Review

আমাকে ভুলতে পারো, আমার গান ভুলবে কী করে?

Review, Bookএ-বঙ্গের ঔপন্যাসিকদের আলোচনায় আছেন বিভূতিভূষণ থেকে দেবেশ রায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৪:৫৮

প্রবন্ধসংগ্রহ
অরুণ সেন
৪০০.০০
এবং মুশায়েরা

পশ্চিমি আধুনিকতা আমাদের কাজে লাগে, লাগে আমাদের আধুনিকতার নির্মাণেও। স্বাধীনতার আগের আমলে আমাদের জাতীয় জীবনে বা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে যদি পাশ্চাত্য প্রভাবের যাথার্থ্য থাকে, তবে পরবর্তী কালেও তা থাকবে না কেন? নতুনের সন্ধান, বৈচিত্রের সন্ধান, ছোট থেকে বড় পরিসরে বিস্তার শুধু তো মানবজীবনে নয়, শিল্পসাহিত্যেরও অন্বিষ্ট। অতএব পঠনপাঠন, অনুবাদ, রূপান্তর আর আত্তীকরণের ভিতর দিয়ে বিদেশি অভিজ্ঞতাকে খোঁজার প্রাসঙ্গিকতা সেখানেই। আবার পশ্চিমি আধুনিকতা যদি আমাদের প্রাচ্যের আধুনিকতাকে গ্রাস করে, তার ফলও হবে মারাত্মক। আমাদের আধুনিকতার চিন্তায় প্রাচ্য-প্রতীচ্যের এই দ্বন্দ্বময়তা ও দ্বন্দ্বমুক্তি কী ভাবে বিন্যস্ত এবং কতখানি পরিসর জুড়ে, এ-সমস্তই ঘুরেফিরে আসতে থাকে অরুণ সেনের এ-বইয়ের প্রবন্ধাদিতে। গ্রন্থশেষের রচনাটিতে, ‘সাহিত্যের বাঙালি আধুনিকতা’, এইটেকেই বিষয় করে তুলেছেন তিনি: ‘‘বিদেশ থেকেও কিছু গ্রহণ, রবীন্দ্রনাথ যাকে বলেছেন স্বকীয় গ্রহণ, আত্মবোধ থেকে গ্রহণ— তা না হলে স্বদেশকে গ্রহণ ব্যাপারটাও সম্ভব হবে না।’’ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এবং একদা গ্রন্থিত অথচ অপ্রাপ্য তিরিশটি আহৃত রচনার সমাহার এ-বই। রাবীন্দ্রিক উত্তরাধিকার সূত্রে বিষ্ণু দে জীবনানন্দ দাশ সুভাষ মুখোপাধ্যায় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত অরুণ মিত্র সিদ্ধেশ্বর সেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও শঙ্খ ঘোষের কবিতার ভাষা ও আধুনিকতার আলোচনায় রীতিমতো উদ্ভাবনী মনন লেখকের। লিখেছেন বাংলাদেশের সংস্কৃতির সূত্রে ওয়াহিদুল হক, সন্‌জীদা খাতুন, মোহাম্মদ রফিক, সেলিম আল দীন-এর ব্যক্তিগতের সীমা পেরনো লড়াইয়ের কথা। এ-বঙ্গের ঔপন্যাসিকদের আলোচনায় আছেন বিভূতিভূষণ থেকে দেবেশ রায়।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথ অনেকান্ত
সুধীর চক্রবর্তী
২৫০.০০
ঋতবাক

‘আমাকে ভুলতে পারো, আমার গান ভুলবে কী করে?’ নিজের গান সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের বলা এই কথার সার্থকতা বাঙালি আবেগে-বিতর্কে নিয়ত প্রমাণ করে চলেছে আজও। বিশিষ্ট চিন্তক-গবেষক সুধীর চক্রবর্তী রবীন্দ্রসঙ্গীতের অবাধপ্রসার দিগন্তকে চারটি রচনায় ধরেছেন, তারই সম্মেলন এই বইটি। ‘গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ বলা যাবে না, বরং ইংরাজি লব্জে বলা যেতে পারে ডিসকোর্স’, ভূমিকায় মন্তব্য লেখকের। ‘রবীন্দ্রসংগীতের আয়নামহল’ রচনায় আছে রবীন্দ্র-প্রতিভার ‘সবচেয়ে স্থায়ী ফসল’ তাঁর গানের বৈচিত্র, শৈল্পিক অনন্যতা, গায়নপদ্ধতির অন্তরমহলের খোঁজ। ‘পছন্দের ২৫টি রবীন্দ্রসংগীত’ রচনায় কয়েক হাজার গানের মধ্যে প্রিয় পঁচিশটি গানের কী ও কেন উঠে এসেছে সংক্ষিপ্ত অথচ সার্থক প্রযত্নে। ‘মধ্যদিনের বিজন বাতায়নে’ গানের সঞ্চারীতে ‘নৈরাশা’ বলে একটি শব্দ আছে যা সমগ্র রবীন্দ্ররচনাবলির আর কোথাও নেই, এ তথ্য চমকিত করে। একটি কলেজে স্নাতকোত্তর স্তরে বাংলার পাঠ্যক্রম তৈরি ও অধ্যাপনা করতে গিয়ে লেখক কী করে পনেরোটি রবীন্দ্রসঙ্গীত বেছে পাঠ্য করেছিলেন, আছে সেই ইতিহাস। সবচেয়ে উপভোগ্য ও আকর্ষক রচনাটি ‘রবীন্দ্রসংগীত— আমাদের সর্বনাশ ও সর্বস্ব’, একটি ভাষণের পাঠ-রূপান্তর। জীবনের সব কিছু আকীর্ণ করে আছে রবীন্দ্রগান, তাই সে সর্বস্ব। আবার ‘একটা গীতিপ্রবণ দেশ যখন তার প্রকৃত গানটি আর খুঁজে পায় না এবং যেটা পূরণ করতে হয় অনবরত একজন অনেক আগেকার মানুষের লেখা গান দিয়ে, তখন সেটাই সবচেয়ে বড় সর্বনাশ’, বলছেন লেখক।

আরও পড়ুন
Advertisement