—প্রতীকী চিত্র।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি কিডমন সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে কৃত্তিবাসের একটি অনুষঙ্গ উল্লেখ করেছিলেন। বলেছিলেন, “কৃত্তিবাস যেমন কথকতা শুনিয়া রামায়ণ লিখিতেন, তেমনি একজন কিডমনকে বাইবেল অনুবাদ করিয়া শুনাইত আর তিনি তাহা ছন্দে পরিণত করিতেন।” (‘স্যাক্সন জাতি ও অ্যাংলো স্যাক্সন সাহিত্য’) বস্তুত রবীন্দ্রনাথের বাইবেল, খ্রিস্ট ও পাশ্চাত্য দর্শন নিয়ে আগ্রহটির সূত্র নিয়ে ভাবতে বসলে, অনিবার্য ভাবে বাংলায় এই ক্ষেত্রটির চর্চা কোন কোন খাতে বয়েছে, তা এসে পড়তে পারে। আলোচ্য বইটি এই ধারাবাহিক ইতিহাসের বিবরণ ও বিশ্লেষণ। বইটি দশটি প্রধান অধ্যায়ে বিন্যস্ত; মূলত বাংলায় খ্রিস্টীয় বাণীর আগমন, বাংলা ভাষায় বাইবেল চর্চা, বাঙালি মনীষা ও খ্রিস্টান মিশনারিদের এ বিষয়ে ভূমিকা, লোকসাহিত্য ও বাংলা ভাষায় খ্রিস্টীয় প্রভাব এবং বাংলা সাহিত্যের নানা সংরূপে খ্রিস্টকথা, খ্রিস্টীয় অনুষঙ্গ, খ্রিস্টান চরিত্রদের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন লেখক। বিশেষ ভাবে কৃতিত্বের দাবি রাখে খ্রিস্ট, খ্রিস্টীয় সংক্রান্ত বইপত্র ও পত্রিকার উল্লেখপঞ্জিগুলিও। পাশাপাশি, ‘বাইবেল চর্চার ইতিহাস’ অধ্যায়টিতে বাইবেলের প্রায় সার্বিক একটি বর্ণনা আগ্রহী পাঠককে বিষয়টিতে প্রবেশের জন্য তৈরি করে দেয়। বাংলা গদ্যের বিকাশপর্ব ও যৌবনে বাইবেলের বাংলা অনুবাদ কী ভাবে পুষ্টিসাধন করেছে, ভাল ভাবে বোঝা যায় সে বিষয়টিও। এ প্রসঙ্গেও আবার রবীন্দ্রনাথেরই শরণ নিতে হয়— সপ্তদশ শতকে ইংরেজিতে অনূদিত গ্রিক ও হিব্রু বাইবেলে রবীন্দ্রনাথ খুঁজে পেয়েছিলেন ‘সত্যিকার কাব্য’, গদ্যছন্দের ‘মুক্ত পদক্ষেপ’ (‘গদ্যকাব্য’)। বাইবেল যে এ বঙ্গভূমির অতি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধিক সম্পদগুলির একটি, এ বই পাঠকদের মনে করিয়ে দেয় সে কথা।
বাইবেল ও বাংলা সাহিত্য
সুরঞ্জন মিদ্দে
৩৭৫.০০
নান্দনিক
পড়ার বইতে লেখা আছে, সাঁওতাল-মুন্ডারা শুধু শিকার করে খান। তা ঠিক নয়। তাঁরা চাষ করতে জানেন। তাঁরাই সবচেয়ে ভাল জানেন কী করে জঙ্গল ভেঙে, পড়তি মাঠ ভেঙে চাষের জমি তৈরি করতে হয়— বলেছিলেন আশ্চর্য ঠাকুরদা। তিনি ছিলেন গ্রামের সব ছেলেমেয়ের ঠাকুরদা। আশ্চর্য ঠাকুরদা গল্প বলতেন, পশ্চিমদেশ থেকে চারপাহাড়ি গ্রামে এসে তাঁর পূর্বপুরুষদের বসত গড়ার গল্প। আর গল্পের ছলে বুনে চলতেন ইতিহাস। নিজের জমি থেকেই সাঁওতালদের উচ্ছেদ। জমিদার, রাজা এবং ‘ইংরাজা’দের শোষণ— তাদের আরও বেশি খাজনা, টাকা, আদায় চাই। পাতাসেদ্ধ, ঘাসসেদ্ধ খেয়ে অসুখে গরিব মানুষদের মারা পড়ার গল্প। আর শেষ পর্যন্ত সাহেবদের বিরুদ্ধে তাদের রুখে দাঁড়ানোর কাহিনি। কুমার রাণার এক আশ্চর্য ঠাকুরদার লোককাহিনি বইয়ের ‘আশ্চর্য ঠাকুরদা’ গল্প সেই জীবন্ত ইতিহাসকেই ফুটিয়ে তোলে সাবলীল ভঙ্গিতে। ‘আশ্চর্য ঠাকুরদা’ ছাড়াও আরও তিনটি পূর্বপ্রকাশিত কাহিনি দু’মলাটের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে এখানে। প্রতিটিতেই আলাদা আঙ্গিকে ধরা দিয়েছে আমাদের লোকসমাজের নানা টুকরো ছবি। রূপকথার ঢঙে বলা হলেও মাটির গন্ধ তাতে ভরপুর। তাই এ বই
শুধু শিশুমনকেই টানে না, গ্রামসমাজের প্রকৃত রূপটি বড়দেরও বিলক্ষণ চিনতে শেখায়।
‘এক আশ্চর্য ঠাকুরদার লোককাহিনি’
কুমার রাণা
৩০০.০০
ভিরাসত আর্ট পাবলিকেশন
ভারতের নানা রাজ্যে নানা প্রান্তে রয়েছে অনেক দুর্গ। রাজস্থানের পাহাড়ে অবস্থিত, জনপ্রিয় চিতোরের দুর্গ তো সকলেরই চেনা— কোন সময়ে কী কারণে স্থাপন করা হয়েছিল এই দুর্গটি, কার শাসনকালে সে দুর্গের অবস্থাই বা কেমন ছিল— এমন নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা রয়েছে বইটিতে। আছে কুম্ভলগড়, অচলগড়, কিষণগড়, কালিঞ্জর-সহ পঁচিশটি দুর্গ নিয়ে বিস্তারিত বয়ান। এই সব দুর্গের অন্দরমহল ও বাহিরমহলের নানা জানা-অজানা গল্প। দুর্গগুলি স্থাপনের নেপথ্যকাহিনি যেমন রোমাঞ্চকর, সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত তথ্যও চমকপ্রদ, এই সবই আছে দু’মলাটে। শত্রুপক্ষের আক্রমণের জেরে কী ভাবে পুরনো কোনও এক দুর্গ ভেঙে পড়েছিল, রাজত্বের সুরক্ষার কথা ভেবে সেই জায়গায় ফের নতুন করে দুর্গ গড়ে তোলা হয়েছিল কোন কৌশলে, রয়েছে সে কথাও— পুরনো মাণ্ডোর দুর্গ ও পরবর্তী কালে গড়ে ওঠা মেহরনগড় দুর্গের বর্ণনায়। এ ছাড়াও ইতিহাসবিদদের দেওয়া নানা তথ্য ও বিশ্লেষণও জায়গা পেয়েছে বইটিতে। প্রাচীন দুর্গগুলির ইতিহাস তুলে ধরতে সংযোজিত হয়েছে প্রতিটি দুর্গের ছবি, লেখকের বর্ণনাকে যারা সমৃদ্ধ করেছে আরও। এমন ভাবে লেখা— ‘পপুলার হিস্ট্রি’-র পাঠক থেকে ভ্রমণরসিক, সকলেই উপভোগ করবেন।
ইতিহাসের দুর্গ, দুর্গের ইতিহাস
শান্তা শ্রীমানী
২৬০.০০ পত্রলেখা