অব কাউন্সেল/ দ্য চ্যালেঞ্জেস অব দ্য মোদী-জেটলি ইকনমি
অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম
৬৯৯.০০
পেঙ্গুইন ভাইকিং
নোট বাতিলের ফলে সাধারণ মানুষের যতখানি কষ্ট হল, তার প্রভাব রাজনীতিতে পড়ল না কেন? ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কেন হেসেখেলে জয়ী হল? অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম এই প্রশ্নটাকে একটা ধাঁধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মোক্ষম ধাঁধা, সন্দেহ নেই। তবে, প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তার যে জবাবগুলো খুঁজে বের করেছেন, সেগুলোকে ‘মোক্ষম’ বলার কোনও উপায় নেই। তাঁর প্রথম উত্তর, সরকার যে কালো টাকার বিরুদ্ধে সত্যিই খড়্গহস্ত, সাধারণ মানুষকে তা বোঝানোর জন্য একটা জোরালো ধাক্কার দরকার ছিল। এবং, মানুষ তা বুঝেছেন। দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষকে এটা বোঝানোর প্রয়োজন ছিল যে নোট বাতিলের ফলে তাঁদেরই যদি এত কষ্ট হয়, তবে বড়লোকদের না জানি কত কষ্ট হচ্ছে। তৃতীয় উত্তর, যে হেতু সব সাধারণ মানুষেরই কম-বেশি কষ্ট হয়েছে, তার ফলে একটা একাত্মবোধ জন্মেছে। চতুর্থ উত্তর, এই দেশ যে হেতু মহাত্মা গাঁধীর, ফলে বড় কিছু পাওয়ার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, এই কথা সাধারণ মানুষ জানেন। এই উত্তরগুলো দেওয়ার জন্য একটা আবশ্যিক পূর্বানুমান আছে, সুব্রহ্মণ্যম যেটা আর উল্লেখ করেননি, সম্ভবত সৌজন্যবশেই— তাঁর অনুমান, ভারতের, নিদেনপক্ষে উত্তরপ্রদেশের, সাধারণ মানুষ নিছক বোকা। এবং, উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগেই নোটবাতিল করা প্রয়োজন হল কেন, বিরোধী দলগুলোর হাত খালি করে দেওয়ার জন্যই কি না, সেই প্রশ্নের মধ্যেও লেখক ঢোকেননি।
তবে, বইটাকে মোদী-জেটলি অর্থনীতির পক্ষে সওয়াল বলে ধরে নিলেও ভুল হবে। সত্যি বলতে, এই বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে লুকনো আছে গুপ্ত অস্ত্র। যেমন, রাজনীতির উপর নোট বাতিলের প্রভাব বা তার অনুপস্থিতির ব্যাখ্যার পরেই একটা বাক্য জুড়েছেন অরবিন্দ: মাঝেমধ্যে অর্থনীতির শাপে রাজনীতির বর হয়। বুঝ লোক, যে জানো সন্ধান। অথবা, ভারতের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে বিচারবিভাগের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে যা বলেছেন, সোজা বাংলায় তার অর্থ হল, নরেন্দ্র মোদীর সরকার ঘোর নীতিপঙ্গুত্বে ভুগেছে। কারণ, সাধারণ মানুষের চোখে বিচারবিভাগের যে গ্রহণযোগ্যতা আছে, সরকার বা প্রশাসনের তা নেই। কেন নেই? এক কথায় উত্তর, স্যাঙাততন্ত্র। অর্থাৎ, ইউপিএ সম্পর্কে মোদী যে কথাগুলো বলতেন, একেবারে সেটাই বলেছেন অরবিন্দ। জানিয়েছেন, আড়ালে মুণ্ডপাত করলেও বিনিয়োগকারীরা কী ভাবে প্রকাশ্যে সরকারের তালে তাল মিলিয়ে চলে। কী ভাবে রাজনীতি এসে নীতিনির্ধারণের চৌহদ্দিতে থাবা দেয়।
মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছিলেন অরবিন্দের পূর্বসূরি কৌশিক বসুও। দুটো বই পাশাপাশি পড়লে আগ্রহী পাঠক দুই জমানার মিল আর ফারাক, দুটোই খুঁজে পাবেন। তবে, অরবিন্দের বইয়ের খোঁচাগুলো ধরতে গেলে একটু সজাগ থাকা ভাল। যেমন, কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণের পরিসরে যে মূলত শোনা যায় কায়েমি স্বার্থের কথা, এবং ক্রমশ তা পরিণত হয় পারস্পরিক পিঠ চাপড়ানির খেলায়, অরবিন্দ এই কথাটি নেহাত আলগোছে শুনিয়ে রেখেছেন। অথবা, দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে আসার সময় তাঁকে জানানোই হয়নি যে তাঁর দায়িত্বের পরিসর কতখানি, সেই কথাটাও বলেছেন খানিক হাসির ছলেই। বিবিধ খোসা ছাড়ানো গেলে যেটুকু পড়ে থাকে, সেটা নরেন্দ্র মোদীর সরকারের পক্ষে খুব ইতিবাচক নয়। এই জমানায় এটুকু কথাই বা ক’জন বলেন!
ডিসেন্ট অন আধার/ বিগ ডেটা মিটস বিগ ব্রাদার
সম্পাদক: রীতিকা খেরা
৪৭৫.০০
ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান
কংগ্রেস জমানার সব কিছুই কি নরেন্দ্র মোদীদের অপছন্দ? বলার উপায় নেই, কারণ আধার নামক প্রকল্পটিও নিতান্তই ইউপিএ আমলের। যত দিন কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, বিজেপি তত দিন কট্টর বিরোধী ছিল আধারের। ক্ষমতায় আসার পরই বদলে গেল নরেন্দ্র মোদীদের অবস্থান। ইউপিএ আমলের ঐচ্ছিক আধার তাঁদের আমলে হয়ে উঠল আবশ্যিক। জুড়ে গেল বহু সামাজিক প্রকল্পের শর্ত হিসেবে। রীতিকা খেরা সম্পাদিত বইটিতে সেই আবশ্যিক আধার-এর বিভিন্ন দিকের কথা, বিশেষত বিপদের কথা, আলোচিত হয়েছে। ঐচ্ছিক আধারের সঙ্গে আবশ্যিক আধারের ফারাক কোথায়, জঁ দ্রেজ়-এর লেখাটিতে সেই আলোচনা রয়েছে। দ্রেজ় বলেছেন, আধার যে শুধু সরকারি নজরদারির অস্ত্র, তা-ই নয়, কর্পোরেটের কাছে তা সোনার খনি। আধার প্রকল্পের প্রযুক্তিগত ও আইনি দিক নিয়ে একাধিক আলোচনা রয়েছে। একটি জরুরি, কিন্তু অবহেলিত প্রশ্ন উঠে এসেছে কৃতিকা ভরদ্বাজের লেখায়— অপ্রাপ্তবয়স্কদের সম্মতির প্রশ্ন। আধার প্রকল্পে শিশু-কিশোরদের হরেক (বায়োমেট্রিক) তথ্য সংগৃহীত হচ্ছে, তাদের সম্মতি ছাড়াই। প্রশ্ন থেকে যায়, যে প্রাপ্তবয়স্করা আধারে নিজেদের তথ্য জানাতে ‘সম্মত’, তাঁরাও কি সেই সম্মতির অর্থ জানেন? অর্থ বোঝানোর চেষ্টা কি কখনও রাষ্ট্রের তরফে হয়েছে? আরও একটি অপেক্ষাকৃত অনালোচিত প্রসঙ্গ উঠে এসেছে বইটিতে— আধা-সরকারি সংস্থার উপস্থিতি। উষা রমানাথন লিখেছেন, এই ভাবেই সরকারি সংস্থাগুলি ক্রমে পরিণত হচ্ছে বেসরকারি অস্তিত্বে, আর তাদের দায়বদ্ধতাও কমছে। আধার প্রকল্পকে নিয়ে এমন বিস্তারিত, বহুদিকদর্শী আলোচনার প্রয়োজন ছিল।