M J Akbar

গাঁধীর হিন্দুত্ব, জিন্নার ইসলাম

বইটিকে এমন সব হারানো মুহূর্তের সম্ভার বললেও ভুল হবে না। অসম্ভব আকর্ষণীয় একটি বিষয়— এর থেকে গুরুতর আলোচ্য আর কী-ই বা হতে পারে আজকে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩১

গাঁধীজ় হিন্দুইজ়ম: দ্য স্ট্রাগ্‌ল এগেনস্ট জিন্নাজ় ইসলাম
এম জে আকবর
৬৯৯.০০
ব্লুমসবেরি

মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর কাছে ধর্ম ছিল ব্যক্তিগত, শাশ্বত, সমষ্টিজীবনকে যা শুদ্ধ করতে পারে, আর মহম্মদ আলি জিন্নার কাছে ধর্ম ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসিদ্ধির পথ: বলছেন এম জে আকবর, এই বইতে। বাহ্যিক অর্থে কথাটা ঠিক হলেও আরও গভীরে গিয়ে পাঠক ভাবতে পারেন, সত্যিই কি তাই? মহাত্মা গাঁধীও কি ধর্মের সামূহিক ‘ব্যবহার’-এ বিশ্বাস রাখেননি? খিলাফত-অসহযোগের বহু-ব্যবহৃত রেফারেন্স ছেড়ে দিলেও তাঁর জন-রাজনীতির যাপনে কি ধর্মের ভূমিকা ছিল না? অনেক সমসাময়িক নেতাও কি এই নিয়ে গাঁধীর সমালোচনা করেননি? এমনকি যখন বিহারের ভূমিকম্পকে গাঁধী দেশবাসীর নৈতিক স্খলনের ঈশ্বরপ্রেরিত শাস্তি বলছেন, রবীন্দ্রনাথও কি বিচলিত হয়ে তার সমালোচনা করেননি?

Advertisement

এই সব ভাবনা স্বভাবতই একটু আক্ষেপের পথেও ঠেলে দেয় পাঠককে। মনে হয়, যদি এই কথাটা আকবর স্বীকার করে নিতেন, তা হলে হয়তো রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বিষয়ে দুটি সম্পূর্ণ আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাসের বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হত এই বইতে— যে সুযোগ ঘটল না, হারিয়ে গেল।

বইটিকে এমন সব হারানো মুহূর্তের সম্ভার বললেও ভুল হবে না। অসম্ভব আকর্ষণীয় একটি বিষয়— এর থেকে গুরুতর আলোচ্য আর কী-ই বা হতে পারে আজকে। দুই মহানেতার জীবনের অনেক কাহিনি, তথ্য উঠে এসেছে এখানে, লেখকের স্বভাবসিদ্ধ চুম্বকসদৃশ সুপাঠ্য গদ্যে, এক বার ধরলে যা ছাড়াই মুশকিল। কিন্তু আগাগোড়াই নানা আক্ষেপ জন্মাতে থাকে। ভারসাম্য নিয়ে আক্ষেপ। দুই নেতার প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন টক্কর নিয়ে লিখতে গিয়ে অন্যান্য চরিত্র ও ঘটনার এতটা বিস্তারে না গেলেও চলত, বড় পথ হারিয়ে যায় তার ফলে। এই বইয়ে লেখক মাঝেমধ্যেই পথ হারিয়েছেন।

তার সঙ্গে আর একটা বড় আক্ষেপ থেকে যায়, সেটা বিশ্লেষণের একদেশদর্শিতা নিয়ে। জিন্না বিষয়ে মতামত বিশ্লেষণের গোড়াতেই এত প্রবল হয়ে উঠলে বিশ্লেষণটাই জোলো হয়ে যায় না কি? আবার রাজনীতিগত একদেশদর্শিতার ফলে জওহরলাল নেহরু হয়ে যান প্রায় খলনায়ক। তবু বইটি উল্লেখযোগ্য, তার বিষয়ের নির্বাচন ও ব্যাপ্তির কারণেই।

আরও পড়ুন
Advertisement