Global Warming

Global Warming: উষ্ণায়ন না ঠেকালে আর তিন দশকেই ডুবব আমরা, প্রতিহত করার প্রয়াসও থমকে দাঁড়াল কোভিডে

যদি উষ্ণায়নের হার না কমে চেন্নাই, মুম্বই তো বটেই। কলকাতাও জলমগ্ন হবে। ডুববে বরাহনগর,সোনারপুর, হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

Advertisement
সুপর্ণ পাঠক
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ১৮:১৩
ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

কোভিডের ছোবলে শুধু আমাদের আর্থ সামাজিক জীবনই বিষে নীল হয়ে যায়নি। সাম্প্রতিক সমীক্ষা যা বলছে তা সত্যি হলে এর গভীর প্রভাব দেখা যাবে পরিবেশেও। বাড়বে উষ্ণায়ন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও। কারণ, কোভিড মোকাবিলায় সব দেশকে যা খরচ করতে হয়েছে, তারপরে উষ্ণায়ন ঠেকানোর টাকা কোষাগার থেকে বার করা কঠিন হয়ে উঠবে। বিশ্ব শক্তি সংস্থার (ইন্টারনাশন্যাল এনার্জি এজেন্সি) দাবি ২০২৩ সালের মধ্যেই বাতাসে কার্বনের পরিমাণ রেকর্ড মাত্রা ছোঁবে। ২০৫০-এর মধ্যে সভ্যতার বাতাসে বিষের মাত্রা কমিয়ে প্রকৃতির শোধন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন অলীকই থাকবে আরও বহু বছর!

কিন্তু আমরা ইতিমধ্যেই চাপে! আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনস্ট্রেশন বা নাসা সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানিয়েছে ভারতের উপকূল অঞ্চলে সমুদ্রের জলস্তর ০.১ থেকে ০.৩ মিটার উঁচু হবে উষ্ণায়নের কারণে। এর ফলে ভাসবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। প্লাবন থেকে যে দশটি শহর রেহাই পাবে না, তাদের মধ্যে রয়েছে চেন্নাই এবং মুম্বই। এবং, হ্যাঁ, কলকাতাও। সমীক্ষা বলছে, কলকাতার বরাহনগর, রাজপুর, সোনারপুর এবং হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নাকি জলমগ্ন হয়ে যাবে, যদি না উষ্ণায়নের হার কমিয়ে শূন্যে আনার রাস্তায় বিশ্বের প্রতিটি দেশ একযোগে পদক্ষেপ করে। আমরা যদি উষ্ণায়ন ঠেকাতে না পারি, তাহলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যেই আমরা ডুবব।

কিন্তু তবুও আমরা নির্বিকার। জার্মানি আর তুরস্কের বন্যা নিয়ে নেটমাধ্যমে যতটা “হায়, হায়” করেছে সবাই বা বিভিন্ন দেশে বনাঞ্চলের দাবানল যে ভাবে আমাদের ক্ষতি করে চলেছে তা নিয়ে কিন্তু সমালোচনা যতটা হয়েছে তার একাংশও কিন্তু পরিবেশ রক্ষা নীতিতে প্রতিফলিত হয়নি। যদি হত তা হলে উষ্ণায়নের গতি রুখতে আমরা সব কিছু ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়তাম।

Advertisement

গত বছর কোভিডের কারণে হয়নি। তাই আগামী নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ বদল রোখার অঙ্গীকার পত্রে ১৯৯৪ সালে যে সব দেশ সই করেছিল তাদের নিয়ে আলোচনা সভা হবে ব্রিটেনে। ‘কপ২৬’ — কনফারেন্স অব পার্টিজ অর্থাৎ সেই অঙ্গীকারে সই করা সদস্য দেশগুলির ২৬তম আলোচনা সভা যার উদ্দেশ্যই হচ্ছে পরিবেশ রক্ষা। আর এ বার সেই সভা হচ্ছে এমন একটি দেশে যার সরকার নতুন কয়লা খনি আর তৈলকূপ খননের রাস্তায় হাঁটছে!

১৯৯৪ থেকে ২৬টি অধিবেশন হয়ে গেলেও কিন্তু আমরা উষ্ণায়নের গতি রুখতে পারিনি। আর এর জন্য দায়ী ভবিষ্যতের কথা না ভেবে নির্বিচারে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করা, বন কেটে সাফ করে বসতি তৈরি করা বা জলাজমি ভরাট করে প্রকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করা।

সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেলের ষষ্ঠ সমীক্ষা বলছে আমাদের জন্য পৃথিবীকে বাঁচানোর সময় কমে আসছে। বাতাসে মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব এই মুহূর্তে যা, তা বিগত ৮০ হাজার বছরে কখন তা দেখা যায়নি। ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর বাতাসে যে পরিমাণ কার্বন আমরা ইতিমধ্যে ছেড়েছি তাকে পরিবেশ যাতে সম্পূর্ণ শোধন করতে পারে সেই লক্ষ্য আমাদের অধরাই থেকে যাবে। অ্যামাজনের অরণ্য কেটে ফেলায়, ইতিহাসে এই প্রথম অ্যামাজন অরণ্যের আগুন থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডকে ওই বিশাল অরণ্য নিজেই আর পরিশোধন করতে পারছে না।

সমীক্ষাটি বলছে, উষ্ণায়নের জন্য কার্বন ডাই অক্সাইডের থেকে ৩০ গুণ বেশি দায়ী মিথেন। বাতাসে এই মিথেনের পরিমাণ কিন্তু ইতিমধ্যেই বিপদসীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। আর এর জন্য দায়ী কয়লা বা পেট্রোলিয়ামের মতো খনিজ জ্বালানি, নির্বিচারে বন কেটে চাষের জমির বৃদ্ধি এবং ক্রমাগত বর্জ্য দিয়ে জলাজমি ভরাট করা। কিন্তু আমরা তো নতুন কয়লা খনি খুঁড়েই চলেছি। আমেরিকায় ট্রাম্প উষ্ণায়নকে পাত্তা দেননি। ব্রিটেনের বরিস জনসনও খুব একটা চিন্তিত নন উষ্ণায়ন নিয়ে। হলে নতুন কয়লা খনি বা তৈলকূপ খননের রাস্তায় এই ভাবে হাঁটতেন কি?

আমরা যদি ২০৩০ সালের মধ্যে বাতাসে মিথেন নির্গমনের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ কমাতে পারি তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে উষ্ণায়ন অন্তত ০.৩ শতাংশ কমবে। সাত লক্ষ ৭৫ হাজার মানুষকে হাঁপানির কারণে হাসপাতাল ভর্তি হতে হবে না, দু’লক্ষ ৫৫ হাজার মানুষকে অসময়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে না, গরমের কারণে সাত হাজার ৩০০ কোটি শ্রমঘণ্টা নষ্ট হবে না, দু’কোটি ৬০ লক্ষ টন খাদ্য শস্যও নষ্ট হবে না প্রতি বছর। বলছে এই সমীক্ষা। কিন্তু বিশ্ব শক্তি সংস্থার হিসাব যা বলছে তাতে এই ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে, কমবে না। কারণ, সেই কোভিডের কারণে বেড়ে যাওয়া সরকারি খরচ।

ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সি বা বিশ্ব নবীকরণযোগ্য শক্তি সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল ফ্রানসিস্কো লা ক্যামেরার দাবি, পরিবেশবান্ধব শক্তি তৈরির ব্যবস্থা করতে প্রয়োজন ১৩১ কোটি মার্কিন ডলার। তবে তাঁর হিসাবে এই খাতে প্রতি ডলার বিনিয়োগে নানান খাতে যা লাভ হবে তার থেকে উল্টে সঞ্চয় হবে ২ থেকে ৫.৫ ডলার।

তাঁর দাবি, সব দেশ যদি এক সঙ্গে নীতি তৈরি করে পরিবেশ বাঁচানোর রাস্তায় হাঁটে তা হলে ২০৫০ সালের মধ্যেই বিশ্বের জাতীয় উৎপাদন বাড়বে ২.৫ গুণ। কিন্তু ব্রিটেনে অনুষ্ঠিতব্য কপ২৬-এ সেই একযোগে হাঁটার কোনও লক্ষণ কিন্তু এখনও দেখা যাচ্ছে না। ১৯৯৪ থেকে আলোচনা চললেও উন্নত দুনিয়া তাঁদের প্রথাগত শক্তির ব্যবহার কমানোর রাস্তায় যে হাঁটতে রাজি নয় তা তো ট্রাম্পের দেখানো পথে বরিস জনসনের হাঁটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

তা হলে কি আমাদের প্রাপ্তি সেই ঘরের ভিতর সাঁতরে আসা মাছ আর সাপ! প্রকৃতি নির্দয় হলে তা কত ভয়ানক তা প্রত্যক্ষ করেও আমরা কি এতটাই নির্বিকার থাকব? মাথায় রাখতে হবে ভারতে আমরাও কিন্তু নির্বিচারে গাছ কেটে চলেছি। আমাদের গাছের সংখ্যা বাড়ছে তাও যেমন ঠিক, তেমনই আমাদের বনাঞ্চলের নির্ধারিত লক্ষ্য থেকেও কিন্তু বহু পিছনে রয়েছি আমরা। আমাদের দেশের আয়তনের ২৪.৫ শতাংশে গাছ ও বনাঞ্চল রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে একে ৩৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পূরণ করা খুব সহজ নয়। তাই প্রাপ্তি নয়। ভাবার সময় এসেছে কী ভাবে হাঁটতে পারি বাঁচার রাস্তায়।

Advertisement
আরও পড়ুন