চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১

ভাবনায় ও আঙ্গিকে উঠে আসে ধারাবাহিকতা

সিমা-য় চলছে গ্রীষ্মকালীন প্রদর্শনী ‘সামার শো’। দেখে এলেন মৃণাল ঘোষপ্রতি বছর সিমা-র গ্রীষ্মের প্রদর্শনী আমাদের দেশের ১৯৪০-এর দশক পরবর্তী দৃশ্যকলার আধুনিকতার বিবর্তনের রূপরেখাটিকে প্রকৃষ্টভাবে তুলে ধরে। এখন (২৩ জুলাই পর্যন্ত) চলছে এ বছরের গ্রীষ্মের প্রদর্শনী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০১:৪৭

প্রতি বছর সিমা-র গ্রীষ্মের প্রদর্শনী আমাদের দেশের ১৯৪০-এর দশক পরবর্তী দৃশ্যকলার আধুনিকতার বিবর্তনের রূপরেখাটিকে প্রকৃষ্টভাবে তুলে ধরে। এখন (২৩ জুলাই পর্যন্ত) চলছে এ বছরের গ্রীষ্মের প্রদর্শনী।

৩০-জনেরও বেশি শিল্পীর প্রায় ৫০-টি ছবি ও ভাস্কর্য প্রদর্শিত হচ্ছে। ছবির ক্ষেত্রে গোপাল ঘোষ থেকে আজকের তরুণ প্রজন্মের শিল্পী পর্যন্ত ভাবনা, বিষয় ও আঙ্গিকের বিবর্তনের ধারাবাহিকতা সমগ্র উপস্থাপনাকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।

Advertisement

১৯৪০-এর দশক থেকেই আমাদের চিত্রকলায় প্রতিবাদী চেতনা গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এটা ছিল তখনকার সমাজ বাস্তবতার অনিবার্য পরিণতি।

এই প্রদর্শনীতে গোপাল ঘোষের ছবিটি সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জলরঙে আঁকা ১৯৪৬-সালের সন্ত্রাসকে শিল্পী আপাত-সরল একটি প্রতীকের মধ্য দিয়ে রূপায়িত করেছেন। জনহীন পথের উপর একটি মৃত গো-জাতীয় পশু পড়ে আছে। এই হল ছবিটির বিষয়।

শিল্পীর নিজস্ব আঙ্গিক-পদ্ধতির এ রকম একটি প্রতিমাকল্পের উপস্থাপনা যেখানে আধুনিকতাবাদী চেতনার একটি বিশেষ অভিমুখের উপর আলোর রেখা ফেলেছে।

প্রায় একই প্রজন্মের আর একজন শিল্পী হরেন দাস। ১৯৫৪-তে করা তাঁর এচিং-এর ছাপচিত্রটির শিরোনাম ‘স্টপ অ্যাট নাইট’।

প্রায় জনশূন্য ভেঙে পড়া কয়েকটি চালাঘরের রূপারোপ এই ছবিটিতে। এই শিল্পীর নিজস্ব রূপরীতির প্রেক্ষাপটে এই ছবিটিকে বিষয়-ভাবনার দিক থেকে একটু ব্যতিক্রমী বলা যেতে পারে। এই প্রতীকী শূন্যতা যেন চল্লিশের বিপন্নতারই বিস্তার। যা এই প্রদর্শনীতে দেখতেপাই।

প্রতিবাদী-চেতনার পাশাপাশি চল্লিশের চিত্রচেতনার আর একটি বৈশিষ্ট্য লৌকিকের আত্তীকরণ। লৌকিককে পাশ্চাত্য আধুনিকতাবাদী আঙ্গিকের সঙ্গে সমন্বিত করে নিজস্ব আঙ্গিক গড়ে তুলেছেন ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত অনেক শিল্পী।

গুজরাতের হাকুশা তাঁদের অন্যতম। এই প্রদর্শনীতে রয়েছে তাঁর ২০০৩-০৪-এর আঁকা ‘অ্যাট দ্য ফরেস্ট’ শিরোনামে তেলরঙের ক্যানভাসটি।

এই সুললিত সৌন্দর্যের সাধনা পরবর্তী কালে অনেকটাই ম্লান হয়ে এসেছে বলা যায়।

ষাটের দশকের অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন টি. বৈকুন্ঠম, লালুপ্রসাদ সাউ, প্রকাশ কর্মকার, সনৎ কর পরমজিৎ সিংহ, যোগেন চৌধুরী ও শক্তি বর্মন প্রমুখ।

দেশীয় সংবিতের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুরণন এঁদের অনেকের ছবিতেই আছে। ১৯৭০-এর দশক থেকে অবয়বী ছবির পাশাপাশি নিরবয়ব-ও প্রাধান্য পেতে থাকে।

বিমূর্ততার বিভিন্ন ধরন এই প্রদর্শনীতে আমরা দেখতে পাই অখিলেশ, অমিতাভ দাস, মনু পারেখ, মোনা রাই প্রমুখ শিল্পীর ছবিতে। নিরবয়বের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদী চেতনার উদ্ভাসের দিক থেকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সমীর আইচ, কিংশুক সরকার ও প্রশান্ত শাহু-র ছবি।

এ বারের প্রদর্শনীতে কিংশুকের ২০০৭-এর আঁকা ছবিটির শিরোনাম ‘ব্লাস্ট অব অ্যান আইবল’। প্রথমেইবলতে হয়, প্রশস্ত রেখার চলমানতায় তাঁর সহজ রূপায়ণ হয়ে উঠেছে বিপন্ন এক বিস্ফোরণের প্রতীক। সংবাদপত্রের শব্দমালা ও সুতোর বুননের সমাহারে প্রশান্ত উন্মোচিত করেছেন সাম্প্রতিকের নানা সামাজিক অবক্ষয়।

প্রণীত সোই-এর ‘মিরিয়ানা’ ছবিটিও আঙ্গিকের অভিনবত্বের জন্য উল্লেখযোগ্য। আদিমতা-সম্পৃক্ত অভিব্যক্তিবাদী তীব্রতায় গভীর অভিঘাত সৃষ্টি করেছেন জয়া গঙ্গোপাধ্যায়। শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়, পরেশ মাইতি, সুমিত্র বসাক, জয়শ্রী বর্মনের ছবিও এই প্রদর্শনীকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করেছে।

ভাস্কর্যে নিরঞ্জন প্রধানের ‘শিক্ষা সমহার’ শীর্ষক বিদ্যাসাগরের মুখাবয়বটি সুদক্ষ রচনা। জনক ঝংকার নারজারি পাথর ও ব্রোঞ্জে গড়েছেন দার্শনিক ভাবনা সমৃদ্ধ ‘টেম্পল অব ফায়ার’।

বিমল কুণ্ডুর কাঠ ও ব্রোঞ্জের রচনাটির শিরোনাম ‘টায়ার্ড’। ছবির মতো দুটি ব্যতিক্রমী আঙ্গিকের ভাস্কর্যেও বিশেষ অভিঘাত সৃষ্টি করেছেন সমীর আইচ।

আরও পড়ুন
Advertisement