100 Days Work

সম্পাদক সমীপেষু: স্বপ্নের স্বরাজ

প্রথম থেকেই দেশ চলছে সামন্ততান্ত্রিক ধাঁচে। প্রাথমিক চাহিদা অন্ন বস্ত্র বাসস্থান আর শিক্ষার জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে সরকারের দিকেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৫

Sourced by the ABP

‘সবাই রাজা’ (২৬-১) সম্পাদকীয়তে প্রজাতন্ত্র কী, নাগরিক স্বাধীনতার অর্থই বা কেমনতর— এ সব বিষয় খুব তাৎপর্যপূর্ণ প্রেক্ষাপটে আলোচিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, প্রবন্ধে উল্লিখিত চার ধরনের স্বাধীনতা— মত প্রকাশ, জীবিকা, মেলামেশা আর শাসন করার স্বাধীনতা— বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে ১৯৫০-এর পরবর্তী সময়কাল একটা দেশের পক্ষে নেহাত কম সময় নয়। সাধারণ ভাবে এই সময়ের মধ্যে অনেক সংখ্যক মানুষকে একটা অভ্যাসের জায়গায় আনা হয়েছে, যে অভ্যাসটি মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতার সাক্ষ্য বহন করে। অন্য ভাবে ভাবলে অবশ্য বোঝা যায়, চার ধরনের স্বাধীনতা একে অপরের সঙ্গে গভীর ভাবে সম্পর্কযুক্ত। একের সাফল্য অন্যগুলোর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। অথচ, প্রথম থেকেই দেশ চলছে সামন্ততান্ত্রিক ধাঁচে। প্রাথমিক চাহিদা অন্ন বস্ত্র বাসস্থান আর শিক্ষার জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে সরকারের দিকেই। আমূল ভূমিসংস্কার না করে কয়েকটি মানুষের হাতে বেশির ভাগ জমির মালিকানা থাকায় মূলত কৃষিনির্ভর দেশটিতে দারিদ্রের ক্ষতে টোটকা দিয়ে সারাতে গেলে সে ক্ষত কমে না। ছোট মাঝারি ও কুটিরশিল্প উৎসাহ পাচ্ছে না। কালেভদ্রে কিছু ঋণ দিয়ে তাকে বাজার অর্থনীতির সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। তাই কিছু কাল পরে সেটা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ছে। বৃহৎ শিল্পপতি ও পুঁজিপতিরা গিলে নিচ্ছে জীবিকার ক্ষেত্র। শিক্ষাক্ষেত্রে বড় আর বিদেশি লগ্নিকারীরা কিনে নিচ্ছেন মেধাশক্তিকে। সেখানেও ১০০ দিনের জব কার্ডের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে মানুষকে। সেই সুযোগ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলগুলো। সুচতুর ভাবে খাদ্য ও স্বাস্থ্য প্রকল্পের লোভ দেখিয়ে অন্য ভাবে বেঁধে ফেলছে মানুষকে। নিজের ইচ্ছায় বাঁচার পরিস্থিতিটাই ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে গেলে মতপ্রকাশ বা মেলামেশার স্বাধীনতাই সেখানে থাকে না। আজ স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরেও তাই মানুষের পূর্ণ ‘স্বরাজ’ এক রকম স্বপ্নই বলা চলে।

Advertisement

এই স্বাধীনতাগুলোই যাঁদের এত বছরে এল না, তাঁদের কাছে শাসন করার অধিকার অনেকটা ছেলেভোলানো চুষিকাঠির মতো।

তনুজ প্রামাণিক, হাওড়া

চাই দৃষ্টান্ত

ঈশা দাশগুপ্তের ‘এই ধ্বংসের দায়ভাগে’ (১-২) পড়ে বেশ ক্লান্ত লাগল। তিনি লিখেছেন— হয়তো বাড়িতে শুনেছে, হয়তো নিজেই ভেবে নিয়েছে, ছাত্র সংগঠন বস্তুটি বিপজ্জনক। রাজনীতিই ঘোর ‘ডেঞ্জারাস’। রাজনীতির কথা ওঠামাত্র জানিয়ে দেয়, সে বিষয়ে তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এ কথাটা ওদের আমরা বোঝাতে পারিনি, শিক্ষক হিসাবে, অভিভাবক হিসাবে, ওদের অগ্রজ হিসাবে। এ কি আমাদের ব্যর্থতা নয়? প্রবন্ধকারকে প্রশ্ন, আপনি কি তাদের কাছে কোনও যুবক বা যুবতীকে এখনকার আদর্শ রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রীর উদাহরণ হিসাবে দেখাতে পেরেছেন? স্বাধীনতা-উত্তর কালে দক্ষিণপন্থী, বামপন্থী, মধ্যপন্থী বা অতিবামপন্থী নেতা বা নেত্রীরা, যাঁরা ছাত্র-আন্দোলন করে ভারতীয় রাজনীতিতে নাম করেছেন (যেমন অরুণ জেটলি, সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ) তাঁদের অনেকেই পরবর্তী কালে মূলস্রোতের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের ছাত্রাবস্থা ছিল সত্তরের দশকের শেষে বা আশির দশকের গোড়ায়। তখনও অতিবাম আন্দোলনের আতঙ্ক কাটেনি, অভিভাবকগণ ধরে ধরে রাজনীতিতে অংশগ্রহণে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়ে কলেজে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। না, কোনও ভুল ছিল না। আজ পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রজীবনে অতি নিম্নমানের দলীয় রাজনীতির ব্যাপক অনুপ্রবেশ যদি ছাত্রছাত্রীদের রাজনীতিবিমুখ করে থাকে, তাতেও কোনও ভুল নেই।

ছাত্র-রাজনীতিতে দলীয় রাজনীতির ব্যাপক অনুপ্রবেশের ফলে ছাত্র-রাজনীতির স্বাতন্ত্র্য নষ্ট হতে বাধ্য। ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে ইউনিয়নের অযাচিত হস্তক্ষেপ, ব্যবসায়ীদের অর্থানুকূল্যে বিশাল বাজেটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অজুহাতে টাকা আমদানি, আর তার জন্যেই যেন তেন প্রকারেণ ছাত্র ইউনিয়ন দখল খুব জরুরি। কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর নির্বাচন বন্ধ রেখে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা বন্ধ হওয়া দরকার। কলেজ চত্বরে হিংসা, বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। পড়াশোনা করতে এসে কে চাইবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে? ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক নেতারা সমাজের সর্বস্তরের কর্তৃত্ব জারি করে লাভের অঙ্ক বুঝে নিতে চাইছে। এই ছাত্রসমাজ কোন ভরসায় রাজনীতিতে পা রাখবে?

স্বাধীনতা-উত্তর কালে বেশ কিছু সফল ছাত্র-আন্দোলন হয়েছে। যেমন, ১৯৭৩-এ আমদাবাদে নবনির্বাণ আন্দোলন, আশির দশকে অসমে ছাত্ররা তো সরকারই গঠন করে ফেলেছিল। নব্বইয়ের দশকে ভি পি সিংহের আমলে মণ্ডল কমিশনের প্রস্তাবিত ২৭% ওবিসি সংরক্ষণের বিরুদ্ধে এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে সংরক্ষণের জন্য দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স আর সেন্ট স্টিফেন’স কলেজে ছাত্রদের ব্যাপক আন্দোলনের জেরে সরকারকে সাময়িক ভাবে পিছিয়ে আসতে হয়। আছে ২০১৪ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হোক কলরব’ আন্দোলন। ২০১৬ সালে পিএইচ ডি গবেষক দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানের দাবিতে ছাত্র-আন্দোলন হয় নানা রাজ্যে। এমন উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও কেন ছাত্রছাত্রীরা রাজনীতিবিমুখ, তার অনুসন্ধান জরুরি।

শিক্ষক-শিক্ষিকারা দায়িত্ব নিন কলেজে-কলেজে ছাত্র-রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে আলোচনাসভার। উদাহরণ পেশ করে আলোচনা করা হোক আন্দোলনের সাফল্য ও ব্যর্থতার। সাহায্য করুন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের চিনে নেওয়ার পদ্ধতিতে। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে উপস্থিত থাকুন অভিভাবকরা। কেন রাজনীতিকে ‘ডেঞ্জারাস’ ভাবছে ছাত্রছাত্রীরা, কেবল সেই প্রশ্ন করে সমস্যার সমাধান হতে পারে না।

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭

শ্রীহীন

‘বিপন্ন কন্যারা’ (১৯-১) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু কথা। আমার পরিবারের এক সদস্য, একটি কোচিং সেন্টারে পাঠদানে যুক্ত। সম্প্রতি তাঁর অভিজ্ঞতা প্রসূত একটি ঘটনা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া একটি মেয়ে নির্দিষ্ট দিনে পড়তে আসা ইস্তক ক্রমাগত চোখের জল ফেলছিল। কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করাতে জানা যায়, বাড়িতে গৃহ নির্মাণের কাজ শেষে পড়ে থাকা লোহার রডের টুকরো দিয়ে মেয়েটির প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া ভাই তার হাতে একাধিক বার আঘাত করেছে। ফুলহাতা সোয়েটারের হাতাটা টেনে মেয়েটি তার আঘাতের চিহ্নগুলো দেখায়। ঘটনার কথা মা-বাবাকে সে জানায়নি, কারণ তাঁরা নাকি সর্বদা তার ছোট্ট ভাইটিকেই সমর্থন করেন! উল্টে তাকেই হয়তো দোষী সাব্যস্ত করা হবে। আইনের (পকসো) বিধিবদ্ধতা অবগত হওয়ায় এবং বক্তা পুরুষ হওয়ার কারণে মেয়েটিকে মৌখিক আশ্বাস দেওয়ার পরিবর্তে অন্য কোনও ভাবে সাহায্য করতে পারেননি। নিজ গৃহে কন্যারা যদি নিরন্তর এ ভাবেই ‘শ্রী’-হীন হতে থাকে, তবে সরকারি প্রকল্পের আর্থিক অনুদান তাদের কতটা ‘শ্রী’-বৃদ্ধি করতে পারবে, সে প্রশ্নটা থেকেই যায়।

বছর দেড়েক আগে, এক নিকটাত্মীয় ‘ঘরোয়া পরিবেশ’-এ তাঁর কন্যার আনুষ্ঠানিক বিয়ের মৌখিক নিমন্ত্রণ এবং তদুপলক্ষে কিছু আর্থিক সাহায্য প্রাপ্তির আবেদন নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। পাত্রীর বয়স নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার উত্তরে জেনেছিলাম, “সে সব ভেবে এখন কোনও লাভ নেই”। কারণ, মেয়েটি তখন কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা!

সম্পাদকীয়তে উল্লিখিত, ‘তবে কেলেঙ্কারি এড়াতে কিংবা খরচ কমাতে মেয়ের দ্রুত বিয়ে দেওয়ার ঝোঁকটি বঙ্গদেশের বাবা-মাকে এখনও ছাড়ল না’ কথাটি যথার্থ।

অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

আরও পড়ুন
Advertisement