Mutual Funds

মিউচুয়াল ফান্ডে করছাড়ের সুযোগ কমল, এতে কি দেশের অর্থনীতি আদৌ লাভবান হবে?

করছাড়ের ব্যাপারে ভারতে কড়াকড়ি বেশি। এতে কি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে?

Advertisement
টি এন নাইনান
টি এন নাইনান
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৬
mutual fund representative image

ব্যাঙ্কে জমা রাখা টাকার উপর নির্ধারিত সুদের হার বহাল রয়েছে এবং এমন আমানতের নিরাপত্তাও যথেষ্ট। ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ডের কোনও তুলনাই হতে পারে না। প্রতীকী ছবি।

ডেট ইনস্ট্রুমেন্ট (যার উপর ভিত্তি করে পুঁজি সংগ্রহ করা হয়) থেকে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি সংগ্রহের উপরে যে করছাড়ের সুবিধাগুলি এতকাল বজায় ছিল, সেগুলিকে হঠাৎই তুলে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অর্থনীতিতে একটি ‘গুগলি’ দিলেন বলা যেতে পারে। সংসদে বিনা বিতর্কে এবং অর্থবিলে শেষ মুহূর্তের পরিবর্তন ঘটিয়ে বিষয়টিকে জুড়ে দেওয়া হল এবং পাশ করানো হল। এর ফলে ভারতের পুঁজি সংগ্রহের ক্ষেত্রে করের হার সে অর্থে নিচু রইল না। বরং তা বিপুল স্থাবরের অধিকারী ধনী ব্যক্তিদের দিকেই পাল্লা ভারী করল। সেক্ষেত্রে একটি পর্যালোচনার অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু সেই পর্যালোচনা সরকারের বিভিন্ন পর্বে ভাগ করে দেখার প্রবণতার অনুসারী হলে চলবে না।

প্রথমেই একটি নৈতিক বিষয় দেখা যাক। বলা হচ্ছে যে, ‘অনর্জিত’ আয়ের উপর (বিনিয়োগ থেকে আয়, সুদ থেকে আয় ইত্যাদি) সুদের হার ‘অর্জিত’ আয়ের থেকে কমানো যাবে না। এই নীতি যে সকলেই মেনে নিচ্ছেন, তা নয়। বরং কোন উপার্জনটি ‘অর্জিত’ আর কোনটি ‘অনর্জিত, তা নিয়ে তর্কাতর্কির অবকাশ থেকে যাচ্ছে। আপনাকে আপনার পুঁজি বিনিয়োগের সময় যথেষ্ট মাথা ঘামাতে হবে।কিন্তু এ-ও তো সত্য যে, আপনার টাকাই আপনার হয়ে খাটছে। যে ভাবেই বিষয়টিকে দেখুন না কেন, এতে কর বা পুঁজি থেকে আসা লভ্যাংশের উপর কোনও রকম অগ্রাধিকারের প্রশ্ন থাকছে না। কিন্তু বাস্তবে এমন যুক্তি সর্বদা অনুসৃত হয় না। বেশির ভাগ দেশই করের হার বা পুঁজি থেকে আসা লাভের অঙ্কের উপর কিছু পরিমাণে অগ্রাধিকারমূলক ছাড় দিয়ে থাকে।

Advertisement

এ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, পুঁজিই সহজে রাষ্ট্রের জাতীয় সীমানা টপকায়।শ্রমিকেরা নন। এবং যে দেশের করনীতি যত কড়া, সেই দেশে তত কম বিদেশি পোর্টফোলিয়ো বিনিয়োগ (সীমানা টপকে ইকুইটি বা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ, প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ নয়) হবে। এমনকি, সে দেশে পুঁজির নির্গমনের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

যাই হোক, আয় ও সম্পদের অধিকারের ক্রমবর্ধমান অসাম্যের এই পৃথিবীতে পুঁজির উপর অগ্রাধিকার-ভিত্তিক কর ব্যবস্থাকে আর আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। তার পরেও যে প্রশ্নটি থেকে যায়, সেটি হল কোনটিকে করের আওতায় আনা হবে? সম্পদ, নাকি সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয়? নাকি দু’টিকেই করযোগ্য বলে ধরতে হবে?

বেশির ভাগ দেশেই সম্পদের উপর কিছু না কিছু কর রয়েছে। সাধারণত সেই সব করব্যবস্থায় কিছু সুবিধাজনক ফাঁকও থাকে। ভারত এমনই এক দেশ, যেখানে এস্টেট ডিউটি এবং ওয়েল্‌থ ট্যাক্স, দু’টিকেই লুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে এবং এ দেশে কোনও গিফ্‌ট ট্যাক্সও নেই। নিশ্চিত ভাবে এখান থেকেই এই মর্মে সমালোচনা শুরু হতে পারে যে, সম্পদের উপর কোনও কর না থাকায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অর্থনৈতিক অসাম্য বহমান থাকবে। এর একমাত্র সুবিধাজনক দিক হল, সবিশেষ রাজস্ব কেউ সংগ্রহ করতে পারবেন না।

যখন লগ্নিকৃত সম্পদের উপর করের প্রসঙ্গ ওঠে, দেখা যায়, করের হার (কখনও ১০ শতাংশ, কখনও ১৫ শতাংশ বা ২০ শতাংশ, আবার কখনও বিশেষ আয়সীমার উপর প্রযোজ্য) এবং হোল্ডিং পিরিয়ডের (সম্পদ-ভেদে তা এক, দুই বা তিন বছরের হতে পারে) মধ্যে কোনও সমতা নেই। মূল্য-সারণিতে উল্লিখিত মানের এক রকম সমন্বয়ের পরেই কিছু সম্পদকে করের আওতায় আনা হয় (মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য)। অন্য দিকে আবার অনেকে ক্ষেত্রে এই সারণির বিষয়টিই উহ্য থেকে যায়। ‘কনজ়িউমার প্রাইস ইনডেক্স’ অনুযায়ী এই সারণির রূপ নির্ণয় কিন্তু সম্পদের মূল্যবৃদ্ধি অনুযায়ী পৃথক পৃথক হয়ে থাকে। স্থাবর সম্পত্তির ব্যবসা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

সারণির অঙ্গীভূত হওয়ার বিষয়টির (যা সরকার সদ্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের উপর থেকে সরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু ইকুইটি থেকে নয়) কিন্তু সহজেই যথার্থতা প্রমাণ করা যায়।যে হেতু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুদ্রাস্ফীতিকে মনে রেখে মজুরির হিসেবনিকেশ হয়ে থাকে। ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে শর্তসাপেক্ষ হয়ে থাকে। অসংগঠিত শ্রমের বাজারে বকলমে সারণিভুক্ত হওয়ার বিষয়টি তেমন নিখুঁত ভাবে না হলেও সারা হয়ে থাকে। সুতরাং, যতক্ষণ না কেউ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুঁজির প্রকৃত মূল্য কমিয়ে যাচ্ছেন, ততক্ষণ পুঁজির সারণিভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে বাধা তৈরির ক্ষেত্রে কোনও প্রকৃত কারণ থাকে না (এমন ক্ষেত্রে বিত্তবানদের ধনক্ষয় ঘটবে)।

ঋণের বাজারের প্রধান সমস্যা এই যে, ব্যাঙ্কে জমা রাখা আমানতের উপর সারণিকরণ ছাড়াই কর বসে। ফলে এক প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর স্বপক্ষে এ কথাই বলা হয়ে থাকে যে, ব্যাঙ্কে জমা রাখা টাকার উপর নির্ধারিত সুদের হার বহাল রয়েছে এবং এমন আমানতের নিরাপত্তাও যথেষ্ট। ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ডের কোনও তুলনাই হতে পারে না। কারণ শেষোক্ত ক্ষেত্রে লগ্নিকৃত অর্থের কোনও পুর্বনির্ধারিত পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে না এবং এর ফলে কেউ জমানো টাকা হারাতেও পারেন। বহু রকমের নির্দিষ্ট সুদে সঞ্চয়ের প্রকল্প (যেমন পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের প্রকল্পগুলি) প্রাথমিক ভাবে কিছু মাত্রায় করে ছাড় পায়, যা বাজার চলতি ক্ষেত্রগুলিতে পাওয়া যায় না। প্রথম সারির বেশ কিছু দেশের অনুসরণে পুঁজি থেকে আয়ের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সীমা পর্যন্ত অগ্রাধিকারের নীতি নেওয়া যেতেই পারে। এর ফলে আবার সাধারণ খুচরো বিনিয়োগকারীর সঙ্গে ধনী লগ্নিকারীর বিভাজনরেখা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

বেশ কিছু প্রশ্ন একযোগে ওঠার আগেই বহু রকমের বিষয় এবং বিকল্প মাথায় রেখে সরকার সম্ভবত প্রথমে একটি সমচরিত্রের ব্যবস্থা (প্রয়োগযোগ্য কর-হার এবং সারণির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সময়সীমার ক্ষেত্রে) আনতে চাইছে। যাই হোক, এ সব বিষয় নিয়ে সংসদে বা সংসদের বাইরে বিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে এর ফলাফলের কথা মাথায় রেখে আলোচনার অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। যদি এটি চালু হয়, সরকারের পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ ইকুইটি কেনার দিকে ঠেলে দেবে অথবা ব্যাঙ্কের আমানতের কাছে উদ্ধারের উপায় খুঁজতে বাধ্য করবে। এ সবেরফলেঋণেরবাজারেনেতিবাচকপ্রভাবপড়বেই। যেবাজারেরবৃদ্ধিকাঙ্ক্ষিতছিল, তাতে স্থবিরতা বা পশ্চাদ্গামিতা দেখা দেবে।

আরও পড়ুন
Advertisement