আলোচনা

বৈচিত্রময় শিল্পকর্মের নিদর্শন

মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারির সংগ্রহশালা থেকে প্রভূত প্রিন্ট বা মুদ্রিত ছবি দেখার সুযোগ পাওয়া গেল রামকৃষ্ণ মিশন গোলপার্কের ছবির গ্যালারিতে। বুদ্ধের জীবনের চার বিশেষ অধ্যায়ের, যেমন জন্ম, নির্বাণ লাভ, প্রথম ধর্মোপদেশ এবং দেহত্যাগকে উপজীব্য করে নানা ঐতিহাসিক গল্প, লোকগাথা, কিংবদন্তি বা জনশ্রুতি গ্রথিত আছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ০০:২৬
মহানির্বাণ: রামকৃষ্ণ মিশন (গোলপার্ক) আয়োজিত প্রদর্শনীর একটি ছবি

মহানির্বাণ: রামকৃষ্ণ মিশন (গোলপার্ক) আয়োজিত প্রদর্শনীর একটি ছবি

মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারির সংগ্রহশালা থেকে প্রভূত প্রিন্ট বা মুদ্রিত ছবি দেখার সুযোগ পাওয়া গেল রামকৃষ্ণ মিশন গোলপার্কের ছবির গ্যালারিতে। বুদ্ধের জীবনের চার বিশেষ অধ্যায়ের, যেমন জন্ম, নির্বাণ লাভ, প্রথম ধর্মোপদেশ এবং দেহত্যাগকে উপজীব্য করে নানা ঐতিহাসিক গল্প, লোকগাথা, কিংবদন্তি বা জনশ্রুতি গ্রথিত আছে। তাঁর এই বিশিষ্ট জীবনের অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানগুলিকে ঘিরে পরবর্তী কালে শিল্পকলার বিকাশ ঘটেছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। এই সব জায়গার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের কুশীনগর ধর্মীয় স্থান-মাহাত্ম্যে অত্যন্ত বিশিষ্ট। ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের সূচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। এই কুশীনগরে একটি স্তূপ আছে যার সন্নিহিত অঞ্চলে পরবর্তী কালে বহু প্রাচীন মুদ্রা, মূর্তি, মাটির সিল ইত্যাদি খনন করে উদ্ধার করা হয়েছে। একটি অতিকায় নীলাভ বুদ্ধমূর্তি শোভিত আছে সেখানে। জানা যায়, সিলগুলি ব্যবহৃত হত দূরস্থানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য।

উত্তরপ্রদেশের কৌশাম্বী বৌদ্ধ ধর্মের আর একটি বিশিষ্ট ধর্মস্থান। বুদ্ধের পরম শিষ্য বণিক শেঠি তাঁর জন্য নির্মাণ করেন একটি সুন্দর বুদ্ধমন্দির। কথিত আছে বুদ্ধদেব প্রায়ই এই স্থানটি বিশ্রাম নিতে এবং ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করতেন। নির্বাণ লাভের পর ছয় থেকে নয় বছরের মধ্যে বুদ্ধদেব এই জায়গাটিতে প্রথম পা রাখেন বলে শোনা যায়। এখানে খননপ্রাপ্ত প্রাচীন মুদ্রা, মূর্তি, সিল প্রভৃতি পুরাবস্তু সে-যুগের স্বাক্ষর বহন করছে।

Advertisement

সারনাথ বৌদ্ধ ধর্মের আরও একটি বিশেষ ধর্মস্থান যেটি বহু প্রাচীন স্তূপ, মন্দির এবং প্রার্থনাগার ইত্যাদির ধারক হিসাবে ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। কথিত আছে, বুদ্ধদেব বোধগয়াতে নির্বাণ লাভের পর তাঁর পাঁচ ভক্তকে প্রথম ধর্মোপদেশ দিয়েছিলেন এই সারনাথে। পাল রাজাদের সময়ে সারনাথে বহুবিধ উন্নতি লক্ষিত হয় এবং গুপ্তযুগের শিল্পীরা নানা ধাতুনির্মিত তাঁদের বৈচিত্রময় শিল্পকর্মের নিদর্শন রেখে গেছেন। গুপ্তযুগের ভাস্কর্যের বিশেষত্বের মধ্যে চমক লাগে তাঁদের বিভিন্ন আসনরত মূর্তি বা মুদ্রাযোগের বিশিষ্টতা, যেমন উত্তরাবোধি, বরদা, ব্রজ, ধ্যান, অঞ্জলি, অভয়, ধর্মচক্র, বিতর্ক ইত্যাদির শৈল্পিক নৈপুণ্য দেখে। সারনাথের শিল্প ভাস্কর্যের যে মনোরম ভঙ্গিমা, দণ্ডায়মান মূর্তির যে অনিন্দ্যসুন্দর পেলব আবেদন লক্ষণীয়, তা সম্ভবত সে যুগের আর কোথাও দর্শনীয় নয়।

খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক তিন হাজার বৎসর সময়কাল ধরেই ভারতীয় শিল্পচর্চায় টেরাকোটার কাজ লক্ষণীয়। বালুচিস্থানে প্রথম টেরাকোটার নারীমূর্তি দেখা যায়, তা যদিও এই পর্যায়ের কাজগুলি তেমন সূক্ষ্মতার দাবি রাখে না। এই শিল্পকর্মগুলি কৌশাম্বী (উত্তরপ্রদেশ), চন্দ্রকেতুগড় (পশ্চিমবঙ্গ) এবং গান্ধার প্রদেশে পরিলক্ষিত হয়। আলোচ্য প্রদর্শনীতে পুরুষ ও নারীমূর্তির বিভিন্ন ভঙ্গিমা এবং তাদের পরিহিত নানা প্রদেশের স্বকীয় বৈচিত্রে গড়া অলঙ্কারাদি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক।এ ছাড়া এই প্রদর্শনীতে কাশ্মীরি হিন্দুদের শিল্প ভাস্কর্যের প্রভূত নিদর্শন স্থান পেয়েছে। পেশওয়ার জেলায় একটি ‘গান্ধার বুদ্ধ’ এবং বোধিসত্ত্বের সম্প্রদায়ভুক্ত ভাস্কর্য চিত্র প্রকৃতই অসাধারণ। এই প্রদর্শনীতে অপূর্ব সব বুদ্ধমূর্তি, নারী, পুরুষ, পশুপক্ষী ও প্রেতাত্মার মূর্তি, স্তূপের চিত্র ইত্যাদি পরিদর্শন করা প্রকৃতপক্ষেই বিরল অভিজ্ঞতা।

শমিতা বসু

অল্প বয়সে রবি

রবীন্দ্রনাথের অল্প বয়সে রচিত একগুচ্ছ প্রেমের গান নিয়ে রাহুল মিত্র ‘কুসুমভার’ শীর্ষক একক অনুষ্ঠান করলেন অ্যাকাডেমি প্রেক্ষাগৃহে। তিনি ঘন ঘন একক অনুষ্ঠান করলেও প্রতিটি অনুষ্ঠানের পিছনে থাকে একটি নির্দিষ্ট ভাবনা। গান নির্বাচনেও থাকে বেশ নতুনত্ব। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুটি পর্বে মোট চুয়াল্লিশটি গান ছিল শিল্পীর চয়নে। সব গানই যে সমান ভাবে তিনি শুনিয়েছেন এ কথা বলা না গেলেও প্রথম পর্বের ‘তুমি কোন কাননের ফুল’ থেকে দ্বিতীয় পর্বের ও এ দিনের শেষ গান ‘এরা পরকে আপন করে’ পর্যন্ত প্রত্যেকটি গানের বিশিষ্টতাকে স্বকীয় পরিচয়ে প্রকাশ করেছেন। ‘হিঁয়া কাঁপিছে’, ‘বঁধুয়া অসময়ে কেন’, ‘চরাচর সকলি মিছে’ গানগুলি এখন তো আর বেশি শোনাই যায় না। ‘কেহ কারো মন বুঝে না’, ‘কিছুই তো হল না’, ‘কখন যে বসন্ত গেল’ গান তিনটিতে ভাবের প্রকাশ অধিক সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়।

বারীন মজুমদার

একুশটি রবির গানে

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ সমবেত সঙ্গীতের পর শান্তিনিকেতনের ধারায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন বাসবী বাগচী। প্রথম পর্বে তিনি যে গানগুলি শোনালেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ‘প্রতিদিন আমি হে জীবনস্বামী’, ‘অসীম ধন তো আছে’, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ প্রভৃতি। তিনি রবীন্দ্রগানের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় একুশটি গান নির্বাচনে রেখেছিলেন। দ্বিতীয় পর্বে অবশ্যই ভাল লাগে ‘নাই বা এলে যদি সময় নাই’, ‘আমার মনের কোণের বাইরে’ গান দুটি।

অনুষ্ঠানে যন্ত্রানুষঙ্গের সহ-শিল্পীরা অবশ্যই প্রশংসা পাবেন। তবে মাইক্রোফোনের ত্রুটি বেশ বিরক্তিকর ছিল।

মন ছুঁয়ে যায় নৃত্যের তালে

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত একাডেমির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল উদয়শঙ্কর নৃত্যোৎসব। সপ্তাহব্যাপী এই নৃত্যোৎসবে কাবেরী পুততুন্ডি পরিবেশন করলেন একক গৌড়ীয় নৃত্য। কাবেরীর প্রথম উপস্থাপনাটি ছিল ভীমপলশ্রী রাগ ও মিশ্রতালে নিবদ্ধ সরস্বতী বন্দনা। মহুয়া মুখোপাধ্যায় ও বনানী চক্রবর্তীর নৃত্যবিন্যাস এবং কাবেরীর নিপুণ নৃত্যশৈলীর মাধ্যমে দেবী সরস্বতীর রূপটি সুচারুরূপে বর্ণিত হয়। দ্বিতীয় নৃত্যপদটি ছিল দেশরাগ ও চৌতালে নিবদ্ধ, মঙ্গলকাব্য গৃহীত, শাক্তধর্মে আধারিত অম্বিকা পল্লবী। নৃত্যে চামর, কুলো, হাঁড়ি ও মাটির সরার ব্যবহার বেশ অভিনব বলা যায়। অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে অসীমবন্ধু ভট্টাচার্যের একক কত্থক ও বিধূন কুমারের একক ভরতনাট্যম মন ছুঁয়ে যায়। গুরু অভয় পালের পরিচালনায় মিলন অধিকারী ও সৌরজা ঠাকুরের অর্ধনারীশ্বর এবং সন্দীপ মল্লিকের সপ্ততালে সমৃদ্ধ একক কত্থক বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। এ ছাড়াও ওড়িশি নৃত্যে অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায় ও মণিপুরী নৃত্যাঙ্গিকে অপ্রিতা সাহা নজর কাড়ে। নৃত্যোৎসবের অনন্য প্রাপ্তি ছিল শ্রবণ উল্লাল ও কিরণ উল্লালের ভরতনাট্যমের যুগলবন্দি। সফল জুটি।

চৈতী ঘোষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement