি এবং সামর্থ্য বিস্তারের জন্য তাকে অন্য ভাষা থেকে শব্দ, বাক্য রীতি কখনও কখনও গ্রহণ করতে হয়। ঠিক সেই রকমই গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে দিয়ে আধুনিক বাংলা ভাষা তৈরি হয়েছে। তবে, সেটা এক কথা, আর ভাষার প্রতি তাচ্ছিল্যবশত অপ্রয়োজনে (বা, অসম্পূর্ণ ভাষাজ্ঞানের কারণে) বিদেশি শব্দের ব্যবহার, কদর্য বাক্য গঠন আর এক কথা। ভিন্ন ভাষার আগ্রাসনের চেয়েও এই ধরনের ‘ভাষা সন্ত্রাস’ প্রতিহত করা জরুরি। সেই কাজের দায়িত্ব কি আমাদের নয়? অন্তত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শিশুদের মনে মাতৃভাষার প্রতি কদর, সম্মান জাগিয়ে তোলার কাজটাকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

রোকেয়া মুনশিকলকাতা-১০৩

আরও পড়ুন
Advertisement