book review

এক সার্বিক এশীয় সত্তার সন্ধান

বইয়ের প্রথম অংশে ডায়াস্পোরা-জাত সাংস্কৃতিক কথোপকথন ও সাহিত্য, মূলত এশীয়-আমেরিকান সাহিত্য কী ভাবে প্যান-এশীয় ধারণা সিঞ্চিত করছে তা আলোচিত।

Advertisement
তাজুদ্দিন আহমেদ
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৯

‘প্যান-এশিয়ানিজ়ম’-এর ধারণাটি পুরনো, বৈচিত্রময়। কিন্তু তার নিহিত অন্তর্দ্বন্দ্বটি বাস্তব রাজনীতির জমিতে এর সফল রূপায়ণে অন্তরায় হয়েছে। এশীয় সভ্যতার প্রতি রবীন্দ্রনাথের মুগ্ধতা সর্বজনবিদিত। ‘চীনেম্যানের চিঠি’ প্রবন্ধে তিনি লেখেন, “এশিয়ার ভিন্ন ভিন্ন জাতির মধ্যে একটি গভীর ও বৃহৎ ঐক্য আছে।” তাঁর বিশ্বাস ছিল, “য়ুরোপের সংঘাত সমস্ত সভ্য এশিয়াকে সজাগ করিতেছে। এশিয়া আজ আপনাকে সচেতনভাবে, সুতরাং সবলভাবে উপলব্ধি করিতে বসিয়াছে।” কিন্তু রবীন্দ্রনাথের এই মত নানা দিক থেকে সমালোচিত, তাঁর চিন ভ্রমণকালে সে দেশের লেখক রাজনীতিবিদ বুদ্ধিজীবীরা তাঁর সমালোচনা করেছিলেন, প্রচারিত হয়েছিল রবীন্দ্র-বিরোধী পুস্তিকা। আসলে, মূলত পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদের প্রতিস্পর্ধী হিসেবে প্যান-এশিয়ানিজ়ম ধারণার উদ্ভব হলেও তার লক্ষ্য, ভরকেন্দ্র ও গতিবিধি কী হওয়া উচিত তা নিয়ে প্রায় কখনও কোনও মতৈক্য গড়ে ওঠেনি। পরস্পরবিরোধী মত ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন দেশের চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। চিনের বিপ্লবী নেতা সান ইয়াৎ-সেন সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে গুরুত্ব দিয়ে জাপান ও চিনের পাশাপাশি ভারত, পারস্য, তুর্কিস্তান, আফগানিস্তান, আরব, ভুটান ও নেপালের মতো দেশ ও সভ্যতাকে আলোচনায় আনলেও সেই ঔদার্য অন্যদের বয়ানে প্রায়শই অনুপস্থিত। দি আইডিয়ালস অব ইস্ট গ্রন্থে ওকাকুরা ভারত ও চিনের কথা সবিস্তারে বললেও জাপানি সভ্যতাকেই প্যান-এশীয় চেতনার কেন্দ্র হিসাবে দেখেন। মালয়েশিয়ার মাহাথির বিন মোহাম্মদের প্যান-এশীয় ধারণা বলে ইসলামীয় শক্তির সংহতির কথা, সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান-ইউ এশীয় চেতনার চালক হিসাবে তুলে ধরেন কনফুসিয়াসের মতাদর্শ। লেখক তাঁর বইয়ে প্যান-এশীয় চেতনাকে সংজ্ঞায়িত করার পাশাপাশি তার অন্তঃস্থ বিপরীত মত ও পথগুলি চিহ্নিত করেছেন, সঙ্গে জুড়েছেন ডায়াস্পোরিক সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ক্রমবর্ধমান ও পরিবর্তনশীল পরিসর।

বইয়ের প্রথম অংশে ডায়াস্পোরা-জাত সাংস্কৃতিক কথোপকথন ও সাহিত্য, মূলত এশীয়-আমেরিকান সাহিত্য কী ভাবে প্যান-এশীয় ধারণা সিঞ্চিত করছে তা আলোচিত। দ্বিতীয় অংশে এশিয়ার বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্রে বৈষম্য ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের উদ্গম ও বিকাশ প্রসঙ্গে জাপান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল ও তিব্বতের সাহিত্য আলোচিত। ভুটান নেপাল তিব্বতের সাহিত্য চিরকাল স্বল্পালোচিত, তাদের পাঠকের গোচর করার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। তৃতীয় অংশে লেখক সুপরিচিত কিছু উপন্যাস ও ছোটগল্পের পুনঃপাঠের মাধ্যমে অভিবাসী সত্তার জটিলতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, শেষ পরিচ্ছেদে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও জাতির মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় তথা সহযোগিতা সৃষ্টিতে এশীয় ডায়াস্পোরিক সাহিত্যের সদর্থক ভূমিকা আলোচিত।

Advertisement

এশিয়া ট্রাভেলস: প্যান-এশিয়ান কালচারাল ডিসকোর্সেস অ্যান্ড ডায়াস্পোরিক এশিয়ান লিটারেচার/স ইন ইংলিশ

হিমাদ্রি লাহিড়ী

৬০০.০০

বীরুৎজাতীয় সািহত্য সম্মিলনী

এশীয় সত্তা ও ডায়াস্পোরা সাহিত্যের সম্পর্ককে নতুন করে চেনায় এ বই। তবু কয়েকটি প্রশ্ন থেকে যায়। যে প্যান-এশীয় সত্তা নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে লেখক আলোচনা করেছেন, তা ঘটে বৌদ্ধিক স্তরে এবং মূলত আমেরিকান-এশীয় অভিবাসীদের সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। এর কোনও প্রভাব কেন মূল এশিয়ায় দেখা যায় না, সে প্রশ্নটি অনালোচিত। রবীন্দ্রনাথের তিনটি জাপান ভ্রমণ, সেই উপলক্ষে প্রদত্ত বক্তৃতা ও কোরিয়াতে তাঁর কবিতা ও ভাবধারার সমাদর— এই বিষয়গুলি বিশদে আলোচিত হলে বিষয়ের প্রতি সুবিচার হত।

আরও পড়ুন
Advertisement