পুস্তক পরিচয় ২

‘এমন উচ্চারণ বেওকুফের প্রলাপমাত্র’

বাংলা থিয়েটারে কীর্তিময়ী অভিনেত্রীর তালিকায় মায়া ঘোষের নাম একেবারেই প্রথম সারিতে। নাট্যকারের সন্ধানে ছটি চরিত্র, মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, ললিতা, ছায়ায় আলোয়, রাজরক্ত, পাঁচু ও মাসি, চাকভাঙা মধু, বেড়া, বেলা অবেলার গল্প... সেই ষাটের দশক থেকে তাঁর অভিনয় গেঁথে গিয়েছে বাঙালির মনে। প্রথম মঞ্চাভিনয় অবশ্য স্কুলের নাটকে, ক্লাস সেভেেন পড়ার সময়, তেরো বছর বয়সে (১৯৫৬)। তাঁর সার্থক অভিনয়ের আড়ালে জীবনের ওঠাপড়ার অভিজ্ঞতা, তন্নিষ্ঠ প্রস্তুতি ও চর্চার বৃত্তান্ত নিয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লিখেছেন রুশতী সেন— মায়া ঘোষ: মঞ্চই জীবন (থীমা, ১৩০.০০)।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১

বাংলা থিয়েটারে কীর্তিময়ী অভিনেত্রীর তালিকায় মায়া ঘোষের নাম একেবারেই প্রথম সারিতে। নাট্যকারের সন্ধানে ছটি চরিত্র, মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, ললিতা, ছায়ায় আলোয়, রাজরক্ত, পাঁচু ও মাসি, চাকভাঙা মধু, বেড়া, বেলা অবেলার গল্প... সেই ষাটের দশক থেকে তাঁর অভিনয় গেঁথে গিয়েছে বাঙালির মনে। প্রথম মঞ্চাভিনয় অবশ্য স্কুলের নাটকে, ক্লাস সেভেেন পড়ার সময়, তেরো বছর বয়সে (১৯৫৬)। তাঁর সার্থক অভিনয়ের আড়ালে জীবনের ওঠাপড়ার অভিজ্ঞতা, তন্নিষ্ঠ প্রস্তুতি ও চর্চার বৃত্তান্ত নিয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লিখেছেন রুশতী সেন— মায়া ঘোষ: মঞ্চই জীবন (থীমা, ১৩০.০০)।

‘প্রকাশকের নিবেদন’-এ শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন: ‘স্বাতন্ত্র্যচিহ্নের ধারক হয়ে উঠতে থাকেন এক একজন অভিনেত্রী... তাঁদের কাজের চ্যালেন্‌জ্ ও পরিধি বাড়তে লাগল। থিয়েটারের ইতিহাসপাঠে এই দৃষ্টি প্রয়োগে গবেষকদের প্ররোচিত করতে আমাদের অভিনেত্রীর আখ্যানমালা হয়তো সমর্থ হবে।’ রুশতী তাঁর গ্রন্থশেষের উপলব্ধি জানান: ‘যে-বিশ্বাসে ভর দিয়ে মায়া ঘোষ উচ্চারণ করেন— থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত থেকে শিল্পী হিসেবে নিজের ভূমিকাকে যেমন উপলব্ধি করেছি, তেমনটি সম্ভব হত না কোনো বড়ো বাণিজ্যিক মাধ্যমে যুক্ত থাকলে। আজ একুশ শতকের এই শ্বাসরুদ্ধকর ইঁদুর দৌড়ের দুনিয়া, প্রবল পণ্যরতি, বিপুল ভোগ আর আরো বেশি ভোগ করতে না-পারার জন্য বিপুলতর অসন্তোষের দুনিয়া কি বইতে পারে এমন বিশ্বাসের ভার? এ-জগতের শর্ত অনুযায়ী— এমন বিশ্বাস, এমন উচ্চারণ বেওকুফের প্রলাপমাত্র।’ মায়া ঘোষ অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটকের (১৯৫৬-২০১২) স্থিরচিত্রের সঙ্গে দীর্ঘ তালিকা। প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মানেরও তালিকা।

Advertisement

বাংলা যাত্রার দু’শোর অধিক পালা থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো গান সংকলিত হল বাংলা যাত্রাপালার গান-এ (সংকলন ও সম্পাদনা: প্রভাতকুমার দাস। সাহিত্য অকাদেমি, ১৭০.০০) বাংলা যাত্রার পালাগানের প্রতি অনুরক্তজনের কাছে এ-সংকলন অনুসন্ধানব্রতে সহায়ক হয়ে উঠবে। যদিও এখন যাত্রায় সঙ্গীতের ব্যবহার কমিয়ে সংলাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ‘শোনা’র বদলে ‘দেখা’র বৈশিষ্ট্য প্রাধান্য পেতে শুরু করেছে, তবুও ‘এখনো পর্যন্ত কোনো পুরোনো দিনের প্রসঙ্গ উঠলেই, বাংলা যাত্রার সংগীতগুণের কথা অবধারিতভাবে উল্লিখিত হয়ে থাকে। নানা ধরনের পরিবর্তন সত্ত্বেও, সংগীতই যাত্রার প্রাণ অর্থাৎ কেন্দ্রীয় আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে।’ জানিয়েছেন প্রভাতকুমার। তিনি উদ্ধৃত করেছেন সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য: ‘যাত্রার সমস্ত রাত্রি গাহিতে হইবে, অতএব অনেক গীত আবশ্যক। সঙ্গত হউক, আর অসঙ্গত হউক, ভাবপূর্ণ হউক আর না হউক, গীত গাঁথিতে হইবে গাহিতেও হইবে।’ পালাকার-গীতিকারদের তালিকার সঙ্গে আছে গীতিকারদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ও।

পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ‘চিত্র পরিচালনা’ বিভাগে ছাত্রছাত্রীদের যে ‘লেকচার নোট’ দিতেন ধীরেশ ঘোষ, সেগুলিই পরে পরিমার্জিত প্রবন্ধ রূপে গ্রন্থিত হয় ১৯৭৮-এ: চলচ্চিত্র নির্মাণ ও পরিচালনা। এ বার বেরল বইটির সিনে ক্লাব অব ক্যালকাটা-র সংস্করণ (৩০০.০০), এতে পরিশিষ্টে যুক্ত হয়েছে ভিডিয়ো ফিল্ম নিয়ে হিরণ মিত্র ও ল্যাডলি মুখোপাধ্যায়ের আলোচনা।

ধীরেশবাবু তাঁর রচনায় মূলত সিনেমার সাউন্ড ও ইমেেজর ব্যবহার আলোচনা করেছেন, উঠে এসেছে ক্যামেরার কারিকুরি, শব্দের ব্যবহার ইত্যাদি। আলোচনা আছে ছবির সেট ও সাজসজ্জা নিয়ে, শুটিং ও তার সমস্যা নিয়ে, এমনকী পরিচালক-অভিনেতার সম্পর্ক নিয়েও। তা বলে এটি কেবল ছবির ‘টেকনিক্যাল’ বই নয়। আসলে ‘টেকনিক’ কী ভাবে ফিল্মের ‘ফর্ম’ বা আঙ্গিক তৈরি করে দেয়, তারই উজ্জ্বল বিস্তার লেখাগুলি। আঙ্গিকের এই সব ভাঙচুর, নতুন ভাষা সৃষ্টি নিয়ে আলাদা অধ্যায়ও রয়েছে। মৃণাল সেনের ছবির প্রয়োগ-পদ্ধতিতে ‘সিনেমা ভেরিতে’ স্টাইল কী ভাবে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে তা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে ধীরেশবাবুর দূরদর্শী মন্তব্য: ‘সিনেমা ভেরিতে স্টাইল এবং হ্যান্ড হেল্ড ক্যামেরা মুভমেন্ট গত দু-তিন দশক থেকে পাশ্চাত্য দেশে বিশেষভাবে অনুসৃত হচ্ছে। হলিউডের স্টুডিও সিস্টেমে এই প্রয়োগ রীতি অনেকেই কল্পনা করতে পারেনি।... এইজন্য বলা যেতে পারে সিনেমা টেকনিকের শেষ কথা এখনো আবিষ্কার হয়নি।’ সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণালের ছবি ছাড়াও আলোচনা ওজু, ব্রেসঁ, কুরোসাওয়া-র ছবি নিয়ে। রয়েছে তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির কথাও।

সিনে ক্লাব অব ক্যালকাটা থেকেই ১৯৯২-এ প্রথম সংস্করণের পর সম্প্রতি দ্বিতীয় সংস্করণ বেরল চলচ্চিত্রে বিতর্ক-র (৩০০.০০)। প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় সম্পাদক শক্তি বসু ও শুভেন্দু দাশগুপ্ত জানিয়েছিলেন ‘এই সমস্ত তর্ক-বিতর্ক-এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সত্যজিৎ, মৃণাল এবং ঋত্বিক। তাঁরা নিজেরাও অনেক সময়ই এই সমস্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। বুঝিয়েছেন ছবি কিভাবে দেখতে হয়, কিভাবে বিচার করতে হয়।’ আর সাম্প্রতিক ভূমিকায় লিখেছেন ‘ভাবলে বিস্ময় জাগে এখন, যে অত ব্যস্ততার মধ্যেও একসময় বিভিন্ন লোকজন তাঁদের মতামত জানাতে কোন কুণ্ঠা করেননি বিভিন্ন জায়গায়। তাঁদের অধিকাংশই আজ নেই। বইটা থাক... ।’

আরও পড়ুন
Advertisement