book review

জীবন আর নাটক যেখানে একাকার

একুশ বছর বয়সে প্রথম লেখা নাটক মৃত্যুর চোখে জল। সে নাটক তাঁর অতিবৃদ্ধের চরিত্রাভিনয় দেখে অবাক হয়েছেন অহীন্দ্র চৌধুরী।

Advertisement
দেবাশিস মজুমদার
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৪

মনোজ মিত্র একটি দৈনিকে ধারাবাহিক লিখেছিলেন, পাঠকমনে কৌতূহল ছিল এই রচনার বিষয়বর্গ নিয়ে— ‘স্মৃতিকথা’ না ‘হারানো ঘটনার চিত্র’, না কি থিয়েটার অভিনয়ের তত্ত্বকথার ‘সহজপাঠ’। মীমাংসা হল মনোজাগতিক বইপ্রকাশ শেষে। থিয়েটারের শিল্পী আর কর্মীর কাছে এ বই থিয়েটার যাপনের শৈল্পিক বোধিনী। সাধারণ পাঠকের থিয়েটার চলচ্চিত্র অভিনয়ের অচেনা রাজপথ থেকে মেঠোপথ হয়ে পাকদণ্ডী অতিক্রমণের আনন্দযাত্রা।

Advertisement

একুশ বছর বয়সে প্রথম লেখা নাটক মৃত্যুর চোখে জল। সে নাটক তাঁর অতিবৃদ্ধের চরিত্রাভিনয় দেখে অবাক হয়েছেন অহীন্দ্র চৌধুরী। বিস্মিত হয়েছেন অভিনয়-সংলাপে কেমন করে নবীন-যুবক খুঁজে নিচ্ছেন নতুন পথ। মনোজ মিত্রের পরিণত পর্বে সাজানো বাগান নাটক দেশের প্রধান ভাষায় অনূদিত এবং তিনটি ভাষায় চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। পরিচালক তপন সিংহ চিত্রনির্মাণ-উত্তরকালে অনুজ বন্ধু মনোজের গল্প হেকিমসাহেব নাটকের পাঠ শুনে নিজের সিদ্ধান্তে নাটকের বাইজি চরিত্রের গান লিখে গায়িকা নির্বাচন করে মিউজ়িক অ্যারেঞ্জার-সহ রেকর্ডিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। ‘সুন্দরম’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা পার্থপ্রতিম চৌধুরী বলেছিলেন, “তুই বানিয়ে বানিয়ে কিছু লিখিস না... তোর দেখা জীবনটাকেই টার্গেট কর।” সেই দেখা জীবনটা ছড়িয়ে আছে এ বইয়ের অক্ষর-রেখাচিত্রে।

মনোজাগতিক

মনোজ মিত্র

৩৯৯.০০

দে’জ়

মনোজ মিত্রের সফল ও জনপ্রিয় একাধিক নাটকের উৎস আর তার খরস্রোতের বিস্তারিত রসময় বর্ণনায় আমরা যখন চড়াই-উতরাই পার হয়ে তার মঞ্চ-মোহনায় এসে দাঁড়াই, তখন মুগ্ধতার আবেশে সিক্ত হতে হয়। এত দিন নাটক তথা নাট্যটি ভালবেসেছি মনোজাগতিক অচেনা তীরে পৌঁছে দেয়, যেখানে বিছানো বাস্তবোত্তর মনোজ-মনের জগৎ। আরও আছে, শিল্পী অভিনেতা নির্দেশক সাহিত্যিক অধ্যাপক আর আত্মজনের নানা প্রতিকৃতি। অনেকেই হয়তো শৈল্পিক বৃত্তে সফল, উজ্জ্বল। কিন্তু দৃষ্টি আকর্ষণকারী আত্মপ্রচারের মিনার গড়ে তুলতে পারেননি। আছে তাঁদের কথা। অধ্যাপক প্রবাসজীবন চৌধুরী দর্শন বিভাগে আন্তর্জাতিক বিদ্বৎসমাজে সম্মানিত পণ্ডিত, কিন্তু তাঁর গল্পসঙ্কলন জীবনমাধুরী ও প্রবাসজীবন কাব্যকুঞ্জ গল্প আর কবিতা বই দু’টির পরিচয় হারিয়ে গিয়েছে। লেখক তাদের নাম উল্লেখে লেখনী থামাননি, সংক্ষেপে গল্প বর্ণনায় ফিরে দেখার কৌতূহল জাগিয়ে তুলেছেন। এসেছে বন্ধু অতনু সর্বাধিকারীর নাটক সিঁড়ি-র সফল বার্তা। অধ্যাপক বিপিনচন্দ্র ঘোষ আর ছাত্র দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপাত-বৈরী সম্পর্ক, কী ভাবে ‘প্রেসিডেন্সি কলেজের রেলিংয়ের গায়ে পুরনো বইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে’ দু’জনে অনুবন্ধে বইয়ের সন্ধানী হয়ে উঠতেন। “শিক্ষককে ট্রামলাইন পার করে দেন বইয়ের ঝুলিটা টানতে টানতে ছাত্র!” আজকের বিপরীত শিক্ষাবোধে ব্যথা অনুভব করেন লেখক।

সময়ের ধারাবাহিকতায় এই টুকরো উজ্জ্বল স্মৃতি-লেখনীগুলি গ্রহণ করতে চাইলে ঠকতে হবে। নাটক-লিখন, মঞ্চ-চলচ্চিত্র-বেতার অভিনয়ের সহজিয়া তত্ত্বকথায় বইটি থিয়েটার-শিক্ষার সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তির মর্যাদা রাখে। আর আছে আটপৌরে গঠনে শিল্প সৌন্দর্য বা মনোবিজ্ঞানে জড়ানো জীবন-সম্পৃক্ত আর নাটকের প্রতিমাচিত্র। কৌতুক আর কবিতার সৌন্দর্যে নির্মিত স্বাদগদ্য অতুল প্রাপ্তি। অনবধানে দু’-একটি ঘটনা অনুল্লেখে সামান্য বিভ্রান্ত হতে পারেন পাঠক, তবু সমগ্র পাঠে প্রাপ্তির অফুরান সম্পদে বাকি সব তুচ্ছ করে দেয় মনোজাগতিক।

আরও পড়ুন
Advertisement