Crackers

সম্পাদক সমীপেষু: বাজির দৌরাত্ম্য

আদালতের নির্দেশ থাকে রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত বাজি পোড়ানোর। কিন্তু দেখা যায় রাত দশটার পর থেকেই শুরু হয় শব্দের তাণ্ডব।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ০৫:১৩
আতশবাজির শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ।

আতশবাজির শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ।

‘অ-নিয়মের পুজো’ (২৪-১০) সম্পাদকীয়তে আমাদের রাজ্যে দীপাবলিতে আতশবাজির শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ নিয়ে আতশকাচের নীচে বিশ্লেষণ সমাজ সচেতনতার এক বার্তা বটে। আতশবাজি নিষিদ্ধ করতে দিল্লি পারে, মেঘালয় পারে, পরিবেশকে রক্ষা করে হায়দরাবাদ ‘ওয়ার্ল্ড গ্রিন সিটি অ্যাওয়ার্ড’ জিততে পারে, কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারি না। চোখের সামনে যেমন অবৈধ বাজি কারখানা দেখা যায় না, তেমনই রাস্তার উপর ঢেলে বাজি বিক্রি হলেও অজানা কারণে সেটা চোখে পড়ে না প্রশাসনের। অবশ্য দিল্লিতে বাজি নিষিদ্ধ করার মধ্যে কেউ আবার হিন্দু-বিরোধিতার গন্ধ পাচ্ছেন।

তবে, যে ভাবে আদালতের সমস্ত নিষেধাজ্ঞা ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের অনুরোধ উপেক্ষা করে প্রতি বছরই লাগামহীন ভাবে এই অসহ্য অত্যাচারের পুনরাবৃত্তি ঘটে, তাতে পরিবেশের সঙ্গে মানুষেরও ক্ষতি হচ্ছে। আদালতের নির্দেশ থাকে রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত বাজি পোড়ানোর। কিন্তু দেখা যায় রাত দশটার পর থেকেই শুরু হয় শব্দের তাণ্ডব। এর পর ছটপুজোতেও দেখা যায় ভোররাত থেকে শব্দবাজির তাণ্ডব। বিষ প্রয়োগ যদি অপরাধ বলে গণ্য হয়, তবে এই দূষণের দায়কেও সামাজিক অপরাধ বলে গণ্য করা প্রয়োজন। যতই আমরা সবুজ বাজি নিয়ে আলোচনা করি, কোনও আতশবাজিই যে পরিবেশবান্ধব হতে পারে না, এই বোধ সরকার ও নাগরিকদের মনে সঞ্চারিত না হলে, এই সমস্যার সমাধান হবে না। কালীপুজো ও দীপাবলিতে বাজি ব্যবহারের ন্যায্যতা নিয়ে প্রত্যেকের সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।

Advertisement

অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি

সবুজ বাজি

গত বছর কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যে সব রকম বাজি বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করা হলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল সব ধরনের বাজির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো সম্ভব নয়। পরবর্তী কালে কালীপুজো, দীপাবলি এবং ছটপুজোয় বাজি ফাটানোর নিয়ম বেঁধে দেয় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। উৎসবের দিনগুলোতে কত ক্ষণ বাজি ফাটানো যাবে, তা-ও স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছিল পর্ষদ। বলা হয়েছিল, পরিবেশবান্ধব বাজি ফাটাতে হবে। কালীপুজো, দীপাবলিতে মাত্র দু’ঘণ্টা, রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাজি ফাটানো যাবে। ছটপুজোর দিন সকালে দু’ঘণ্টা বাজি পোড়ানো যাবে। সরকারি নির্দেশে যে বাজি বিক্রি বা ব্যবহার করা হবে, তা পরিবেশবান্ধব হতে হবে। কম দূষণকারী কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি করা হয় এই বাজি। কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) এবং ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল এঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এনইইআরআই)-এর যৌথ গবেষণায় এই বাজি তৈরি হয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, শব্দবাজির থেকে এই বাজি ৩০ শতাংশ কম দূষণ করে। এই পরিবেশবান্ধব বাজিতে বেরিয়াম নাইট্রেট নামের কেমিক্যাল থাকতে পারবে না। সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম নাইট্রেট থাকবে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়। রাজ্যে শুধু এই বাজিই পোড়ানো যাবে। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রকের পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ সেফটি অর্গানাইজ়েশন-এর মতো সংস্থাও এই বাজি পোড়ানোয় অনুমতি দিয়েছে।

বিভিন্ন বাজি বিক্রেতার কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বাজারে যে বাজি মোটামুটি পাওয়া যায়, সে সবই সবুজ বাজি হিসেবেও পাওয়া যাচ্ছে। তবে কোনটা সাধারণ বাজি, আর কোনটা সবুজ বাজি তা নিশ্চিত ভাবে চিনতে পারা যায়নি। সংশয় থেকে যাচ্ছে। যে-হেতু সরকারি নির্দেশে সবুজ বাজি ছাড়া অন্য বাজি বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ, তাই অনেক ব্যবসায়ী এ বছর বাজি বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ, ভুল করে অন্য বাজি বিক্রি করতে থাকলে আর সেটা প্রশাসন এসে নিয়ে গেলে অনেক টাকা ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। করোনায় দু’বছর ব্যবসায় ক্ষতির পর নতুন করে ব্যবসায় লোকসান করতে চান না ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের মতো এই সবুজ বাজি না চেনার বিষয়ে একই মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা এবং বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি। তবে এই বাজি শিল্পের সঙ্গে অনেক মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত। রাজ্যের অর্থনীতিতে বাজি শিল্পের বিরাট ভূমিকা আছে। তাই পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব যেমন আছে, তেমনই বাজি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা ও তার প্রসারও সমান ভাবে জরুরি। সুখের কথা, এ রাজ্যেই বেরিয়ামহীন মশলা দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি, যার বিক্রি শুরু হয়েছে হারালের বাজি বাজারে। এখানকার বাজি ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ ভারতের শিবকাশীর বাজি কারখানার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি করছেন ও বাজারে তা বিক্রি করেছেন। চম্পাহাটির অনেকেই ভিনরাজ্যে গিয়ে পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি তৈরির প্রথাগত প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। কিন্তু যে-হেতু তাঁরা এখনও পর্যন্ত ওই বাজি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করার সরকারি অনুমোদন পাননি, তাই শিবকাশীর বাজি কারখানার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এখানে বাজি তৈরি করতে হয়েছে। আশা করা যায়, এনইইআরআই থেকে খুব শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র মিলবে এবং এখানকার ব্যবসায়ীরাও নিজেদের কোম্পানির নামে সবুজ বাজি তৈরি ও বিক্রি করতে পারবেন। বর্তমানের এই সমস্যা পরবর্তী কালে আর থাকবে না। বাজির দাম কমবে। এবং ব্যবসাও বাড়বে।

কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

সচেতনতা চাই

‘বাজি নিয়ে মমতা’ (১৪-১০) শীর্ষক ছোট খবরটি মোটেও ছোট নয়। প্রতি বছর কালীপুজো ও দীপাবলি উপলক্ষে যে ভাবে বাজি-পটকা পোড়ানো ও ফাটানোর আয়োজন করা হয়, তাতে পরিবেশবিদরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তাঁদের দাবি, বাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ হোক। এতে হয়তো এই কুটির শিল্প মার খাবে। কিন্তু বিকল্প হিসেবে যে সবুজ বাজি ইদানীং বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে সাড়া ফেলেছেন, সেই সব সবুজ বাজি এখনও পুরোপুরি বাজারজাত করা যায়নি। ফলে সবুজ বাজির নাম দিয়ে এই বছর দেদার নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হয়েছে। তা ছাড়া সবুজ বাজির মূল্য আকাশছোঁয়া। কিন্তু পরিবেশ বাঁচাতে এই বাজির প্রচলন চালু করা প্রয়োজন। যদিও এর আকাশছোঁয়া মূল্য নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।

প্রসঙ্গত, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতেও এখন বাজি ফাটে! মানুষ সচেতন না হলে কিছুতেই এই মানসিকতা থেকে বেরোনো যাবে না।

বিবেকানন্দ চৌধুরী, মণ্ডলহাট, পূর্ব বর্ধমান

শব্দের তাণ্ডব

সদ্যসমাপ্ত দুর্গোৎসবে আরামবাগ শহর ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে পুজোমণ্ডপ ঘোরার সুবাদে দু’টি বিষয় দৃষ্টিগোচর ও কর্ণগোচর হল। প্রথমটি, শব্দবাজির উৎপাত আর দ্বিতীয়টি, ডিজের তাণ্ডব। সংখ্যায় কম হলেও এবং তাণ্ডবের মাত্রা খুব বেশি না হলেও বেশির ভাগ জায়গাতেই কম-বেশি শব্দবাজির উপস্থিতি টের পেলাম। বিশেষত, অল্পবয়সিদের মধ্যে শব্দবাজি ফাটানোর প্রবণতা বেশি দেখা গেল। শহরের মধ্যে পাড়ার প্রায় প্রতিটি ছোট দোকানে, এমনকি বাজার এলাকার কিছু দোকানেও যথেচ্ছ ভাবে শব্দবাজি বিক্রি করা হয়। একই ভাবে কম সংখ্যক ও শব্দের মাত্রা কম হলেও কিছু মণ্ডপে ডিজের উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়, যদিও ডিজে বাজিয়ে তাণ্ডব নিষিদ্ধ হয়েছে। এবং প্রতিমা বিসর্জনের দিনগুলিতেও প্রশাসনের নাকের ডগায় এই ডিজের অত্যাচার ভালই টের পাওয়া গেল।

কালীপুজোর সময় শব্দবাজি ও ডিজে উভয়ের উপদ্রবই বৃদ্ধি পায় এবং তা প্রায়ই তাণ্ডবের পর্যায়ে চলে যায়। কিন্তু হাঙ্গামার আশঙ্কায় অনেক সময় পীড়িত মানুষ প্রতিবাদ করতে পারেন না। পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আগামী দিনে উক্ত দু’টি উপদ্রব সম্পূর্ণ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা করা হোক।

অরিন্দম ঘোষাল, আরামবাগ, হুগলি

আরও পড়ুন
Advertisement