লন্ডন ডায়েরি: মদনলাল ধিংড়াকে নিয়ে বই, কলমে পৌত্রী

জনপ্রিয় হতে চান বরিস জনসন। তাই পর পর দু’বছর দেশে বড়দিন বাতিল করতে চান না। কিন্তু তাঁর পরিকল্পনায় বাদ সাধতে পারে ঊর্ধমুখী ওমিক্রন সংক্রমণ।

Advertisement
শ্রাবণী বসু
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৪৫

মদনলাল ধিংড়া যে তাঁর বাবার কাকা— তা কোনও দিনই ভোলেননি লন্ডননিবাসী অভিনেত্রী লীনা ধিংড়া। মদনলাল প্রথম ভারতীয় বিপ্লবী যাঁর লন্ডনের পেন্টনভিল জেলে ফাঁসি হয়, ১৯০৯-এর অগস্ট মাসে। তিনি স্যর কার্জ়ন উইলিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিলেন। পঞ্জাবে ধিংড়ারা ছিলেন ইংরেজ-ঘনিষ্ঠ ধনী পরিবার। তাঁদের ছেলে লন্ডনে গিয়ে ব্রিটিশ সেনাধিকারিককে হত্যা করেছে, মানতে পারেননি তাঁরা। ভগৎ সিংহ, উধম সিংহদের প্রেরণা ছিলেন ধিংড়া। অথচ নিজের পরিবারই তাঁকে ত্যাজ্য করেছিল।

এই ইতিহাসই লীনার কাঁধে যেন বোঝা হয়ে বসেছিল। দেশভাগ তাঁদের জীবনটাই বদলে দিয়েছিল। তাঁর বাবা লাহৌরের কলেজে পড়াতেন, দেশভাগের সময়ে প্যারিসে ছিলেন। ফেরার জন্য দেশই রইল না তাঁদের! লীনা তখন পড়তেন ভারতের বোর্ডিংয়ে। পরিবারটি লন্ডন-প্যারিসের মধ্যেই থাকত এর পর। মদনলালের বিষয়ে মুখ খুলত না। সম্প্রতি প্রকাশিত হল লীনার লেখা এক্সহিউমেশন: দ্য লাইফ অ্যান্ড ডেথ অব মদন লাল ধিংড়া। ধিংড়ার ইংল্যান্ডযাত্রা, ইন্ডিয়া হাউসে শ্যামজি কৃষ্ণবর্মা, ভিখাজি কামার সংস্পর্শে আসার ঘটনাবলি ধরা পড়েছে বইতে। রয়েছে লীনার মা-বাবার কাহিনি, ব্রিটিশ নথিপত্রে তাঁর খুড়ঠাকুরদার ইতিহাস অনুসন্ধানের গল্প। ১৯৭৬-এ ধিংড়ার দেহাবশেষ তুলে ভারতে পাঠানো হয়। আর তাঁর মৃত্যুর ১০০ বছরেরও পরে, অবশেষে মুখ খুলল পরিবার। লীনা তাঁর বিপ্লবী পূর্বপুরুষের কাহিনি শোনালেন সকলকে।

Advertisement
স্বীকৃতি: মদনলাল ধিংড়ার পোস্টার হাতে পৌত্রী লীনা ধিংড়া, বইটির প্রচ্ছদ।

স্বীকৃতি: মদনলাল ধিংড়ার পোস্টার হাতে পৌত্রী লীনা ধিংড়া, বইটির প্রচ্ছদ।

মাউন্টব্যাটেনের নথি

লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কাগজপত্র বিষয়ে আদালতের রায়ের অপেক্ষা করছেন ইতিহাসবিদরা। এই নথিপত্র সাদাম্পটন ইউনিভার্সিটিকে বিক্রি করা হলেও, তার কিছু অংশে কাটছাঁট করা হয়েছে। জনগণের টাকায় কেনা নথিপত্রগুলো কেন খোলাখুলি দেখানো হচ্ছে না, এই মর্মে ইউনিভার্সিটি ও মন্ত্রকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছেন অ্যান্ড্রু লোওনে। জানতে চেয়েছেন, দেশভাগের সময় মাউন্টব্যাটেন ভারতের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছিলেন— এই বিষয়ে নথিতে কোনও ইঙ্গিত আছে কি না। লোওনের উকিল জানিয়েছেন, সিরিল র‌্যাডক্লিফের সঙ্গে মাউন্টব্যাটেনের নৈশভোজের পরের দিনের কথা দিনলিপিতে রাখঢাক করা হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতার সপ্তাহখানেক আগের দিনলিপিও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিবরণ থাকতে পারে তাতে। ডায়েরির বাজেয়াপ্ত অংশ নেহরু ও এডউইনার সম্পর্ক নিয়েও বিশদে আলোকপাত করতে পারে। ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, ভারত, পাকিস্তান ও ব্রিটেনের সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে, তাই ডায়েরির কিছু অংশ পরিমার্জনা করা হয়েছে!

মঞ্চে উঠে এল বাঘ

ওমিক্রন-আতঙ্কের মধ্যেই দর্শকেরা থিয়েটারে ফিরছেন। সিনেমা আগেই হয়েছে, এ বার ইয়ান মার্টেলের বুকারপ্রাপ্ত উপন্যাস লাইফ অব পাই-কে নাট্যরূপ দিয়েছেন লন্ডনের বাঙালি অভিনেত্রী-নাট্যকার ললিতা চক্রবর্তী। টিকিট নিঃশেষিত। পুতুলশিল্পীদের উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন দর্শকরা। বাঘ ‘রিচার্ড পার্কার’, ওরাং ওটাং ‘অরেঞ্জ জ্যুস’, জ়েব্রা ও হায়নার প্রমাণাকৃতির পুতুল তৈরি করে মঞ্চে ম্যাজিক করেছেন শিল্পীরা। জলে মাছেদের নাচ, জালে পড়ে তাদের লাফঝাঁপ পর্যন্ত নিখুঁত ফুটিয়েছেন। মঞ্চসজ্জা আর আলোর কেরামতিতে নাট্যমঞ্চেই সমুদ্রের নানা মেজাজ ধরা পড়েছে, তারাভর্তি আকাশের নীচে শান্ত জলরাশি কিংবা তুফানে উত্তাল রূপ। ললিতার নাট্যরূপে মার্টেলের কাহিনির কৌতুক, রোমাঞ্চ, দর্শনও সুন্দর ভাবে উঠে এসেছে। দু’ঘণ্টার নাটকে কখনও শৈথিল্য আসেনি, গল্প এমনই ঠাসবুনোট।

দৃশ্য: লাইফ অব পাই নাটকে পুতুল-বাঘ

দৃশ্য: লাইফ অব পাই নাটকে পুতুল-বাঘ

বড়দিন না ওমিক্রন?

জনপ্রিয় হতে চান বরিস জনসন। তাই পর পর দু’বছর দেশে বড়দিন বাতিল করতে চান না। কিন্তু তাঁর পরিকল্পনায় বাদ সাধতে পারে ঊর্ধমুখী ওমিক্রন সংক্রমণ। অফিসগুলোর বড়দিন জমায়েত কি তবে বাতিল করতে হবে? ইতিমধ্যেই লেবার পার্টি সেই রাস্তাতেই হেঁটেছে। বিজ্ঞানীরা উৎসবের জমায়েত কমানোর পক্ষপাতী। জনসনের অবশ্য তাতে সায় নেই। তবে, আবার মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে রাজি হয়েছেন সদ্য। সামাজিক মেলামেশাতেও রাশ পড়বে কি না, সময়ই বলবে। ইতিহাস কিন্তু বলছে, প্রধানমন্ত্রীকে প্রায়শই শেষ মুহূর্তে সক্রিয় হতে হয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement