book review

কেন বাঙালির বাসনার সেরা বাসা রসনায়

ধানকল, আখ মাড়াই মেশিন, জোত-জমা-গাইবলদ-দলিল-পরচা সব কিছু রতিকান্তের চোখের সামনে তালগোল পাকিয়ে যায়, সামনে নড়ে ওঠে জয়া-গদ্মা-আই আর এইটের মাঠ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:১৬

দ্য নন-সিরিয়াস গাইড টু বেঙ্গলি ফুড

অর্পণ রায়

Advertisement

২৯৯.০০

হার্পার কলিন্স

বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে কলকাতার মাটন বিরিয়ানিকে! বইয়ের নাম আর উৎসর্গপত্র থেকে যদি ধরে নেওয়া হয় এ বোধ হয় ইংরেজি ভাষায় বাঙালি খাবার নিয়ে স্রেফ আত্মরসিকতা খানিক, তা হলে ঠকতে হবে। রসিকতা আছে অবশ্যই— বাঙালি এখনও ঠাট্টাপ্রেমী— কিন্তু কেন বাঙালি জীবনে খাবার একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ, হয়তো বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, সে জায়গাটা ধরার একটা চেষ্টাও আছে, অসচেতন চেষ্টা। ছোট্ট ছোট্ট লেখা, কার্টুনের মতো অলঙ্করণ পাতায় পাতায়; হাতে নিয়ে পড়তে ভাল লাগে, শ’দেড়েক পৃষ্ঠার বইটি পড়া হয়েও যায় চট করে। সূচিপত্রে চোখ বোলালেই মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠতে বাধ্য: বাঙালি কী কী খায়, বাঙালি কী দিয়ে রান্না করে, একটা সহজ সাধারণ বাঙালি পাত দেখতে কেমন, বাঙালির ভোজ আর ‘ফিস্টি’র চেহারা... এক-একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম এমনই। এ দিয়ে বাঙালির রান্নার ব্যাকরণ-প্রকরণের পুরোটা যে বোঝা যায় তা নয়, তবে অ-বাঙালি বা বিদেশি পাঠক মোটের উপর একটা ধারণা পাবেন। সেই ধারণাই পোক্ত হয় বঙ্গপাতের নানা খাবার নিয়ে লেখায়: বাঙালির ডাল, ডালের ‘ভাজা বন্ধু’রা, আলু-পোস্ত, মাছ, মাটন, রসগোল্লা ও তার ভাই-বেরাদর, মিষ্টি দই, লুচি, বাঙালির চা-বাতিক, চপ-কাটলেট-কবিরাজি, এগ রোল-ফুচকা, কী নেই! ছুটির দিনের পাঁঠার মাংস, বর্ষার খিচুড়ি, ‘চরে বেড়ানো’ আর স্ট্রিটফুড খাওয়া, চা-দোকানের চরিত্রচিত্রণে ফুটে ওঠে গোটা বঙ্গজীবনটাই।

রাজনৈতিক গল্প

স্বপ্নময় চক্রবর্তী

৩৫০.০০

দীপ প্রকাশন

১৯৭৮ থেকে ২০২১ অবধি ২৮টি গল্প নিয়ে এই গল্প সঙ্কলন। সময়ের ছাপ প্রতিটি গল্পে স্পষ্ট। প্রথম গল্প ‘স্বস্ত্যয়ন’-এ জোতদার রতিকান্তের লোকেরা মাটি খুঁড়তে গিয়ে সবুজ জামা পরা একটা লাশ পায়, ‘বুড়ো কচুর মতো মৃত হাড়ের রং’। ধানকল, আখ মাড়াই মেশিন, জোত-জমা-গাইবলদ-দলিল-পরচা সব কিছু রতিকান্তের চোখের সামনে তালগোল পাকিয়ে যায়, সামনে নড়ে ওঠে জয়া-গদ্মা-আই আর এইটের মাঠ। উপমা আর ভাষাই বলে দেয়, এ গল্প ১৯৭৮-এর। অবশ্য গ্রামজীবন নয়, স্বপ্নময় চক্রবর্তীর কলমের শক্তি আমাদের নাগরিক জীবনের ছোট ছোট অন্ধকার খোপের বর্ণনায়। ‘বন্দুক’ গল্পে দিল্লিতে অফিসারের সঙ্গে কেরানি নায়কের দেখা, অফিসার অধস্তন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করেন, “জয়পুরটা করলেন না?” বাঙালি আজকাল এটা করে, ওটা করে, কিছুই ‘দেখে’ না। বেড়ানোর সংজ্ঞা যে মুখের ভাষায় বদলে গিয়েছে, লেখক জানেন। দু’টি গল্প ইজ়রায়েল ও ভিয়েতনাম বেড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে লেখা। সঙ্কলনের শেষ গল্প ২০২১-এর, এক দেহ দুই মাথার ‘সায়ামিজ় টুইন’কে নিয়ে। দু’জনের এক বৌ, দু’জনে বিরোধী দুই রাজনৈতিক দলের নেতা, আর দু’জনেই টক শো-তে গিয়ে চেঁচায়। এক জন ঘুঘু পার্টি, অন্য জন লঙ্কা। কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না, শেষে ঘুঘু আর লঙ্কা পার্টি লঘু নামে জোট বাঁধে, দেশের সর্বেসর্বা হয়। লেখক গ্রন্থ উৎসর্গ করেছেন ‘এ সময়ের শিল্প-সাহিত্য-নাটকের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসুকে, যাঁর প্রণোদিত প্ররোচনায় এই বই’।

ষড়পা: ভারতের পতঙ্গ

কৌশিক

৬৯৯.০০

নেচারিজ়ম

কিছু কিছু বই আছে যারা শুরু হয়ে যায় প্রচ্ছদ থেকেই। এই বইটি তেমনই, মুখপাতে এক পতঙ্গের ছবি— ভিতরের তথ্য থেকে জানা যায় ডাঁশ মাছি— সেও এত সুন্দর! প্রাণিজগতের সর্ববৃহৎ শ্রেণি পতঙ্গ, বিশ্বের ২৯টি পতঙ্গবর্গের ২৭টিরই দেখা মেলে ভারতে, ভূমিকায় জানিয়ে দেন লেখক। ক্ষুদ্র তারা— আকারে, মানবসমাজের কাছে গুরুত্বেও, অথচ এদের ‘উপকার’ বাঁচিয়ে রাখে সমগ্র প্রাণ-প্রকৃতিজগৎকে। এ বইয়ে লেখকের অবস্থান পেশাদার পতঙ্গবিদের নয়, বরং মনোযোগী পর্যবেক্ষকের। দীর্ঘ সময় ভারতের অরণ্যে ভ্রমণের ফলে নানা পতঙ্গের গঠন, রং, জীবনচক্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন তিনি, সেই আকর্ষণই রূপ পেয়েছে এই বইয়ে। সূচিপত্রটি অভিনব, কোনও পতঙ্গেরই অন্তঃকাঠামোর আকারে যেন এক-একটি বিষয় বিন্যস্ত। কঠিনপক্ষ, দ্বিপক্ষ, শল্কপক্ষ, ঝিল্লিপক্ষ, অর্ধপক্ষ, ঋজুপক্ষ, দন্তবৎ পতঙ্গ ও অন্য বর্গগুলিকেও লেখক চিনিয়ে দেন সহজে। প্রতিটি পাতায় এক-একটি পতঙ্গের বাংলা, ইংরেজি ও বিজ্ঞানসম্মত নাম, বর্গ ও গোত্র, দেহের বিবরণ, আচরণ, খাদ্য, সময়কাল, স্থানিক বিস্তার ও প্রকৃতিতে প্রভাব— সবই বলা আছে সংক্ষেপে। এ ধরনের বইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি স্পষ্ট ও সুন্দর ছবি, লেখকের ক্যামেরা তার সুবিচার করেছে। সুন্দর ছাপা, বাঁধাই ও গ্রন্থসজ্জায় যোগ্য সঙ্গত করেছেন প্রকাশকও।

আরও পড়ুন
Advertisement